ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন

ভদ্র মণ্ডলী!

 

করাচী বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সম্পাদক এরূপ এক উচ্চ শিক্ষিত ও বিদগ্ধ জনসম্মেলনে আমাকে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করার মূল্যবান সুযোগ করে দিয়েছেন, সে জন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আজকের এই সম্মেলনে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ (Cream of Society) সমবেত হয়েছে। এদের মধ্য হতে একজনকেও আমার মত ও আদর্শের সমর্থক করে নিতে পারলে তার গুরুত্ব এবং প্রভাব শত-সহস্র ব্যক্তিকে সমর্থন করা অপেক্ষা অনেক বেশী এবং সুদূর প্রসারী। এই সুবর্ণ সুযোগের গুরুত্ব আমি হৃদয় মন দিয়ে অনুভব করছি। অতএব এটাকে সুফলপ্রদ কাজে নিযুক্ত করতে আমি বিশেষভাবে যত্নবান হবো- ইনশাআল্লাহ।

 

বস্তুত এখানে কোন দীর্ঘ ও বিস্তারিত বক্তৃতা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। কারণ আজকের এই সম্মেলন মূলত একটি আলোচনা বৈঠক মাত্র। ইসলামী শাসনতন্ত্র সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা এবং চিন্তা ও মতের আদান-প্রদান করার উদ্দেশ্যেই এটা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু অত্যন্ত জটিল ও অভিনব, কাজেই প্রাথমিক আলোচনা হিসেবে কয়েকটি জরুরী কথা না বললে আলোচনা ব্যাপদেশে এমন সব বিতর্কের উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাকে সুস্পষ্ট করে তুলবার জন্য তখন একটি বক্তৃতার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্যই সর্বপ্রথম আমি কয়েকটি নীতিগত কথার বিশ্লেষণ করতে চাই। তারপর এই প্রসংগে যে কোন প্রশ্নই উত্থাপন করা হবে, তার যথাযথ জবাবও দেয়া হবে।

 

বিষয়বস্তুর স্বরূপ

 

আমরা এখন যে বিষয়টির আলোচনা করতে যাচ্ছি, পূর্বাহ্নেই এর প্রকৃত স্বরূপ সম্যকরূপে অনুধাবন করে নেয়া একান্ত আবশ্যক। আমরা যখন এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র দাবী করি, তখন তার দ্বারা একথা বুঝায় না যে, ইসলামী শাসনতন্ত্র কোথায়ও বিরচিত ও লিখিত হয়ে বর্তমান আছে, এখন এটাকে জারী করার দাবী উত্থাপিত হয়েছে মাত্র। বস্তুতপক্ষে আমাদের যাবতীয় চেষ্টা যত্নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এক ‘অলিখিত শাসনতন্ত্র’ (Unwrittent Conditions)-কে লিখিত শাসনতন্ত্র (Written Constitution) পরিবর্তিত করা। ইসলামী শাসনতন্ত্র আসলে এক অলিখিত শাসনতন্ত্র, এর কয়েকটি নির্দিষ্ট উৎস রয়েছে। সেই উৎসসমূহ হতে নিজেদের দেশের অব্যবস্থা ও প্রয়োজনের দৃষ্টিতে এক লিখিত শাসনতন্ত্র রচনা করাই এই ব্যাপারে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

 

অলিখিত শাসনতন্ত্র দুনিয়াতে কোন অভিনব বা দৃষ্টান্তহীন ব্যাপার নয়। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত দুনিয়ার সকল দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা অলিখিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতেই চলছি। বর্তমান সময় দুনিয়ার এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র- বৃটিশ সাম্রাজ্য- লিখিত শাসনতন্ত্র ছাড়াই  চলছে। ইংল্যাণ্ডের শাসতন্ত্র যদি কখনও লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, তখন অনিবার্যরূপে সেটাকে তার অলিখিত বিভিন্ন শাসনতান্তিক উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করে সেটাকে তার অলিখিত বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করে শাসনতন্ত্রের ধারাসমূহ শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে।সত্য কথা এই যে, আমাদেরকেও- সেই কাজই সুসংবদ্ধভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

 

ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন

সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড