ক্যারিয়ার বিকশিত জীবনের দ্বার

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে বিরাজমান অবস্থার নিরিখে তথ্য ও তত্ত্ব এবং বাস্তবতার সমন্বয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও চাকুরিপ্রার্থীদের উপকারের বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্যারিয়ার : বিকশিত জীবনের দ্বার সহায়ক গন্থটির পরিকল্পনা। এর প্রতিটি অধ্যায় জীবন অভিজ্ঞতার নানা বর্ণিল রঙে রঙিন। ফলে নিরস তথ্যের উপস্থাপন প্রক্রিয়াতেও আসেছে সৃজনশীলতার ছোঁয়া, যা একজন প্রাজ্ঞ পাঠক তথা অভিভাবকের কাছে যেমন আনন্দের তেমনি জ্ঞানের। অন্যদিকে জীবন ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার নির্যাস একজন শিক্ষার্থী কিংবা চাকুরিপ্রার্থীকে দিতে পারে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, যা তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় রাখবে অনন্য ভূমিকা।

এই বইয়ের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং পঞ্চম অধ্যায়ে আত্মবিশ্বাস আর সম্ভাবনা জাগানো এক একটি লেখা পাঠককে দাঁড় করাবে অভূতপূর্ব আত্মজাগরণের মখোমুখি। লেখার আন্তর্নিহিত শক্তিতে স্থবির মানুষও হয়ে উঠবে গতিশীল, প্রবৃদ্ধি আসবে ব্যক্তির যাপিত জীবনে এবং চিন্তায়। হতাশায় নিমজ্জিত যুবক খুঁজে পাবে তা কাঙ্ক্ষিত পাথেয়। ক্যারিয়ার ভাবনা জেগে উঠুক ব্যক্তির মনোজগতে, তা প্রবাহিত হোক সমগ্র জাতির জীবনে- জাতি মুক্তি পাক অদক্ষ এবং অপরিকল্পিত জনগোষ্ঠীর যন্ত্রনা থেকে।

অপার সম্ভাবনায় স্নাত আমাদের যুবসমাজ। পরিকল্পিত গন্তব্যের অভাবে এই সম্ভাবনা যেন সুতো ছেঁড়া ঘুড়ি আর বোটা আলগা ঝরা পাতার মত অনির্দেশ্য পথে এলোমেলো ঘুপাকে বিভ্রান্ত না হয়। এ রকম একটা মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়ানো আছে ক্যারিয়ার: বিকশিত জীবনের দ্বার- এর প্রতিটি পৃষ্ঠায়। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, যেন আমাদের এই উদ্দেশ্য ব্যর্থ না হয়।

সবশেষে আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা গুণীজনদের প্রতি যাঁরা সার্বিক তৎপরতায় শ্রম এবং সময় দিয়ে আমাদের কাজের মূল্যায়ন করেছেন, সূক্ষ্ম সমালোচনা এবং তীক্ষ্ণ বিবেচনায় সমৃদ্ধি এনেছেন ক্যারিয়ার: বিকশিত জীবনের দ্বার- এর প্রতিটি পদক্ষেপে। ঋণ স্বীকার করছি লেখন প্রাবন্ধিক জনাব আহসান হাবিব ইমরোজ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব কাজী বরকত আলী, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব ইদ্রিস আলী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জনাব সারোয়ার আলম, নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জনাব আবদুল্লাহির কাফি’র কাছে, যাঁদের লেখার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ পরশে ধন্য আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

সূচি পত্র

প্রথম অধ্যায়: ক্যারিয়ার প্লানিং-গুরুত্ব ও পদ্ধতি

ক্যারিয়ার কি

ক্যারিয়ার প্লানিং কেন প্রয়োজন

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পদ্ধতি

ক্যারিয়ার: স্তর বিন্যাস

ক্যারিয়ার ট্রি

দ্বিতীয় অধ্যায়: ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা

ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা

প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা

কারিগরি শিক্ষা

তৃতীয় অধ্যায়: ক্যারিয়ার গঠন প্রয়োজনীয় বিবেচনা

সফলতাই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়

সফলতার পূর্বশর্ত জীবনে ভারসাম্য

সময় ব্যবস্থাপনা

স্মরণ শক্তি: না জানা সব তথ্য

ইংরেজি: উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি

চাকুরি: প্রস্তুতি

বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষার কিভাবে সফল হবেন

চতুর্থ অধ্যায়: উচ্চাশিক্ষা- ক্যারিয়ারের সোপান

এমবিবিএস (MBBS)

ডেন্টাল সার্জারি

সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স

ইঞ্জিনিয়ারিং/ টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

ম্যাটেরিয়াল এন্ড মেটালরজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং

আর্কিটেকচার

নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং/ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি/ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং/ কম্পিউটার সায়েন্স

মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

আরবান এন্ড রেজিওন্যাল প্ল্যানিং

ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এন্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই)

কৃষি/মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও কৃষি সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়

(Agriculture/ Soil Science and Other Related Subjects)

পদর্থ বিজ্ঞান (Physics)

ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান (Applied Physics)

রসায়ন (Chemistry)

ফলিত রসায়ন (Applied Chemistry)

গণিত ও ফলিত গণিত (Mathematics & Applied Mathematics)

পরিসংখ্যান (Statistics)

ভূ-তত্ত্ব/ ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা (Geology/ Geology & Mining)

প্রাণিবিদ্যা (Zoology)

উদ্ভিদ বিজ্ঞান (Botany)

প্রাণ রসায়ন ও অনুজীব বিজ্ঞান (Biochemistry and Molecular Biology)

মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology)

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি

খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান (Food & Nutrition)

পপুলেশন সায়েন্স

ভুগোল (Geography)

মনোবিজ্ঞান (Psychology)

বিবিএ/ এমবিএ

অর্থনীতি (Economics)

আইন (Law)

ইংরেজি (English)

সমাজকল্যাণ/ সমাজকর্ম (Social welfare/ social work)

সমাজ বিজ্ঞান/ নৃ-বিজ্ঞান (Sociology/ Anthropology)

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relation)

লোকপ্রশান (Public Administration)

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (Mass Communication & journalism)

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (political Science)

বাংলা (Bangla)

শান্তি ও সংঘর্ষ (peace & Conflict)

ইতিহাস (History)

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (Islamic History & Culture)

উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ

দর্শন (Philosophy)

ইসলামিক স্টাডিজ

শিক্ষা ও গবেষণা (Education & Research)

আরবী/ ফার্সি (Arabic/ Persian)

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা

ডক্টরাল ও পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ

পঞ্চম অধ্যায়: পেশা পরিচিতি- প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

শিক্ষকতা

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)

বিসিএস: নমুনা বিজ্ঞপ্তি

গবেষণা পেশা

আইনজীবী

তথ্য প্রযুক্তি

চিকিৎসা পেশা

সাংবাদিকতা

মিডিয়া টেকনোলজি

এইচএসসি উত্তর সম্ভাবনাময় পেশাসমূহ

সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি

ব্যাংকার

অফিস এক্সিকিউটিভ

প্রশাসনিক কর্মকর্তা

ফার্মাসিস্ট

আত্ম কর্মসংস্থান/ ব্যবসা

চারুকলা

Appendix- Scholarship-

প্রথম অধ্যায়

ক্যারিয়ার প্লানিং: গুরুত্ব ও পদ্ধতি

ক্যারিয়ার কি

মস্তিষ্কজাত অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার সাথে সাথে মানবজাতিকে উপকৃত করাই ক্যারিয়ার ভাবনার মূল উদ্দেশ্য। ক্যারিয়ার শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। যেখানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ নেই, ক্যারিয়ার সেখানে অনুপস্থিত। এ কারণে অশিক্ষিত একজন কৃষক এবং শিক্ষিত একজন কৃষিবিদ যখন কৃষিকে জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে অবলম্বন করেন, তখন কৃষকের  জন্য কৃষি পেশা হলেও কৃষিবিদের জন্য তা ক্যারিয়ার। তাছাড়া, ক্যারিয়ার অর্থ শুধু পেশা নয়, পেশার অতিরিক্ত ব্যক্তির সহজাত গুণাবলী, জীবনের লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লালিত বিশ্বাস ও আদর্শ, সন্তুষ্টি, মানবিক দায়িত্ব, অর্থ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যারিয়ারে ওতপ্রোতভাবে অন্তর্ভূক্ত। বর্তমানে পেশাদারিত্বের (Professionalism) সাথে বৈশিক চেতান  (Globalisation) সংযুক্ত হওয়ায় career ভাবনায় আসছে নানামাত্রিক পরিবর্তন।

Career এর আভিধানিক অর্থ- জীবনের পথে অগ্রগতি, জীবনায়ন, বিকাশক্রম,  জীবিকা অর্জনের উপায় বা বৃত্তি ইত্যাদি। Cambridge International Dictionary of English-  এ ক্যারিয়ারের যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তা হলো- “শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত এমন এক কর্ম যেখানে ব্যক্তির সমগ্র কর্মজীবনে গুণগত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আসে, দায়িত্বের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবন যাপনে পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চিয়তা থাকে।”

তবে ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট মানুষের সাধনা ও গতিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। মূলত এর এভাবেই আমরা নিজকে একটি সুন্দর পর্যায়ে উন্নীত করতে পারি না। যে সময় পারস্য সম্রাজ্য ছিল বিশ্বব্যাপী এক অপরাজেয় শক্তি আর মুসলমানেরা ছিল হাতে গোনা সামান্য ক’জনার মিলিত শক্তি, ঠিক সেই সময়ই মুসলিম শক্তি কর্তৃক পারস্যের পদানত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল সা. । এটি একদিকে যেমন কাফেরদের হাসাহাসির কারণ হয়েছিল অপরদিকে মুসলমানদেরকে দীপ্ত সাহসী ও পরিশ্রমী করেছিল। আর এভাবেই পরবর্তিতে পারস্য বিজয় সম্পন্ন হয়েছিল। এক কাঠুরিয়াল ছেলে সুদৃঢ় স্বপ্ন দেখেছিল সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। সাধনার বলে তিনিই হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। সুতরাং ক্যারিয়ার অর্জন বা মৌলিক সাফল্যের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ববিজয়ী এক অনন্য বীর জুলিয়াস সিজার বলতেন, অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না, কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেটের দিকে তাকাতে পারে না।’

ক্যারিয়ার প্লানিং কেন প্রয়োজন

ভূমিকা

মানব উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা হওয়া উচিত। দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে সময়ের চাহিদা পূরণ এবং ব্যক্তির সামর্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় স্থান পাওয়া উচিত।

ইচ্ছা করলেই কি আমি সবকিছু হতে পারি? না তবে অনেক কিছুই হতে পারি। মনের শক্তি দিয়ে মানুষ যে রোগ ও দৈহিক পঙ্গুত্বকেও উপহাস করতে পারে তার প্রমাণ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। লিখতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না, দুরারোগ্য মোটর নিউরোন ব্যাধিতে ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে যেতেও তিনি বিশেষ ভাবে তৈরী কম্পিউটারের সহযোগিতায় রচনা করেছেন বর্তমান যুগের বিজ্ঞান জগতের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী গন্থ, এ ব্রীফ হিষ্ট্রি অব টাইম। হুইল চেয়ার থেকে তুলে যাকে বিছানায় নিতে হয় তিনি অবলীলায় মহাবিশ্ব পরিভ্রমণ করে উপহার দিয়েছেন বিশ্ব সৃষ্টির নতুন তত্ত্ব। আইনস্টাইনের পর তাঁকেই মনে করা হচ্ছে বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞানী। বিংশ শতাব্দির বিস্ময় আলবার্ট আইনস্টাইন দুই বার নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। তাঁর প্রদত্ত Theory of Relativity বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত বিশ্ববাসী ভাল করে বুঝতেই পারেনি। অথচ এই আবিষ্কারের ফলে প্রচলিত বহু বৈজ্ঞানিক সূত্রের পরিবর্তন ঘটাতে হয়েছে পরে। এই বিজ্ঞানী intermediate level- এর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম বছরে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। নেপোলিয়ন তাঁর ভাগ্য রেখা তৈরী করার জন্য নিজে নিজের হাতের তালু কেটেছিলেন একবার। তাঁর অদম্য স্পৃহা এবং অনড় আত্মবিশ্বাস তাঁকে একজন ইতিহাস জয়ী সমরিক অফিসার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছে। এবারে একটু rearrange করে দেখিতো তাদেরকে অর্থাৎ আইনস্টাইনের কর্মকাণ্ডে নেপোলিয়ান, আর যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি হিসাবে আইনস্টাইনকে দাঁড় করে। কাজ দুটোর কোনটিই যে সম্পন্ন হবে না তা নির্ঘাত বলা চলে। কিন্তু কেন?

বিভিন্ন পেশার দাবি বিভিন্ন

প্রকৃতপক্ষে এক এক পেশার দাবি এক এক ধরণের গুণাবলী। কে কোন পেশায় যাওয়ার জন্য উপযোগী তা নির্ধারিত হয়ে থাকে বহুলাংশে তাঁর সহজাত গুণাবলীর উপরে। এই গুণাবলী এবং  ব্যক্তিগত আগ্রহ ধরে হিসাব করতে হয় কে কোন পেশায় নিয়োজিত করবে নিজেকে। বর্তমান সময়ে জগৎটি বড় বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ দেশের অবস্থাতো আরও বেশি গুরুতর। জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের দেশে সুযোগ সুবিধা যথার্থই অপ্রতুল। এ অবস্থায় একটি সুন্দর পেশা অর্জন প্রকৃত অর্থেই সুকঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে এ দেশের যে কোন যুবকের পার্থিব জীবনের প্রয়োজনে এই অর্জটুকুর জন্যে ঘাম ঝরাতে হয় বহুদিন যাবৎ। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে? তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নেবার।

ক্যারিয়ার প্লানিং: কেন?

একটা উদাহরণ দেই এ পর্যায়ে। ধর তুমি ট্রেনে সিলেটে যাবে। এ উদ্দেশ্যে রেল স্টেশনে দিয়ে হাজির হয়েছো। ভুলবশত বা অন্য কোন কারণে জেনে নাওনি কোন ট্রেন সিলেটে যাবে। পাশাপাশি দুটো প্লাটফর্মে দাঁড়ানো দুটো ট্রেনের যে কোনটিতে উঠেই কি তুমি সিলেটে যেতে পারবে? না পারবে না। তোমার জীবনের ঈপ্সিত গন্তব্যস্থলেও পৌছার ব্যাপারে একই ধরনের সমস্যায় ফেলবে তোমাকে। সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে তোমাকে এবং সঠিক সময়েই তা নিতে হবে এই লক্ষ্যে পৌছার জন্যে। আর যদি লক্ষ্যই ঠিক না হয়ে থাকে তবে কোথায় যাবে তুমি শেষ পর্যন্ত? এভাবে এদেশের অধিকাংশ যুবকের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তহীনতা সমস্যা সৃষ্টি করছে সঠিক পেশায় পৌছার ব্যাপারে। তাই প্রয়োজন ক্যারিয়ার প্ল্যানিং অর্থাৎ প্রথমে পেশা নির্বাচন এবং পরে সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলা।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পদ্ধতি

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং

অদূর ভবিষ্যতে করণীয় কার্যসমষ্টির অগ্রিম সুচিন্তিত বিবরণই পরিকল্পনা। এটা আমরা কোথায় আছি এবং ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চাই তা মধ্যকার সেতুবন্ধন।

ক্যারিয়ার সংক্রন্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বস্তবায়নের পদ্ধতিকেই ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বলে। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং হচ্ছে জীবনব্যাপী একটা নিরন্তর প্রচেষ্টার নাম যা পেশা নির্ধারণ, চাকুরি, চাকুরির সাথে সাথে জীবনযাপন, চাকুরি থেকে অবসর, দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করে। বাস্তবসম্মত, সময়োপযোগী এবং পছন্দসই ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং মূলত সববয়সী মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং তাদের যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে। তাছাড়া শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও চাকুরি খোঁজার ক্ষেত্রেও একজন ক্যারিয়ার সচেতন মানুষের জন্য ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর সহযোগিতা অপরিহার্য।

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা: যেভাবে

প্রয়োজনীয় শিক্ষা শেষে কোন পেশার প্রবেশের পূর্বে একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। বাংলাদেশের চাকুরির বাজার তীব্র প্রতিযোগীতাপূর্ণ হওয়ায় এই পরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়টি সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ এবং বিবেচনাপসুত হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাকুরিপ্রার্থীদের চারস্তর বিশিষ্ট নিম্নলিখিত ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পদ্ধতিটি বিবেচনা করতে বলবো।

(ক) আত্মপ্রকৃতি যাচাই

নিজের প্রকৃতি বিরুদ্ধে কোন পেশা ব্যক্তির জীবনে সর্বাঙ্গীন সফলতা আনতে পারে না। এ কারণে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পদ্ধতির এই স্তরে একজন চাকুরিপ্রার্থীকে মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যাশিত চাকুরিটি যেন তার সহজাত পছন্দ বা আগ্রহ এবং আদর্শ, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের পরিপন্থী না হয় েএবং ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আদর্শকে লালন করার অধিকার ক্ষুণ্ন না করে। এছাড়া এ পর্বে শিক্ষা এবং শারীরিক ও মানসিক দক্ষতাকে সামনে রেখে পেশা পছন্দ করা জরুরি। কারণ শিক্ষা জীবনে অর্জিত বিষয়ই যদি কর্মক্ষেত্রের বিষয় হয় তাহলে সেক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়।

(খ) পেশা নির্বাচনের উপায়

সীমিত ধারণার উপর ভিত্তি করে ক্যারিয়ার হিসেবে কোন পেশাকে ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় নেওয়া উচিত নয়। কাঙ্ক্ষিত পেশাটি ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় স্থান দেওয়ার পূর্বে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পঠন-পাঠন পরীক্ষা খুবই জরুরি। পেশা সম্পর্কে ধারণা ও তথ্য সংগ্রহের জন্য যে বিষয়গুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে তা হলো-

সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ।

পেশাদার ক্যারিয়ার কাউন্সিলরদের কাউন্সিলিং (পরামর্শ)

পেশার ক্ষেত্রসমূহে (অফিস, আদালত মিল, ফ্যাক্টরি ইত্যাদি) সরেজমিনে ভ্রমণ।

খণ্ডকালীন চাকুরি, internships, volunteer সার্ভিসের মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্ট পেশা সম্পর্কে লিখিত বই এবং তথ্যবহুল সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।

(গ) পেশা নির্দিষ্ট কারণ

এই ধাপে একজন প্রার্থী-

সম্ভাব্য পেশাকে নির্দিষ্ট করবে

এই পেশাকে মূল্যায়ন করবে

ব্যতিক্রম কিছু থাকলে সেগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।

পেশা অর্জনের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় option ই নির্ধারণ করবে।

(ঘ) পেশা অর্জনের প্রয়োজনীয় উপকরণ

এ পর্বে একজন প্রার্থী প্রত্যাশিত চাকুরিটি পাবার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানগত এবং উপকরণগত উন্নতি করার চেষ্টা করবে। যেমন-

প্রয়োজনবোধে অতিরিক্ত শিক্ষা বা ট্রেনিং এর উৎসগুলো তদন্ত করবে।

চাকুরি খোঁজার কৌশল নির্ধারণ করবে।

Resume বা জীবনবৃত্তান্ত লিখবে।

চাকুরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নেবে।

ভাল আবেদনপত্র লেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।

প্রয়োজনে কোচিং এর সাহায্য নেবে।

ক্যারিয়ার: স্তর বিন্যাস

একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার পাঁচটি স্তরে পরিবাহিত হয়।

১। স্বপ্নময় স্তর/সময়

শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে কর্মজীবনে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সময়ই স্বপ্নময় সময়। অধিকাংশ মানুষ জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নময় সময় অতিক্রম করে। এসময় ক্যারিয়ার সম্পর্কিত নানা প্রত্যাশা বা স্বপ্ন একজন ব্যক্তির মনে জন্ম নেয়, যার অধিকাংশই অবাস্তব এবং অলীক। এইসব ক্যারিয়ার ভাবনা কয়েক বছরের মধ্যেই অপ্রাপ্তিতে রূপ নেয়। পরিণতিতে ব্যক্তি হাতশায় নিমজ্জিত হয়।

২। প্রতিষ্ঠার স্তর/সময়

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এ একজন ব্যক্তির শিক্ষা শেষে চাকুরি সন্ধান এবং প্রথম চাকুরি গ্রহণের সময়টা প্রতিষ্ঠার সময় হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ স্তরের মেয়াদ আনুমানিক ২৫ থেকে ৩৫ –এ দশ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

৩। মধ্যবর্তী স্তর/ সময়

ক্যরিয়ারের এ পর্যায়ে একজন ব্যক্তি তার কর্মতৎপরতায় ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধন করে অথবা স্থিতি পায় অথবা কর্মতৎপরতায় ভাটা পড়তে শুরু করে। ক্যারিয়ারে এই সময়টার মেয়াদই সবচেয়ে দীর্ঘ। এদেশে ৩৫ থেকে ৫৫ পর্যন্ত সময়কে আমরা একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর হিসেবে অভিহিত করতে পারি।

৪। স্থিতি স্তর/ সময়

ক্যারিয়ারের এই সময়টাকে একজন মানুষ তার পেশা সম্পর্কে নতুন কিছুই শেখে না, কিংবা শেখার আগ্রহও থাকেনা। এ পর্যায়ে ব্যক্তি তার কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়ায় পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কম দক্ষতার পরিচয় দিতে শুরু করে। সাধারণত ৫৫ থেকে ক্যারিয়ারে স্থিতির স্তর শুরু হয়ে যায়।

৫। সমাপ্তি

এ পর্বে কর্মজীবন শেষে অবসর গ্রহণ করে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা

ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা

ক্যারিয়ার গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষা। এই শিক্ষাই একজন ব্যক্তিকে প্রদান করবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক দক্ষতা। তবে বিশেষ কোন পেশার জন্য পাশাপাশি কিছু ট্রেনিং নিতে হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয় আনুমানিক ৫/৬ বৎসর বয়স হতে যখন শিক্ষার্থী নিজে নির্বাচন করতে পারে না তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাক্ষেত্র, বিদ্যালয় বা বিষয়সমূহ। এই কাজটুকু পিতা-মাতা বা অভিভাবকরাই করে থাকেন।

Imparting the most effective education-ই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য। অথচ এ ক্ষেত্রে অনকে ধরনের প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে, বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। এদেশে বেশ কয়েক ধরনের System রয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা গ্রহনের জন্যে একজন মানব শিশু তার শিক্ষা শুরু করতে পারে স্কুল থেকে অথবা বিকল্প হিসেবে মাদ্রাসায় গিয়ে।

আমাদের দেশেক স্কুল কলেজে পড়াশনার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে নানা কারণে। এ পর্যায়ে সিলেবাসের পার্থক্য হয়ে থাকে এবং সে কারণেই দেশীয় কারিকলাম এবং বৃটিশ কারিকলামে ভিন্নতা। দেশীয়  কারিকালামের ক্ষেত্রে আবার বাংলা মিডিয়াম এবং ইংরেজি মিডিয়ামের বিভেদ।

বাংলা মিডিয়ামের ক্ষেত্রে আবার সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর পার্থক্য। সাধারণভাবে বলা চলে এদেশে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহে তত্ত্বাবধান অপেক্ষাকৃত ভাল হয়ে থাকে। প্রধানত এ কারণেই সরকারি ফ্রি প্রাইমারি স্কুলসমূহের তুলনায় বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন সিস্টেম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়াশুনার মান উন্নততর। এক্ষেত্রে শিক্ষাকদের মান, তাদের sincerity কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহনের দ্রুততা, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রদানে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে সফলতা ইত্যাদি বিষয়সমূহ (factors) জড়িত।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষার মান যে পর্যায়ে নেমে দিয়েছিল জাতি তা এখনও সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছি আমরা ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে। ভাষার দক্ষতার এই ঘাটতির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নানা ভারব পিছিয়ে পড়ছে আজকাল। বর্তমান সময়ে তাই কোন কোন ক্ষেত্রে ভাষায় দক্ষতা অর্জন স্কুল কালেজের স্টান্ডার্ড নিরূপণের মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রধাণত এ জন্যেই অনেকে ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝূঁকে পড়ছেন, আজকাল, এবং তা সঙ্গত কারনেই।

এদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসমূহে বৃটিশ কারিকুলাম এবং বাংলাদেশী কারিকুলাম উভয় পদ্ধতিরই প্রয়োগ রয়েছে। এই পদ্ধতিদ্বয়ের সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে অনেকের কাছেই। বৃটিশ কারিকুলামে পড়াশুনা করেছে এমন শিক্ষার্থীরা এ দেশের উচ্চ শিক্ষায় ভালভাবে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। যারা এদেশেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য বাংলাদেশের কারিকুলামের ইংলিশ মিডিয়ামই সর্বাপেক্ষা ভাল। পক্ষান্তরে এদেশে HSC বা A level করে বিদেশে যেয়ে গ্রাজুয়েশন করতে আগ্রহী কোন শিক্ষার্থীর জন্য তুলনামূলকভাবে A level system এ পড়াশুনা করা অনেক বেশি সুবিধাজনক।

কোর্স কারিকুলামে ভিন্নতার কারণে বাংলাদেশে বিদ্যমান মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়ও রয়েছে নানা প্রকার ভেদ। মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর জন্য সুবিধা হয় ধর্মীয় বিষয়সমূহ জানতে। কিন্তু এই সকল সুবিধার পাশাপাশি অনেকগুলো অসুবিধাও রয়েছে। যেমন:

(ক) এদেশে মাদরাসার সিলেবাস, কারিকুলামকে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে সাজানো হয়নি।

(খ) এই সময়ের দাবি বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলো তাঁর কম প্রাধান্য দিয়ে পড়িয়ে থাকেন। ফলশ্রুতিতে মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।

(গ) এদেশের মাদরাসার শিক্ষা আবার problem oriented ও হচ্ছে না।

এই সমস্যাগুলো শুধুমাত্র আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে পযোজ্য-  অন্য দেশগুলোতে এমন নয়। মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় জীবনের শুরুতে কোন শিক্ষার্থীকে প্রথমেই মাদরাসায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তখন সে ইউরোপ বা আমেরিকার একজন গ্রাজুয়েটর সমমানে অবস্থান করে থাকে, এমনকি modern practical বিষয়গুলোতে। এ দেশের ক্ষেত্রে এই ব্যর্থতার কারণসমূহ হচ্ছে যেমন একদিকে সিলেবাস কারিকুলামে ঘাটতি অন্যদিকে আবার পদ্ধতিগত ঘাটতি, পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি; সর্বোপরি একজন ছাত্র-ছাত্রীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করার মানসে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান প্রদানে ব্যর্থতা। এ সকল সমস্যা উত্তরণের জন্য অনেক বুদ্ধিমান অভিভাবক তাদের সন্তানকে প্রাথমিকভাবে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন এবং বাসায় আলাদাভাবে ধর্মীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা করে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে ঘটতিটুকু পূরণ করেন।

এভাবে হিসাব মেলানোর পরে সব শেষে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানের প্রশ্ন। ভাল ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে ভাল প্রতিষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। তাই অভিভাবককে এ বিষয় সর্বাপেক্ষা বেশি নজর দিতে হয়ে সঙ্গত করনেই। বুদ্ধিমান পিতা-মাতা অনেক কিছুকে বিসর্জন দিচ্ছেন এই অর্জনটুকুকে ধরার জন্যে। পিতা-মাতাকে মনে রাখতে হবে বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাল অর্জন হচ্ছে-

(ক) সর্বপ্রকার ভাষার (বাংলা এবং ইংরেজি) উপরে দক্ষতা অর্জন। এ ক্ষেত্রে লিখিত এবং কখ্য উভয় দিকই বিবেচনায় রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য Creative writing খুবই উপযোগী। এ বয়সের কোন শিক্ষার্থী তার পরিচিত কোন বিষয়ে নিজে বানিয়ে লেখার দক্ষতা অর্জন করবে সেটাই কাম্য হওয়া উচিত।  বর্তমান সময়ের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় িএই বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে এমন কি পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য পুস্তকে কোন গদ্য বা পদ্য থেকে শিক্ষার্থী নিজে বানিয়ে উত্তর দিবে এমন বর্ণনামূলক প্রশ্ন মাদরাসাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বইতে কমই দেওয়া হয়েছে। অভিভাবক- অভিভাবকাকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে বাড়িতে বাড়তি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে অথবা বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিজে কাজটি করবেন গুরুত্বের এবং সতর্কতার সাথে।

(খ) উপরে উল্লেখিত বয়সে বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্জন নিরূপণের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে গণিতের উপর দক্ষতা অর্জন। এদেশে অনেকের জন্য গণিত ভীতি সাধারণ (common) ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। সাধারণভাবে বলা চলে বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে ভাল মানের শিক্ষকের অভাবই সমস্যাটিকে সৃষ্টি করছে মূলতঃ। এই সমস্যাটাকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যে শিক্ষার্থী ছোট কাল হতে ভালভাবে বুঝে অংক করতে শিখবে না ভবিষ্যতে জীবনে সে বিজ্ঞান বা কমার্স দুটো অনুষদের বিষয়সমূহ হতে পিছিয়ে পড়বে। যারা ভাল অংক করতে পারে তাদের মধ্যে এ ধরনের (reasoning) তৈরি হয়ে যার ফলে তাদের ব্যক্তিত্বও অনেকটা প্রভাবিত হয়ে থাকে। মূলত এ কারণেই  USA-এর মিলিটারি একাডেমীতে plebe Maths নামক একটি বিষয় রাখা হয়েছে সকল ক্যাডেটের জন্য। ‍গুরুত্বের সাথে বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয় সেখানে। গণিতের উপরে গুরুত্বের অভাব বর্তমান সময়ে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠার জন্যে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা হতে হবে একাধারে যেমন বিদ্যালয়/মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আবার বাড়িতে অভিভাবককে। যে সমস্ত অভিভাবক মাদরাসাকেই নির্বাচন করবেন বিদ্যাপিঠ হিসেবে তাদের উচিৎ হবে এই বিষয়ে শিক্ষা দানের জন্য বাড়িতে বাড়তি ব্যবস্থা করা।

এদেশে বড় বড় শহরগুলোতে আজকাল বেশ কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে play Group (PG) শ্রেণীতে এ স্কুলে ভর্তি করে কায়েকটি বছর (আনুমানিক Std 3 পর্যন্ত) এখাবে রেখে এবং এর পরে স্কুলে পরিবর্তন করে ভাল বাংলা মিডিয়ামক স্কুলে স্থানান্তার করে উভয়  System–এর সুবিধা নিচ্ছেন কেউ কেউ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে অনেক গুলো সুবিধা দিয়ে থাকে।

PG থেকে ক্লাস 3 পর্যন্ত শিক্ষার সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো-

(ক) ক্লাসের সাথে বয়সের সঠিক সামঞ্জস্য রাখতে হবে। কোন ক্রমেই বয়সের তুলনায় শিক্ষার্থীকে উপরের ক্লাসে উঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।

(খ) শিক্ষার্থীর মনের উপরে চাপ দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। বরং শিক্ষা দান পদ্ধতি যেন এমন হয় যে শিক্ষার্থী আনন্দ ঘন পরিবেশে শিখতে পারে।

(গ) এই বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় অর্জন হতে হবে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার (লিখিত ও কথ্য উভয় ক্ষেত্রেই) দক্ষতা অর্জন করা।

চতুর্থ শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম শ্রেণীতে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন গ্রুপে (আর্টস, সাইন্স, কমার্স) বিভক্ত হয়ে যায়। সাধারণত এর পূর্বের সময়টার জন্য শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয় একই থাকে। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভেদের কথা আগেই বিবৃত হয়েছে। এবারে যদি আমরা একটা বিশেষ প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগ নিবেশ করি তাহলে আমাদের আলোচনা নিম্নরূপ হবে।

