একবিংশ শতাব্দীর নব্য জাহিলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এমন যোগ্য ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন যিনি জ্ঞান ও আদর্শে হবে অনন্য, চরিত্রে হবেন অনুপম। ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান ও সঠিক ধারণা ছাড়া কোন মুসলমানের পক্ষেই একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির” তৈরি করেছে সিলেবাসভিত্তিক ওয়েবসাইট শিবির অনলাইন লাইব্রেরি। এই ওয়েবসাইটে রয়েছে কুরআন, হাদীস, সংগঠন, ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা, সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, আইন-কানুন, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ক নির্বাচিত বইয়ের সমগ্র। যা অধ্যয়ন করলে ইসলামের প্রয়োজনীয় দিকগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ সম্ভব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বস্তুত ইসলামে জ্ঞান চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। এ গুরুত্বের কারণেই আল্লাহ তা‘আলা প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম (আ.)-কে সর্বপ্রথম শিক্ষাদান করেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহ আদমকে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দেন। তারপর সেসমস্ত বস্তু ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অতঃপর আল্লাহ বলেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো’ [বাক্বারাহ ৩১]

কোনো জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হলে সেই জাতির লোকদেরকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। যখন তারা সেই আদর্শ অনুযায়ী তৈরি হবে তখনই একটি সফল সামাজিক বিপ্লব সাধন সম্ভব। মহানবী (সা.) মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে জাহেলিয়াতের গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জাতিকে একটি বিশ্ববিজয়ী জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন। আর এজন্য তিনি হেরা পর্বতের চূড়া থেকে নেমে আসা ইসলামের সর্বপ্রথম বাণী ‘ইক্বরা’র পথ ধরেই সামনে অগ্রসর হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। পড় এবং তোমার প্রতিপালক মহা সম্মানিত। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। যিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানতো না’ [আলাক্ব ১-৫]

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বৃহদাংশ জুড়ে রয়েছে জ্ঞানার্জনের তাকীদ। রাসূল (সা.) এ তাকীদের পরিপ্রেক্ষিতেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন জ্ঞানার্জনের উপর। মহানবী (সা:) বলেন: ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয’। প্রকৃত জ্ঞানই মানব সমাজে বিদ্যমান যাবতীয় সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারে। জ্ঞান চর্চা প্রতিটি মানুষকে অপার মহিমায় আলোকিত করে তোলে। পবিত্র কুরআনে জ্ঞানকে আলোর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অন্যদিকে অজ্ঞতাকে অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন: ‘বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক?’ [রা‘দ ১৬]

জ্ঞানার্জন ও বিতরণের মধ্যেই জাতির কল্যাণ নিহিত। মহানবী (সা:) বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’। জ্ঞানই সবকিছুর ভিত্তিমূল। জ্ঞানের আলোকেই মানুষ ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। জ্ঞান তথা শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই রচিত হয় জাতিসত্তা। কোন জাতির সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হলো শিক্ষা। জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ, জাতীয় আদর্শের ভিত্তিতে চরিত্র গঠন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও বিভাগে নেতৃত্বদানের উপযোগী ব্যক্তিত্ব তৈরি করা কেবলমাত্র উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রধান উপকরণও শিক্ষা।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী জ্ঞানচর্চার উপর গুরুত্বারোপ করে। ছাত্রশিবিরের জনশক্তিসহ সকল মুক্তিকামী মানুষ যাতে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারে সেজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু মহান আল্লাহ কবুল করুন।