চতুর্থ শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সময় অর্থাৎ সর্বমোট পাঁচটি বছর পরো জীবনের প্রেক্ষিতে খুব বড় ব্যাপ্তি না হলেও এ সময়টা অবশ্যই খুবই মূল্যবান। মানব জীবনের এই সময়ের ক্ষুরধার মেধা এর পরবর্তী বা পূর্ববর্তী জীবনে আর কখনও পাওয়া সম্ভব নয়। এ সময়েই কোন শিক্ষার্থী তার জীবনের বহু মূল্যবান জ্ঞানের সংস্পর্শে আসে। এ সময়ে যারা তাদের সমস্ত সুযোগকে একত্রীভুত করে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তারাই জীবন যুদ্ধে বিজয়ীর আসনে আসীন হয়। এ ব্যাপারে অভিভাকের নিখুঁত পরিকল্পনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত ক্রিয়া করে ছেলেমেয়েদের উপর। এ সময় যেসব ছাত্র- ছাত্রীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকের সান্নিধ্য, সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধান পায় তারাই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যায় পরিপূর্ণভাবে। এর সাথে যদি যুক্ত হয় ব্যক্তির অদম্য স্পৃহা এবং নিরলস প্রচেষ্টা তাহলে সম্ভব হয় ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানো।

এ বয়সের মধ্যেই একটা সময়ে শিক্ষার্থী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র অর্জন করতে পারে, যার ‍উপরে নির্ভর করে সে বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদাভাবে জীবন যাপন করতে শেখে। সেজন্য সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী থাকাকালীন কোন কোন বালাক-বালিকাকে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ক্যাডেট কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে কোন কোন ছেলে-মেয়েকে আবার বাংলাদেশ ক্রীয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (BKSP) ভর্তির জন্য আলাদা করে ফেলা হয় এ বয়সেই। এদিক থেকে চিন্তা করলে এ সময়টা তাদের জন্য বিশেষভাবে অর্থবহ যারা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার হিসাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে বা পেশা হিসেবে খেলাধলাকে বেছে নিতে চান। এদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীতে অফিসার হতে পারা একটি উন্নত মানের পেশা গ্রহনের সুযোগ পাওয়ার নামান্তর মাত্র। বর্তমান সময়ে ডিফেন্স সার্ভিস যারা অফিসার হিসাবে নির্বচিত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই ক্যাডেট কলেজ ব্যাকগ্রাউন রয়েছে। সেদিন হতে বিবেচনা করলে বলা চলে সামরিক বাহিনীতে চাকুরিকে যারা বেছে নিবেন ভবিষ্যতে, তাদের টার্গেট হওয়া উচিত ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনার ‍সুযোগ গ্রহণ করা।

বয়সের বিষয় বিবেচনা করলে এই সময়টা আলাদাভাবেই গুরুত্ব বহন করে। এ সময়েই কোন ব্যক্তি তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বেশি বিকাশের সুযোগ পেয়ে থাকে। Teen age হচ্ছে বয়সন্ধিকাল। এ সময়ের demand ব্যকিক্রমধর্মী এবং নানাবিধ। বালক-বালিকাদের মানসিক ও দৈহিক বিকাশের পাশাপাশি কিছু বাড়তি বিষয়ে সমস্যাগ্রন্থ করে ফেলে এই বয়স। এই সময়ে তাই পিতা-মাতা বা অভিভাবককে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে তাদের ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে। বালক-বালিকারা এ বয়সে যথেষ্ট Sensitive থাকে।

মানব জীবনের সম্পূর্ণ দৈহিক বিকাশের বেশির ভাগই সম্পন্ন হয়ে থাকে এই বয়স কালের মধ্যে। এই ব্যাপারটাও বিবেচনায় আসা উচিৎ। সেজন্যে এ বয়সে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে হয়। শিক্ষা জীবনের মোট তিনটি দিক রয়েছে- তা হলো একাডেমিক পড়াশুনা, সুস্বাস্থ্য অর্জন এবং চরিত্র গঠন। ৪র্থ শ্রেণী হতে ৮ম শ্রেণী সময়কালে শেষোক্ত দুটি বিষয়কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে যদি কেউ প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয় তবে এ সময়েও কিছু পদস্খলন হতে পারে, যা ব্যক্তির জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে।

ক্যাডেট কলেজ এবং BKSP তে পড়াশুনা

এ পর্যায়ে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি এবং সেখান থেকে পড়াশুনা করা সম্পূর্কে কয়েকটি কথা বলা উচিৎ। ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম এ দেশের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী সিস্টেমই বটে। এই ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্য পুস্তক নির্ভর পড়াশুনা বাইরেও বাড়তি কিছু ট্রেনিং (মিলিটারী ট্রেনিং এর আদলে) দেওয়া হয় যা ভবিষ্যতে মিলিটারী সার্ভিসের উপযোগী করে গড়ে তোলার মানসিকতা তৈরী করে। এই ট্রেনিং বেশ কষ্টসাধ্য হওয়ার কারনে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কোন এক সময়ে। প্রাথমিক দিনগুলোতে বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পছন্দ করে না কেউ কেউ, অবশ্য পরে তা ধাতস্থ হয়ে যায়। এ সকল negative দিক এ পাশাপাশি অনেক গুলো ভাল দিকও রয়েছে ক্যাডেট কলেজ সিস্টিম-এ। ক্যাডেট কলেজ একজন ছাত্র/ছাত্রীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপন্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে থাকে। এই ট্রেনিং তাকে কষ্ট সহিষ্ণু করে তৈরী করে, তার মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা সৃষ্টি করে এবং সর্বোপরি অন্যের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে আনে। কেউ কেউ বেল থাকেন যে ক্যাডেট কলেজে অধ্যয়ন শেষে কোন শিক্ষার্থী আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে এবং অল্প বয়সে পরিবার ছেড়ে দুরে থাকার ফলে তাদের মধ্যে মমত্ব বোধ কমে যায় বহুলাংশে। সম্ভবত এটাই প্রয়োজন একজন সামরিক অফিসার হওয়ার জন্যে।

বর্তমান বিশ্বে খেলাধূলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা বেড়েছে বেশ কিছুটা। আমাদের দেশেও এর ঢেউ এসে লেগেছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশে BKSP নামে একটি ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রী খেলাধূলা শেখার পাশাপাশি Academic পড়াশুনাও চালিয়ে যায়। BKSP –তে HSC পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এখানকার সিস্টেমের কিছুটা মিল রয়েছে ক্যাডেট কালেজের সিস্টেমের সাথে। তবে ফলাফলের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে আবার। ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করলে মিলিটারি অফিসার হওয়া সহজতর হয়। এবং BKSP এর ছাত্র-ছাত্রীরা পরবর্তিকালে ভাল মানের খেলোয়াড় হতে পারে। পেশা হিসাবে খেলাধূলাকে গ্রহণ করে জীবনের খুব বেশি বয়স পার করা যায় না বলে অনেকে BKSP–তে পড়াশুনার পক্ষে মত দেন না।

বিষয় নির্বাচন

ক্যারিয়ার গঠনের প্রস্তুতিকল্পে বিষয় নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা রেখে থাকে। ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে যে বিষয়ের প্রয়োজন সেটা যেমন লক্ষ্মণীয় ব্যাপার, পাশাপাশি সে ব্যপারে শিক্ষার্থীর আগ্রহ আদৌ রয়েছে কিনা তাও ধর্তব্যের বিষয়।

একটি জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেগুলোতে যারা ভবিষ্যত নেতৃত্ব প্রদান করবেন তাদের মানসগঠন (Mind-set) নির্ভর করে যথাযথ শিক্ষার উপর। এ কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা পর্যায় প্রাথমিক শিক্ষার পর মাধ্যমিক শিক্ষার মাঝামাঝিতে অর্থাৎ নবম শ্রেণীর শুরুতে একজন শিক্ষার্থীকে বেছে নিতে হয় তার পছন্দের বিভাগ অর্থাৎ মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা নাকি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হবে সে। উচ্চ শিক্ষা যদি ক্যারিয়ারের সোপান হয় তবে সেই সোপানের শুরু এ বিভাগ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার মাধ্যমে হওয়া উচিত এবং এখানে শিক্ষার্থীর অভিপ্রায়, সহজাত আগ্রহ এবং অনুরাগ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতি অভিভাবক এবং শিক্ষকদের উদাসীনতা একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।

নবম শ্রেণী, একাদশ শ্রেণী এবং স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে বিষয় (subject) নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণভাবে যে সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন তা হলো-

(ক) অংকে ভাল এবং বিজ্ঞানে আগ্রহী না হলে কারো বিজ্ঞান গ্রুপে যাওয়া উচিৎ নয়। অবশ্য এর পাশাপাশি আরও প্রয়োজন হলো কঠোর পরিশ্রমের ইচ্ছা এবং যোগ্যতা, বিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে জানার প্রবল ইচ্ছা, শান্ত এবং ধীর-স্থির মেজাজ এবং বিজ্ঞানের খুঁটি নাটি নিয়ে ধৈর্যসহকারে চিন্তা করার মত একটি আগ্রহী ও অনুসন্ধিৎসু মন।

(খ) কলা ও মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়সমূহ অধ্যয়নের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন দীর্ঘ লেখার (Writing) যোগ্যতা, কল্পনাপ্রবণতা, Critical মন এবং নির্বাচিত বিষয়ে অধ্যয়নের আগ্রহ।

(গ) বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন ধীর-স্থির স্বভাব এবং দূরদৃষ্টি। বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন আত্মপ্রত্যয়ী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ যার ব্যবস্থাপক হওয়ার যোগ্যতা এবং ঝাঁক রয়েছে সে বাণিজ্য অনুষদে পড়াশুনা করলে ভাল করতে পারবে।

বিষয় নির্বাচনে অনেকে ভুল করে থাকেন নানাভাবে। েএ সকল ভুলের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল হলো অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করার সুযোগ সন্ধান। যে বিষয়ে অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করা যায় সেটা আবার ভাল ফল দিতে পারবে এটাই বা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তাই যদি সত্য হতো তাহলে বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে অনেকেই সে ধরনের সিদ্ধান্তিই নিত। যে প্রাপ্তি পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জন করা সম্ভব তা সহজেই ভঙ্গুর হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই জগতের নিয়ম। দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত লাউয়ের লিক লিকে ডগা কি কখনও শাল বৃক্ষের শত বছরের আয়ুস্কাল অর্জনে সমর্থ হয়? প্রকৃতপক্ষে এদেশে যেখানে বেকার সমস্যা প্রকট সেখানে অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেকার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই।

ক্যারিয়ার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ যেমন দূরুহ ব্যাপার, পাশাপাশি তার বস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিশ্রম। এ পর্যায়ে একটি উদাহরণ। সত্তর দশকের পূর্ব পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানে সিএসপি অফিসার হওয়াকে অনেকেই প্রথম টার্গেট হিসাবে গণ্য করতেন। ব্যাপারটা বাস্তবিকই সত্য ছিল তখন। সম্মান, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান, সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এই চাকুরি তখনকার সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ টার্গেট ছিল। যারা ভবিষ্যতে সিএসপি অফিসার হবেন বলে পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন তাদের অনেকেই নবম শ্রেণী হতেই এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করতেন প্রকারান্তরে। এসএসসি পর্যায়ে তাদের অনেকে বিজ্ঞান গ্রুপের ছাত্র হতেন। এ সময়ে পঠিত বিষয়ের মধ্যে বিশেষ করে গণিত এবং বিজ্ঞান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস (সিএস এস) পরীক্ষার এই দুটো বিষয়ে ভাল করতে সাহায্য করতো। বিজ্ঞান পড়ার মানসে তারা এ পর্যায়ে বিজ্ঞান নিতেন না। এইচএসসি পর্যায়ে তারা আর্টস নিতেন এবং বিষয় নির্বাচনে ইংরেজি, General History (ইতিহাস), অর্থনীতি এর প্রাধান্য দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে এ সমস্ত বিষয়ের কোন একটিকে বেছে নিতেন। এভাবে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোন বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করতেন কিছু দিনের জন্য। উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত: কলেজে শিক্ষকতার কাজে অফুরন্ত সময় পাওয়া যেত সিএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত: কলেজের অধ্যাপনা প্রার্থীকে সুন্দরভাবে কথা বলার আর্ট রপ্ত করতে, বক্তৃতা দিতে উপরোন্ত মানুষকে convince করতে সহায়তা করতো। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে কলেজে অধ্যাপনার আনুমানিক দুই/তিনটি বছর পর্যন্ত সময় ছিল তাদের সিএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। প্রকৃতপক্ষে পেশা নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম দাবি করে এতটা নিখুঁত পরিকল্পনা। এর সাথে বাড়তি প্রয়োজন হচ্ছে প্রবল আগ্রহ আর ইস্পাত কঠিন মনোবল ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর। মনে রাখতে হবে জীবনের সাফল্য সবার জন্য নয়, শুধুমাত্র অকুতোভয় সৈনিক তার যোগ্যতা বলে ছিনিয়ে আনতে পারে বহু প্রতীক্ষিত এ ধরনের সাফল্য। এক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায় ভাগ্য কি তাকে টেনে নিয়ে যাবে অজনা কোথাও, নাকি সে তার প্রচেষ্টায় ভাগ্যকে টেনে এনে দাঁড় করবে তার পাশে।

এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশুনা

আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গঠন প্রক্রিয়ায় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় এইচএসসি লেভেল ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে কিনা। এসএসসি লেভেল পড়াশুনার বিষয় নির্বাচনে। এভাবে পরবর্তিতে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে কলেজে পড়াশুনা করার সময়ে সরকারি বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ভি এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসির ফলাফলের চেয়েও এইচএসসি লেভেল পরীক্ষার গুরুত্ব অধিকতর। এই ফলাফলের গুরুত্ব বর্তায় ভর্তি প্রক্রিয়ার উপরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বৃত্তি পাওয়ার উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স লেভেলের পড়া শেষ করার পর শিক্ষার্থী নতুন করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে যাবে, নাকি চাকুরি খুঁজবে এই উভয় ক্ষেত্রে আবার এসএসসি এবং এইচএসসি ফলাফল গুরুত্ব বহন করে থাকে। এভাবে হিসাব করলে দেখা যায় এই দুটো পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট কোন ব্যক্তির সারা জীবনের জন্য সঞ্চয় হয়ে থাকে।

এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট অর্জন করার জন্য প্রয়োজন-

ক) বেসিক বিষয়গুলোতে ভাল মানের জ্ঞান।

খ) বিশেষ করে ভাষার উপরে দখল।

গ) নিয়মিত পড়াশুনা করা।

ঘ) সময়ের সঠিক এবং সদ্ব্যবহার।

ঙ) সম্যকভাবে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রচষ্টা হওয়া।

চ) সর্বোপরি বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষাসমূহে অংশ গ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি।

এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে Critical analysis করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে বিষয়ের প্রয়োজগিক দিক এবং ব্যক্তির ভবিষ্যত পরিকল্পনা অবশ্যই যথাযথ গুরুত্ব বহন করে।

প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা

এদেশে সরকারি পর্যায়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র-ছা্ত্রীদের জন্যে প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষা এবং ৮ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিছু বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এসকল বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে সাহসের এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যে সাহস ও অনুপ্রেরণার সঞ্চার হয় তা বহুলাংশে তাদের পরবর্তি জীবনের চলার পথের পাথেয় হিসেবে কাজ করে। Morning shows the day -তাই জীবনের উষা লগ্নের এই প্রথম কিছু সফলতা ছাত্র জীবনের বাকী অংশের সকল কা্র্মকান্ডে প্রভাব বিস্তার করবে এটাই কাম্য। এভাবে হিসেব মিলিয়ে ছাত্র জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও কিছু বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতা মনোভাবাপন্নতা শৈশব-কৈশরের আর একটি ধর্ম। বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের পিছনে অন্য সকল যুক্তির মধ্যে এটাও একটা জোরালো যুক্তি বটে যে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লেখাপড়ার ব্যাপারে জোরালো মনোভাব সৃষ্টি হবে। যার কারণে এক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ দীর্ঘায়িত, সুসংহত এবং বেগবান হবে। সমাজ এবং জাতীয় জীবনে সামষ্টিকভাবে এর সুপ্রভাব পড়বে ব্যক্তি পর্যায়ের উত্তোরণের ফলাফল ধরে।

বৃত্তি প্রাপ্তদেরকে পুরস্কৃত করা হয় আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। এই সুবিধা শুধুই যে প্রেরণা যোগায় তা নয়; মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে বৃত্তির অর্থ একটা বড় ধরনের সহযোগিতাই বটে।

প্রাথমিক বৃত্তির হার ও সময়কাল

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ এ দুটি গ্রেডে বৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ১ জন ছেলে ও ১ জন মেয়েকে সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এবং মেধাবৃত্তির জন্য ৪০০০ টি কোটা বরাদ্দ রাখা হয় প্রতি বছরে। যে কোন একটি ইউনিয়নের অধীন এক বা একাধিক পরীক্ষার্থী যারা অধিক ভাল ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয় তাদেরক ট্যালেন্টপুল বৃত্তি প্রদান করা হয়। দুই গ্রেডে বৃত্তির হার পরের পৃষ্ঠায় দেয়া হলো।

ট্যালেন্টপুল এবং সাধারণ –এই উভয় উভয় ক্ষেত্রেই বৃত্তির মেয়াদ ৩ বছর। এ হিসেবে ট্যালন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী বছরে মোট ১৯২০ টাকা করে তিন বছরে সর্বমোট ৫,৭৬০ + ৩০০ = ৬,০৬০/- টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী বছরে মোট ১২০০ টাকা হারে তিন বছরে সর্বমোট ৩,৬০০ + ৩০০ = ৩,৯০০/- টাকা বৃত্তির অর্থ পাবে।

ট্যালেন্টপুল বৃত্তি                                                                                     সাধারণ বৃত্তি
বৃত্তির হার এককালীন সাহায্য বৃত্তির হার এককালীন সাহায্য
মাসিক টাকা- ১৬০ প্রতি বছর টাকা- ১০০ মাসিক টাকা-১০০ প্রতি বছর টাকা-১০০

জুনিয়র বৃত্তির হার ও ব্যাপ্তিকাল

আঞ্চলিক উপ-পরিচালক কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত কোটা অনুসারে টেলেন্টপুল ও সাধারণ এ দুটি গ্রেডে জুনিয়র বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৫৯৪ টি টেলেন্টপুল বা মেধাবৃত্তি এবং ৫০০০ টি সাধারণ বৃত্তি, যা থানা ওয়ারী ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে থানাসমূহের মধ্যে বণ্টন করা হয়। যদি কোন থানা বা উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী না থাকে তাহলে পাশের থানা বা জেলার সম্পূরক বৃত্তি হিসেবে এই বাড়তি বৃত্তিগুলো বন্টন করা হয়। মেধাবৃত্তির সর্বনিম্ন যোগ্যতা ৬০% নম্বর এবং সাধারণ বৃত্তির যোগ্যতা সর্বনিম্ন ৪৫% নম্বর। দুই গ্রেডে বৃত্তির হার ও মেয়াদ নিম্নরূপ-

ট্যালেন্টপুল বৃত্তি                                                                                     সাধারণ বৃত্তি
বৃত্তির হার এককালীন প্রদেয় বৃত্তির হার এককালীন প্রদেয়
মাসিক টাকা- ২৫০ ২য় বছর: টাকা- ২০০

 

১ম বছর: টাকা- ৩০০

মাসিক টাকা-১৫০ ১ম বছর: টাকা-১৫০

 

২য় বছর: টাকা- ১৫০

উভয়ক্ষেত্রেই বৃত্তির মেয়াদ ২ বছর। এ হিসেবে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী ১ম বছরে মোট ৩৩০০ টাকা, ২য় বছরে মোট ৩২০০ টাকা, অর্থাৎ সর্বমোট ৬৫০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী ১ম বছরে মোট ১৯৫০ টাকা, ২য় বছরে মোট ১৯৫০ টাকা, (সর্বমোট ৩৯০০ টাকা) বৃত্তির অর্থ পেয়ে থাকে।

বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষা আলাদা

বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা। বার্ষিক পরীক্ষায় একটি ক্ষুদ্র গণ্ডিতে একটি মাত্র স্কুলের অল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এখানে ন্যূনতম পাস নম্বর পেলেই উত্তীর্ণ হওয়া যায়। আর বৃত্তি পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলের বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তুমূল প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এখানে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের মধ্য থেকে মেধা অনুসারে কোটাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করা হয়। একারণে বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। যেহেতু বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন, সামাজিক সম্মান ও আত্মগৌরব স্বীকৃত হয়, তাই এখানে সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে। এই প্রতিযোগিতায় যারা ভাল করে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তারাই সাফল্য অর্জন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই প্রস্তুতি নিতে হবে?

কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে

বৃত্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি প্রয়োজনীয় পয়েন্ট নিম্নে প্রদত্ত হলো।

এই পরীক্ষায় সফলতা অর্জনের জন্য বছরের প্রথম থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করতে হবে। এ ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কোন কাজে সফলতা অর্জন করা যায় না। পূর্ব প্রস্তুতির ওপরই পরীক্ষার সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের জন্য এ সময় থেকেই রুটিন মাফিক পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।

নিয়মিত পড়াশুনা করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা উচিত। মূলত ছাত্রজীবনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সময়ের সদ্ব্যবহারের উপর।

বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাসভুক্ত সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে একটু বেশি পরিশ্রম করলেই অন্যদের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। সে কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের এদিকে সজাগ থাকতে হবে।

গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কেননা অমনোযোগী হলে পড়া মুখস্থ হয় না এবং এ ধরনের পড়া মনে রাখাও যায় না।

পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি পাঠ মনোযোগের সাথে পড়ে পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে হবে। এতে পরীক্ষার সময় যে কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

যেটুকু পড়া আয়ত্তে আসবে তা বারবার খাতায় লিখতে হবে। এতে পরীক্ষার সময় উত্তর প্রদান করা সহজ হয়।

হাতের লেখা সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে হবে, কেননা সুন্দর হাতের লেখা অধিক নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।

বানান বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে; ভুল বানান মানেই পরীক্ষকের বিরাগভাজন হওয়া।

পাঠ্য বইয়ের সম্পূর্ণ অংশ আত্মস্থ করতে হবে। প্রয়োজনে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের চর্চা করতে হবে।

চিত্র সম্বলিত প্রশ্নোত্তরের চিত্রগুলো বারবার আঁকার চর্চা করতে হবে। এতে পরীক্ষার খাতায় চিত্র আঁকা সহজ হবে।

অবসর সময়ে চিত্রাঙ্কন, শিক্ষামূলক ম্যাগাজিন ও দৈনিক সংবাদপত্রের শিক্ষামূলক অধ্যায়টি পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ের ওপর কত নম্বরের পরীক্ষা হবে তা জেনে নিতে হবে।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।

সর্বোপরি সর্বদা ক্লাস শিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা

কারিগরি শিক্ষা বা টেকনিক্যাল এডুকেশন বলতে সাধারনত হাতে-কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাকে বুঝানো হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সাধারণ মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়গুলো শেখানো হয় তার যান্ত্রিক বাস্তবায়নের নামই কারিগরি শিক্ষা। পাঠ্যপুস্তকের সাথে প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ, দক্ষতা আর মেধার সমন্বয় সৃজনশীল উৎপাদনমুখী কার্যক্রমই হল কারিগরি শিক্ষা।

নবম শ্রেণী থেকে কারিগরি শিক্ষা শুরু হয়। এদেশে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে পড়াশোনা করানো হয়। অন্যদিকে এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করানোর ব্যবস্থা করা হয়।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে আগে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করানো হলেও সময়ের দাবিতে এসব কোর্সের কলেবর বৃদ্ধি করে বর্তমান চার বছর মেয়াদী কোর্স পড়ানো হচ্ছে। এসব কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা ডেপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সহজেই দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় চাকরি পেয়ে থাকলেও বিএসসি ইঞ্জিলিয়ারদের মত সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পেতে সক্ষম হন না।

তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET) এবং কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রবর্তন করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে DUET এ ভর্তির সুযোগ অর্জন করতে হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, কৃষি, ডেন্টাল বিষয়ে যে টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় সে সব ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভর্তির সুযোগ থাকে না।

যাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা

অপেক্ষাকৃত কম খরচ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা পদ্ধতির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্যে এ শিক্ষা উপযোগী এবং কার্যকর।

কারিগরি শিক্ষায় কাজটাই আসল। তাই এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে কাজের দক্ষতা। যে যতো ভাল কাজ করবে সে ততো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। এছাড়া সাধারণ শিক্ষিতরাও এই শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

এদেশে কারিগরি শিক্ষা

দেশে কারিগরি শিক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো)। ১৯৫৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৪২টি সরকারি পলিটেকনিক, ৭টি মনোটেকনিক, প্রায় অর্থ শতাধিক প্রাইভেট পলিটেকনিক, ব্যবসা শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কিছু টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) রয়েছে। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কাছে কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি বেশি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভযোগ্য হয়ে উঠছে।

কারিগরি শিক্ষার প্রধান প্রধান বিষয়

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালনা করছে বিভিন্ন মানের ও রকমের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের কোর্স। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। এর একটা পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হল।

বিষয়                                                                মোট আসন সংখ্যা

পলিটেকনিক

১. ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং                                              ১২৬০

২. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং                                    ৯২০

৩. ডিপ্লোমা-ইন-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং                         ৭৬০

৪. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং                          ৭২০

৫. ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং                                        ১২৪০

৬. ডিপ্লোমা-ইন-পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং                                            ৭৬০

৭. ডিপ্লোমা-ইন-আর্কিটেকচার                                                      ১৬০

৮. ডিপ্লোমা-ইন-অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং                                   ৮০

৯. ডিপ্লোমা-ইন-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং                                        ৪০

১০. ডিপ্লোমা-ইন-ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং                                                ৪০

১১. ডিপ.-ইন-এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং                                 ৪০

মনোটেকনিক

১. ডিপ্লোমা-ইন-এনভায়ারনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং                             ২৫

২. ডিপ্লোমা-ইন-অপসেট প্রিন্টিং                                        ২৫

৩. ডিপ্লোমা-ইন-সিরামিকস                                                          ৪০

৪. ডিপ্লোমা-ইন-গ্লাস                                                       ৪০

৫. ডিপ্লোমা-ইন-সার্ভেয়িং                                                 ৪০

এছাড়া ৪ বছর মেয়াদী মেরিন, শিপ বিল্ডিং, এরোস্পেস, এভিয়োনিক্স-এ ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স; ৪ বছর মেয়াদী এগ্রিকালচার, ৩ বছর মেয়াদী ফরেস্ট্রি, ২ বছর মেয়াদী এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), কমার্স-এ ডিপ্লোমা কোর্স; ১ বছর মেয়াদী ফটওয়্যার মেকিং, লেদার ট্যানিং, সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স-এ সার্টিফিকেট কোর্স; ১ বছর মেয়াদী সফটওয়্যার এপ্লিকেশন, মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ড-এ ডিপ্লোমা কোর্স এবং ১ বছর মেয়াদী মেডিকেল মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট ও প্যারামেডিকেল-এ সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ভোকেশনাল কোর্স সমূহ

বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর অধীনে সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে সৃষ্টি এসএসসি (ভেকেশনাল) শিক্ষাক্রম প্রতি বছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। এসএসসি উত্তীর্ণদের জন্য রাখা হয়েছে এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স। এ সকল কোর্স/ট্রেড এর পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হলো।

এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সসমূহ

১. অটোমোবাইল

২. অডিও-ভিডিও সিস্টেম

৩. ওয়েল্ডিং

৪. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং

৫. জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস

৬. ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং

৭. কম্পিউটার এপ্লিকেশন এন্ড অপারেশন

৮. ফার্ম মেশিনারি

৯. জেনারেল মেকানিক্যাল ওয়ার্কস

১০. ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং

১১. বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স

১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং

১৩. ড্রাফিটিং সিভিল

১৪. উড ওয়ার্কিং এন্ড কেবিনেট মেকিং

এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স/ট্রেডসমূহ

১. ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস এন্ড মেইনটেন্যান্স

২. ক্লথিং এন্ড গার্মেন্টস ফিনিশিং

৩. এগ্রো মেশিনারি

৪. কম্পিউটার অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স

৫. ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল এন্ড কমিউনিকেশন

৬. মেশিন টুল অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স

৭. অটোমোবাইল

৮. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং

৯. ওয়েন্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন

১০. ফিশ কালাচার এন্ড ব্রিডিং

১১. বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইনটেন্যান্স

১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং

১৩. ড্রাফিটিং সিভিল

১৪. উড এন্ড ডিজাইন

উল্লেখযোগ্য ডিপ্লোমা কোর্সসমূহ

ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

আধুনিক সময়ে আবাসন সমস্যা নিরসনে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। তৈরি হচ্ছে সড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি। সবসময়েই বাড়ি, সড়ক এবং  ব্রিজ তৈরির মূল নেপথ্য নায়ক হচ্ছেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সড়ক, বিল্ডিং এবং ব্রিজ তৈরির নকশা, পর্যবেক্ষণ, সে মোতাবেক কাঠামো তৈরি, কাজ পরিচালনা, গুণগত মান রক্ষা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই কাজ। নিঃসন্দেহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সর্বকালের আধুনিক ও সম্মানজনক পেশা।

কর্মসংস্থান

দেশের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, সয়েল টেস্ট ফার্ম, কনস্ট্রাকশন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপত্য নির্মান সামগ্রী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আছে ঠিকাদারি ব্যবসা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের রয়েছে কাজের বাজার। আছে মধ্যম মানের বেতন, সম্মান, অভিজ্ঞতা আর কর্মদক্ষতায় দ্রুত পদোন্নতিসহ বেতন বৃদ্ধির সুযোগ। তবে তা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।

ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত আর ‍মুদি দোকান যেখানেই যান বিদ্যুৎ দরকার হবেই। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিদ্যুৎ পরিচালনা পদ্ধতি, ক্যাবল লাইন স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে এর সবরকম ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা পুঁথিগত বিদ্যা, মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমেই পরিচালনা করছেন সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে।

কর্মসংস্থান

হাই ভোল্টেজ ক্যাবল লাইন, পাওয়ার জেনারেটর প্লান্ট, হাউজ ওয়্যারিং, ইন্ডাস্ট্রি, ফ্যাক্টরিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে একটা বড় কর্মক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে দেশে বিদেশে তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য রয়েছে উচ্চ ও সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের সুযোগ। এখানেও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় ডিপ্লোমাধারীদের মর্যাদা অনেক কম।

ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

ঘড়ি, কলিংবেল, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, খেলনাসহ ইলেকট্রনিক্সের বহুবিধ সামগ্রী রয়েছে। এসব সামগ্রী তৈরির মূল কারিগরই হচ্ছেন একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। গ্রাম-গঞ্জে এখন রেডিও, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর বহুল ব্যবহার এ পেশাদারিত্বের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।

কর্মসংস্থান

ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর উৎপাদন, ডিজাইন, ব্যবস্থাপনা, প্রয়োগ এবং প্রচলন সংশ্লিষ্ট বহুবিধ প্রতিষ্ঠানে একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাপক চাহিদা ও গুরুত্ব রয়েছে দেশে ও বিদেশে।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

সময়ের বিবর্তনে মানুষের রুচিতে আসছে অভিনবত্ব। কম জায়গায় কি করে একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন বাড়ি তৈরি করা যায় অথবা একটি রাস্তা কিংবা একটি ব্রিজ কোন ধারায়, কোন কাঠামোতে, কোনভাবে টেকসই, মানসম্মত এবং দৃষ্টিনন্দন হবে এসবই নির্ভর করে একটি ভালো মানের ডিজাইনের উপর। আর এই নান্দনিক ডিজাইনের স্থাপতিই হলেন একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার।

কর্মসংস্থান

বিভিন্ন স্ট্রাকচার ডিজাইন ফর্ম, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এন্ড ডিজাইনিং ফার্মে এসব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আজকাল ব্যক্তি মালিকানায় যেসব ছোট ছোট ২-৫ তলা পর্যন্ত বিল্ডিং হচ্ছে সেগুলোতে অনেক আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার এককভাবে কন্ট্রাকে বাড়িরে প্লান বা ডিজাইন করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ডিপ্লোমাদেরকে সহকারী হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেন। এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য দেশে এবং বিদেশেও রয়েছে ভালো সুযোগ-সুবিধা।

ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য পেশায় পরিণত হয়েছে। একটি কম্পিউটার তৈরি, সফটওয়ার লোড, এর পরিচালনা পদ্ধতি, একে সচল রাখা এবং এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের যাবতীয় কাজ করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা। এভাবে দেখতে গেলে বর্তমান সময়ে কোনো কিছুই আর কম্পিউটারের বাইরে নয়।

কর্মসংস্থান

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ রয়েছে বহুমাত্রিক পেশা। ই-কম্পিউটার ডিজাইনার, ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাফিকস ডিজাইনার এরকম বহুমুখী কর্মক্ষেত্র রয়েছে এ পেশায়। হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার ফার্ম ও ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান, ডিজাইন ফার্ম থেকে শুরু করে আজকাল কম্পিউটারের ব্যাপক প্রচলনের কারণে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে এ পেশার জন্য রয়েছে সম্মানজনক এবং উচ্চ শিক্ষার সুপরিসর ব্যবস্থা।

ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

উৎপাদনশীল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান উৎপাদন উৎসটিই হচ্ছে যন্ত্র বা মেশিন। এসব উন্নত আধুনিক মেশিনের পুরো ডায়াগ্রাম, পরিচালনা পদ্ধতি, বিভিন্ন যন্ত্রাংম এবং এর ব্যবহার, নিয়ন্ত্রন, মেরামত ইত্যাদি কাজ করে থাকেন দক্ষ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা।  আমরা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য অকেন সামগ্রী যেমন- সাবান, ক্রীম, পেস্ট, চিপস, প্যাকেটজাত, অন্যান্য প্রসাধণী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে থাকি এখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কর্মকান্ডের ফল হিসেবে, কেননা এ সবই এখন মেশিনের মাধ্যমে তৈরি বা প্রস্তুত হয়।

কর্মসংস্থান

আমাদের দেশেও দিন দিন তৈরি হচ্ছে জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, অটোমেটিক মেশিন তৈরির শিল্প, কল-কারখানা। আর এর ফলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। বিভিন্ন মেশিনারিজ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে ভাল চাহিদা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের চাহিদা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।

ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

সময়ের সাথে মানুষের সচেতনতা বেড়ে চলেছে আজকাল। পোশাক পরিচ্ছদ এবং সাংসারিক প্রয়োজনীয় কাপড়জাত জিনিসপত্রে আসছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এর ফলেই ডিজাইনার এবং সেই সাথে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়ে চলেছে।

কর্মসংস্থান

বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাশন হাউস, ডিজাইন হাউজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপাক চাহিদা আছে। দক্ষতার ভিত্তিতে এ পেশাজীবীদের উচ্চ বেতন আর সুযোগ-সুবিধাও বাড়ে। বিদেশে এ পেশাজীবীদের কাজের বাজার এবং উচ্চ শিক্ষার দ্বারা উন্মুক্ত।

ডিপ্লোমা ইন গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারিং

কর্মপরিধি

নানাবিধ সংগত কারণে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এদেশে গড়ে উঠছে প্রচুর গ্লাস সিরামিকস কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারদের নব নব উদ্ভাবিত ডিজাইন আর রঙচঙে সজ্জিত হয়ে বাজারে আসছে নানা ধরনের গ্লাস ও সিরামিকর জাত দ্রব্য। এসব পণ্যের নতুন নতুন ডিজাইন, নতুন উদ্ভাবন, প্রস্তুত কৌশল, প্রস্তুত ব্যয় সর্বোপরি এ শিল্পের সার্বিক পরিচালনা একেক জন গ্লাস ও সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানেই হয়ে থাকে।

কর্মসংস্থান

গ্লাস এন্ড সিরামিকস ডিজাইন, সরবরাহ ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে এ পেশায় শিক্ষিতদের ভালো বেতনের চাকুরির এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে দেশে এবং বিদেশে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উচ্চশিক্ষা: ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের চারটি (চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা) ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ডিগ্রি প্রদানকারী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এম ইঞ্জিনিয়ারিং/এসএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-এ কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি করা হয়।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি তথ্য

যোগ্যতা

(ক) প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। (খ) প্রার্থীকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৫৫% নম্বর পেয়ে সিভিল, আর্কিটেকচার, সিভিল (উড স্পেশালাইজেশন), ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, মেকানিক্যাল, পাওয়ার, অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য নম্বর বা গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। (গ) চাকুরিরত প্রার্থীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।

ভর্তির সময়

সাধারণত মে-জুন মাসে পত্রিকায় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।

বিষয় ও আসন সংখ্যা

যথাক্রমে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং- ৬০; সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০; এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০। এছাড়াও চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা হচ্ছে।

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ব্যতিক্রমি বিষয়সমূহ

উপরোল্লিখিত বর্ণনার বাইরেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত কিছু কলেজে নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে।

ডিপ্লোমা-ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- ২২, ডিপ্লোমা-ইন মিপ বিল্ডিং-৫৯; ডিপ্লোমা-ইন ফরেস্ট্রি-৫০; ডিপ্লোমা-ইন প্রিন্টিং-৫০; ডিপ্লোমা-ইন গ্লাস এন্ড সিরামিক্স-৮০; ডিপ্লোমা-ইন এয়ারক্রাফঠ মেইনটেনেন্স এভিয়োনিক্স-২২; এরোস্পেস-২২; ডিপ্লোমা-ইন হেলথ টেকনোলজি এন্ড সার্ভিসেস, মেডিকেল আল্ট্রা সাইন্ড-৮৮; প্যারা মেডিকেল-৪৪; মেডিকেল, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট-২২; ডিপ্লোমা-ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন-১২০।

তৃতীয় অধ্যায়

ক্যারিয়ার গঠন: প্রয়োজনীয় বিবেচনা

সাফল্যই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়

পূর্বের আলোচনা থেকে পেশা নির্বাচন সম্পর্কে যতটুকু ধারণা তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে এই নির্বাচন মূলত ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তি (inherent quality) এবং আগ্রহের উপরে নির্ভর করেই করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অনেক উঁচু একটা লক্ষ্য নির্ধারণ। অধিকাংশ মানুষ এই পর্যায়েই ভুল করে ফেলেন। অনেকেই এই উঁচু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহস পান না। আত্মবিশ্বাস আর নিরবিচ্ছিন্ন সাধনার অভাবেই তারা পিছিয়ে পড়েন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বার্থক লোকদের জীবনী পর্যালোচনা করলে কিন্তু ভিন্নতর চিত্র পাওয়া যায়, তাতে প্রতীয়মান হয় যে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে অনেক বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।

আমরা মানুষের সংগ্রামী জীবনে দেখি, সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে সবাইকে চমকে দিয়ে কিভাবে অন্ধমানুষ মিল্টন বিশ্ববিখ্যাত কবি হলেন। একজন বধির মানুষ বিটোফেন কিভাবে সঙ্গীত রচয়িতা হলেন। একজন অন্ধ, বোবা আর বধির মেয়ে হেলেন কিলার কিভাবে সাধনা করে চব্বিশ বছর বয়সে তার কলেজে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বিএ পাস করলেন এবং পরবর্তিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন। কিভাবে একজন কাঠুরিয়ার ছেলে আর মুদি দোকানদার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন হলেন। আর যদি অজুহাতের প্রশ্ন তুলি তবে কতই পাওয়া যাবে জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ার। কিন্তু স্বার্থক লোকেরা কি তা করেন? তাহলে তো রুসবেল্ট তার অচল পা দুটির অজুহাত দিতে পারতেন; ট্রুম্যান কলেজ শিক্ষার অভাবকে ব্যর্থতার কারণ বলে অভিহিত করতে পারতেন; কেনেডি বলতে পারতেন, “এত অল্প বয়সে কি করে প্রেসিডেন্ট হবো” জনসন ও আইস্যানহাওয়ার তাদের হৃদরোগের অজুহাত দেখাতে পারতেন।

জীবন সংগ্রামে এমন বাধা হাজারটা তো আসবেই। কারা এই বাধা অতিক্রম করতে পারেন? নিশ্চয়ই তারা সাধারণ শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ মি: এভারেজম্যানদের” দলে পড়বেন না। এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হিশাম আল তালিবের একটি উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য। তাঁর “ট্রেনিং গাইড ফর ইসলামিক ওয়ারকারস” বইতে মি. এভারেজম্যান নামক এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়েছেন যার বর্ণনা হলো-

মি. এভারেজম্যান ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সি বা ডি গ্রেডের মান পেয়ে পরীক্ষা পাস করেছেন, ১৯২৪ সালে মিস মিডিওকার (মাঝারি ধরনের মেয়ে) কে বিয়ে করেছেন, “এভারেজম্যান জুনিয়র” (Mr. Averagemant jr)  এবং বেটী মেডিওকার নামে এক ছেলে ও এক মেয়ে লাভ করেছেন। চল্লিশ বছরের নামদামহীন চাকুরি জীবনে বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। তিনি কোন সময় কোন ঝুকি বা সুযোগ নেননি, তিনি প্রতিভার স্ফূরণ এড়িয়ে চলেছেন, কোন সময় কারো সাথে কোন কিছুতে জড়িত হননি। তার প্রিয় পুস্তক ছিল – ‘non-Involvement the story of playing It safe’ অর্থাৎ ‘সম্পৃক্তহীন নিরাপদ জীবন চালনার গল্প। তিনি কোন উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, পরিকল্পনা, আকাঙ্ক্ষা, সংকল্প বা আস্থা ব্যতীত ৬০ বছরের জীবন সমাপ্ত করেছেন, তার কবর গাহে খুদিত হয়েছে-

এখানে শায়িত আছেন

মি. এভারেজম্যান

জন্ম ১৯০১; মৃত্যু ১৯৬১, কবরস্থকরণ ১৯৬৪

তিনি কখনো কিছু করতে চেষ্টা করেন নাই

তিনি জীবন থেকে অল্পই প্রত্যাশা করেছেন

জীবন তাকে তার প্রাপ্য দিয়েছে।

মি. এভারেজম্যান হয়ে কিন্তু বড় কিছু করা সম্ভব হয় না, যদিও সমাজের বেশিরভাগ লোক তারাই। এ প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী বলেছিলেন যে, সকল সমাজেই গড়ে ৮৫% লোক এই শ্রেণীভুক্ত। এরা ভেড়ার পালের মত- কোথায় যাচ্ছে বা কেন যাচ্ছে তা তারা জানে না, জানার প্রয়োজনও মনে করে না।

কোন জাতির উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে বাকী ১৫% লোককে নিয়ন্ত্রণে আনার। এই ৮৫% লোক ভাগ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, এবং এরাই হচ্ছে মি. এভারেজম্যান। তুমি বড় হতে চাও- এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তুমি অবশ্যই মি এভারেজম্যান হবে না। কি আছে তার যা তোমাকে আকর্ষণ করবে? হতাশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীনতা, পরিকল্পনা, সংকল্প ও আস্থা বিহীনতা ছাড়া? এসব নিয়ে কখণও বড় কিছু করা যায় কি? বণ্যার তোড়ে প্রবাহমান স্রোতস্বিনীতে ক্ষুদ্র খড়-কুটা ভেসে যেতে দেখেছো কখনও- এরা তাই। পার্থক্য শুধু একটা- বন্যার স্রোতে নয় বরং সময়ের স্রোতে ভেসে হারিয়ে যায় এরা।

প্রতিভিা

জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রথমে যে প্রশ্ন তোলে তা হলো তার মেধা সম্পর্কিত। তাদের ধারণা মেধার তারতম্যের কারণেই মানুষের জীবনের অবস্থানের তারতম্য হয়ে থাকে। ব্যাপারটি আংশিক সত্য হতে পারে, অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে সত্য নয়। এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা যাক। প্রতিভা বলতে আমরা সর্বদাই ভিন্ন কিছু বুঝি। আসলে তা নয়। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক এডিসন বলেছেন, প্রতিভা হচ্ছে একভাগ প্রেরণা আর নিরানব্বই ভাগ পরিশ্রম ও সাধনা।

ব্যর্থ মানুষেরা বহু ক্ষেত্রেই প্রতিভার ঘাটতির অজুহাত দাঁড় করেন যা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। এ পর্যায়ে মানুষের ব্রেনের সম্পর্কে কিছু কথা বলি। মানুষের ব্রেনের তথ্য ধারণাক্ষমতা অসীম। কম্পিউটার ও ব্রেনের তুলনামূলক আলোচনা করলেই বোঝা যায়, মানুষ কী বিশাল শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। বিশ্বের একটি সুপার কম্পিউটার হচ্ছে ক্রে-১ কম্পিউটার। এর ওজন সাত টন। আর মস্তিষ্কের ওজন দেড় কেজি। ক্রে-১ প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ মিলিয়ন ক্যালকুলেশন করতে পারে। মস্তিষ্ক পারে ২০ হাজার বিলিয়ন। ক্রে-১ কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ মিলিয়ন ক্যালকুলেশন হিসেবে একশত বছর কাজ করলে মস্তিষ্কের মাত্র ১ মিনিটের কার্যক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে। ব্রেনের নিউরোনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে তুলনা করলে মস্তিষ্কের সামনে এটির তুলনামুলক অবস্থান হবে একটি চীনা বাদামের সমান। দীর্ঘ গবেষনার পর বিজ্ঞানীরা মাত্র বুঝতে শুরু করেছেন যে, মস্তিষ্ক হচ্ছে এক বিস্ময়কর জৈব কম্পিউটার, যার অসীম সম্ভাবনা এখনও প্রায় পুরোটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। তাহলে মানুষ তার এই সম্ভাবনা ১০ গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে নাকেন? যদি দিত তাহলে কি একজন পরীক্ষিত Duffer একজন প্রখর মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উৎরিয়ে যেতে পারতো না? অবশ্যই, পারতো, কারণ একজন মেধাবী ব্যক্তি আর একজন Duffer এর পার্থক্য কিন্তু কোনভাবে এতটা বেশি না।

সঠিক মনোভাব

সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে দৃঢ় মনোবল। ক্যালগরী টাওয়ার নামে অট্টালিকাটির উচ্চতা ১৯০.৮ মিটার, ওজন ১০,৮৮৪ টন। এর মধ্যে ৬,৩৪৯ টন মাটির নীচে আছে, যা হল তার সমস্ত ওজনের শতকরা ৬০ ভাগ। উচ্চতম বাড়িগুলের ভিত্তিকে এই ভাবে সুদৃঢ় করতে হয়েছে। একইভাবে সাফল্যকেও দৃঢ় ভিত্তিতে উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হয় যা দিয়ে তা হচ্ছে সঠিক মনোবল।

প্রকৃতপক্ষে জীবনের সবক্ষেত্রেই মনোভাবের (attitude)  বিশেষ গুরুত্ব আছে। কোনও ডাক্তার কি ভালো ডাক্তার হতে পারেন যদি তার উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে? ছাত্রসুলভ মনোভাব না থাকলে একজন ছাত্র কি ভালো ছাত্র হতে পারে? একজন ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, পিতা-মাতা, মালিক, কর্মচারী প্রত্যেকের স্বস্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের উপযোগী মনোভাব না থাকলে যথাযথভাবে তাদের কর্তব্য করতে পারেন না। তাই যে পেশাই তুমি পছন্দ কর না কেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সাফল্যের ভিত্তি হচ্ছে তোমার মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি। প্রধানত তিনটি উপাদান আমাদের মনোভাব গঠন করতে সাহায্য করে। সে তিনটি উপাদান হলো:

ক) পরিবেশ,

খ) অভিজ্ঞতা এবং

গ) শিক্ষা।

পরিবেশ বহুলাংশে আমাদেরকে প্রভিবিত করে থাকে। ঈগলের মতো উঁচুতে উঠতে হলে ঈগলের ক্ষমতা আয়ত্ত্ব করতে হবে। সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা, চিন্তাশীলদের সান্নিধ্যে ভাবুক হওয়ার সম্ভবনা, আবার ছিদ্রান্বেষীদের সান্নিধ্যে ছিদ্রান্বেষী হওয়ার সম্ভবনাই থাকে। তুমি কোনটি হতে চাও সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমাকে, আর সে অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে। সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আসিসি এই সম্পর্কে সার কথা বলেছেন , “যা প্রয়োজনীয তা করা শুরু কর, তারপর যা সম্ভবপর তা করা শুরু কর; অবশেষে দেখা যাবে যে অসম্ভব কাজও সম্ভব হচ্ছে। ”

ব্যর্থতা হচ্ছে সাফল্যের ভিত্তি

কাজ শুরু করে দু’একবার ‍উদ্যোগ নিয়েছো এবং ব্যর্থ হয়েছো। এর পরে কি করবে? এই প্রসঙ্গে একজনের জীবন কাহিনীর উল্লেখ করি। তিনি ২১ বছর বয়সে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হন, ২৬ বছর বয়সে তার প্রিয়তমা মারা গেলেন। কংগ্রেসের নির্বাচনের পরাস্ত হলেন  ৩৪ বছর বয়সে। ৪৫ বছর বয়সে হারলেন সাধারণ নির্বাচনে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলেন ৪৭ বছর বয়সে। সিনেটের নির্বাচনে পূনর্বার হারলেন ৪৯ বছর বয়সে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হলেন ৫২ বছর বয়সে। এই ব্যক্তির নাম আব্রাহাম লিঙ্কন। এর নাম কি ব্যর্থতা? আব্রাহাম লিঙ্কন কিন্তু তা মনে করেননি। তার মতে পরাজয় মানে সমাপ্তি নয়, যাত্রা একটু দীর্ঘ হওয়া মাত্র।

১৯০৩ সালে ১০ ই ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো, কারণ তারা বাতাসের থেকে ভারী একটি যন্ত্র তৈরি করে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করছিলেন। এক সপ্তাহ পরে কিটি হক থেকে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় তাদের অবিস্মরণীয় আকাশ যাত্রা শুরু করেন। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ছিল তা হলো তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস।

সব মিলিয়ে একটা কথা বলা দরকার, তা হলো, “সফল মানুষেরা খুব বিরাট কিছু কাজ করেন না। তারা সামন্য কাজকেই তাদের নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে বৃহৎ করে তোলেন। ”

জীবনের পথে চলতে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এরূপ বাধা আমাদের এগেয়ে চলার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই বাধা-বিপত্তিকে জয় করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। আমাদের বিজয়ী হওয়ার শিক্ষাই নেওয়া উচিত- বিজিত হওয়ার নয়। ভয় এবং সন্দেহ মনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয় বলে এগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে মন থেকে। আর প্রত্যেক বিপত্তির পর নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি কী শিখলাম? এধরনের আত্মবিশ্লেষনের ফলে বাধার অবরোধকে উন্নতির সোপানে পরিণত করা যাবে।

কোনও কাজ নিস্পত্তি করার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় ‍দুটি স্তম্ভের উপর। সে দুটি হল সততা এবং বিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, “যদি তোমার আর্থিক ক্ষতিও হয় তবু তোমার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা এবং বিজ্ঞতা হচ্ছে, যেখানে ক্ষতি হবে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ না হওয়া।”

শৃঙ্খলা

সাফল্যের আর এক ফ্যাক্টর হচ্ছে সমস্ত কর্মকান্ডে শৃঙ্খলা আনায়ন। শৃঙ্খলার অর্থ আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মত্যাগ, মনসংযোগ এবং প্রলোভনকে এড়িয়ে চলা। শৃঙ্খলার অর্থ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা। সংগতির অভাবে শঙ্খলাহীনতার লক্ষণ। নায়াগ্রা জল প্রপাত থেকে কোন জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে না, যদি না তার স্রোতের শক্তিকে শৃঙ্খলিত করা যায়। বাষ্পকে যদি সংহত করে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা না যায় তবে তা ইঞ্জিনকে চালাতে পারবে না। তোমার জীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রেও এই উদাহরণ শতভাগ সত্য।

মনে রাখতে সাফল্যের জন্য জরুরি শিক্ষাক্রম হলো-

জেতার জন্য খেলবে, হারার জন্য নয়।

উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করবে, চরিত্রহীনদের সাথে নয়।

সততার বিষয়ে কোনভাবে আপোস করবে না কখনো।

যা অপরের নিকট থেকে পাবে তার থেকে বেশি দিবে তাকে। এব্যাপারে ঋণী থেকে নিজেকে ছোট বানাবে না কখনো।

অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।

উদ্দেশ্যেহীনভাবে কোন জিনিসের সন্ধান করবে না। উদ্দেশ্য ঠিক করে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েই ঈপ্সিত লক্ষ্যের সন্ধানে নামবে।

দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করবে, স্বল্প মেয়াদী নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা নিতেও পারে প্রয়োজনবোধে।

নিজের শক্তি যাচাই করে তার উপর আস্থা রাখবে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বড় লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।

আর সাফল্যের পথে বাধার কারণগুলো হচ্ছে-

বিফলতার আশঙ্কা,

আত্ম-মর্যাদার অভাব,

পরিবল্পনার অভাব,

লক্ষ্য নির্দিষ্ট না করে কাজ শুরু করতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলা,

একাই অনেক কাজের ভার নেওয়া অর্থাৎ সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায় গ্রহণ,

প্রশিক্ষণের অভাব,

অধ্যবসায়ের অভাব এবং

অগ্রাধিকারের অভাব।

মিলিয়ে দেখো তোমার নিজের ক্ষেত্রে এ কতটা তোমাকে আষ্টে পিষ্টে ধরেছে। তারপর সেসব বিপত্তি ঝেড়ে ফেল। দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ ফেলো সামনে এগোনোর সাফল্যই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়।

সফলতার পূর্বশর্ত জীবনে ভারসাম্য

ভারসাম্যতা হচ্ছে জগতের একটা সাধারণ নিয়ম। মহাবিশ্বের সকল গ্রহ-নক্ষত্র ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করে চলেছে, ফলশ্রুতিতে তাদের ব্যপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ ভারসাম্য বজায় থাকছে তাদের মধ্যে। এর একটি ক্ষুদ্র অংশ সূর্য তার গ্রহগুলোকে একত্রে নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে চলেছে, সেখানেও একই নিয়ম। সূর্যরে গ্রহ পৃথিবী-সে তার পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা বক্ষে ধারণ করে ছুটে চলেছে সূর্যের সাথে। সেখানেও এক ধরনের সু-সমন্বয় সর্বদা পরিলক্ষিত হয়। এবারে যদি আমরা দৃষ্টি আরও কিছুটা সংকীর্ণ করে আনি এবং শুধু এ দেশের কথাই ধরি তবে দেখা যাবে এখানে কোথাও যেমন রয়েছে সুশৃংখল বিস্তীর্ণ পাহাড়ে যেখানে সবুজের সমারোহ বসে বছরের একটা সময়ে, আর তার পাদতলে প্রবাহিত হয়ে চলেছে স্রোতাস্বিনী- এসব মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যের অবতারণা হয়, অথচ এর মূলে আছে অদৃশ্য অথচ সুষম ব্যবস্থাপনা। প্রকৃতির এই অমোঘ আয়োজনের উপর হস্তক্ষেপ করা হলে প্রকৃতি কখনও তার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে। এই কারণেও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি ঘটে থাকে।

জীব জগতেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিটি জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে সুষম সমন্বয় প্রদান করা হয়েছে তা হচ্ছে তার এক ধরনের সৌন্দর্য। আর তার ফলেই এর কার্যকারিতা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ সর্বত্রই এ নিয়মের প্রচলন। এ মহানিয়মকে আগ্রাহ্য করার উপায় নেই মানব জীবনের কোন ক্ষেত্রেই।

মানব জীবনের ব্যাপ্তি বেশি নয়, তবে বিস্তৃতি অনেক এবং নানাবিধ। এই বিস্তৃতি সৃষ্টি হচ্ছে ব্যক্তির নিজের নানাবিধ প্রয়োজনে পারিবারিক সম্পর্কির কারণে পরিবারের সকল সদস্য-সদস্যার সাথে, সামাজিকভাবে সামজের অনেকের সাথে, আর যাদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যক্তি উঠে আসতে পারেন আরও উপরে, তবে তার সম্পর্কের বিস্তৃতি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সবের মধ্যেও একটি সুন্দর সুশৃংখল সাম্য বিধ্যমান, সুন্দরভাবে এ জগতে বসবাস করার জন্য যার প্রয়োজন হয়। ব্যক্তি কিভাবে আগ্রাহ্য করবে এই প্রয়োজনের?

একই ব্যক্তি পুত্র হিসাবে কারো সাথে সম্পর্কিত, ভাই হিসাবে জড়িত করো কারো সাথে, পিতা হিসেবেও পরবর্তিতে সম্পর্কিত হন তিনি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রতিবেশী হিসাবে সম্পর্ক এবং কর্ম ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে হাজারটা সম্পর্ক। একজন বুদ্ধিমান লোক কি করেন এসকল সম্পর্কের ব্যাপারে? তার জন্য মৌলিক নিয়ম হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সবকিছুতে ব্যালেন্স অর্থাৎ সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ভারসাম্য বজায় রাখা। বন্ধুত্ব এবং শত্রুতায়ও ভারসাম্য বজায় রাখা উচিৎ। কেননা আজ যে বন্ধু ভবিষ্যতে সে আমার শত্রু হবে না তার নিশ্চয়তা কে প্রদান করতে পারে? বন্ধু হিসেবে আমার সম্পর্কে গোপন করার মত কোন তথ্য যদি জেনে যায় তবে তা সেটা বিপদের কারণ হবে তার এই সম্পর্ক পরিবর্তনের জন্যে। অন্যদিকে আবার আজ যে শত্রু, কাল তো সে বন্ধুও হতে পারে, আমি কি তার সাথে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করে তাকে বন্ধু হতে বাধাগ্রস্থ করবো? শুধু এই সম্পর্কের ব্যাপারেই নয়, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে, চিন্তা-বিশ্বাসে, খাদ্যাভ্যাসে, এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সকল পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে ভারসাম্যতা আনা উচিৎ।

কোন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনে কয়টি কাজ করবেন? সেটা অনেক কিছুর উপরেই নির্ভর করে। তবে মূল ব্যাপার হচ্ছে তার জন্য কয়টি প্রয়োজন আর কয়টি কাজ তিনি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি যা করবেন তা হলো তার সমস্ত কাজের একটি priority লিস্ট বা আগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরি করবেন প্রথমে, যেখানে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখবেন। এরপর তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেগুলো সম্পন্ন করবেন।

এই priority লিস্টি কেমন হবে একজন ছাত্রের জন্যে? মানব জীবনে বিভিন্ন বয়সে কাজের ধরন পাল্টিয়ে থাকে। এভাবে দেখলে ছাত্রজীবনে তার প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে জীবন গঠন- একাডেমিক পড়াশুনার মাধ্যমে। এটা হচ্ছে ছাত্র জীবনের কাছে প্রধান চাহিদা (Demand) । এর পরেই হচ্ছে আত্মগঠনমূলক কার্যক্রম, এবং তার পর পরই আসে সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্য প্রয়াস। বাকী দায়িত্ব আরো পরে। তাবে হ্যাঁ অবস্থার পরিবর্তনের কারনে সাময়িকভাবে এই priority –এর পরিবর্তন হতে পারে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে ভুল করলে চলবে না। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, এই জাতির জন্যে এই সম্প্রদায় বিষয়ক চিন্তাই প্রধান হওয়া উচিৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। মানব জীবনের একটি বড় অংশ , ছাত্র জীবন- এর ক্ষতি অপূরণীয় ক্ষতিই বটে। একজন ছাত্রকে অবশ্যই তার সকল কর্মকান্ডে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই নিয়মটির ব্যত্যয় ঘটছে আজকাল ব্যাপকভাবে। ফলশ্রুতিতে প্রথমত ব্যক্তি পর্যায়ে পরে সামাজিকভাবে সর্বত্র এর কুফল ছড়িয়ে পড়েছে।

ছাত্রজীবনে ভারসাম্যতা হারানোর কারণে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সেব্যাপারে কিছু আলোচনা করছি এবার। এদেশে ছাত্রদের মধ্যে কিছু কিছু অংশ নানাবিধ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে ছাত্র জীবনে?  যার ফলশ্রুতিতে তার আন্দোলন যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হতে পারে সে কারণে অনেক বেশি সময় দিচ্ছি, এমন কি নিজের একাডেমিক পড়াশুনাকে বাদ দিয়েও। ছাত্রদের এই আন্দোলনের কতটুকু জাতি গঠনের কাজে আসবে সেটা নিরূপন করে বলতে হবে। তবে যদি ধরে নিই দেশ বা জাতি গঠনমূলক কাজের জন্যই তাদের সময় ব্যায়িত হচ্ছে সে ক্ষেত্রেও আন্দোলনের জন্য তাদের ব্যয়িত সময়ে ভারসাম্যতা বজায় রাখা উচিৎ। ছাত্রজীবন শেষ করার পর যখন সে তার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করতে পারে, তখন তর আর সেই হারানো সময ও সুযোগ ফিরে পাওয়ার উপায় থাকে না। পরবর্তী জীবনের জন্যে যে প্রস্তুতি তার ছাত্র জীবনে নেওয়ার কথা ছিল সেটা না হওয়ার কারণে সে কর্ম জীবনে প্রবেশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না, সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না। ফলে সে তার পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হয়ে পড়ছে। এমন কি যে আন্দোলনের জন্যে সে তার ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে এসেছে সেখানেও সে এখন একটি বোঝা। এই কারণেই পরবর্তিতে সে আর তার প্রিয় আন্দোলনকে সহযোগিতা (Support) করতে পারে না। সব মিলে সৃষ্টি হয় ব্যক্তির মধ্যে হতাশা। যে সিদ্ধান্তের কারণে এই অবস্থা, তার ব্যাপারে সকল পর্যায়ে বিশ্লেষণ হওয়া উচিৎ এবং নীতিগত ভাবে এর একটা সুরাহা হওয়া উচিৎ।

মানব জীবনের তিনটি মূল্যবান সম্পদ সময়, শক্তি ও অর্থব্যয়ের ব্যপারেও এই মূল নীতি অর্থাৎ ভারসাম্যতার প্রয়োগ করতে হবে অবশ্যই।

ছাত্রজীবনের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট আরো দুটো বিষয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

(ক) সময়ের ব্যবহারে ভারসাম্য: আমার হাতে সারাদিনের ২৪ ঘন্টা সময় রয়েছে, ছাত্র হিসেবে এর ব্যবহারের জন্য আমাকে অবশ্যই একটি সুন্দর হিসাব করতে হবে। সে অনুযায়ী সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিৎ যে, সাধারণ হিসেবে ৬ ঘন্টা ঘুম, ২ ঘন্টা ব্যক্তিগত প্রাত্যহিত কাজ, ২/৩ ঘন্টা আন্দোলনের জন্য, এবং বাকী ১৩/১৪ ঘন্টা একাডেমিক পড়াশুনা (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ব্যয়িত সময় ধরে)। এ পর্যায়ে সাধারণভাবে অনেক অব্যবহারযোগ্য সময়কে সময় ব্যবস্থাপনা’-র কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারযোগ্য করে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচটি বছর যা আমরা অনেকে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে (যেমন Career Sacrifice ) নষ্ট করে থাকি তার উপরেই কিন্তু নির্ভর করে ব্যক্তির বাকী জীবনের কার্যকারিতা।

(খ) পড়াশুনায় ভারসাম্য: পড়াশুনার ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা হচ্ছে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার কি কি বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে আজ সেটার ব্যাপার সিদ্ধন্ত, কোন বিষয়ে কতটুকু সময দিতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, দিবসের কোন অংশে কোন বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে সেটার ব্যাপারে সিদ্ধন্ত নিয়েই আমি আমার আজকের পড়াশুনার ব্যপারে একটি সম্যক পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। তারপরেই তো প্রশ্ন উঠবে এটার বাস্তবায়নের। তা না হলে বাস্তবায়ন কোন শ্রেণীর হতে পারে? এ জগতে পরিকল্পনা না করে বড় ধরনের কোন কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে কি?

সব মিলে একটি মাত্র কথা- আর তা হলো ভারসাম্য পূর্ণ জীবন ব্যবস্থাই হোক আমাদের সকলের জীবনের জন্য গ্রহণযোগ্য একমাত্র সিদ্ধান্ত।

সময় ব্যবস্থাপনা

ভূমিকা

এদেশে অনেকেই বর্তমান সময়ের একটা বড় ধরনের সমস্যা হলো সময় সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা। এদেশে অনেককে পাওয়া যাবে যারা সারা দিনই কাজ করছেন অথচ কাজ শেষ করতে পারছেন না। তারা ভাবেন যদি দিনটির পরিধি ৪৮ ঘন্টা হতো অথবা ঘন্টাটা ৬০ মিনিটের স্থলে ১০০ মিনিট করে হতো। প্রকৃতপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই তারা কাজের চাপে ন্যুজ হয়ে পড়েন। আর অনেকে আছেন যারা আবার সময়কে কাজে লাগাতে পারে না। তারা সময় নষ্ট করে থাকেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে।

এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করেন ঘুমিয়ে। ঘুমের ব্যাপারে বর্তমানে কোথায়ও কোথায়ও একটা নিয়ম প্রচলিত হয়ে পড়েছে প্রায়। তা হলো সকালে ফজরের নামযের পরে দ্বিতীয় বার ঘুম এবং দুপুরে খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা নাম দিয়ে তৃতীয়বার ঘুম। তাদের অনেকেই ভেবে থাকেন সময়টি তাদের নিজস্ব সম্পদ (personal property) ।

প্রকৃতপক্ষে সময় আমাদের নিজেদের নয়। সময় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে দিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা গ্রহণের জন্যে। এই ব্যাপারটাকে সামনে রেখে সময় সম্পর্কে আমাদের সমস্যা নিন্মোক্তভাবে চিহ্নিত করা যায়-

(ক) সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু লোক বাস্তবিকই সময়ের স্বল্পতা অনুভব করছেন সর্বক্ষণ, তাদের জন্য গুছিয়ে কাজ করার পদ্ধতি খুবই প্রয়োজন। তারা সময়ের ব্যবস্থাপনার কৌশল আয়ত্ত্ব করে বাস্তবক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করতে পারলে অনেক বেশি পরিমাণে কাজ করতে পারবেন। সময় ব্যবস্থাপনা তাদের জন্যই প্রয়োজনীয়।

(খ) পাশাপাশি সময় সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার জন্যে অনেকে আবার অযথা সময়ের অপচয় করছেন। সময় সম্পর্কে তাদের উপলব্ধির অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে সময়ের মূল্য ও চেতনা সৃষ্টি করা একন্ত বাঞ্চনীয়।

সময় কি?

হয়ত আপনারা এ কথাটি জানেন, “কোনটি ঐ জিনিস যা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী যদিও তা সবচেয়ে বেশি ক্ষণস্থায়ী, সবচেয়ে দ্রুতগামী যদিও তা সবচেয়ে বেশি শ্লথ? আমরা সকলেই তাকে অবজ্ঞা করি যদিও পরে সকলেই আবার অনুশোচনা করি। একে ছাড়া কিছুই করা যায় না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবকিছুকে এটা গ্রাস করে নেয়, অথচ যা কিছু মহৎ এবং বড় তা সে তৈরি করে।” কে সে? সে হচ্ছে সময়।

এটি সবচেয়ে বড়, কারণ সময়ের যাত্রা এবং লয় সম্পর্কে কোন কিছুই আমাদের জানা নেই। পক্ষান্তরে এই বাস্তব জীবনের সমস্ত বস্তু বা পরিমাপযোগ্য সবকিছুর একটা সীমা দৃশ্যমান বা কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষণস্থায়ী, কেননা আমাদের জীবনের সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্যে প্রয়োজনের তুলনায় প্রদত্ত সময় নিতান্তই অল্প। সময় দ্রুতগামী তাদের কাছে, যারা সুখের সাগরে ভাসছে। আর পক্ষান্তরে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে যে সময় গুণছে তার দৃষ্টিতে তো ২/৩ মিনিট সময়ও অবশ্যই শ্লথ-ই হবে। সময়কে তো আমরা অবজ্ঞা করিই। তা না হলে জীবন থেকে দু’একটি ঘন্টা সময়কেও অযথা পার হতে দিতান না। কিন্তু আবার এই অন্যায় আচরণই আমাদেরকে পীড়া ‍দিয়ে থাকে কখনও কখনও। সে কারণেই তো মূল্যবান কোন পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রতিবারই ছাত্র-ছাত্রীরা অনুশোচণা করে থাকে তাদের অপচয়ের জন্যে। পরে অনুশোচনার কথা ভুলে গিয়ে আবার সেই অপচয়ই করতে থাকে। পৃথিবীতে এমন কি কোন কাজ আছে যা করা যায় সময়ের ব্যবহার ছাড়া? আর এই সময়ই তো গিলে খেয়েছে অতীতের কত বিশাল সংখ্যক মানব-গোষ্ঠীকে, বিগত হয়েছে তারা সকলে খালি হাতে, ইতিহাস তাদেরকে গ্রহণ করেনি সঙ্গত কারনেই। করেছে মাত্র অল্প কিছু মহামানবকে।

সময়ের মূল্য

ব্যর্থ লোকেরা যা করতে অনিচ্ছুক তা করে সফল লোকেরা তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করে। সফলতার জন্যে প্রয়োজনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার সাথে খাপ খাইয়ে সময় ব্যয় করার চেয়ে ব্যর্থতার গ্লানির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে সাধারণ ব্যক্তিরা সহজতর মনে করে। এখানেই হচ্ছে অর্জনে যে ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন তার গুরুভার গ্রহণ করতে সমর্থ হয় না বলেই সাধারণ লোকেরা এই অবস্থার সাথে তাল মেলাতে পারে না। এটি তাদের কাজ নয়, অসাধারণ কাজ। তাঁরা বরং ঝরে পড়া সম্প্রদায়ের সাথে মিলে যেতে সমর্থ হয়, যার শেষ পরিণাম হলো জেনে-শুনেই ব্যর্থতার গ্লানি ধারণ করা।

মানব জীবনের বরাদ্দকৃত সময়টুকু সাধারণভাবে কাটিয়ে দেওয়ার এটাই হচ্ছে সম্ভবত সর্বজন পরিচিত প্রথা। আমাকে আজ একটি কাজ দিলে কাল করব বলে রেখে দেব, আর এই কাজটিই যদি আগামীকল্য দেওয়া হয় তবে তা পরবর্তি দিনের জন্য রক্ষিত হবে। এভাবেই আমরা সময়ক্ষেপণ করে থাকি, আর সেই সাথে সুযোগকে হাতছাড়া করি। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হই। অপরদিকে যাদের মধ্যে এই প্রথার প্রতি শ্রদ্ধা নেই অর্থাৎ যারা আগামী কালের জন্যে বসে থাকবেন না কখনও, আজকের দিনটুকুকেও তার কাজে লাগাতে উদগ্রীব, তারাই তো সময়কে কাজে লাগাতে পারছেন পরিপূর্ণভাবে। জগতে বিস্ময়কর কিছু করার এখতিয়ার শুধুমাত্র তাদের জন্য, আগামী কল্যের গ্রুপের কারো জন্যে নয় অবশ্যই।

প্রতিদিন সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের পকেট বই ২৪ ঘন্টায় সমৃদ্ধ। রাসূলে করীম স. আমাদেরকে বলেছেন-

দুজন ফেরেশতার নিম্নরূপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাতও আসে না” হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসব না।”

একটি উদাত্ত আহ্বান রয়েছে এখানে, আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর, আর পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের সতর্কীকরণ। আজকের দিন সাক্ষ্য প্রদান করবে আমাদের ২৪ ঘন্টার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শেষ বিচারের দিন। অর্থাৎ সময়ের ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত হতে হবে আমাদেরকে- এটা একটা কঠিন সতর্কীকরণই বটে।

(খ) সময়ের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে সুযোগ

মানবকুলের হাতে সময়ের প্রধানত দু’ধরনের অর্থ রয়েছে। এগুলো হলো-

১) সময় হচ্ছে শুধুমাত্র সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এবং বছরের মাপকাঠি। সময়ের কথা ভাবতে তারা ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকান; এর একটি মাত্র রূপ আছে, তা হচ্ছে সময়ের ব্যপ্তি। এটি সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অগভীর বা হাল্কা ধারনা, এরূপ ধারণা পোষণকারীদের কারো দ্বারাই শ্রেষ্ঠ কিছু সৃষ্টি হয়নি। এ ধারণা যেকোন উদ্যোগ গ্রহণকে ধ্বংস করে দেয়, সৃজনশীল অনুভূতিকে নিরুৎসাহিত করে এবং প্রাপ্ত সময় ব্যয়ের জন্য কোন কাজ দেয় না। কোন কাজ করার জন্যে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলে এতে এক সপ্তাহ লাগবে, দশদিন সময় দিলে দশদিনই ব্যয় হবে।

২) সময় সম্পর্কে দ্বিতীয় ধারণা; সময় হচ্ছে সুযোগ। এই সুযোগ সকল সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে না। যখন সে তার সর্বোচ্চ মানে অবস্থানে করে তখনই সে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব বহন করে থাকে। যারা সময়ের এই গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন তারা জীবনের সমস্যাবলীকে অনেকাংশে সহজীকরণ করে নেন, ফলশ্রুতিতে আগ্রহ ও আত্মত্যাগের এক মহান স্পৃহা দ্বারা তাদের কার্যসম্পাদন নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এর ফলশ্রুতিতে সমূহ সম্ভাবনার দ্বার তাদের জন্যই উন্মোচিত হয়ে থাকে।

অবসর সময় না সৃজনশীল সময়?

তথাকথিত হারিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপারে আপনি কি ভাবেন? হিসাব করে দেখেছেন কি আমরা দিনে কতবার ১৫ মিনিট বা ৩০ মিনিট বা ১ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছি- গল্প করে বা ঘুমিয়ে বা ঘুম থেকে গ্রাত্রত্থান করে ঝিমিয়ে। এভাবে আমাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতি দিনের ১৫ মিনিট মানে পছরের পূর্ণ ১১দিন আর প্রতিদিনের ৩০ মিনিট মানে বছরের পূর্ণ ২২ দিন। এভাবে ৩০মিনিট করে ব্যয়িত সময় এক মাসের মূল কর্মঘন্টার চেয়েও বেশি। এবারে চলুন এই হারিয়ে যাওয়া সময়কে কিভাবে সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তন করবেন সে ব্যাপারে চিন্তা করি। আপনি কারো সাথে গল্প করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার আলোচনা ফলদায়ক আলোচনায় পরিবর্তন করলেই তো হয়। ট্রেনে বা স্টীমারে ভ্রমনের ব্যয়িত সময়ে যদি চিন্তাশীল বা গঠনমূলক কল্পনার কাজে ব্যয়িত হয় তাহলেই তো তা সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তিত হবে। আর ঘুম- এতটা দরকার আপনার? এটি বর্তমানে পরীক্ষিত সত্য যে একজন সুস্থ্য পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক মাত্র ৬ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। এর অধিক ঘুম বা অন্য দিকে ঘুমের ঘাটতি উভয়ই অসুস্থতার শিকার হচ্ছি।

পক্ষান্তরে প্রতিটি কর্মদিবস হতে এক ঘন্টা করে সময় বের করে নিলে বছরে আপনি ২৬০ ঘন্টা বা পূর্ণ ৩২ টি কর্মদিবস পাবেন এবং এরূপ সময়কালে অনেক বড় কাজ সম্পাদন করে নিতে পারবেন। এসময়ে আপনি যা করতে পারবেন তা একটি তলিকা দিচ্ছি।

কুরআন শরীফের বহু অংশ মুখস্থ করতে পারবেন;

কতগুলি নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন;

আপনার বাসস্থানের আশেপাশে সর্বোত্তম সুন্দর বাগান বা এমন কিছু গড়তে পারবেন যা মনের খোরাক হয়ে আপনাকে আনন্দ দিতে পারবে।

একটি বিদেশী ভাষা শিখতে পারবেন;

একটি বই লিখতে পারবেন অথবা

একটি বিষয়ে ডিপ্লোমা করতে পারবেন।

আর জীবনের সহস্র ছোট ছোট ঘটনার বেড়াজালে যে সময় উড়ে যায় প্রতিনিয়ত, কিছুটা হলেও তাকে বেঁধে ফেলতে হবে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা দিয়ে। এই সঞ্চয় কোন ক্রমেই ক্ষুদ্র নয়, বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের একত্রীকরণের মাধ্যমে সঞ্চিত এক বিশাল সময় ভান্ডার।

সময়ের বহমান স্রোত

কোন কোন বিশেষ কাজের জন্য আপনি সাধারণত আপনার সময়সূচি রক্ষা করে চলেন। আপনি যে কাজ সম্পাদন করতে চান সে জন্যে যে সময় বের করা দরকার তার জন্যও তা করুন। সে জন্য প্রত্যেক দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বের করে নিন এবং তারপর যথাসাধ্য তা রক্ষার চেষ্টা করুন। সুতরাং মূল কথা দাঁড়ালো- যদি করণীয় কয়েকটি কাজের জন্যে সময় বের করতে চান তাহলে আপনার ব্যস্ততার তালিকায় এদের জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা করে প্রোগ্রাম করে নিতে হবে। যদি আপনি সঠিক সময়টি আসার জন্য অপেক্ষা করতে চান তাহলে চিরদিনই সে জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।

মাঝারি বয়স কালের একটি জীবনে আপনি আপনার সময় কিভাবে ব্যয় করতে পারেন তা চার্টে দেখানো হয়েছে-

কাজ সময়
জুতার ফিতা বেঁধে ৮ দিন
ট্রাফিক লাইনের বাতির দিকে তাকিয়ে ১ মাস
নাপিতের দোকানে ব্যয়িত সময় ১ মাস
টেলিফোনের ডায়াল ঘুরিয়ে ১ মাস
বড় শহরে লিফটে চড়ে ৩ মাস
নিজের দাঁত মেজে ৩ মাস
শহরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ৫ মাস
গোসল খানায় ব্যয়িত সময় ৬ মাস
বই পড়ে ২ বছর
খাওয়া-দাওয়ার সময় ৪ বছর
জীবিকা উপার্জনে ব্যয়িত সময় ৯ বছর
টেলিভিশন দেখে ১০ বছর
ঘুমিয়ে ২০ বছর

সময়কে কাজে লাগনোর পদ্ধতি

সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সে সম্পর্কে দু’একটা কথা বলছি।

১. প্রত্যহ সকালে লিখিতভাবে আপনার দিনের কাজগুলির পরিকল্পনা করুন এবং হয়ে গেলে একটি একটি করে তা কেটে দিন। অনেকে মনে করেন কাজের তালিকা করার দরকার কি- মুখস্থ রাখলেই তো হলো। এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা তালিকার কিছু অংশ ভুলে যাওয়ার রিস্ক নিয়ে থাকেন। সর্বপরি এভাবে মুখস্থ রাখাটাও তো একটি কাজ। যদি লিস্ট বড় হয় তবে দরকার কি এভাবে অপ্রয়োজনীয় একটি বাড়তি কঠিন কাজ তৈরি করে বোঝা বাড়ানো।

২. টেলিফোনে বা অন্য কোন ভাবে না জানিয়ে কারো সাথে দেখা করতে যাবেন না। এখানে সমস্যা হলো ঈপ্সিত ব্যক্তি না জানার কারণে available নাও হতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে যাওয়া ও ফিরে আসার সম্পূর্ণ সময়টাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. কাগজ- কলম বা ছোট্ট নোট বই সব সময় পকেটে রাখবেন যাতে অবসর সময়ে আপনার চিন্তা-পরিকল্পনা লিখে নিতে পারেন।

৪. বিশ্রামের সময়কে নামাজের সময়ের সাথে মিলিয়ে পরিকল্পনা করুন। নামাজের পূর্বে ওজু করার ফলে শরীরের অনেক অংশই শীতল হয়ে থাকে যা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের উপর সুপ্রভাত ফেলে। আর নামাজের সময় কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে নিজেকে হাজির করার যে মানসিক শান্তি- এটাকে তো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শান্তির কাজ বলে মনে করা হয় সঙ্গত কারণে।

৫. লেখাপড়া করে, কোন কিছু মুখস্থ করে বা গঠনমূলক কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।

৬. সাক্ষাৎসূচি করাকালে উভয়েই যেন সঠিক সময় ভালভাবে বুঝে নেন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ধরুন আপনি আপনার বন্ধুর সাথে প্রোগ্রাম করেছেন কাল বিকালে চারটায় একত্রিত হবেন একটা নির্দিষ্ট স্থানে। আপনি হয়তো সময়মত যাবেন, কিন্তু সে বাঙ্গালীর সময় চারটা মানে সাড়ে চারটা ভেবে আধাঘন্টা পরে এসে হাজির হবে। এর ফলে আপনার মূল্যবান আধাঘন্টা সময় নষ্ট হবে। চারটা মানে চারটা, সাড়ে চারটা নয়। আর যদি তুমি বাঙ্গালীর সময় বোঝ তাহলে সাড়ে তিনটায় এসো।”

৭. দূরে যাওয়ার সময়ে সম্ভাব্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাতে রাখবেন যাতে অভাবিত কিছু ঘটলেও যেন সময়মত সেখানে যেয়ে পৌছতে পারেন। আর বাড়তি সময়ে সম্পন্ন করার জন্য হাতে কিছু কাজও নিয়ে নিবেন।

৮. প্রবন্ধ লেখা, বা বক্তৃতা প্রস্তুত করা বা এ ধরনের যে কোন কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

৯. আপনার সময়ক্ষেপণ করতে পারে এমন চিন্তাশূন্য লোক এড়িয়ে চলবেন। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন লোকটি আবার আপনার আচরণে কষ্ট না পায়।

১০. চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কোন কাজের জন্য নিজে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন না। এভাবে আপনার যাওয়া আসার সময়কে বাঁচাতে পারবেন।

১১. যদি কোন সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বা কোন কাজ থাকে, তাহলে সবকিছু লিখে পরিকল্পনা করুন যাতে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে এবং ভ্রমন দীর্ঘায়িত না করে সব কাজ করে আসতে পারেন।

সময় সম্পর্কে কিছু কথা

(ক) সময় নেবেন-

সময় নেবেন চিন্তা করতে, এটি ক্ষমতার উৎস;

সময় নেবেন খেলতে, এটি অনন্ত যৌবনের আঁধার;

সময় নেবেন পড়তে, এটি জ্ঞানের ভিত্তি;

সময় নেবেন নামাজ আদায় করতে, এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় শান্তি;

সময় নেবেন ভালবাসতে এবং ভালবাসা প্রদান করতে;

সময় নেবেন বন্ধু বনে যেতে, এটি সুখের সোপান;

সময় নেবেন হাসতে, এটি সর্বোত্তম লুব্রীক্যান্ট;

সময় নেবেন দিতে বা দন করতে, স্বার্থপর হয়ে জীবনটাকে ছোট করার কোন অর্থ নেই।

সময় নেবেন কাজ করতে, এটি সফলতার মূল্য (price) ,

কিন্তু সময়ক্ষেপণের জন্য কখনও সময় নেবেন না।

স্মরণ রাখবেন রাসূলে করীম স. বলেছেন-

“যারা দুটি দিন একই রকম যায় নিঃসন্দেহে সে ক্ষতিগ্রস্থ।”

(খ) সুব্যবহৃত সময়

জীবনের একটা ভাল অংশ বন্ধুদের সাথে ব্যয় হয়। এ সময়ে আমরা কী ধরনের আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হই? নিম্নোক্ত মহাবাণীগুলি স্মরণ রাখবেন সে ক্ষেত্রে-

মহৎ মন- ধারণা বা চিন্তামূলক আলোচনা করে;

সাধারণ মন- ঘটনাবলী আলোচনা করে;

ছোট মন- পরচর্চা করে;

অতি ছোট মন- নিজেদেরকে নিয়ে আলোচনা করে।

আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না

যদি আপনি কাজ শুরু করতে বিলম্ব করেন, তবে কাজ স্তুপীকৃত হতে থাকবে। কাল কি হবে তা আপনি জানেন না। গতকালের অসমাপ্ত কোন কাজ নেই, এমন অবস্থায় যদি আপনি দিন শুরু করতে পারেন, তবে তা হবে এক বড় স্বস্তি। পাঁচ মিনিট বা কম সময়ের কাজ  হলে তৎক্ষণাৎ করে ফেলা ভাল। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগলে অগ্রাধিকার অনুযায়ী কর্যতালিকা তৈরি করে নেবেন।

আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। এভাবে ফেলে রেখে কিন্তু আপনি কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে রিস্ক নিচ্ছেন। আজকের কাজ আজই সম্পন্ন করতে পারলেন না তাহলে আগামীকাল কিভাবে ফেলে রাখা কাজসহ দিনের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করবেন?

কাজ ফেলে রাখার বিপক্ষে বলছি এভাবে-

“If you have hard work to do

Do it now

today the sky is clear and blue

tomorrow clouds may come in view

yesterday is not for you

so do it now”.

আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। বরং আজকের কাজ শেষ করে আগামী কালের ব্যাপারে চিন্তা করুন-

মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।”

সূরা হাশর-১৮।

সময়ের সুব্যবহার: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

আমাদের দেশের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কিছু বিষয় রয়েছে যা অন্যদেশের সাথে মেলে না কোন ক্রমেই। এদেশে অনেক সময়েই বড় বড় শহর গুলোতে ট্রাফিক জ্যাম পড়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টার জন্যে। এছাড়াও অনেকে বাস ধরার জন্যে স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন অনেক সময় ধরে। এ সময় অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে না বলে অনেকে মনে করেন। শহরে বসবাস করতে দিনের একটা বৃহৎ অংশ আমরা নষ্ট করছি এভাবে। অথচ এই সময়টাকেও কাজে লাগানো যায়, যদি এ ব্যাপারে সঠিক পরিকল্পনা থাকে আমাদের।

আমার জানা মতে একজন ভদ্রলোক তাঁর ছাত্র জীবনে এ ধরনের বিশাল একটা সময়কে কাজে লাগাতেন। তিনি প্রতিদিন অনেকগুলো টিউশনি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি তার নিজের খরচের টাকা নিজেই উপার্জন করতেন। তাছাড়া তার ছোট ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ চালিয়ে মাঝে মধ্যে পিতাকেও আর্থিক সাহায্য দিতেন। তার পিতা সরকারি অফিসের একজন দরিদ্র কেরানী ছিলেন মাত্র। টিউশনি করতে যাওয়া আসার সময়টাকে তিনি কাজে লাগাতেনে তার পাঠ্য পুস্তকের কিছু অংশ মুখস্থ করার কাজ। এছাড়াও তিনি প্রতিদিন ২০ টি করে ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করতেন কেননা ইংরেজিতে তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন। এই ভদ্রলোক বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তিতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পেরেছিলেন।

বর্তমানে ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এসমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্যে উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর ফলে অনেক অব্যবহৃত সময় মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে আমাদের জন্য।

আর কয়েকটি বিষয় বলছি এবার।

১. আপনার সময় কিভাবে নষ্ঠ হচ্ছে প্রতিদিন তার একটা তালিকা তৈরি করুন।

২. সাধারণভাবে অব্যবহার্য এই সময়গুলোকে কাজে লাগনোর জন্যে একটা সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

৩. আপনার ধারে কাছে সব সময়েই কিছু না কিছু পাঠ্য সামগ্রী রাখুন যাতে করে সুযোগ পেলেই সেগুলোকে বের করতে পারেন এ ধরনের সময়কে কাজে লাগানোর জন্য।

ভেবে দেখেছেন কি এই ব্যবস্থাপনা আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করতে পারে। সে সময়গুলো মূল্যবান হয়ে উঠবে যখন আপনি কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন কোন এক স্থানে, অথবা কোন মিটিং এ যোগদানের জন্যে আপনি সময় মত পৌছে গিয়েছেন অথচ মিটিং শুরু হচ্ছে না অন্যরা আসেনি বলে। সে সময় আপনার ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার এই কাজ আপনার অধ:স্থন নেতা কর্মীদের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলবে।

কল্পনা করুন তো দেখি এমন একটা সময়ের যখন আপনি একটা ট্রেনে বা লঞ্চে অন্য কোন যাত্রীর সাথে দূরের কোন গন্তব্য স্থানে যাচ্ছেন। আপনারা কয়েকজন মিলে গল্প করেছেন, কেউ ঝিমাচ্ছেন, আর একজন ব্যক্তি বই পড়ছেন। তাহলে কার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাবোধ বেশি হবে? এই শ্রদ্ধাবোধের খুবই প্রয়োজন বর্তমানে এ সমাজের জন্য। আর একটি ঘটনা বলছি। যখন আপনি আপনার অফিসে যাওয়ার পথে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন কোথাও, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন অথচ আপনার হাতে একটি পাঠ্য সামগ্রী। খুবই ভাল হয় এটি যদি ছোট আকারের কোন কোরআন শরীফ হয়। আপনি হয়তো ভাবছেন একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে; অথচ প্রকৃতপক্ষে আপনার পাশে কয়েক জন ফেরেশতাও রয়েছেন যাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু সওয়াবের ভাগী হয়ে যেতে পেরেছেন। আমাদের জীবনটাতো এমনই। এভাবে প্রচুর সুযোগ রয়েছে সওয়াব অর্জনের; পক্ষান্তরে এখানে সম্ভাবনাও রয়েছে বিপুলভাবে এই সুযোগসমূহের সদ্ব্যবহার না করার কারণে গুনাহ এর ভাগীদার হওয়ার। মহান রাব্বুল আলামীন এই সমস্ত সুযোগের এবং তার ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের হিসাব নিবেন হাশরের দিন।

শেষ কথা

সময় হচ্ছে সুযোগ। আর তা মেষ গওয়ার পরে মানুষের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ব্যক্ত হয়েছে-

”প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।” সূরা মুনাফিক- ১১।

“সেখানে তারা আর্তচিৎকার করে বলবে, হে আমাদের রব বের করুন আমাদেরকে। আমরা সৎ কাজ করব। পূর্বে যা করতাম তা করব না, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতোটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই। “ সুরা ফাতির- ৩।

স্মরণ শক্তি: না জানা সব তথ্য

কেউ কেউ বলে থাকেন বয়স হয়েছে তো  আজকাল আগেকার মত মনে রাখতে পারি না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি ছোট কালে কয়টি বিষয়ে চিন্তা করতেন, আর আজকাল কোন কোন বিষয়ে? ছোট কালের বিষয় যেমন- এখন শীতকাল, কাল সকালে খেজুরের রস খেতে হবে, দাদুকে বলতে হবে আমার জন্যে একটি র‌্যাকেট কিনতে আর বন্ধুর কাছে আমার গল্পের বইটি রয়েছে।  এসব বিষয় পাল্টে গেছে বর্তমানের ৭০ বছর বয়সে। এখনকার আইটেম ৩টির স্থলে ৩০টি, যেমন বড় ছেলেটি অ্যামেরিকায় পড়াশুনা করছে তাকে একটি E-mail করতে হবে, ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তোলা প্রয়োজন, আমার জন্যে তিনটি ওষুধ আর স্ত্রীর জন্যে দুইটি, ছোট মেয়ের শ্বশুরকে দাওয়াত দিতে হবে এবং সবশেষে নাতির জন্য খেজুরের রস, একটি র‌্যাকেট এবং একটি গল্পের বই। মোট তিনটি আইটেম? এবং এ সবের মধ্যে শেষের তিনটির Priority কোথায় গিয়ে পড়ে হিসেব করুন তো। যদি ভুলতেই হয় তবে কি আপনি আপনার প্রেসারের অসুধ কেনার কথা ভুলবেন নাকি নাতির জন্যে গল্পের বই কেনার কথা, যে শীতকালে তার বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ করে অতিথি হয়ে আপনার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। বাস্তব কারণে এভাবই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ Complain করে যে, সে অনেক কিছু ভলে যায়। প্রকৃতপক্ষে ৭০ বছর বা তারও বেশি বয়সী একজন মানুষও হতে পারেন চমৎকার স্মৃতিশক্তিধর মানুষ। সেজন্য প্রয়োজন একটা ইচ্ছাশক্তি কার্যকর করা। মনে রাখবেন কারো স্মরণশক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তাকে ব্যবহার করা না হয়। অপরদিকে যদি এর ব্যবহার করা হয়, তাবে আমৃত্যু মানুষের স্মরণশক্তি শুধু বেড়েই চলে।

আপনি যে কারণে ভুলে যান তার প্রথমটি হলো আপনি ধরেই নিচ্ছেন যে আপনার বয়েস হয়েছে তাই ভুলে যাবেন। অর্থাৎ ভুলে যাবেন এটিই আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু মনে রাখার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, মনে রাখার সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ প্রয়োজনের বিপক্ষ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আপনি- তাই ভুলে যাচ্ছেন।

ভুলে যাওয়া’ ব্যাধি একটি অতি সাধারণ অসুখ, তবে এর চিকিৎসা করা না হলে বেড়েই চলে। এই চিকিৎসা কিন্তু আবার প্রচলিত নিয়মের ওষুধ দিয়ে সারানোর পদ্ধতি নয়- বরং ব্যক্তির মনে কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন করা যে প্রকৃতপক্ষে এটা কোন অসুখ-ই নয়। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিস্ময় আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানী থেকে পালিয়ে আমেরিকায় চলে যান। সরকারি উদ্যেগে তাঁকে একটি বাসস্থান বরাদ্দ দেওয়া হয় সেখানে। একবার জরুরি কাজে এক ভদ্রলোক তাকে টেলিফোন করে তার বাসার নম্বর জানতে চেয়েছিলেন তাঁর সাথে দেখা করবেন বলে। আইনস্টাইন তাকে বাসার নম্বর বলতে পারেননি। কারণ তিনি সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। অবশ্য ভুলে যাবেনই বা না কেন। আইনস্টাইন অপ্রয়োজনীয় (তার মতে) তথ্য দিয়ে তার স্মৃতির ভান্ডার ভরে রাখতে চাইতেন না। তার বাসার ঠিকানা এই অপ্রয়োজনীয় তথ্যের পর্যায়েই পড়ে। এ ব্যাপারে তার অভিমত সম্পর্কে একটি ঘটনা বলি। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয় এক মাইল কত ফুট থাকে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বলতে পারব না। যেসব তথ্য যে কোন রেফারেন্স বইয়ে দু’মিনিটে খুঁজে পাওয়া যায় সে গুলি মাথায় রাখার দরকার কি? আইনস্টাইন মনে করতেন মস্তিস্ককে তথ্য ভান্ডার না করে চিন্তা ভাবনায় প্রয়োগ করা বাঞ্চনীয়।

যাক ফিরে আসি আগের কথায়। ধরি স্মৃতি শক্তির বৃদ্ধি সম্পর্কিত এসব তথ্য আপনার জানা ছিল না আগে। এখন জেনেছেন এবং আপনার নিজের ব্যাপারে তা প্রয়োগ করতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে করবেন?

এক্ষেত্রে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলছি- তিনি হলেন টনি বুজন। তিনিই ওয়ার্ল্ড মেমরি চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতার চালু করেন ১৯৯১ সাল থেকে। সুদীর্ঘ সময় এই ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যেমে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে তার অভিমত হচ্ছে-

(ক) স্মরণ শক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তার ব্যবহার না করা হয়।

(খ) ব্যবহার বাড়িয়ে ক্ষয়ে যাওয়া স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি করা যায়। সে জন্যে প্রয়োজন হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর ইচ্ছাশক্তিকে কর্যকর করার।

সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে এবং পরবর্তিতে প্রাকটিস চালিয়ে যেয়ে কেউ কেউ অবাক করার মত স্মরণ রাখার ক্ষমতা অর্জন করে থাকেন। তাদেরকে মেন্টাল সুপার এথলেট বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের সবারই এদের মতো মেন্টাল সুপার এথলেট হওয়ার দরকার নেই। তবে একটা নির্ভরযোগ্য স্মৃতিশক্তি সবার জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যাপারই আমার পরবর্তী আলোচনা।

স্মৃতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ বব গ্রে। তিনি গত ২০ বছর ধরে মানুষকে একটি মেমোরাইজেশন মেথড’ শিক্ষা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে কী অমিত স্মরণশক্তি সুপ্ত আছে, সে সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে-আমরা ভুলোমনা মানুষগুলো এমন কী বিষয়টা জানি না, যা মেন্টাল সুপার এথলেটরা জানেন? সে বিষয়টি হচ্ছে mnemonic (নেমোনিক)। এই নেমোনিক হচ্ছে সবকিছু মনে রাখার সুপ্রমাণিত কৌশল। এজন্য কিংবা এ ফলাফল দেখার জন্য বছরের পর বছর ধরে পড়াশোনা করার দরকারও পড়বে না। একবার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝে ফেলতে পারলে এবং তা নিয়মিত প্রয়োগ করলে আপনার কাজ হয়ে যাবে- তখন আপনি হবেন উন্নত স্মৃতিশক্তিধর এক মানুষ। এ কাজটি করতে পারবেন এত দ্রুত, যা এর আগে আপনি ভাবতেই পারেননি। টনি বুজন  বলেছেন, এর মধ্যমে একদিনেই অগ্রগতিটা বোঝা যাবে।

বেশ কয়েক ডজন নেমোনিক টেকনিক রয়েছে। কিন্তু সবকিছু এসে মিশেছে দুটি বিষয়ে- ইমাজিনেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন। বুজন এ দুটিকে আখ্যায়িত করেছেন পিলার্স অব ব্রেইন ফাংশন’। যেহেতু মস্তিস্কের মূল কাজ হচ্ছে, এগুলোকে দৃশ্যমান চিত্রের মতো মূর্ত করে তুলে স্মরণযোগ্য করে তোলা।

Roman Room পদ্ধতি হচ্ছে মনে রাখার সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল। এটি হচ্ছে একটি পদ্ধতি যে ক্ষেত্রে ব্যক্তি মনে রাখার জন্যে তার অতি পরিচিত বাসস্থানের কক্ষ এবং তার আশ পাশের দৃশ্যের সহায়তা নিয়ে থাকে। একটি উদাহরণ দেই এ প্রসঙ্গে।

মনে করুন আপনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই গোছালো প্রকৃতির। আপনার বাসস্থানের সবকিছু টিপ টপ থাকে সবসময়। ঘরে ঢুকেই দরজার পাশে জুতা বা স্যান্ডেল রাখেন নির্দিষ্ট একটি র‌্যাক। আপনার বাসার কাজের মেয়ে সর্বদা বাসার পরিচ্ছন্নতা এবং সবকিছু গুছিয়ে রাখার ব্যাপার যত্নশীল। এমতবস্থায় আপনি ঘরে ঢুকতেই দেখতে পাচ্ছেন একজোড়া স্যান্ডেল উল্টিয়ে রাখা দোরগোড়ায়। ব্যাপারটি কি আপনার চোখ এড়িয়ে যাবে? অবশ্যই নয়। এখানে বক্তব্য হচ্ছে আপনি সেখানে এক জোড়া স্যান্ডেল উল্টিয়ে রাখবেন আপনার কল্পনায়, নাকি একটি তাজা শিং মাছ সেখানে হেলে দুলে সামনে চলার চেষ্টা করছে এমন কিছু অথবা এক বোঝা লাউ শাক কেউ এনে ফেলে রেখেছে ঢুকতেই পথের উপর সেটা নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজনের উপর। অর্থাৎ আপনি বাজার শিং মাছ কিনবেন, নাকি লাউ শাক বা এক জোড়া স্যান্ডেল। প্রয়োজন মাফিক কল্পনায় সাজিয়ে নিন দৃশ্যগুলো। এমনতো হতে পারে ঢুকতেই প্রথমে উল্টানো স্যান্ডেল, রান্নাঘর পার হওয়ার সময় একটি শিং মাছ এবং শেষ পর্যায়ে আপনার বেড রুমে ঢোকার দরজার সামনেই লাউয়ের আটি অর্থাৎ আপনাকে সবগুলোই কিনতে হবে বাজার থেকে।

আর একটা দৃশ্যের কথা বলি যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। তা হলো আপনার পরিপাটি বিছানার উপর কাঁদামাটি সহ খুবই অপরিস্কার এক জোড়া জুতা অথবা এক বোঝা লাকড়ি বা জগ ভর্তি একজগ পানি এবং পাশে একটি গ্লাস। বলুল এর কোনটি মেনে নেওয়া যায় অর্থাৎ আপনি এর মধ্যে কোন আইটেমকে ক্ষমা করবেন?

এবারে কোন এক সময়ে ইউ এস মেমোরি চ্যাম্পিয়ানশীপ-এ শিরোপা জিতেছিলেন এমন একজনের সম্পর্কে কিছু বলি। স্কট হ্যাগউড নামের এই ভদ্রলোকের থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসার সময় স্মৃতি শক্তি কমে যায়। পরবর্তিতে তিনি ১৯৯৯ সালে সিদ্ধন্ত নেন তার স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর। করণীয় কর্যক্রম হিসাবে তিনি মাত্র একটি স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির কোর্স করেছিলেন, এবং তার অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তাবে প্রয়োগ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ইউএস মেমোরি চ্যাম্পিয়ান হতে সামর্থ হয়েছিলেন। এবং পরবর্তিতে পেশা হিসেবে তিনি মেমোরি উন্নয়ন বিষয়ক ট্রেইনার এর কাজ বেছে নিয়েছিলেন।

বাড়তি কিছু তথ্য দিচ্ছি এবার যা আমাদের জানা থাকা দরকার। তা হলো আমাদের মস্তিস্কের দুই পাশ কাজ করে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। ডান পাশের কাজ হচ্ছে আকার চেনা, স্থান ও সঙ্গীত ধারণ, আবেগতড়িত হওয়া ও সৃজনশীলতা। আর বাম পাশটা যুক্তি, ভাষা ধারাক্রম, উভয় পাশ ব্যবহার করবে, ততই একপাশ অপর পাশের জন্য বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যারা মস্তিস্কের উভয পাশ বেশি ব্যবহার করেন, তাদের স্মরণশক্তিই সবচেয়ে বেশি।

এর সাথে একটা কৌশলের বর্ণনা দিচ্ছি যা হলো নাম মনে রাখার কৌশল। কৌশলটি হচ্ছে-

১। কারো নাম মনে রাখবেন কিনা সে ব্যাপারে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন।

২। নামটা সঠিকভাবে জেনে, শুনে এবং বুঝে নিন।

৩। লোকটির চেহারা পর্যবেক্ষণ করে চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে মনে রাখুন। এভাবে একটি মানচিত্র তৈরি করুন আপনার মানসপটে।

৪। নামটা মনে রাখার জন্য অন্য কিছুর সাথে সাদৃশ্য খুঁজে নিন। প্রয়োজনবোধে আরও দু’একটি পরিচিত নামের সাথে এই নামটিকে মিলিয়ে নিন, যেমন: মান্নান-হান্নান। মা’ ই বেশি কাছের তাই মান্নান, হান্নান হয়।

এভাবে কিছুদিন প্রাকটিস চালিয়ে দেখুন কাজ হয় কিনা।

ইংরেজি: উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি

প্রায় দু’শ বছরের ইংরেজ শাসনে ইংরেজি ভাষা তার অবস্থান পোক্ত করেছিল এ দেশবাসীর মনোজগতে। ঔপনিবেশিক মানসিকতার অংশ হিসেবে ইংরেজি ভাষার প্রতি সেই সমীহ ও প্রেম এদেশবাসীর জীবনে এখনও কম বেশি প্রখন। কিন্তু কলোনিয়াল মানসিকতার ইংরেজি প্রেম এবং বর্তমান বিশ্বায়নের প্রভাব নতুন প্রজন্মের ইংরেজি প্রেম- এ দুটি বিষয় কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। এদেশে এক সময়কার বিবেচনায় ইংরেজি ছিল প্রভু আর প্রভাবের ভাষা, শাসন আর শোষকের ভাষা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ইংরেজি এদেশে এখন ইতিবাচক অর্থেই প্রতিটি শিক্ষিত মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি।

বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির প্রভাবেই পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বর্তমানে এ ভিলেজের lingua franca (লিংগোআ ফ্রাংকা- বহু ভাষাভাষী অঞ্চলে যে ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়) অনিবার্যভাবে ইংরেজি। সুতরাং ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে যে কোন ধরনের উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একারণে বিশ্বব্যাপী আর্থ সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং জ্ঞানগত উন্নয়নের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হলে ইংরেজি আমাদের শিখতেই হবে।

বাংলাদেশে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি’- বিষয়টি আলোচিত, সমালোচিত কিন্তু উপেক্ষিত নয়। আমরা এ বিতর্কে না গিয়েই বলতে চাই, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষাকে স্বাগত জানানো ক্যারিয়ার সচেতন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই এখন অপরিহার্য। কারণ শিক্ষার এই স্তরে যে বিষয়ই পড়ুক না কেন একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত ইংরেজিতে লেখা বইয়ের সাহায্য নিতে হয়, ইংরেজিতে লিখতে হয় এবং ইংরেজিতে ইন্টারনেটের মত তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়। তাছাড়া ইচ্ছা থাকলেও বহু বিষয়ের, যেমন- প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, এর শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাবে মাতৃভাষায় লেখাপড়া করতে পারে না। ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে বহু শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারে না, যা অনিবার্যভাবে তাদের ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। কারণ উচ্চ শিক্ষই ক্যারিয়ারের শক্তিশালী সোপান।

বাংলাদেশের চাকুরির বাজার পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বহুগুণে প্রতিযোগিতামূলক এবং চ্যালেঞ্জিং। সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সংস্থাগুলোতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে ইংরেজি ভাষা লেখা, বলা শোনা এবং পড়ার উপর প্রয়োজনীয় দক্ষতাকে অন্যতম গুণ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্যাশিত সব দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় অদক্ষতার কারণে বহু চাকুরিপ্রার্থী মূল্যবান এইসব চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং যথাযথ ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির উপর গুরুত্ব আরোপ আজ সময়ের দাবি।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলার একটাই পথ, আর তা হচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তি বা মানবসম্পদে রূপান্তর। আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। আমাদের বিপুল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীকে ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষিত করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশের শ্রমিকরা ইংরেজি না জানার কারণে পৃথিবীর বহু দেশে যেতে পারে না, আবার গেলেও ইংরেজি না জানার কারণে নানা বৈষম্যের শিকার হয়।

সবশেষে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি বাস্তব ঘটনা দিয়ে ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির গুরুত্ব শেষ করতে চাই। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে হয়েছিল জাতিসংঘ শান্তি মিশনে। দায়িত্ব পালনের পূর্বে UN সদর দপ্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা, যেমন- শারীরিক ফিটনেস, ড্রাইভিং, আর্মস পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক দক্ষতার পরিচয় দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং তাদেরকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। এ ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইংরেজি এখন শুধু ব্যক্তির ক্যারিয়ারের জন্যই নয়, বরং দেশ ও জাতির মুখ উজ্জল এবং সুনাম রক্ষার্থেও ইংরেজির বিকল্প নেই।

চাকুরি : প্রস্তুতি

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে ডিগ্রি অনুযায়ী একটি চাকুরি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাটাই আমাদের দেশে একন নানা বিবেচনায় অস্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। ডিগ্রি এখন চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত কিন্তু চাকুরিতে চান্স পাবার বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভূমিকা গৌণ। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান একজন প্রার্থীকে অধিকাংশ চাকুরির পরীক্ষায় খুব বেশি সাহায্য করে না। যা সাহায্য করে তা হলো সাধারণ জ্ঞান। যেমন-

ক) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

খ) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী।

গ) মানসিক দক্ষতা বা মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান।

কিন্তু সাধারণ জ্ঞান কথাটি যত সাধারণ পরীক্ষার হলে সাধারণ জ্ঞান তার চেয়ে বহুগুণ অসাধারণ। চাকুরির বাজারের অসহনীয় এবং অভাবনীয় প্রতিযোগিতার কারণে চাকুরিদাতাগণ সীমিত সংখ্যক প্রার্থীকে গ্রহণের চেয়ে বহুসংখ্যক প্রার্থীকে বর্জনের বিষয়টিই আগে ভাবেন। ফলাফল যা দাঁড়ায় তাহলো- সাধারণ জ্ঞান তার সীমা পেরিয়ে অসাধারণতায় রূপ নেয়, আর চাকুরির পরীক্ষা না হয়ে, হয়ে যায় বর্জনের প্রক্রিয়া। এই বর্জনের প্রক্রিয়ায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আওতায় ক্রমাগত/ নিয়মিত সময়, শ্রম, ধৈর্য এবং অর্থের বিনিয়োগ। পরিমাণগত দিক থেকে অর্থ যৎকিঞ্চিৎ অর্থাৎ এককালীন বড় জোর একহাজার এবং প্রতিমাসে ন্যূনতম পঞ্চাশ টাকা। (বিবিএস- এর প্রস্তুতি অংশের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও বইসমূহ দেখুন)।

সময়ের বিষয়টি অন্যতম বিবেচ্য একারণে যে, যদি প্রার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষে চাকুরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তাহলে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা এখাতে চাকুরি না পাওয়া পর্যন্তব্যয় করতে হবে। কিন্তু যারা উচ্চশিক্ষার শুরুতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন তারা একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকুরি পরীক্ষার একটি মানসিক প্রস্তুতি স্মরণে রাখবেন এবং প্রতিদিন অবসরে কিন্তু সচেতনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় এখাতে বিনিয়োগ করবেন। প্রতিদিনের ২০ মিনিট শিক্ষা শেষে আপনাকে এমন এক অর্জনের মুখোমুখি দাঁড় করাবে যে প্রত্যাশিত চাকুরি অনায়াসে আপনার হাতে ধারা দিবে। অনেক ক্ষেত্রেই সময় আমাদের সমস্যা নয়, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যবস্থাপনা। সময় ব্যবস্থাপনায় আপনি যেন হেরে না যান- এ কারণে আপনার থাকা দরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত অপরিসীম ধৈর্য। একারণে আমরা সময়, শ্রম এবং অর্থের সাথে ধৈর্যকে সফলতায় সোপান হিসেবে বিবেচানয় নিতে চাই।

বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় কিভাবে সফল হবেন

পূর্ব প্রসঙ্গ

বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী হওয়ার দরকার নেই। এখানে যেটা দরকার, তাহলো, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা, যা মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদেরই বরং থাকার সম্ভাবনা কম। যারা প্রথম শ্রেণীতে প্রথমস্থান পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করেন, তারা পাঠ্যসুচির বাইরে যাওয়ার অল্পই সুযোগ পান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৈনন্দিন ঘটনাপ্রবাহ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, খেরাধূলা ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি সঙ্গত কারণেই তাদের জানা হয়ে ওঠে না। পক্ষান্তরে যাদের আশৈশব নেশা রাজনীতি ও খেলাধুলার প্রতি, যারা পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর পাতায় বুঁদ হয়ে থাকতে ভালবাসেন, কানে ট্রানজিস্টার লাগিয়ে খেলার ধারাবিবরণী শোনেন, তারা সমগ্র শিক্ষাজীবনে মধ্যম মানের হয়েও বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষা অনায়াসে উত্তীর্ণ হয়ে যান। এখানেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মানদণ্ড তাহলে কোনটি?

বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষার মানদণ্ড

সাধারণভাবে বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ৭টি আবশ্যিক মানদণ্ড রয়েছে। ভাইভাবোর্ডের সদস্যগণ আশা করেন সাক্ষাৎকার প্রার্থীগণ ন্যুনতম এ সকল মানদণ্ড বজায় রেখেই ইন্টারভিউবোর্ডে হাজির হবেন। এই মানদন্ডগুলি হলো-

(ক) প্রার্থীর সপ্রতিভা চেহারা, সাবলিল বাচনভঙ্গী ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব;

(খ) নিজের অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা (উক্ত বিষয়ে সর্বশেষ নোবেলবিজয়ীর নামসহ);

(গ) নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে খুটিঁনাটি জ্ঞান (উক্ত স্থানে জন্মগ্রহণকারী খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের জীবন-বৃত্তান্তসহ);

(ঘ) প্রার্থী যে ক্যাডার বা পদে যেতে ইচ্ছুক, ঐ ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা;

(ঙ) প্রার্থী তার পছন্দের ক্যাডার/ পদ-এ কেন যেতে ইচ্ছুক, তার গ্রহণযোগ্য কারণ;

(চ) প্রার্থীর কোন অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে (যা তিনি মূল আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় উল্লেখ করেছেন) সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক বলতে পারার মতো জ্ঞান;

(ছ) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, খেলাধূলা ও শিল্প-সহিত্য সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

উপরে যে ৭টি মানদন্ডের কথা বলা হলো, এর মধ্যেই পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। যদি কোন পরীক্ষার্থী এ সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন, তবে তিনি হাজার অতিরিক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন হলেও মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারবে না।

যোগ্যতা অর্জনের উপায়সমূহ

(ক) সপ্রতিভ চেহারা, সাবলিল বাচনভঙ্গি ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব: মনোবৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জন্মের সময় পৃথিবীর সবাই এই তিনটি গুণ নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। কেউ কারো চেয়ে দুর্বল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পরবর্তিকালে জীবনযুদ্ধের নানা টানাপোড়ন, বৈরী পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে কারো কারো এ সকল গুণাবলী লোপ পায়। যাদের লোপ বা কমে যায়, তারা এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন। সেই হীনমন্যতা বিসিএস ভাইভাবোর্ডেও তাদের ছাড়ে না। ফলে বিস্তর পড়াশোনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক উপস্থাপনার অভাবে তাদের সকল প্রস্তুতি বিফলে যায়। আমাদের জানতে হবে এই বিফলে যাওয়ার কারণগুলো কি। কেন একজন পরীক্ষার্থী বিসিএস ভাইভাবোর্ডে সহজ হতে পারেন না? কেন পারেন না সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।

(১) অতিরিক্ত কার্য সচেতনতা: এটি আসে অতিরিক্ত সিরিয়াসনেস থেকে। পরীক্ষার্থী তার পোশাক-আশাক, চেহারা ও আচরণ সম্পর্কে এতখানি সিরিয়াস হয়ে উঠেন যে, তিনি আর অন্য কোনদিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। ভাইভাবোর্ডের সভাপতি বা সদস্যগণ কি বলছেন, তা তার কানে ঢোকে না। তিনি নিজেও কি বলবেন, তা গুলিয়ে ফেলেন।

তাঁরা আশা করেন, একেক জন প্রার্থীর চাল-চলন, বাচনভঙ্গি অবশ্যই একেক রকম হবে। তাবে তাতে সপ্রতিভ ও চটপটে ভাব প্রকাশ পাবে। কাজেই অতি দায়িত্ব সচেতনতা, যাকে ইংরেজিতে ‘পারফরমেন্স কনশাসনেস’ বলা হয়, তাতে অহেতুক কাতর হওয়া ঠিক নয়।

(২) মুদ্রাদোষ: ভাইভাবোর্ডে সহজ হতে না পারার আরেকটি কারণ হলো মূদ্রাদোষ। কোন কোন পরীক্ষার্থীর নানা রকম মূদ্রাদোষ দেখা যায়। কেউ কথা বলতে গিয়ে তোতলান, কেউ জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটেন, কেউ ঘনঘন ভ্রু কুঁচকান, কেউ কথা বলতে গিয়ে অহেতুক হাত নাড়েন, মূদ্রাদোষের কারণে এ সকল পরীক্ষার্থী হীনমন্যতায় ভোগেন, ভাইভাবোর্ডে আড়ষ্ট হয়ে থাকেন। কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না।

এ থেকে পরিত্রানের উপায় হলো, মৌখিক পরীক্ষার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রাকটিস করা; কাল্পনিক বোর্ডের সামনে মৌখিক পরীক্ষার রিহার্সাল দেয়া। এতে করে মূদ্রাদোষের পরিমাণ যেমন কমে আসবে, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

(৩) উচ্চারণের আঞ্চলিকতা: উচ্চারণে আঞ্চলিকতাদুষ্ট হওয়া বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এমন কোন আঞ্চলিক শব্দ যেন ভাইভাবোর্ডে বলা না হয়, যা সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থই পাল্টে ফেলে। পরীক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে উচ্চারণের অল্পস্বল্প আঞ্চলিকতা দোষণীয় নয়, তবে গুরুতর আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ ক্ষেত্রে আগের মতোই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ চর্চা করা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যে কোনো আবৃত্তি সংগঠন আয়োজিত উচ্চারণ কর্মমালায় ভর্তি হয়ে গেলে।

(খ) নিজের অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা: পরীক্ষার্থী যে বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন, সে বিষয় মোটামুটি স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাইভাবোর্ডের প্রথম প্রশ্ন হতে পারে তার অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে।

(গ) নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে খুটিনাটি জ্ঞান: পরীক্ষার্থীকে তার জন্মস্থান সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে। জন্মস্থানের নামকরণ, আদি ইতিহাস, আয়তন, জনসংখ্যা, প্রথান কৃষিজাত দ্রব্য, খনিজ সম্পদ, উক্তস্থানে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ ও মুখস্থ করতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, কেবলমাত্র জন্মস্থান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে পরীক্ষার্থীকে ভাইভবোর্ড থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।

(ঘ) প্রার্থী যে ক্যাডার বা পদে যেতে ইচ্ছুক, ঐ ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা: অনেক সময় দেখা যায়, প্রার্থী যে ক্যাডার/পদ-এ যেতে ইচ্ছুক ঐ ক্যাডার/ পদ সম্পর্কে প্রার্থীর কোন ধারণা নেই। বিসিএস ভাইভাবোর্ডে এটি গুরুতর গলদ হিসেবে দেখা হয়।

(ঙ) প্রার্থী তার পছন্দের ক্যাডার/ পদ-এ কেন যেতে ইচ্ছুক তার গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যাখ্যা: বিসিএস ভাইভাবোর্ডে প্রার্থীকে প্রায়শই একটি কমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রশ্নটা হলো এই, আপনি কোন অমুক ক্যাডার/ পদ-এ যেতে চাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ প্রার্থীই মানানসই বক্তব্য রাখতে পারেন না; সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। কখনো কখনো প্রার্থীর অর্বাচীনসুলভ উত্তরে বোর্ড বিরক্ত হয়। বোর্ডের হাতে সুযোগ এসে যায় প্রার্থীকে ঘায়েল করার। এ থেকে পরিত্রানের একমাত্র পথ হলো গুছিয়ে কথা বলা, সঠিক ও বুদ্ধিদিপ্ত উত্তর দেয়া, পারতপক্ষে কম কথা বলা। কিছু কিছু ক্যাডার/ পদ আছে, যেখানে দুর্নীতির সুযোগ অত্যাধিক। যেমন- পুলিশ, কাস্টম এন্ড এক্সাইজ ইত্যাদী। প্রার্থীর পছন্দের তালিকায় এ সকল ক্যাডার রয়েছে কি না বা এসব পদ-এ যেতে চাইছেন কি-না সেটাও যাঁচাই করা হয়। এ ধরনের প্রশ্নে প্রার্থীকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে উত্তেজিত হলে চলবে না।

(চ) প্রার্থীর কোন অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জ্ঞান: প্রার্থীর মূল আবেদনপত্রে যদি অতিরিক্ত যোগ্যতার বর্ণনা থাকে, তাহলে ভাইভারোর্ডে সে সম্পর্কে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়। যেমন খেলাধূলা, অভিনয়, সঙ্গীত, সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি। প্রার্থীকে এ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা নিয়ে ভাইভাকক্ষে যেতে হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐ বিষয়ের খবরাখবরও তাকে রাখতে হবে।

(ছ) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, খেলাধুলা ও শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান: মৌখিক পরীক্ষার জন্য এ অংশটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে প্রার্থী তার দেশ ও পারিপার্শ্বিক জগত সম্পর্কে কতখানি ওয়াকিবহাল, তা যাচাই করার জন্য প্রার্থীকে এ পর্যায়ে প্রচুর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

দৈনন্দিন সংবাদপত্র/ সাময়িকী পাঠ, রেডিও-টিভিতে দেশ ও বহির্বিশ্বের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহ অবহিত হওয়া-এ সকল উপায়েই কেবলমাত্র মৌখিক পরীক্ষার এ অংশের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হতে পারে।

ভাইভবোর্ডে যা যা বর্জনীয়

ভাইভবোর্ডে করণীয় যেমন আছে, তেমনি বর্জনীয়ও আছে অনেককিছু। এ সম্পর্কে প্রার্থীর জ্ঞানের অভাব অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনও হতে পারে, প্রার্থীর অঢেল জ্ঞান ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র বর্জনীয় স্বভাবের কারণে তাকে ভাইভাবোর্ড থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। দাঁড়াতে হচ্ছে অযোগ্যদের কাতারে। এমন পরিস্থিতে যাতে না হয়, সেজন্য বিসিএস পরীক্ষার্থীকে বর্জনীয় বিষয়গুলো জানতে হবে। তাকে সতর্ক হতে হবে যাতে ভাইভা বোর্ডে এগুলো পরিহার করা যায়। অন্যথায় দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ভেস্তে যেতে পারে। নীচে ভাইভবোর্ডে বর্জনীয় বিষয়ের একটি তালিকা দেয়া হলো-

১. চুইংগাম বা ঐ জাতীয় কিছু মুখে নিয়ে ভাইভাবোর্ডে প্রবেশ করা;

২. চোখে লাগে, এমন উৎকট রঙের (যেমন, টকটকে লাল বা কটকটে হলুদ) জামা পরা;

৩. গাঢ় রঙের সানগ্লাস পরে আসা;

৪. হাই তোলা;

৫. গা চুলকানো;

৬. দাঁত পরিস্কার করা;

৭. কান খোঁচানো;

৮. চেয়ারে বসে পা নাচানো;

৯. কথার মাঝখানে কথা বলা;

১০. বোর্ডের প্রশ্নে মনোযোগ না দেয়া;

১১. অমনোযোগীর মতো অঙ্গভঙ্গি করা;

১২. আলোচনার মধ্যে উত্তর বা পরবর্তী প্রশ্নের কথা চিন্তা করা;

১৩. উত্তেজিত বা রাগান্বিত হওয়া;

১৪. বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হওয়া।

চতুর্থ অধ্যায়

উচ্চশিক্ষা : ক্যারিয়ারের সোপান

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে কঠিন বাঁধাটি অতিক্রম করতে হয় এইচএসসি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার প্রবেশ মুখে। দীর্ঘ দশ/ বার বছরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাবে কি পাবে না, তা নির্ধারিত হয় এ পর্বে। তাছাড়া ভবিষ্যতের উজ্জ্বল ক্যরিয়ার এ সময়ের নির্ভুল সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করে। এসব কারণে বহু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকগণ নানা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এইচএসসি উত্তর সময়টাতে। এ অধ্যায় সে দুশ্চিন্ত লাঘবে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ভর্তি পরীক্ষার কঠিন বৈতরণী পার হবার পরেও অনেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উচ্চশিক্ষার এক একটি বিষয়ের এক এক সকম মূল্য। সময়ের নিরন্তর ধেয়ে চলার ধারায়-এ মূল্যের উত্থান পতন হয়। এক সময় যে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকে সময়ের ব্যবধানে যুগের চাহিদায় সেটিই হয়তোবা নেমে যায় পছন্দ তালিকার একেবারে নিচে। বর্তমান সময়ে কোন বিষয়ের চাহিদা কেমন, কর্মসংস্থান ও দেশ- সেবার বিস্তৃতি কতদূর, ভবিষ্যত কেমন হতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে মোটিামুটি একটি প্রারম্ভিক ধারণা পাওয়া যাবে এ পর্বে।

ক্যারিয়ার বিষয়ক সিদ্ধান্তের সিংহভাগ গৃহীত হয় ব্যক্তির উচ্চ শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অনেক পূর্বেই উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ভাবনা শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের মনে জন্ম নেওয়া দরকার। এইচএসসি পাশের পূর্বেই অর্থাৎ স্কুল পূর্বেই যদি ‘ক্যারিয়ার: বিকশিত জীবনের দ্বার’ একজন অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীর হাতে যায় তাহলে এইচএসসি উত্তর উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটিতে অনেক সুবিধা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এমবিবিএস (MBBS)

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন স্তরে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে

১। এম বি বিএস (অনার্স কোর্স)

২। বিডিএস (অনার্স কোর্স)

৩। ডেপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি

বিষয়

Bachelor in Medicine & Bachelor in Surgery (MBBS) কোর্সটি দেশের একমাত্র কোর্স যেখানে একই সাথে দুটি বিষয়ে (মেডিসিন ও সার্জারি) অনার্স করানো হয়।

সময়

MBBS কোর্সটি ৫ বছর ব্যাপী একটি কোর্স। এরপর এক (১) বছর ইন্টার্নশিপ রয়েছে। তবে ইন্টার্নী করার সময় ডাক্তারগণ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাতা পেয়ে থাকেন।

যা পড়ানো হয়

৫ বছর ব্যাপী ও কোর্সটিতে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কম্যুনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মেডিসিন, সার্জারী ও গাইনকোলজি ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।

চাহিদা

সমাজে ডাক্তারদের চাহিদা সম্বন্ধে নতুন করে বলার কিছুই নেই। সেই আনাদিকাল থেকে ডাক্তারগণ সমাজের অবকাঠামোর অন্যতম চালিকাশক্তি হিসাবে টিকে আছেন। সমাজের সর্বত্রই ডাক্তারদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং সম্ভবত পেশাগত মর্যাদার দিক থেকে ডাক্তাররাই সবার চেয়ে এগিয়ে। এজন্যই ডাক্তারদের বলা হয় “The second god”.  এই পেশায় একদিকে যেমন সম্মান অন্যদিকে হালাল উপায়ে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ রয়েছে একজন ডাক্তার শুধু MBBS ডিগ্রি নিয়েও এই সামাজে সম্মানের সাথে টিকে থাকতে পারেন।

এই অনার্স ডিগ্রি নেওয়ার পর একজন ডাক্তর যেমন সরাসরি চিকিৎসা সেবায় অংশগ্রহন করতে পারেন এবং ক্লিনিক্যাল সেক্টরে উচ্চতর ডিগ্রি যেমন এম ডি/ এম এস (চিকিৎসা শাস্ত্রে মাস্টার্স কোর্স) অথবা এফসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়াম এন্ড সার্জনস কর্তৃক প্রদত্ত এমআরসিপি (রয়েল কলেজ অব ইংল্যান্ড কর্তৃক প্রদত্ত) ইত্যাদি করার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে পারেন আবার এমবিবিএস করার পর বিভিন্ন নন ক্লিনিক্যাল সবাজেক্ট যেমন হেলথ ইকোনমিক্স, পাবলিক হেলথ, মাইক্রোবায়েলজি, এম্ত্রায়োলজি, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইম্মুউনোলজি, বায়োক্যাম্যাষ্ট্রি ইত্যাদির মত অসংখ্য কোর্সে মাষ্টার্স বা পিএইচডিকরা যায়।

বিষয় রেটিং

চাহিদার দিক থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিষয়সমূহ পাশাপাশি ডাক্তারীও শীর্ষে অবস্থান করছে। প্রতিবছর মেডিকেল কলেজগুলোতে শীর্ষ মেধাবীরা পেশা হিসাবে ডাক্তারী বেছে নেবার জন্য ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ন হয়।

কোথায় পড়ানো হয়

আমাদের দেশে বর্তমানে ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর সবগুলোতেই MBBS কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আসন সংখ্যা ২০৬০টি। ছাত্রদের পছন্দ ও মেধাস্থান অনুযায়ী কে কোন মেডিকেলে চান্স পাবে তা নির্ধারিত হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর নাম-

১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

২. স্যার সলিমূল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

৩. বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

৪. ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।

৫. চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্রগ্রাম।

৬. রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী।

৭. সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

৮. শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।

৯. খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা।

১০. শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।

১১. রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর।

১২. ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর।

১৩. দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।

১৪. কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

১. বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

২. আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা।

৩. ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ ক্যাব টেকনোলজি, চট্টগ্রাম।

৪. মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন্স, উত্তরা, ঢাকা।

৫. জরিনা শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ, রায়ের বাজার, ঢাকা।

৬. ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

৭. ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী।

৮. সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা।

৯. ডা. ইবরাহীম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

১০. জালালাবাদ আর আর মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

১১. ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, জনসন রোড, ঢাকা।

১২. কম্যুনিটি বেইসড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।

১৩. নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

১৪. হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

১৫. নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সাধারণত সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্তির পর এদেশের প্রাইভেট মেডিলেকল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে খরচ অত্যন্ত বেশি।

উচ্চশিক্ষা

মেডিকেল সাইন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেবার জন্য বাংলাদেশে একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেটি হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি ঢাকার শাহাবাগে অবস্থিত। এখানে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিষ্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কম্যুনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, সিন-ডিডি কার্ডাওলজি, ইউরোলজি, নেক্রলজি, বেমাটোলজি ও গাইনিকোলজিতে এমফিল, এমডি করা যায়। এছাড়া সার্জারির বিভিন্ন বিষয়ে যেমন জেনারেল সার্জারি, ইএলটি অর্থপেডিক সার্জারি, নিউরোসার্জারি, সাইনাল সার্জারি, কার্ডিওথেরাপিক সার্জারি, হেপাটোরিলিয়ারী সার্জারি প্রভৃতি বিভাগে এমএস (MS) করা যায়। এছাড়াও শীর্ষস্থনীয় ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমডি বা এম এস করার সুযোগ রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন যেমন- NICVD বা জাতিয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, NITOR বা পশু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জাতিয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রভৃতি স্থানে ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যায় আর নিপসম এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নন-ক্লিনিক্যাল বা গবেষণামুলক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যায়।

বিদেশে ভর্তি

মেডিকেল এডুকেশন খুব ব্যয়বহুল হবার কারণে নিজ খরচে বিদেশে পড়ার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই যেকোন ছাত্র-ছাত্রী ইচ্ছা করলে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে প্রতি বছর কোর্স ফি হিসাবে বাংলাদেশী টাকার ৪০-৫০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এজন্য সাধারণত ছাত্ররা দেশেই MBBS পাশ করে বিভিন্ন ডিগ্রির জন্য বিদেশে গমন করে। সেক্ষেত্রে খরচ কিছুটা কম হয়। বিদেশে ডিগ্রি নেবার ক্ষেত্রে “রয়াল ইউনিভর্সিটি অব ইংল্যান্ড” সবার চেয়ে এগিয়ে। এখান থেকে FRCS অথবা MRCP ডিগ্রি নিতে পারলে বিশ্বব্যাপী এ স্বীকৃতি রয়েছে। এছাড়া এভিনবার্গ, গ্লাসগো ও আমেরিকার বিভিন্ন ইউনিভর্সিটি থেকেও ডিগ্রি নেওয়া যায়।

এই অনেকগুলো পরীক্ষার প্রথম কয়েকটি অংশ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও দেওয়া যায়। যেমন MRCP, MRCS এর প্রথম দুটি অংশই কলকাতা থেকে দেওয়া যায়। এছাড়াও PLAB এর প্রথম অংশ বাংলাদেশে, দ্বিতীয় অংশ কলকাতায় দেওয়া যায়। এই সকল ইন্টারন্যাশনাল ডিগ্রি নেওয়ার সুবিধা হল এই যে, এই ডিগ্রি নেবার পর ডাক্তারগণ বিশ্বের যেকোন দেশে ডাক্তারি করতে পারবেন। এমবিবিএস ও ইন্টার্ণী করার পর ক্লিণিক্যাল বিষয়গুলোতে বিদেশে স্কলারশীপ খুবই নগন্য। তবে কয়েক বছর ট্রেইনিং থাকলে পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে অব সারডারশীপ ও পরবর্তীতে ফেলোশীপ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু নন-ক্লিনিক্যাল বিষয় বা গবেষণার জন্য খুব সহজেই স্কলারশীপ পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে গবেষকের জন্য খুব লোভণীয় চাকরির সুযোগ রয়েছে।

চাকুরি

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারগণের জন্য চাকুরির সুবিধা আছে। এছাড়া ডাক্তারগণ ইচ্ছা করলে বিসিএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে সরকারি ক্যাডারভুক্ত হয়ে চাকুরি করতে পারেন। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তারা পর্যাপ্ত চাকুরির সুবিধা পাবেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান- জাতিসংঘ, WHO, CARE ইত্যাদিসহ অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ডাক্তারগণের জন্য চাকুরির ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ থেকে পাশ করা বহু ডাক্তার এখন বিদেশে চাকুরিতে আছেন।

স্কলারশীপ

মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এ সংক্রান্ত বৃত্তির সংখ্যা নগণ্য।

দেশে:    (ক) ডাচ বাংলা ব্যাংক বৃত্তি,

            (খ) ইমদাদ সিতারা বৃত্তি,

            (গ) ফেয়ার এন্ড লাভলি বৃত্তি (শুধুমাত্র মেয়েদের)।

বিদেশে:            (ক) মনোবুশো বৃত্তি (পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর জন্য),

            (খ) কমনওয়েলথ বৃত্তি (পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর জন্য),

            (গ) বৃটিশ কাউন্সিল বৃত্তি (পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর জন্য)।

ডেন্টাল সার্জারি

যা পড়ানো হয়

গ্রাজুয়েশন লেভেলে ডেন্টাল বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদি BDS’ (Bachelor in Dental Surgery) কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া ১ বছর ইন্টার্নীশিপ চালু রয়েছে।

ডিমান্ড

মেডিকেলের পাশাপাশি দেশে ডেন্টালের চাহিদাও ব্যাপক। বিসিএস এর সাথে সাথে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাকুরির সুবিধা থাকায় অনেক পিতামাতাই তাদের সন্তানদের এই বিষয়ে পড়াতে আগ্রহী হয়। তাছাড়া প্রাইভেট প্রাকটিসের ব্যবস্থাতো রয়েছেই। সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি সততার সাথে অর্থ উপার্জনের সুযোগ এই পেশার জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশে সরকারি ডেন্টাল কলেজ বর্তমানে ৩টি। এগুলো হল-

(ক) ঢাকা ডেন্টাল কলেজ

(খ) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট

(গ) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট

মোট আসন সংখ্যা- ২০৫টি

এছাড়া দেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে।

উচ্চশিক্ষা

পোস্ট গ্রাজুয়েশন লেভেল BSMMU (IPGMR) থেকে এই বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া যায়।

বিদেশে ভর্তি

“ডেন্টাল” এডুকেশন, মেডিকেল এডুকেশনের মত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে গ্রাজুয়েশন লেভেলে বিদেশে ভর্তি কষ্টসাধ্য। গ্রাজুয়েশন লেভেলে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য Russia, Canada, England, Ireland এ ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তবে পোস্ট গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে ডিগ্রি নেবার জন্য বিদেশে নামিদামি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের ডিগ্রি সারা বিশ্বেই স্বীকৃত। এদের মধ্যে Royal College of England অন্যতম।

স্কলারশীপ

ডেন্টাল বিষয়ে বৃত্তির সংখ্যা খুবই সীমাবদ্ধ-

দেশেঃ (ক) ডাচ বাংলা ব্যাংক বৃত্তি             (খ) ইমদাদ সিতারা বৃত্তি

বিদেশেঃ (ক) মনোবুশো বৃত্তি, জাপান                    (খ) কমনওয়েলথ বৃত্তি

চাকুরি

ডেন্টাল ডাক্তারগণের জন্য সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও চাকুরির ব্যবস্থা আছে। বিসিএস এর মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজসমূহে চাকুরি নিতে পারেন। তাছাড়া তারা চাইলে প্রাইভেট প্রাকটিস বা ক্লিনিকেও চাকুরি নিতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ডিগ্রি নিয়ে বিদেশের বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য যেতে পারেন।

হেলথ টেকনোলজি

বাংলাদেশে ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি সরকারি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেমন- সাভারে সিআরপি-এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট। এসব প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল টেকনোলজি (যেমন, রেডিওলজি/ ইমেজিং), ফিজিওথেরাপী, ল্যাংগুয়েজ- থেরাপী, অবুপেশনাল থেরাপী ফার্মেসী, প্যাথলজী এন্ড ল্যাব টেকনোলজি, প্যারামেডিক্স প্রভৃতি বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং অনার্স কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। ডিপ্লোমা কোর্সের সুবিধা হচ্ছে এসএসসি পাশ করার পরই তা কারা যায়। এসকল বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর খালি আছে এবং দেশের বাইরেও উচ্চ শিক্ষার্থে যাওয়ার সুযোগ আছে।

চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে

আরো বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলি কোন না কোনভাবে চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত এবং যে কেউ ক্যারিয়ার হিসেবে এ পেশাগুলো গ্রহণ করতে পারেন। নিচে এদের কয়েকটি সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হল- হেলথ ইকোনমিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ব্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে হেলথ ইকনোমিক্স পড়া যায়। বড় বড় এনজিও ও WHO, UNICEF ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো খুব লোভণীয় বেতনের চাকরির সুযোগ রয়েছে। ব্রাক ইউনিভর্সিটিতে এ বিষয়ে স্কালারশীপ দেওয়া হয়। তবে প্রার্থীকে অবশ্যই ভাল অংকের মেধা থাকতে হবে।

পুষ্টিবিজ্ঞান: হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়া যায়।

হেলথ ম্যানেজমেন্ট: বড় বড় হসপিটাল পরিচালনা করার কৌশল নিয়ে এ বিষয় গড়ে উঠেছে। এমবিবিএস করার পর এ বিষয়ে মাস্টার্স করা যায় অথবা সরাসরি বিবিএ করে হেলথ ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করা যায়।

সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্তু

বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট. বাঁধ, উচুঁ টাওয়ার, এয়ারপোর্ট, সুয়ারেজ লাইন, পানির পাইপ লাইন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও রিসাইক্লিং সিস্টেম, ভূমিকম্পের কারণ ও প্রতিরোধ, ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

চাহিদা

উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল যে কোন দেশের জন্যেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক। বাংলাদেশ ভাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা বেশি এবং এর প্রকট অভাব অনুভূত হচ্ছে। এদেশে এখন প্রচুর Real estste বা construction consultation ফার্ম আছে, যেগুলোতে প্রচুর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দরকার। এছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সরকারি চাকুরির সুযোগ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় অনেক বেশি। এই পেশায় পেশাগত জীবনে পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী হলে বৈধ পথে প্রচুর অর্থ ও সম্মান অর্জন করা যায়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

সাবজেক্ট রেটিং

বর্তমানে –এ এই সাবজেক্টের অবস্থান অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুসারে ৩য় (যে কোন সময় পরিবর্তনযোগ্য, এটি কোন অফিসিয়াল রেটিং নয়, শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের ভিত্তিতে এটি নির্মিত)।

কোথায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন

ক) দেশে: BUET, KUET, RUET, CUET, এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ যেমন- North South, Stamtord, Ahsanullah ইত্যাদি। শাবিপ্রবি-তে সিভিল এন্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (CEE) এবং অন্যান্য কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং আছে।

খ) বিদেশে: প্রায় সব খ্যাতনামা Technical Institute এবং University –তে সিভিল আছে। তবে Stamford University কর্তিৃক প্রদত্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মান খুব উন্নতমানের। এছাড়াও MIT সহ অন্যান্য Institute/ University তেও সর্বোচ্চ মানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বৃত্তি

দেশে ও বিদেশে উভয় জায়গাতেই Term Final পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আকর্ষণীয় বৃত্তি প্রদান করা হয় (ডিপার্টমেন্টাল পক্ষ থেকে)।

উচ্চ শিক্ষা

ক) দেশে: BUET -এ সিভিলের বিভিন্ন বিষয়ের উপর M.S, M.Sc এবং Ph.D করা যায়। শাবিপ্রবি-তেও CEE এর উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

খ) বিদেশে: বিদেশের প্রায় সব খ্যাতনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে Civil Engineering  এর উপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা হয়।

চাকরির ক্ষেত্র

-B.C.S General

-B.C.S Technical (Civil যেমন C&B, LGED, R&H)

-PWD

-Real estate

-Construction Farm

-Consulting Farm

-Mobile/ Land phone company

-UNDP

-WHO

-বিভিন্ন  NGO (যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করে)

– BUET, KUET, RUET, CUET, DUET শাবিপ্রবি, প্রভৃতি সরকারি এবং Stamtord, Ahsanullah, Prisidency প্রবৃতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা

-অন্যান্য সকল জায়গায় যেখানে Graduate রা চাকুরির জন্য দরখাস্ত করতে পারে

-অন্যান্য সকল কোম্পানী/ ফ্যাক্টিরী

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং/

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং/

টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্তু

ইলেকট্রিসিটির পাওয়ার হাউস ডিজাইন ও তার রক্ষণবেক্ষণ, ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়, Circuit design and application, টেলিকমিউনিকেশন, ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

চাহিদা এবং ভবিষ্যৎ

যেকোন দেশেই ইলেকট্রিক্যাল/ ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক। এর ব্যাপক চাহিদা অতীতে সবসময় ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিশেষত আগামী ৫/৬ বছর ইলেকট্রিক্যালের চাহিদা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে আশা করা যায়।

বিষয় রেটিং

বর্তমানে BUET এবং অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে EEE এর অবস্থান ১ম।

কোথায় পড়বেন

ক) দেশে:

– BUET, RUET, CUET, KUET,

-প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন AIUB,East-West, Stamford ইত্যাদি।

-KUET-এ আছে Electrical & Communication Engineering (ECE) যা EEE এর কাছাকাছি, RUET এ আছে ETE

-কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (TE) নামে যে বিভাগ আছে তা EEE এর কাছাকাছি।

-NSU, IUB সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি আছে।

খ) বিদেশে:

প্রায় সব খ্যাতনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়- EEE/ECE/TE আছে। এর মধ্যে MIT, Harvard University উল্লেখযোগ্য।

স্কলারশীপ

-Term final- এর Result- এর উপর ভিত্তি করে দেশে ও বিদেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ থেকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।

-বিভিন্ন Technical magazine এ থিসিস/ রিসার্চ পেপার জমা দিয়েও বৃত্তি পাওয়া যায়।

– বিভিন্ন Technical Foundation  ও বৃত্তি প্রদান করে।

উচ্চশিক্ষা

ক) দেশে: BUET, RUET, CUET, KUET, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালসমূহ যেমন NSU, AIUB, Ahsan-ullah. ইত্যাদি।

খ) বিদেশে: প্রায় সব খ্যাতিনামা ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়।

চাকুরির ক্ষেত্র

-B.C.S General

-B.C.S Technical (Electrical যেমন বিদ্যুৎ বিভাগ, T&T ইত্যাদি)

-PDB

-Mobile/ Land phone company

– BUET, KUET, RUET, CUET, DUET এবং অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন AIUB, Ahsan-ullah, Stamtord, East-West প্রভৃতি জায়গায় শিক্ষকতা

-যেখানে সাধারণ ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারে।

-অন্যান্য কোম্পানী/ ফ্যাক্টরি

ম্যাটেরিয়াল এন্ড মেটালরজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্তু

-বিভিন্ন মৌল ও পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থ গুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ

-মেটালের বিভিন্ন রকম বিক্রিয়া, পলিমারাইজেশন, ইত্যাদি

-মেটাল দ্বারা তৈরি বিভিন্ন জিনিসের ধর্ম এবং সেগুলো তৈরির কৌশল

-খনি থেকে মেটাল উত্তোলন, পরিশোধন এবং ব্যবহারের কৌশল

ডিমান্ড

দেশে এ বিষয়ের চাহিদা মোটামুটি। তবে বিদেশে এ বিষয়ের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। বিশেষত যেসব দেশ খনি সমৃদ্ধ, সেসব দেশে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে এ বিষয়েরই একটি প্যারালাল (সমান্তরাল) বিষয়ের চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক।

ভবিষ্যৎ

ভবিষ্যতে দেশে এ বিষয়ের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।

এডমিশন

(ক) দেশে: BUET

(খ) বিদেশে: অধিকাংশ খ্যাতনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্কলারশীপ

(ক) দেশে: ভার্সিটি কর্তৃক প্রদত্ত

(খ) বিদেশে: ph.D গবেষনা পরিচালনা করার জন্য উন্নত বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এবং টিচিং এ্যাসিসটেন্টসীপ দেওয়া হয়ে থাকে।

চাকুরি

-সরকারি: গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী

-পেট্রোবাংলা, তিতাস গ্যাস

-ইস্পাত রিফাইনিং কারখানাগুলোতে

-ধাতব জিনিস তৈরির কারখানায়/ কোম্পানিতে

উচ্চশিক্ষা

(ক) দেশে: BUET

(খ) বিদেশে: প্রায় সব খ্যাতিনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিদেশে চাকুরি

বিভিন্ন মাইনিং, মেটালসংক্রান্ত এবং ধাতব বস্তু তৈরির কোম্পাণীতে।

আর্কিটেকচার

বিষয়বস্তু

বর্তমানে আর্কিটেকচারে যেসব বিষয় পড়ানো হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‍Structure, philosophy, Mathematics, Mechanical equipment, Environmental design, Basic planning, Economics, Sociology, physics, Urban design, construction method and detail, Sculpture, Working drawing.  এছাড়াও রয়েছে photography এবং Design studio, Design studio building  এর design শেখানো হয়।

চাহিদা

বর্তমানে দেশে এ বিষয়ের প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে। কারণ মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বসতবাড়ি, অফিস আদালতের পরিমাণও বাড়ছে। মানুষ এখন চায় সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ সে যেন থাকতে পারে, কাজ করতে পারে। সে কারণে আর্কিটেকচারের বিকল্প কিছুই নেই। এছাড়াও বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে মোটা অংকের বিনিময়ে চাকুরি করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা জরুরি। আর্কিটেকচার ফার্মগুলোর চাহিদাও অনেক।

ভবিষ্যত

ভবিষ্যতে আরো অফূরন্ত সুযোগ রয়েছে। খুব ভালো design করে এখন অনেক আর্কিটেক্ট খুব ভালো আয় করছেন। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সামনের দিনগুলোতে আরো নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠবে। দেশের এই প্রেক্ষাপটে আর্কিটেকচারের বিকল্প নেই। দেশের বাইরেও অনেকে কাজ করে ভালো আয় করে যাচ্ছেন।

এডমিশন

দেশে বর্তমানে সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানে Architecture পড়ানো হয়-

(ক) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

(খ) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

(গ) শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়া বেসরকারি গুলোর মধ্যে অন্যতম-

(ক) এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভর্সিটি

(খ) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

(গ) নর্থ-সাইথ ইউনিভার্সিটি

(ঘ) স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি

ভর্তির যোগ্যতা

প্রথমত বিজ্ঞান শাখায় সকল বিষয়ে ভালো করতে হবে। বিশেষত পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতে A+ থাকলে খুব ভালো হয়। এইচএসসি’তে জিপিএ 4.8 এর উপরে থাকলে ভাল হয়। এসএসসি তে জি.পি.এ 4.7 এবং অবশ্যই কম্পিউটার ব্যবহার করে এবং মুক্তহস্তে অঙ্কনে পারদর্শী হতে হবে। যেকোন ছবি আঁকার মত যোগ্যতা ছাড়া আর্কিটেকচার-এ ভালো করা অনেকটাই অসম্ভব।

স্কলারশীপ

দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর স্কলারশীপ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে যদি সিজিপিএ 3.25 এর উপর থাকে তাহলে জাপানে, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় পড়াশুনা করার জন্য স্কলারশীপ পাওয়া সম্ভব। দেশেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি দিয়ে থাকে।

Credit transfer এর মাধ্যমেও অনেকে স্কলারশীপ ব্যবস্থা করে থাকেন। দেশের চেয়ে বাইরে আর্কিটেকচারের কদর বেশি।

চাকুরি

এ বিভাগ হতে পাস করার পর যে কেউ যে কোন Architectural Consultant বা Developer ফার্মে চাকুরির সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি অনেক সুযোগ থাকার কারণে অনেকে চাইলে 3D-animation, 3d-Modeling, Autocad drawning, Rendering, photography বা Graphics এর যে কোন কাজ করতে পারেন। আর্কিটেকচারের প্রয়োজন শুধুমাত্র bulding design এর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। চাইলে উল্লিখিত যেকোন একটা কিছু করে ব্যক্তি তার নিজের Career গড়ে নিতে পারেন।

গবেষণা বহির্বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে এবং আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন: মাস্টার্স, পিএইচডি প্রভৃতি এ আওতায় পড়ে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা ও জাপানে মাস্টার আর্কিটেক্টদের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে পারবেন। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকুরি করার সুযোগ পেতে পারে এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা

Visit: www.Architecture-Jobsource.org.

নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং/ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্তু

-বিভিন্ন রকম নৌযান ডিজাইন ও তৈরির কৌশল

-পরিচালনার কৌশল

-পরিত্যক্ত নৌযান থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরির কৌশল।

চাহিদা

বাংলাদেশে এ বিষয়টির ডিমান্ড মাঝামাঝি। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর যথেষ্ট চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। উপরন্তু নেভাল আর্কিটেকচার এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দুটো বিষয়ের সমন্বয় হওয়ায় নেভাল আর্কিটেক্ট অথবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এর যেকোন একটিতে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।

ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ যেহেতু ছোট ছোট জাহাজ নির্মানের পথে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর হবে তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে

চাকুরি

-Bangladesh Shipping Corporation, শিপইয়ার্ডে, ডকে

-দেশি ও বিদেশি, সরকারি এবং বেসরকারি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জাহাজে

-Bangladesh Navy, BIWTA, BIWTC

উচ্চশিক্ষা

(ক) দেশে: BUET-এ M.S/M.Sc/ph.D করতে পারবেন।

(খ) বিদেশে: বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।

কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি/ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং/

কম্পিউটার সায়েন্স

বিষয়বস্তু

-সফটওয়ার তৈরির বিভিন্ন কৌশল

-কম্পিউটার ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির কৌশল

-অটোমেশণ এর বিভিন্ন কৌশল

-কমিউনিকেশন এর বিভিন্ন ধাপ ও কৌশল

কোথায় পড়ানো হয়

বাংলাদেশেল প্রায় সবকয়টি public বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, BUET, সবকয়টি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (RUET, DUET, KUET, CUET), সিলেট প্রযুক্তি ও প্রকৌশল, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, টাঙ্গাইল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সবকয়টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে Computer Science অথবা Computer Science and Engineering অথবা Computer & Information Technology বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।

দেশের বাইরে বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এটি পড়ানো হয়।

মেয়াদ

public University গুলোতে অনার্স ৪ বছর মেয়াদী কোর্স এবং MS এক বছর। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই Semister system এ পড়াশুনা করানো হয়।

খরচ

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ অপেক্ষাকৃত কম। কিন্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভরচ অত্যন্ত বেশি।

ভর্তি

S.S.C (অথবা O-level), H.S.C (অথবাA-level) পরীক্ষা গুলোতে English, Math, Physics, Higher Math, Chemistry বিষয়সমূহে অবশ্যই নূন্যতম A grade পেতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম grade এ ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়।

চাকুরি

দেশেঃ প্রযুক্তি খুব দ্রুত অগ্রসর না হলেও আমাদের দেশে আজ থেকে ৫০ বছর আগে থেকেই Computer এর ব্যবহার হয়ে আসছে। সরকারি ‍Sector গুলোতে বিশেষ করে পরমাণু শক্তি কমিশন, Traffic Controlling, E-Govemence, Satellite Transmission, রেল যোগাযোগ-এ কম্পিউটার এর ব্যবহার দিন ‍দিন বাড়ছে। এই সমস্ত field-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরি পাওয়া সম্ভব আবার বেসরকারী সেক্টরসমূহে CSE বা CS এর গ্রাজুয়েটদের চাকুরির সুযোগ আরও বেশি। এসব ক্ষেত্রে এদের পদের নাম হয়ে থাকে-

  • Software Engineer & Programmer
  • IT Professional
  • Network Administration, System Analyst
  • Web Mastering & Developing
  • Graphics Designer
  • Simulation & Animation এর কাজের জন্য চলচ্চিত্রে Special effect তৈরিতে, cartoon ছবি গুলোতে এর ব্যবহার চলছে র্ব্তমান সময়ে।
  • Virtual reality এর মাধ্যম হিসাবে
  • Desktop publishing বিভিন্ন বই পুস্তক লেখা লেখি, ছাপানো
  • Multimedia একই সাথে test, soured, static & dynamic, image নিয়ে কাজের মাধ্যমে অনেক বাস্তব সম্মত কাজ করা যায়

বেতন

মাসিক বেতন ১৫,০০০/- থেকে শুরু করে আরও অনেক এবং কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার বিদেশে বিশেষ করে  Microsoft এর মতো প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাওয়া সম্ভব যদি Programming – এ খুব ভাল করা যায়। এজন্য বিভিন্ন –এ অংশ নিতে হবে এবং প্রচুর করতে হবে। এ অংশ নিয়ে ও প্রচুর সুনাম বয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন   প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক  যন্ত্রপাতি তৈরি ও করে নিজেকে দেশে ও বিদেশে পরিচিত এবং পূর্নাঙ্গ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্ত

সাধারণত যন্ত্রকৌশল বিভাগে energy এর উপর জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে এক from থেকে আরেক from-এ Energy  এর রূপান্তর, এর transmission এবং ব্যবহার পড়ানো হয়। এছাড়া Mechanics related বিষয়গুলো বেশি পড়ানো হয়। Fluid mechanics, Heat transfer, Environmental pollution control এবং অন্যান্য multidisciplinary বিষয়গুলো পড়ানো হয়।

চাকুরি

সমগ্র পৃথিবীতে এই subject এর বেশ ভালো চাহিদা আছে। Energy related ক্ষেত্রগুলোতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক। বিশ্বের বড় বড় Automobile কোম্পানীগুলোত  Mechanical  Designer দের প্রচুর চাহিদা। এছাড়াও Fluid mechanics এ একটি শাখা CFT তে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে মেকানিক্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা আরো বাড়বে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা খুব বেশি না থাকলেও কম নেই। অনেক Multinational   কোম্পানী বাংলাদেশের এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা করছে। এছাড়া প্রতিটি Factory বিশেষকরে Textile Factory তে Mechanical Engineer দের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে BUET, KUET, RUET, CUET -এ  Subject  পড়ানো হয়। তাছাড়া কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হয়।

উচ্চশিক্ষা

দেশেঃ BUET, RUET, KUET, CUET এ Masters এবং PhD এর সুয়োগ রয়েছে।

বিদেশেঃ প্রায় প্রতিটি দেশের Engineering Faculty গুলোতে MS এবং PhD এর সযোগ রয়েছে

ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিষয়বস্ত

chemistry কে base  ধরে যে Application  সেসব বিষয়। পাম্প, বয়লার, distillation  ইত্যাদির সঙ্গে Related জিনিস পড়ানো হয়।

চাহিদা

বাংলাদেশে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ডিমান্ড কম। তারপরেও মোটামুটি চাকুরি হয়ে যায়। বিভিন্ন private sector এ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয় তবে খুব কম পরিমানে নেয়। বর্তমান ও ভবিষ্যত মোটামুটি একই রকম। তবে বিদেশে ভালো সুযোগ রয়েছে।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বুয়েট এবং সিলেট শাহজালালে পড়ানো হয়।

এছাড়া Stamford University তেও পড়ানো হয়।

স্কলারশীপ

বুয়েটে কেমিক্যালের বেশকিছু স্কলারশীপ রয়েছে। এছাড়া বাইরের স্কলারশীপই বেশী। মূলত ‍Subject টি পড়ে বাইরে যাওয়াটাই ভালো

চাকুরি

 দেশে Square, Unilever, Beximco etc এবং সরকারি মেট্রোবাংলা, তিতাস, সারকারখানা গুলো, Cement factory তে চাকুরি হয়।

উচ্চশিক্ষা

বুয়েটে MS, PhD পর্যন্ত করানো হয়।

আরবান এন্ড রেজিওন্যাল প্ল্যানিং

বিষয়বস্ত

একটি নতুন শহর বা হাউজিং এস্টেট গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা সংক্রান্ত জ্ঞান।

গ্রাম থেকে নগরায়নের পদ্ধতি, প্রভাব, সুফল ও কুফল সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়াদি।

চাহিদা

বর্তমানে দেশ এবং বিদেশে এই বিষয়ের চাহিদা মোটামুটি ভাল। তবে, একজন ভাল প্ল্যানারের যথেস্ট চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। উপরন্ত, স্হাপত্যকলার সাথেও এই বিষয়ের অনেক মিল থাকায় এই বিষয়ের যথেস্ট চাহিদা আছে।

কোথায় পড়বেন

দেশেঃ বুয়েট, শাবিপ্রবি, জাবি,প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিদেশেঃ প্রায় সব খ্যাতনামা ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে স্হাপত্য-কলা আছে।

স্কলারশীপ

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপার…… স্কলারশীপ ছাড়াও অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে এই বিষয়ের উপর স্কলারশীপ পাওয়া যায়।

উচ্চ শিক্ষা

দেশেঃ বুয়েট, শাবিপ্রবি, জাবি

বিদেশেঃ প্রায় সব খ্যাতনামা ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়

চাকুরি সুবিধা

১ ) রাজউক,

২) বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এ

৩) রিয়েল এস্টেট কোম্পানী,

৪) ডিজাইনিং ফার্ম,

৫) বিভিন্ন প্রজেক্টে প্ল্যানার হিসেবে,

৬) এছাড়াও স্নাতক পাশের পর অন্যান্য সব বিষয়ের মত সাধারণ ক্ষেত্রগুলোতে।

ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এন্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই)

বিষয় বস্ত

-প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট

-ইন্ড্রাষ্টি ম্যানেজমেন্ট

-মেকানিকাল ম্যানেজমেন্ট

-প্রফিটেবল মেকানিকাল ডিজাইন

চাহিদা

বর্তমানে দেশে ও বিদেশে এই বিষয়ের  চাহিদা অত্যন্ত ব্যাপক। একই সাথে একজন বিজনেস ম্যানেজার এবং প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারের কাজ একজন আই.পি.ই. ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে করানো সম্ভব বলে ভবিষ্যতেও এর ব্যাপক চাহিদা থাকবে বলে আশা করা যায়।

কোথায় পড়বেন

দেশেঃ বুয়েট, শাবিপ্রবি, রুয়েট, কুয়েট।

বিদেশেঃ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেসন – আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত; ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউঃ মালয়েশিয়া ইত্যাদি জায়গায় এবং অধিকাংশ খ্যাতনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে “ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট’’ নামে IPE– এর প্যারালাল সাবজেক্ট আছে।

স্কলারশীপ

-কিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ডিপার্টমেন্টাল স্কলারশীপ।

-বিদেশে বিভিন্ন প্রডাকশন কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশীপ।

উচ্চ শিক্ষা

দেশেঃ বুয়েট, শাবিপ্রবি

বিদেশেঃ প্রায় সব খ্যাতনামা ও মাঝারি মানের Varsity তবে USA- তে উচ্চশিক্ষায় যথেষ্ট সুযোগ ও চাহিদা আছে।

চাকুরি সুবিধা

১) British American Tobacco (BAT)

২) প্রডাকশন কোম্পানী, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী, গার্মেন্টস,

৩) ম্যানেজমেন্টের কাজের জন্য যেকোন কোম্পানী বা ইন্ডাষ্ট্রিতে বিজনেস এক্সিকিউটিভ হিসেবে ।

কৃষি/ মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও অন্যান্য কৃষি সম্পর্কিত বিষয়

(Agriculture/ Soil Science and

Other Related Subjects)

Agriculture is the root of all culture অর্থাৎ কৃষ্টির মূল- রুশো। রুশো আরো বলেন, যদি শহরকে ধ্বংস করে গ্রাম তৈরী করা হয় তবে এক সময় শহর গড়ে উঠবে। কিন্ত গ্রাম ধ্বংস করে যদি শহর গড়ে উঠে তবে ঐ শহর এক সময় ধ্বংস হবে। এই চিরন্তন বক্তব্যটিই গ্রামীণ অর্থনীতি তথা কৃষির মূল বক্তব্য।

কৃষি ক্ষেত্রের এই দিকটির প্রতি যাদের শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে, এইচএসসিতে যাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো তারা বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বিভিন্ন অনুষদে ভর্তি হতে পারেন। কৃষি শিক্ষার ক্ষেত্রে এ দেশের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হলো শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-এ মোট ৬টি অনুষদ (Faculty) আছে।

এগুলো হলো-

(ক) কৃষি অনুষদ

(খ) মৎস বিজ্ঞান অনুষদ

(গ) পশু পালন অনুষদ

(ঘ) পশু চিকিৎসা অনুষদ

(ঙ) কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ এবং

(চ) কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ।

বর্তমানে ১টি মাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পছন্দক্রম অনুযায়ী যেকোন অনুষদে ভর্তি হওয়া যায়।

এখন Grading পদ্ধতিতে GPA 3 হলে আবেদন করতে পারেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষার জন্য উচ্চতর প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সিলেট ও চট্রগ্রামে ভেটিরিনারী কলেজ আছে, যেখানে শুধুমাত্র পশু চিকিৎসা অনুষদে মোট আসনের ১০ গুন প্রার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির পূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়। আবেদনের জন্য এইচএসসি-তে গণিত এবং জীববিজ্ঞান থাকা জরুরি। কৃষি শিক্ষা সাধারণত ৪ বৎসরের কোর্স। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বৎসরে মোট ৮টি সেমিস্টারে কোর্স শেষ করা হয়। প্রাতি কোর্সের ফলাফল চূড়ান্ত হিসাবে বিবেচিত। জিপিএ 4 এর মধ্যেই grading করা হয়।

৪বৎসরের অনার্স শেষ করে কোন শিক্ষার্থী দুই বৎসরের জন্য MS কোর্স করতে পারেন। MS কোর্সের পর দেশে বা বিদেশে PhD করা সহজ এবং ফলাফল গ্রহণযোগ্য।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন অনুষদে অধ্যয়নে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অধ্যয়ন শেষে যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যায়। বিশেষ করে BCS সহ যে কোন চাকুরির সাক্ষাৎকার খুব ভালো হয়। কারন ছাত্রজীবনে বারবার মৌখিক পরীক্ষা দেবার কারণে ছাত্রদের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যয় (confidence) জন্মে যার সুফল প্রার্থী বরাবরই পেয়ে থাকে।

এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কৃষির অবদানের কারনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষি অনুষদ চালু হয়েছে। কৃষি ও কৃষির বিভিন্ন অনুষদের পাশাপাশি মৃত্তিকা বিজ্ঞান (Soil Science) এবং জীববিজ্ঞান (উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞান) বিষয়ের ছাত্ররা কৃষি সম্পর্কিত (Agriculture related) কর্মে চাকুরি করার সুযোগ পাচ্ছে। বিসিএস (পশুপালন/পশুসম্পদ), বিসিএস (মৎস), বিসিএস (কৃষি) সম্পর্কিত পদগুলো শুধুমাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। সুতরাং কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে অধ্যয়ন অনেকটা লাভজনক এবং আধুনিকও বটে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিওক-তে চাকুরির ক্ষেত্রে কৃষিবিদদের চাহিদা অনেক বেশি। এদেশের প্রটিতি উপজেলার কৃষিবিদদের জন্য অনেকগুলো প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এছাড়া অনেক কৃষিবিদ আত্ম কর্মসৎস্হানের মাধ্যমে নিজেরা উদাহারণ সৃস্টি করতে পেরেছেন। ‘প্রাণ পণ্য’ তন্মধ্যে অন্যতম।

পদার্থ বিজ্ঞান (Physics)

যা পড়ানো হয়

পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারনত পদার্থেরে মৌলিক গুনাবলী, পদার্থের গঠন, শক্তি এবং পদার্থের উপর শক্তির ক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে। পদার্থ বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তর ব্যাপ্তি ব্যাপক। যেমন একাধারে বিশ্ব সৃস্টির বিষয় নিয়ে এর আলোচনা, আবার পদার্থের অতি ক্ষুদ্র কনিকাসমূহ যেমন অনু, পরমানু এবং তাদের গঠন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ পদার্থ বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। পদার্থ বিজ্ঞানকে King of the subjects বলে থাকেন কেউ কেউ। এই bacic subject থেকে পরবর্তিকালে অনেকগুলো শাখা প্রশাখার উৎপত্তি হয়েছে। Applied, Physics, Electronics, Molecular, Solid, State, Physics, Reactor Physics, Atmospheric Physics, Material science, Plasma Physics, GeoPhysics, Atomic Physics ইত্যাদি ’ এই বিষয়ের শাখা প্রশাখা। বর্তমান সময়ে এর প্রায়োগিক দিকটি প্রাধান্য পাচ্ছে বলে Basic Physics এর চর্চা বহির্বিশ্বে এবং এদেশও বহুলাংশে কমে গেয়েছে।

চাহিদা

গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে পদার্থ বিজ্ঞানের চাহিদা ছিল সমস্ত বিষয়ের মধ্যে তুঙ্গে। এই অবস্থা দেশ এবং বিদেশ উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে এই অবস্থান অনেক নিচে নেমে এসেছে। তবে basic subject হিসেবে স্কুল, কলেজ, সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পদার্থ বিদ্যা পড়ানো হয়। Major Subject হিসেবে, তাই এর চাহিদা এখনও রয়েছে, বেশ কিছুটা। যারা গণিতে ভালো, তারা এই বিষয়ে ভাল করতে পারে।

ভর্তির নিয়মাবালী

এইচএসসি-তে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর থাকতে হবে এই বিভাগে ভর্তির জন্য। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য ভর্তির নিয়ম একই রকম নয়।

কোথায় পড়ানো হয়

এ দেশের সমস্ত সাধারন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এবং অনেক কলেজেই এই বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পড়ানো হয়ে থাকে। BUET-এ শুধুমাত্র এমফিল এবং পিএইচ ডি দেওয় হয় এই বিষয়ে।

উচ্চ শিক্ষা

দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার ব্যাপক সুবিধা রয়েছে।

চাকুরির সুবিধা

বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক ও প্রাইভেট) শিক্ষকতা, আনবিক শক্তি কমিশন, অন্যান্য কিছু গবেষনা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল, কলেজে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে এই বিষয়ের মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের জন্য। বিসিএস করে চাকুরিতে যোগদান করা ছাড়াও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সমূহে এই বিভাগের গ্রাজুয়েটরা ভাল করে থাকে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজে এর চাহিদা বেশ ভাল।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়সমূহের মধ্যে বর্তমানে এর অবস্থান মাঝারি থেকে কিছুটা উপরের দিকে।

ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান

(Applied Physics)

বিষয়বস্ত

সাধারণত এই Subject এ General Physics এর ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে বর্তমানে Applied Physics এর নাম পরিবর্তন হয়ে Applied Physics and Electronics অথবা Applied Physics, Electronics and Telecommunication Engineering হওয়াতে এই Subject এর বিষয়বস্ততেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে এই বিষয়ে Electronics, Electrical, Communication এর অধিকাংশ বিষয়ই পড়ানো হয়।

চাকুরি ক্ষেত্রে

এই Subject থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি করতে পারে। তবে ইলেক্ট্রনিক্স চিপ তৈরি প্রতিষ্ঠানে এদের সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স তৈরি ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতেও চাকুরির সুযোগ আছে। তাছাড়া BCS এ অংশ গ্রহন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

Science Faculty এর Subject গুলোর মধ্যে এই Subject এর অবস্থান প্রথম দিকে।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

স্কলারশীপ

দেশেঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বৃত্তি।

বিদেশেঃ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বৃত্তি।

রসায়ন (Chemistry)

পঠিতব্য বিষয়

বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের একটি শাখা বিধায় রসায়নের পাঠদান একেবারে গোড়া থেকেই শুরু হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসগুলোর বিষয়সমূহকে বিস্তারিত পড়ানো হয়। আর তখনই শুরু হয় রসায়নো মূল উচ্চতর শিক্ষা।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্রগ্রাম সহ সাধারণ সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ‍অধিভুক্ত কলেজসমূহে এই বিষয়টি পড়ানো হয়। সেদিক থেকে এটি বেশ Common subject।

চাহিদা ও ভবিষ্যত

প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধ রসায়নের চেয়ে বর্তমানে ফলিত রসায়ন, রাসায়নিক প্রযুক্তি বিষয়গুলোর চাহিদা অনেক বেশি। এর কারণ Pharmaceutical Industry, Chemical industry এবং অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ। তবে এই বিষয়ের মূল চাহিদা শিক্ষকতা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষনা ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এছাড়া BCS তো যেকোন বিষয় থেকেই দেখা যায়। Rating বলতে গেলে এর স্থান মাঝামাঝি।

স্কলারশীপ

বৃত্তি মূলত উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রযোজ্য যা গবেষণার জন্যই প্রদান করা হয়। মূলত বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি দেয়া হয়। Australlia, Canada, UK, USA, Japan ও Korea- তে Scholarship পাওয়া যেতে পারে যার সবই Postgraduate শিক্ষার জন্য। এছাড়া শিক্ষকদের জন্যScholarship রয়েছে।

চাকুরি

 নিন্মোক্ত Option গুলো থাকতে পারে-

  • শিক্ষকতায় ভালো ফলাফল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে, নয়তে স্কুল ও কলেজে, BCS সাপেক্ষে সরকারি কলেজে।
  • শিল্প প্রতিষ্ঠানে মান নিয়ন্ত্রক ও অন্যান্য চাকুরি, মূলত ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বা ফার্মেসীর প্রধান্য।
  • সাধারন BCS-শিক্ষকতা ছাড়াও BCS- এর যেকোন অঙ্গনে চাকুরি রয়েছে যার সাথে রসায়নের কোন সম্পর্ক নেই।

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ- BCSIR, BSTI ও অন্যান্য সরকারি চাকুরি

ফলিত রসায়ন

(Applied Chemistry)

বিষয়বস্ত

এ বিষয়ের শিক্ষার্থীকে কেমিকেল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কেমিস্ট্রির প্রয়োগ সংক্রান্ত জ্ঞান প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে Chemical synthesis, Processing, Separation, Purification  ইত্যাদি পড়ানো হয়ে থাকে।

চাহিদা

 এই বিষয়ের চাহিদা বর্তমানে খুব বেশি ভাল না হলেও খারাপ নয়। তবে দেশে ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বিষয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বাইরে উন্নত দেশসমূহের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিষয়ে পড়াশুনার ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।

স্কলারশীপ

দেশেঃ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাধারন বৃত্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি।

বিদেশেঃ এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য জাপানেই সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া যায়। সেখানে সরকারি (মনবুশো) এবং বেসরকারি উভয় ধরনের বৃত্তি প্রদানের সিস্টেম রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা তথা উন্নত দেশসমূহের প্রায় সকল দেশেই এই সুবিধা পাওয়া যায়।

চাকুরি

দেশেঃ কেমিক্যাল ও ফার্মাসিটটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন ডিটারজেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, রাবার ইন্ডাস্ট্রি, সিনথেটিক ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, লেদার ইন্ডাস্ট্রি, ফুড ইন্ডাস্ট্রি, এ্যাগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, BCIC ইত্যাদি।

তাছাড়া BCS এ অংশ গ্রহন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে।

ফলিত রসায়ন

 (Applied Chemistry)

বিষয়বস্তু

এ বিষয়ের শিক্ষার্থীকে কেমিকেল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কেমিস্ট্রির প্রয়োগ সংক্রান্ত জ্ঞান প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে Chemical synthesis, Processing, Separation, purification ইত্যাদি পড়ানো হয়ে থাকে।

চাহিদা

এই বিষয়ের চাহিদা বর্তমানে খুব বেশি ভাল না হলেও খারাপ নয়। তবে দেশে ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বিষয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বাইরে উন্নত দেশসমূহের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই এ্ই বিষয়ে পড়াশুনার ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।

স্কলারশীপ

দেশে: বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাধারণ বৃত্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি।

বিদেশে: এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য জপানেই সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া যায়। সেখানে সরকারি মনবুশো) এবং বেসরকারি উভয় ধরনের বৃত্তি প্রদানের সিস্টেম রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়, কানাডা, আমেরিকা তথা উন্নত দেশসমূহের প্রায় সকল দেশেই এই সুবিধা পাওয়া যায়।

চাকুরি

দেশে: কেমিক্যাল ও ফার্মাসিটটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন ডিটারজেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, রাবার ইন্ডাস্ট্রি, সিনথেটিক ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, লেদার ইন্ডাস্ট্রি, ফুড ইন্ডাস্ট্রি, এ্যাগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি BCIS ইত্যাদি।

তাছাড়া BCS এ অংশ গ্রহণ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতার সুযোগ রয়েছে।

গণিত ও ফলিত গণিত

 (Mathematics & Applied Mathematics)

পঠিতব্য বিষয়

মৌলিক বিষয় হিসেবে ক্যালকুলাস, জ্যামিতি, ম্যাট্রিক্স, ম্যাকানিক্স, ভেক্টর ইত্যাদি পড়ানো হয়। সাথে পদার্থ, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়।

চাহিদা

বিষয় হিসাবে গণিত একটি মাঝারি মানের পছন্দের বিষয়।

কোথায় পড়ানো হয়।

ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, ইসলামী, খুলনা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর- এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ও এমএসসি কোর্স করানো হয়। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজসমূহে গণিত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেবার সুযোগ রয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা

ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ডক্টরাল রিসার্সের সীমিত সুযোগ রয়েছে।

বিদেশে ভর্তি

এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই যেকোন ছাত্র-ছাত্রী ইচ্ছে করলে বিদেশে এই বিষয়ে ডিগ্রি নিতে পারে। ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা সহ অনেকগুলো দেশে এই বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সহ ডক্টরেট করার সুযোগ রয়েছে।

ভবিষ্যত

গণিতবিদরা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি, কলেজ ও স্কুলসমূহে শিক্ষাকতার চাকুরি নিতে পারেন। এছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ব্যাংকে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। তাছাড়া বিসিএস পরীক্ষায় গণিতবিদদের সাফল্যের হার মোটামুটি ভল।

স্কলারশীপ

গণিত বিষয়ে পড়ুয়দের জন্য দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন স্কলারশীপের ব্যবস্থা রয়েছে।

দেশে:  (ক) ডাচ বাংলা ব্যাংক বৃত্তি,  (খ) ইমদাদ সিতারা ফাউন্ডেশন বৃত্তি

বেদেশে:  (ক) কমনওয়েলথ স্কলারশীপ,  (খ) মনোবুশো স্কলারশীপ

পরিসংখ্যান  (Statistics)

বিষয়বস্তু

Basic Statistics, Probability, Sampling, Demography, Stochastic process, Research Methodology etc. Non-major ‍বিষয় হিসেবে Maths, Economics, Computer Science প্রভৃতি বিষয়ের সাথে Statistics পড়ানো হয়।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে এই বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয়া হয়। দেশের বাইরের প্রথম স্তরের বিষয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পরিসংখ্যান বা Applied Statistics নামের একই ধরনের আরো একটি বিষয় পড়ানো হয়।

যোগ্যতা

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান/বাণিজ্য/কলা যে বিভাগেরই ছাত্র-ছাত্রী হোন না কেন গণিতে বি গ্রেড থাকলে এ বিষয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন।

ভার্তি প্রক্রিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘ক’ এবং বাণিজ্য ও কলা বিভাগের ছাত্র-ছত্রীরা ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি হতে পারেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ের উপর আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ প্রক্রিয়া।

চাকুরি

চাকুরি BCS Professional Cadre- এ কলেজে শিক্ষাকতা ছাড়াও প্রতিটি থানায় একজন পরিসংখ্যানবিদের পদ আছে। এছাড়া সরকারি পর্যয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিসংখ্যান এর গ্রাজুয়েটদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠন, গবেষণা ও পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যানবিদ ছড়া অচল। এছাড়াও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে কাজের বেশ সুযোগ রয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন IMF,WB,ADB,IDB ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলোতে চাকরি পাবার জন্য উচ্চশিক্ষা যেমন MS,PHD প্রভৃতি থাকলে ভাল হয়। USA,UK ও Canada ’র বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা বিশ্ব স্বীকৃত।

স্কলারশীপ

USA,UK ও Canada বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও তদুর্ধ্ব উচ্চশিক্ষার জন্য রেজাল্টের ভিত্তিতে Scholarship পাওয়া যায়।

সম্ভাবনা

পরিসংখ্যান বিষয়টি আসলে এমন এক বিষয় যে বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের ছড়া প্রায় সব ধরনের ব্যবসা, শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান অচল। মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে এটি এমন এক বিষয় যার চাহিদা সব সময়ই অন্যগুলো থেকে বেশি। বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগেও এ বিষয়টি নন-মেজর হিসেবে পড়াতে হয়। তাই এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গঠনে রয়েছে ভাল সম্ভাবনা।

ভূ-তত্ত্ব/ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা

 (Geology/Geology & Mining)

যা পড়ানো হয়

ক. পৃথিবীর ভৌতিক গঠন

খ.গঠনগত উপাদান। এর আকার ও প্রকৃতি

গ. ভূগর্ভের অভ্যন্তরস্থ  (কেন্দ্র থেকে ভূস্তর পর্যন্ত) বিভিন্ন শিলার প্রকৃতি, উপাদান, বয়স, গুরুত্ব ইত্যাদি।

ঘ. সাগর, মহাসাগর, নদ-নদী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য সমূহ  (Geomorphic Characteristics)

ঙ. প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণ  (তল, গ্যাস, ভারী মনিক, কয়লা, আয়রণ, অভ্র, জিপসাম) এবং এদের রিজার্ভ আরোহণের উপায় অর্থাৎ বিভিন্ন পদ্ধতি  (যেমন-Seismic Survey, Gravity Survey, Magnetic Survey, Electrical Survey etc.)

p.Solar System

ছ. ভূ-রসায়ন, ভূ-পদার্থ বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান এবং

জ. ভূমিকম্প ও সুনামি বিষয়ক, অর্সেনিক দূষণ ইত্যাদি।

কোথায় পড়ানো হয়

DU, JU, RU, -তে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

এছাড়া বিদেশের যেমন, USA, UK, Canada,Germany, England, Australia সহ উন্নত বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে M.phil, phD সহ উচ্চতর ডিগ্রি।

স্কলরশীপ

দেশে: উল্লেখযোগ্য সুযোগ তেমন নেই। তবে বিভিন্ন Project, Gravity survey, Seisnic survey and Arsenic Contamination এর উপর ব্যাপক Project base work আছে যেগুলো সরাসরি ক্যালিফোর্নিয়া, কলম্বিয়, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠিপোষকতায় করা হয়।

বিদেশে: Commonwealth Scholarship প্রতিবছর একজন পেয়ে থাকে। এছাড়া উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক ভাল ফলাফল কারীদেরকে  Scholarship দেওয়া হয়।

পড়ার যোগ্যতা

SSC ও HSC তে অবশ্যই ভাল রেজাল্টসহ বিজ্ঞান গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবল এ বিষয়ের পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। এইচএসসি-তে পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত এবং রসায়ন থাকতে হবে।

চাকুরি

দেশে: সরকারের Specialized field সমূহে যেমন- বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র, কয়লাখনি, কঠিন শিলা প্রকল্প গুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে। এছাড়াও সরকারি যেমন-BCS – এ জেনারেল ক্যাডার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে। বেসরকরি ক্ষেত্রে যেমন BRAC এবং বিভিন্ন ফার্মে সুযোগ থাকে তবে সীমিত।

ভবিষ্যত সম্ভাবনা

দিন দিন প্রাকৃতিক শক্তির চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং এ প্রাকৃতিক শক্তিকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তা-কল্পনা করা মুশকিল। তাই পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিনই এ Subject এর সম্ভাবনা বাড়বে বৈ কমবে না।

উচ্চ শিক্ষা

বিদেশে Geophysics, Geochemistry, Hydrology প্রভৃতি বিষয়ে MS ও phD করা যায়।

প্রাণিবিদ্যা  (Zoology)

যা পড়ানো হয়

প্রাণিভূগোল, বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান, প্রাণিবৈচিত্র ও শ্রেণী বিন্যাস, শ্বসন, কম্কালতন্ত্র ও অন্যান্য দেহতন্ত্রসমূহ মানবকোষ, DNA, RNA ভ্রুণতত্ত্ব, বায়ো অনুজীববিদ্যা, মৎস্যবিদ্যা, পতঙ্গবিদ্যা, বংশগতিবিদ্যা, পরিবেশ ও পরিবেশ বিপর্যয় ইত্যাদি।

কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্রগ্রম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কোন কোন কলেজে।

ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা

মলিকুলার বায়োলজি, জীনতত্ত্ব, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রেশম চাষ, মৌমাছি চাষ, মাছ চাষ ও ইনটেনসিভ ফামিং, পরিবেশ বিদ্যা, toxicology, মুক্তা চাষ, চিংড়ি গবেষণা ও অন্যান্য ফলিত শাখায় এমফিল ও phD–র সুযোগ।

চাকুরির ক্ষেত্র সমূহ

 (ক) মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা সহ বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ।

 (খ) Medical Representative হিসাবে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে যোগদানের সুযোগ।

 (গ) BCSIR, NIPSOM, IEDCR, AIPH, ICDDR, BIRDEM ও অন্যান্য দেশী ‍বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের সুযোগ।

 (ঘ) শিক্ষালয় জ্ঞারকে কাজে লাগেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যেগে Sericulture, poultry farm, Fish farm, Fish Apiculture, Hatchery, Fish culture ইত্যাদি Prownculture করার সুযোগ।

Laboratory Requirements

  1. General lab

রক্তের গ্রুপ, গ্লুকোজ, হিমোগ্লোবিন নির্ণয়মহ রক্তচাপ, ESR, ECG প্রস্রাবের সুগার, Dissection, Microtomy কোষ বিভাজন ইত্যাদির জন্য সরঞ্জাম।

  1. Applied lab

বন্যপ্রাণী গবেষণা  Lab, Molecular biology lab, Fisheries lab, Entomology lab, Genetics lab, Microbiology lab.

উদ্ভিদ বিজ্ঞান  (Botany)

যা পড়ানো হয়

বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ ও পরিবেশ বিপর্যয়, অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদ্যা, জৈব প্রযুক্তি ও জীব প্রকৌশল, উদ্ভিদ প্রজনন, জীনতত্ত্ব, শ্রেণীবদ্ধ বিদ্যা, ভ্রুনবিদ্যা, উদ্ধিদ শরীর বিদ্যা, কর্মসংস্থান বিদ্যা, কোষ বিদ্যা, জৈব বৈচিত্র, শৈবাল বিদ্যা, অ্যাকুয়াকালচার, কোষ ও কোষ বিভাজন, উদ্ভিদ রোগাতত্ত্ব।

কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশহী ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কোন কোন কলেজে।

ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা

জীনমলিকুলার বায়োলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, টিসু কালচার, জীন ক্লোনিং পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা, ঔষধ উৎপাদন, শস্য উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ বিছু মাইক্রোবায়োলজিক্যাল বিষয়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ।

চাকুরির ক্ষেত্রে সমূহ

 (ক) মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নতক ও স্নাতকোত্তর এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাসহ বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ।

 (খ) Medical Representative হিসাবে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে যোগদানের সুযোগ।

 (গ) ফরেস্ট অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ।

 (ঘ) Agronomy সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে যোগদানের সুযোগ

 (ঙ) কৃষি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ।

 (চ) BCSIR, NIPSOM, IEDCR, AIPH, ICDDR,BIRDEM ও অন্যান্য দেশী বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের সুযোগ।

 (ছ) শিক্ষালয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যেগ Harticulture, নার্সারি স্থাপন, বনায়ন এ্যাকুয়াকালচার উন্নতমানের

ফসল উৎপাদন করার সুযোগ।

Laboratory Requirement

Biodiversity গবেষণ্য ল্যাব,  Molcenlar biology lab, Tissue culture lab, Limnology lab, Genetics lab, Microbiology lab etc.

প্রাণ রসায়ন ও অনুজীব বিজ্ঞান

 (Biochemistry and Molecular Biology)

বিষয়বস্তু

বিষয়টির দুটি অংশ। Biochemistry অংশে সাধারণত জীবদেহে সংঘটিত বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া, রাসায়নিক বস্তুর গঠন ভঙন, শক্তি উৎপাদন, পরিপাক, মেটাবলিজম প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। Molecular Biology অংশে মূলত কোষের অভ্যন্তরে সংগঠিত বিভিন্ন প্রকার বিক্রিয়, প্রক্রিয়া, দেহে অনুপ্রবেশ করা রোগজীবানু ধ্বংস করার উপায় প্রভৃতি বিষয়ক আলোচনা হয়।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্রগ্রাম ও দু’একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি Biological faculty –র প্রধান বিষয় হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে।

স্কলরশীপ

দেশে স্কলারশীপের সংখ্যা খুব কম। কিন্তু বিদেশে post graduate level এ প্রচুর Scholarship পাওয়া যায়।

চাকুরি

 (ক) দেশে:

সরকারি: মেডিকেল কলেজগুলোতে, BCSIR, পরমানু শক্তি কমিশন, বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষকতা, BCS, ICDDRB, BRRI, BARI.

প্রাইভেট:  Diagnostic laboratories, Pharmaceutical industry, Food processing, private hospitals, Research laboratories, Nutrition projects etc.

 (খ) বিদেশে: বিদেশে বিভিন্ন laboratory-তে গবেষণার প্রচুর সুযোগ ও চাকুরির ব্যবস্থা আছে। এ পেশায় মোটা অম্কের বেতন সহ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রমোশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।

গবেষণা

গবেষণা করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই phD করা উচিত এবং সেটা বাইরে থেকে। অন্যান্য চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে MSc ডিগ্রিই যথেষ্ট, সাথে MBA ডিগ্রি থাকলে প্রার্থীর মন বহুলাংশে বেড়ে যায়।

মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology)

চাহিদার ক্রম অনুযায়ী বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রথম সারির একটি বিষয় হিসেবে Microbiology এর নাম অগ্রগণ্য। এর বিচিত্র বিষয়সূচি, আসন সংখ্যা, চাকুরির ক্ষেত্রে ইত্যাদি বিষয়ে কিছু মৌলিক সুবিধাই এই অগ্রাগণ্যতার অন্যতম কারণ।

পঠিতব্য বিষয়

Microbiology হচ্ছে Biology of the micro things  (microbs) সুতরাং এই বিষয়ের আলোচ্য বিষয়াদি হচ্ছে Bacteria. Virus, fungus ইত্যাদি সম্পর্কিত জ্ঞান, তাদের উপকার, অপকার, নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহার ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা। সেই সাথে মঠপর্যায়ে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সব Technique এই বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকে। এই বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত আরো রয়েছে রোগতত্ত্ববিদ্যা  (Immunology), প্রাণরসায়ন  (Biochemistry), রসায়ন  (Chemistry) ইত্যাদি। এর পঠিতব্য বিষয়গুলোকে প্রধানত নিম্নোক্তভাবে সাজান যায়।

১. Microbial information related courses (with practical)

 (A) Bacteriology, Virology, Mycology,etc.

      – their detail knowledge

      – Metabolism, geteoies etc.

      – Their merits, demerits.

২. Application Techniques related courses:

     – Basic Techniques in Microbiology

     – Agricultural Microbiology

     – Biotechnology

     – Fermentation Technology.

     – Industrial Microbiology

৩. Other Subjects:

     – Fundamentals of Chemistry

     – Basic Biochemistry

     – Human physiology

     – Immunology

     – Computer Application etc.

কোথায় পড়ানো হয়

সরকারি: ঢাকা, চট্রগ্রম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি: North-South University, স্টামফোর্ড ইউনির্ভারসেটি,prime Asia University.

বিষয় রেটিং

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে Biological Subject এর দিক হতে Microbiology বিশির ভাগ ছাত্রেরই ১ম বা ২য় choice হয়ে থাকে।

অ্যাডমিশন-মূলত স্নাতক level এ Microbiology পড়ানো হয়। তবে বিদেশে High school পর্যায়ে বা অন্যান্য কিছু Technical college এ শুধু Technical side টি শেখানো হয়।

স্কলারশীপ

১.সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় পুরো খরচটাই বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে বলে তেমন সাহায্যের দরকার হয় না। আর দরকার হলেও বৃত্তি তেমন নেই। সাধারণ বৃত্তিগুলো ফলাফল ভালো করলে পাওয়া যায়, যা নামে মাত্র।

২.বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফলাফল ভাল করলে Tuition fee তে কিছু ছাড় দেয়া হয়।

চাকুরি

এই বিষয় অন্যতম প্রধান বিষয় হওয়া সত্ত্বেও দেশে এর চাকুরি কম বললেই চলে।

মূলত গবেষণা সম্পর্কিত বিষয় হবার কারণেই এখানে এর অবস্থান দুর্বল। তবুও যে চাকুরিগুলো দেশে বিদ্যমান সেগুলো হচ্ছে-

দেশে

Pharmaceutical industry, Food industry, ICDRB & Research project সমূহে ও আনুসাংগিক কাজে, Medical college, Diagnostic centre গুলোতে Microbiologist হিসেবে, অন্যান্য গবেষণা কর্মে যেমন Biotechnologicsl work, Immunological research.

বিদেশে

Agricultural reseach, Environmental sector, Pharmaceutical industry, Public health, Immunological sector, Biotechnological/ Formulation sector. এছাড়াও বিভিন্ন জীবানুজাত রোগের গবেষণায়- যেমন AIDS, SARS ইত্যাদি।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি

কোথায় পড়ানো হয়

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: খুলনা, শাহজালাল, চট্রগ্রম, মাওলানা ভাসানী  (টাঙ্গাইল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: ইওডা, নর্থ সাউথ  (বায়োক্যামেস্ট্রি এন্ড বায়োটেক), ব্র্যাক  (মাস্টার্স)।

চাকুরি

দেশে: ব্র্যাক  (টিস্যুকালচার হাইব্রীড-উন্নতমানের বীজ), কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টিস্যুকালচার, ড. হাসিনা খান ল্যাব, পাট গবেষণা, ড. জেবা ইসলাম সেবা ধান নিয়ে গবেষণা, আইসিডিডিআরবি- ডায়রিয়া এবং কলেরা নিয়ে গবেষণা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে-ডি এন এ ফরেনসিক ল্যাব।

বিদেশে: দেশের বইরে রয়েছে প্রচুর কাজের সুযোগ। কারণ, জীববিজ্ঞান বিষয়কে জ্ঞানের পরিধি ও গবেষণার ক্ষেত্র অনবরত বেড়েই চলেছে।

কি পড়ানো হয়

এ বিষয়ে সাধানণত জীব প্রজাতর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রধান বাহক‘জীন (Gene)’ এর অভ্যন্তরীণ হঠন, গঠনিক উপাদান, বিক্রিয়া, জীনের উন্নতকরণের প্রযুক্তি প্রভুতি বিষয়ে পড়ানো হয়। বিষয়টি মূলত রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে একটি ফলিত বিষয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘Genetics and Breeding’ পড়ানো হয় যা কৃষি বিজ্ঞান ভিত্তিক একটি ফলিত বিষয়।

পড়ার যোগ্যতা

এ বিষয়ে পড়ার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে অবশ্যই বি গ্রেড থাকতে হবে।

স্কলারশীপ

বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য Scholarship পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাপান, জার্মানী প্রভৃতি রাষ্ট্র।

খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান  (Food & Nutrition)

কী পড়ানো হয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু বিষয়সহ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও খাদ্য বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স দিয়ে বিষয়টির কারিকুলাম সাজানো হয়েছে। মূলবিষয়গুলো হল ফিজিওলজি, অ্যানাটমী, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক কেমিস্ট্রি, ডায়েটিকস, ফুড প্রসেসিং, পাবলিক হেলথ, চাইল্ড কেয়ার ইত্যাদি।

কোথায়

ঢাবি, রাবি ও ইবি-তে পড়ানো হয়। হাজী দনেশ বিশ্ববিদ্যালয়েও ফুড টেকনোলজি নামে একটি কোর্স আছে। মেয়েদের জন্য ঢাবির অধীনস্থ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে বিষয়টি পড়ার সুযোগ রয়েছে।

চাকুরি

চাকুরি মূলত সব ধরনের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানী সেক্টরে। পাবলিক হেলথ নিয়ে কাজ করে এ ধরনের বেসরকারি সংস্থাগুলোতে প্রচুর চাকুরির সুযোগ আছে। বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠেত ভালমানের হাসপাতাল গুলোতে নিউট্রিসনিস্ট ও ডায়েটিশিয়ানের চাকুরি পওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডয়েটিশিয়ানের  (খাদ্য বিশেষজ্ঞের) পদ রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পুষ্টি প্রকল্প ও পাবলিক হেলথ সেক্টরে কাজ করার সুযোগ আছে।

স্কলারশীপ

দেশের বাইরে পুষ্টিবিজ্ঞান বেশ দামী বিষয় হওয়ার কারণে স্কলারশীপ মেলে বহজে। উন্নত দেশগুলোতে পুষ্টিবিদের পেশা বেশ লাভজনক।

সম্ভাবনা

দেশের ফুড কোম্পানিগুলোতে এ পেশার লোক প্রয়োজন। কিন্তু অতীতে একমাত্র গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ছাড়া কোথাও বিষয়টি পড়ানো হত না বিধায় ফুড কোম্পানিতে রসায়নবিদ দিয়ে কাজ চালানো হত। সরকার ঔষুধ কোম্পানিতে যেমন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করেছে তেমনি ফুড কোম্পানিগুলোতেও পুষ্টিবিদ নিয়োগের বিধান করলে এ পেশাটির জন্য প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

এ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম বি গ্রেড থাকতে হবে।

পপুলেশন সায়েন্স

বিষয়বস্তু

আদমশুমারি, মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, মানব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ এবং এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান গত বিষয়সমূহ।

চাহিদা

যেকোন দেশের অগ্রযাত্রা নির্ভর করে সে দেশের মোট মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর। তাই, এ বিষয়টি যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের মত উন্নায়নশীল দেশে তাই এই বিষয়টির চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। বিভিন্ন মানব সম্পদ গবেষণাধর্মী বিদেশি সংস্থাতে ও এর ব্যাপক চাহিদা আছে।

কোথায় পড়বেন

দেশে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিদেশে: বিভিন্ন নামকরা ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে সামাজিক বিজ্ঞান অথবা মানব বিজ্ঞান অনুষদের বা স্কুলের অন্তর্গত বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।

ভর্তির নিয়ম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভর্তির জন্য গণিত এবং ইংরেজি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়।

স্কলারশীপ

দেশে: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ডিপার্টমেন্টাল স্কলারশীপ।

বিদেশে: বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন Human Rights সংস্থা, NGO প্রভৃতি কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশীপ।

উচ্চশিক্ষা

দেশে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ আছে।

বিদেশে: বিভিন্ন খ্যাতনামা এবং মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স, এমএস, পিএইচডি এবং এম.ফিল করার সূযোগ আছে।

চাকুরি

UNDP, Human Rights সংস্থাসমূহ, বিভিন্ন NGO, সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিভিন্ন কোম্পানীতে HRO হিসেবে, Private University তে শিক্ষক হিসেবে।

ভূগোল  (Geography)

ভূমিকা

ভূগোল বিষয়ের আলোচ্য শাখাগুলো হল প্রাকৃতিক, মানবিক এবং সাংস্কৃতিক- যার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে প্রকৃতির সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে, অনুধাবন করতে পারে মানুষও প্রকৃতির মিথস্ক্রিয়াশীল সম্পর্কের ব্যাপারে।

যা পড়ানো হয়

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে মূলত মনুষ ও পরিবেশের সম্পর্ক, বিভিন্ন সময় ও স্থান সম্পর্কে পড়ানো হয়।

চাহিদা

এই বিভাগের চাহিদা আগে মাঝারি মানের থাকলেও নতুন একটি বিষয় GIS অন্তর্ভূক্ত হবার কারণে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক কোন নির্দিষ্ট অবস্থানে না থাকলেও এর অবস্থান মাঝারি মানের।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং জগন্নথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ানো হয়। এর বাইরে অনেক কলেজেই এই বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়ে থাকে।

উচ্চ শিক্ষা

দেশে ঢাকা, চট্রগ্রম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে।

চাকুরি সুবিধা

এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রধাণত বিসিএস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন চাকুরিতে যোগ দেয়। এছাড়া অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের সাথে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্মে যোগদান করতে পারছে। এছাড়াও শিক্ষাকতা, ব্যবসা ইত্যাদি পেশা গ্রহণেরও বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে।

মনোবিজ্ঞান (Psychology)

আলোচ্য বিষয়

মনোবিজ্ঞানের বিষয় আচরণ হওয়ায় এর আলোচ্য বিষয়গুলি চোখের পলক ফেলা থেকে আরম্ভ করে আগ্রাসী ব্যক্তির গতি পর্যন্ত বিস্তৃত। আচরণের সাথে সাথে মনোবিজ্ঞান মানুষের আবেগ, চিন্তা, স্বপ্ন, বিশ্বাস, স্মৃতি প্রত্যাশা আলোচনা করে।

চাহিদা

মনোবিজ্ঞান তার যাত্রাপথে এখন আর শুধু ব্যক্তি মন-এ আবদ্ধ নয়। আজ এর বিস্তৃতি ঘটেছে- চিকিৎসায়, শিক্ষায়, শিল্পে, বিকাশে, সমাজে, প্রকৌশলে, উপদেশনায় ও নির্দেশনায়্।

চাকুরির সুযোগ

ভাল ফলাফলধারী ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক, সরকারি ক্ষেত্রে সধারণ সকল ক্যাডার, স্পেশাল মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক, প্রাইভেট কোম্পানী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপদেশক ও নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারেন। আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কম থাকলেও উন্নত বেশ্বে বিশেষ করে আমেরিকা, কনাডায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, শিশুমনোবিজ্ঞানী, শিল্পমনোবিজ্ঞানী, শিক্ষাঙ্গনে উপদেশক ও নির্দেশক হিসেবে মনোবিজ্ঞানীদের উন্নত পেশা গ্রহণের সুযোগ আছে।

কোথায় পড়াবেন

ঢাকা, রাজশাহী, জগন্নথ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদেশেও এ বিষয়ে পড়াশুনার ভাল সুযোগ আছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়গুলোর মধ্যে এর অবস্থান নীচের দিকে।

গবেষণা ও স্কলারশীপ

উচ্চশিক্ষার মধ্যে রয়েছে MS, phD ও বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বিদেশে অনেক সুযোগ রয়েছে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশুনা করার। দেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে MS করা যায়। বিদেশের মধ্যে USA, Canada, UK, Australia, Japan, Germany অগ্রগণ্য। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের Scholarship রয়েছে। তবে সেগুলো শিক্ষাকতা ও গবেষণাকে উদ্বুদ্ধ করে- যেমন Commonwealth Scholarship, Monoboshu Scholarship ইত্যাদি।

বিবিএ/এমবিএ

বিবিএ

বিবিএ হলো চার বছর মেয়াদী সন্মান ডিগ্রি। ব্যবসায় শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের প্রথম সোপান হলো বিবিএ বা Bachelor of Business Administation. ডিগ্রির সংজ্ঞা ইংরেজিতে দিতে গেলে এভাবে দেয়া যায়: The degree is conferred upon a student after four years of full-time study  (120 credit hours) in one or more areas of business concentrtions. The BBA program usually includes general business courses and advanced courses for specific concentrations.

কোথায় পড়ানো হয়?

আমাদের দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চট্রগ্রাম, খুলনা, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নবগঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিবিএ পড়ানো হয়। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সম্প্রতি এই কোর্স চালু হয়েছে। তাছড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় সবগুলোতোই বিবিএ পড়ানো হয়।

কি কি পড়ানো হয়?

বিবিএ’র কারিকুলাম এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিক্ষর্থী বিজ্ঞান, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞান লাভ করতে পারে। বিবিএ তে বিভিন্ন বিষয়ে  (Major) প্রধান বিষয় রয়েছে। সেগুলো হলো:

   ১. মার্কেটিং

   ২. হিসাব বিজ্ঞান

   ৩. ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং

   ৪.ব্যবস্থাপনা

   ৫. হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা

   ৬. ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিসটেম প্রভৃতি

এছাড়াও দেশের বাইরে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে Bachelor of Science in Business Administration  (BSBA) নামে বিবিএ ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এই ডিগ্রীতে মূলত ব্যবসায় প্রশাসনের কারিকুলাম ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিষগুলোর উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

বিষয় রেটিং

বর্তমানে বিষয় রেটিং করা হয় চাকরি বাজারে চাহিদা দেখে। আপনি একটি জাতীয় দৈনিক হাতে নিয়ে বসলে দেখতে পাবেন কোন বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি চাকরি বিজ্ঞাপন দিয়েছে সেই অনুসারে আপনি নিজেই বিষয় রেটিং করতে পারবেন।  (এটা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে।) বর্তমান রেটিং-

১. মার্কেটিং

২.ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং

৩. হিসাব বিজ্ঞান

৪.ব্যবস্থাপনা

৫.হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা

৬.ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিসটেম প্রভৃতি

ভর্তি  (দেশে/বিদেশে)

দেশে অবস্থিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের অধিকারী হতে হয়। ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক অথবা বিজ্ঞান বিভাগের যে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অবতির্ণ হতে পারে। কেবলমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। যে সকল শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিবিএ ভর্তির সুযোগ পায় না তাদের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুযোগ করে দিয়েছে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করার। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার খরচ অত্যন্ত বেশি। তবে কোন শিক্ষার্থীর যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার খরচ চালানোর সামর্থ থাকে তবে সে ইচ্ছা করলে সমপরিমান অর্থ দিয়ে বিদেশ থেকে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে। এক্ষেত্রে দেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বর্তমানে দেশে অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম এ বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে।

উচ্চশিক্ষা (এমবিএ)

বিবিএ  (মার্কেটিং, ব্যাংকিং ফিন্যান্স, একাউন্টিং,ম্যানেজমেন্ট,) ডিগ্রি লাভ করার পর কোন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াশুনা করতে পারেন। বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অধিভুক্ত যে কোন বিষয়ে এমবিএ করার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। দেশে ব্যবসায় প্রশাসনে অধ্যয়নের জন্য পাইওনিয়র প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ। একজন শিক্ষার্থী যে কোন বিষয়ে স্নাতক পাশ করার পর এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে পারে। তবে আইবিএতে ভর্তি পরীক্ষা একটু ব্যতিক্রম। ইংরেজি, গণিত ও জ্যামিতিতে ভাল দখল থাকলে এখানে চান্স পাওয়া সম্ভব। আইবিএ থেকে অর্জিত ডিগ্রির মান দেশে অবস্থিত অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত এমবিএ ডিগ্রির চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। তাই দেশের অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পরও কোন শিক্ষার্থী যদি এখান থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন তবে এটা তার জন্য অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছড়াও রাজশাহী, খুলনা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ’র অনুরূপ স্বতন্ত্র এমবিএ পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও আইবিএ স্টাইলেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়।

সিএ/আইসিএমএ

বিবিএ/এমবিএ শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছে করলে প্রফেশনাল ডিগ্রি অর্জনের জন্য সিএ/আইসিএমএ তে পড়াশুনা করতে পারে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি তে A+ থাকলে সরাসরি সিএ কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্যের জন্য কাওরান বাজারস্থ সিএ ভবনে যোগাযোগ করতে হবে নীলক্ষেতে অবস্থিত আইসিএমএ ভবনে অথবা www.icmab.org.bd ওয়েব সাইটে অথবা ঢাকার বাইরে অবস্থিত শাখা অফিসগুলোতে।

এমফিল, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি

এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর একজন শিক্ষার্থী আরও উচ্চতর ডিগ্রির জন্য গবেষণামূলক কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে তিনটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো হলো-এমফিল, পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি। এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর সর্বপ্রথম দুই বছর মেয়াদী এমফিল কোর্সের জন্য ভর্তি হয়। অবশ্য সরাসরি তিন বছর মেয়াদী পিএইচডি প্রোগ্রামেও ভর্তি হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমপক্ষে দুই বছরের শিক্ষাকতাসহ আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রকাশনা থাকতে হবে। উল্লেখ্য এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে নিয়মিত  (মাসিক/বাৎসরিক) বৃত্তি/অর্থ প্রদান করা হয় কোন কোন ক্ষেত্রে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের প্রায় সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর একজন গবেষক হওয়ার ইচ্ছে করলে দেশের বাইরে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করতে পারেন। কেননা আমাদের দেশে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার ব্যবস্থা নেই।

স্কলারশীপ

বিবিএ/এমবিএ অধ্যয়নকালে দেশে তেমন কোন স্কলারশীপের ব্যাবস্থা না থাকলেও বিবিএ/এমবিএতে ভাল রেজাল্ট করতে পারলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রচুর স্কলারশীপ পাওয়া যায়। তবে আইবিএতে অধ্যয়নকালে কিছু স্কলারশীপের ব্যবস্থা আছে। সেগুলো হলো- প্রফেসর এম শফিউল্লাহ স্কলারশীপ  (যারা ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্ভর পায় তাদের জন্য), নাজির আগমেদ মেমোরিয়াল স্কলারশীপ, প্রফেসর আলিমুর রহমান স্কলারশিপ, রোটারী ক্লাব, DDBL, ICB, BAT, National Cash Register, Young-one, নূরুল হুদা মেমোরিয়াল, সামসুল আলম মেমোরিয়াল, এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন স্কলারশীপ। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবিএতে প্রথ, বর্ষের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে কিছু ছাত্রকে দ্বিতীয় বর্ষ হতে মেধা বৃত্তি প্রদান করে থাকে। দেশের বাইরে অধ্যয়ন করার জন্য যে সমস্ত স্কলারশীপ পাওয় যায় সেগুলো হলো- মনবুশো স্কলারশিপ  (জাপান), কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, ওয়ল্ড ব্যাংক স্কলারশিপ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্কলারশীপ প্রভৃতি। বিবিএ/এমবিএ পর্যয়ে ইংল্যান্ড, কনাডা, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশেই স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতন শিক্ষার জন্য যাওয়া যায়। ইন্টারনেট সার্চ করলে এসব বৃত্তির তথ্য সহজেই উদঘটন করা সম্ভব। তবে দেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসসমূহে খোঁজ নিলে স্কলারশীপের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।

চাকুরি

বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করলে বেশ দ্রুত চাকুরি পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে প্রাইভেট অর্গানাইজেশনে বিবিএ/এমবিএ’র চাহিদা আকাশচুম্বী। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী, প্রবেশনারী অফিসার, এক্সিকিউটিভসহ অফিসার পদে ভাল বেতন ও সুযোগ সুবিধায় সিয়োগ প্রদান করা হয়। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় চাকুরির সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভাল ফলাফলের অধিকারী হতে হবে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানী, টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানী, গার্মেন্টস, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আকর্শণীয় বেতনে উচ্চ পদে চাকুরির সুযোগ রয়েছে।

অর্থনীতি  (Economics)

যা পড়ানো হয়

অর্থনীতি বিষয়টিতে সামষ্টিক ও ক্ষুদ্র অর্থনীতি, অংক, পরিসংখ্যান, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স ও অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ানো হয়। এছড়াও উন্নয়ন অর্থনীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।

চাহিদা

একটি দেশের সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্থনীতিবিদদের। তাছাড়া বর্তমানে অর্থ সংশ্লিষ্টি কাজের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিভাগের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয় ভিত্তিক অবস্থানের দিকে দিয়ে কলা/ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে এই বিষয়ের অবস্থান প্রথম দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় পাথম দিকে থাকে তারাই অনার্স বিষয় হিসেবে অর্থনীতি নিয়ে থাকে।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেশকিছু পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত অনেক কলেজে এই বিষয়টি পড়ানো হয়।

উচ্চ শিক্ষা

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অনেক বিষয়ের উপর পিএইচডি করা যায়।

চাকুরির সুবিধা

অর্থনীতি বিভাগেন শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করা ছাড়াও দেশের ব্যাংক বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রইভেট ফার্ম, শিক্ষকতা ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে চাকুরি লাভ করে থাকে।

 আইন  (Law)

যা পড়ানো হয়

দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন।

চাহিদা

আইন বিষয়ের চাহিদা বহুবিদ- প্রথমত, আইনজীবী হিসেবে কোর্টে মামলা পরিচালনা করা। দ্বিতীয়ত, সরকারি  (বিসিএস জুডিশিয়াল) এবং দেশি, বিদেশি ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানীতে আইন কর্মকর্তা বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করে কাজ করা যায়।

উল্লেখ্য সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন আদালতে আইনজীবীদের মধ্য থেকেই আইন কর্মকর্তা নিয়ে থাকেন। এসব ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক অকস্থানের দিক দিয়ে কলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে একে শীর্ষে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারাই অনার্স বিষয় হিসেবে আইন নিয়ে থাকে।

কোথায় পড়ানো হয়

দেশের সব কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিষয়ে চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু আছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত আইন কলেজেসমূহে সাধারন এলএলবি ডিগ্রি দিওয়া হয়।

উচ্চ শিক্ষা

এ বইয়ের ৫ম অধ্যায়ের‘আইনজীবী’ রচনাটি দেখুন।

ইংরেজি  (English)

কি পড়ানো হয়

ইংরেজি বিভাগে প্রধান আলোচ্য বিষয় যে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য এটা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট। ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের রচিত পড়ানো হয় এখানে। এছাড়া বাংলা সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, নৃ-বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হয় এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।

চাহিদা

ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা ও সাহিত্য। আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার দরুন এর ব্যাপক চাহিদা আছে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। বলা চলে চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি জানার কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন মালটিন্যশনাল কোম্পানী, দূতাবাস ও বিদেশে চাকুরি নেওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি অপরিহার্য ভাষা। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির চাহিদা সর্বজন স্বীকৃত।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান অবস্থানের দিক দিয়ে কলা অনুষদে এই বিষয়ের অবস্থার প্রথম দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারাই অনার্সের বিষয় হিসেবে ইংরেজি নিয়ে থাকে।

কোথায় পড়ানো হয়

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনার্স বিষয় হিসেবে ইংরেজি পড়ানো হয়।

চাকুরির সুবিধা

দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রইভেট প্রতিষ্ঠন এবং দেশি ও বিদেশি ব্যাংক উচ্চ বেতনে চাকুরির সু-ব্যবস্থ রয়েছে। বিসিএস এর বিভিন্ন ক্যাডারেও ইংরেজির ছেলে-মেয়েরা যথেষ্ট ভাল করে থাকে।

সমাজ বিজ্ঞান/ ন-বিজ্ঞান

(Sociology/Anthropology)

সব বিষয় পড়ানো হয়

অনার্সে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামাজিক আইন, দুর্য়োগ-ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ,এনজিও, মানবাধিকার, সামাজিক নীতি, জনবিজ্ঞান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সামাজিক গবেষণা, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার বিষয়ে পড়ানো হয়।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক অবস্থানের দিক দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে এই বিষয়ের অবস্থান প্রথম দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারাই অনার্সের বিষয় হিসাবে সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে থাকে।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নথ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হয়।

চাকুরির সুবিধা

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করা ছাড়াও দেশের ব্যাংক, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠন,বিভিন্ন প্রইভেট ফার্ম, শিক্ষাকতা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষক হিসেবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকুরি লাভ করে থাকে।

সমাজকল্যাণ/ সমাজকর্ম

 (Social Welfare/ Social Work)

কী পড়ানো হয়

অনার্সে সমাজকর্মের তত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোর্সের সাথে অর্থনীতি সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, সামাজিক আইন, দুর্য়োগ-ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণ, এনজিও, মানবাধিকার, সামাজিক নীতি, জনবিজ্ঞান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সামাজিক গবেষণা, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার বিষয়ে পড়ানো হয়।

চাহিদা

সমাজকর্ম মূলত একটি পেশা। আমাদের দেশে এটি এখনও পেশা হিসেবে প্রতিষ্টিত না হলেও বিদেশি এনজিও সহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠন ও সরকারি চাকুরির সুবিধা রয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে এমফিল এব্ং পিএইচডি করা যায়। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে  (বিশেষ করে USA, UK Australia, Canada) সমাজকর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয় ভিত্তিক অবস্থানের দিক দিয়ে সমাজকল্যাণ/ সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম দিকে। বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারাই অনার্স বিষয় হিসেবে সমাজকল্যাণ/সমাজকর্ম নিয়ে থাকে।

কেথায় পড়ানো হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কলেজে সমাজকল্যাণ পড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এর নাম সমাজকর্ম।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relation)

যা পড়ানো হয়

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আসলে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিষয়। কজেই সাম্প্রতিক বিশ্ব ছাড়াও এ বিষয়ে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ইত্যাদি পড়ানো হয়।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাবি, জাবি, চবি-তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স কোর্স পড়ানো হয়। তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।

উচ্চ শিক্ষা

উপরোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ হতে এ বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জরনর সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া USA, Canada, Australia ও Europe- এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক অবস্থানের দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি মধ্যম মানের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারা আইন, অর্থনীতি, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ের পরপরই আনার্স বিষয় হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে থাকে।

চাকুরি

বাংলাদেশে নিযুক্ত মালটিন্যশনাল কোম্পানী, মানবধিকার সংগঠন সমূহ, বিভিন্ন এনজিও, বিদেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও পররাষ্ট্রবিষয়ক ক্ষেত্রে চাকুরির সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও

 (ক) অনার্স ও মাস্টার্স প্রথম শ্রেণী প্রপ্তির সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ।

 (খ) বিসিএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।

লোকপ্রশাসন  (Public Administration)

পঠিতব্য বিষয়

প্রাগৈতিহাসিক কালে থেকে বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক অবকাঠামো বিষয়ে জ্ঞান প্রদান। পরিবর্তিক পরিবেশে প্রশাসন কেমন হবে সে বিষয়ে বাস্তব শিক্ষা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি এ বিষয়ে পড়ানো হয়।

চাহিদা

ডিমান্ড সম্পর্কিত আলোচনায় লোকপ্রশাসনের ভবিষ্যৎ কি, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। ভাল ও সুন্দর রেজাল্ট করলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরির সুযোগ রয়েছে। লোকপ্রশাসনে বিসিএস ও সরকারি কর্ম-কমিশনে রয়েছে লেরকপ্রশাসনের ছাত্রদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা।

বিষয়ভিত্তিক

বিষয়ভিত্তিক অবস্থানের দিক দিয়ে লোকপ্রশাসন একটি মধ্যম মানের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারা আইন, অর্থনীতি, ইংরেজি ইত্যাদি বিষয়ের পরপরই অনার্স বিষয় হিসেবে লোক প্রশাসন নিয়ে থাকে।

চাকুরি

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন মালটিন্যশনাল কোম্পানী, মানবধিকার সংগঠন সমূহ, বিভিন্ন এ.জি.ও, বিদেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও প্রশাসন ক্ষেত্রে চাকুরির সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও

 (ক) ভাল ফলাফল করার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ।

 (খ) বিসিএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

 (Mass Communication & Journalism)

যা পড়ানো হয়

এ বিভাগে সাংবাদিকতার বিভিন্ন অংশ ছাড়াও তথ্য প্রযু্ক্তি, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়ে থাকে।

চাহিদা

বর্তমানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যেভাবে বেড়ে চলেছে, সেই সাথে এই বিষয়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মিডিয়া একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

ক্রমর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ের বর্তমান অবস্থান কলা ও মানবিক অনুষদে উপরের দিকে।

কোথায় পড়ানো হয়

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়টির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এটি মূলত ঢাকা, চট্রগ্রম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। এছাড়াও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিষয়টি পড়ানো হচ্ছে।

চাকুরি সুবিধা

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাত্র জীবনেই চাকুরি পেয়ে যায় এবং বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তি চাকুরি জীবনে কাজে লাগায়। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডার হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক হিসেবে এবং বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম ও এনজিও গুলোতে চাকুরি লাভ করে থাকে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান

 (Political Science)

কী পড়ানো হয়

রাষ্ট্র, সরকার, আইন প্রশাসন, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি নানবিধ বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাবি, জাবি, জবি, চবি  (রাজনীতি বিজ্ঞান), রাবি, শাবিপ্রবি  (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোক প্রশাসন) এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে মাস্টার্স কোর্সে পড়ানো হয়।

এছাড়াও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ হতে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে থাকে। তথাপি উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার জন্য USA, Canada, Australia এবং Europe-এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিষয়ভিত্তিক অবস্থানের দিক দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি মধ্যম মানের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকে তারা আইন, অর্থনীতি, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ের পরপরই অনার্স বিষয় হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে থাকে।

চাকুরির সুযোগ-সুবিধা

১। ভাল ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিসিএস  (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের মাধ্যমে সরকারি কলেজসমুহের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২। নির্দিষ্ট কোন কোটা না থাকলেও বিসিএস প্রশাসনসহ সাধারণ ক্যাডারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিগ্রিধারীদেরকে চান্স পাওয়া সহজ।

৩। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার ভাল সম্ভাবনা।

বাংলা  (Bangla)

যা পড়ানো হয়

বাংলা বিভাগে সাধারণত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বিভিন্ন উপন্যাস, বড় বড় কবি ও সাহিত্যিকদের বিভিন্ন গদ্য ও বিখ্যাত কবিতাগুলো পড়ানো হয়। এছাড়া ফাউন্ডেশন কোর্স হিসেবে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও বাংলা এই দু‘টো বিষয় ভাষা হিসেবে পড়ে থাকে।

চাহিদা

যেসব শিক্ষার্থী বাংলা ভাষা ও এর বিভিন্ন ধারা এবং আমাদের বাংলা ভাষার যে বিশাল সাহিত্য ভান্ডার রয়েছে তা জানতে এবং এই সমৃদ্ধ ভাষাটির ইতিহাস ‍ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী তাদের কাছে এই বিষয়ের চাহিদা রয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিষয় হিসেবে এর অবস্থান নীচের দিকে।

কোথায় পড়ানো হয়

বাংলদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এবং অধিকাংশ কলেজে বাংলা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে থাকে।

উচ্চ শিক্ষা

বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

এছাড়া ভারতসহ অন্যান্য কিছু দেশে এ বিষয়ের উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ আছে।

চাকুরি সুবিধা

এই বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হবার পর শিক্ষার্থীরা সাধারণত বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগদান করে। এছড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের শিক্ষক হিসেবে, বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকের চাকুরিকে তারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

শান্তি ও সংঘর্ষ

 (Peace & Conflict)

কী পড়ানো হয়

এই বিভাগে শান্তির তত্ত্ব, শান্তি ব্যবস্থাপনা, সংঘর্ষের সময় ব্যবস্থাপনা কি ধরনের হয়, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক অর্থনীতি, মানবাধিকার, পরিবেশগত সংঘর্ষ ও জননিরাপত্তার জন্য কি ধরনের উপায় নেয়া যেতে পারে এসব বিষয় মূলত পড়ানো হয়।

চাহিদা

শান্তি ও সংঘর্ষ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন একটি বিভাগ। যার ফলে এর চাহিদা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই এই বিভাগটি থাকার কারণে এবং একটি নতুন বিভাগ হবার কারণে দেশী ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোথায় পড়ানো হয়

সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা

দেশে কোথাও মাস্টার্স এর পর উচ্চ শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে এশিয়ার বাইরে ইউরোপে এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

চাকুরির সুবিধা

যেহেতু শান্তি ও সংঘর্ষ বাংলাদেশে একটি নতুন বিভাগ এবং এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ব্যাচ এ বিভাগ থেকে পাস করেছে তাই চাকুরির ব্যাপারে কিছু বলা না গেলেও এ বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকতা ছাড়াও বিসিএস ক্যাডার, গবেষক, বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তা হিসেবে পেশা শুরু করতে পারে।

ইতিহাস  (History)

পঠিতব্য বিষয়সমূহ

ইতিহাস বিভাগে ইতিহাস ছাড়াও ইতিহাসের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও পড়ানো হয়। যেমন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। তবে এসব বিষয়ে পূর্ণজ্ঞান না দিয়ে ইতহাস সম্পর্কিত জ্ঞানই প্রদান করা হয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত যুগ ও কালের ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জ্ঞান প্রদান করা হয় ইতিহাসে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলোর মধ্যে এর অবস্থান নীচের দিকে।

কোথায় পড়ানো হয়

বাংলাদেশের ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় পড়ানো হয়।

তাছাড়া অনেক কলেজেই এই বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়ানো হয়।

উচ্চ শিক্ষা

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে এই বিষয় পড়ানো হয় সেখান থেকে মাস্টার্স এর পর এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করা যায়।

চাকুরির সুবিধা

অন্যান্য বিভাগের মতো এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগ দিতে পারে। তাছাড়া স্কুল/ কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকতা, বেসরকারি সংস্থাতেও পেশা শুরু করতে পারে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

 (Islamic History & Culture)

কী পড়ানো হয়

এই বিভাগে প্রধানত মুসলিম শাসকদের ইতিহাস, মুসলিম স্থাপত্য শিল্প, মুসলিম দর্শন, মুসলিম আইন, অর্থনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

চাহিদা

যেসব শিক্ষার্থী মুসলিমদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস ও সমৃদ্ধ শিল্প-সাহিত্য, মুসলমানদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা,  ‍মুসলমানদের দর্শন সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী তাদের কাছে এই বিষয়ের চাহিদা বয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলোর মধ্যে এর অবস্থান নীচের দিকে।

কোথায় পড়ানো হয়

বাংলাদেশের ঢাকা, চট্রগ্রম, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় পড়ানো হয়। তাছাড়া অনেক কলেজেই এই বিষয়ে পড়ানো হয়।

উচ্চ শিক্ষা

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যেখানে এই বিষয় পড়ানো হয় সেখানে থেকে মাস্টার্স এর পর এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করা যায়।

চাকুরির সুবিধা

অন্যান্য বিভাগের মতো এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগ দিতে পারে। তাছাড়া স্কুল/ কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকতা, বেসরকারি সংস্থাতেও পেশা শুরু করতে পারে।

উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ

কী পড়ানো হয়

এখন মূলত জেন্ডার নিয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশেগুলোতে যেহেতু নারীদের অবকাঠামোগত  উন্নয়ন তেমন হয়নি এবং নারী-পুরুষের সম অধিকারের কথা বলা হলেও যেহেতু নারীরা পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছে সেহেতু নারীদের উন্নয়ন নিয়ে এখন পড়ানো হয়। এছাড়া এ বিভগের শিক্ষার্থীরা অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমকজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়েও অধ্যয়ন করে থাকে।

চাহিদা

বর্তমানে সারা বিশ্বেই নারী অধিকার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহও এ ব্যাপারে বেশ সরব। তাছাড়া জতিসংঘ ঘোষিত mdg  (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল)এর ৮টি পয়েন্টের মধ্যে ১টি পয়েন্ট নারীদের নিয়ে, এছাড়াও অন্তত ২টি পয়েন্ট নারীদের সাথে সম্পরর্কিত। সুতরাং এই বিভাগের চাহিদা কিছুদিনের মধ্যে বেশ বৃদ্ধি পবে বলে আশা করা যায়।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ একটি উদীয়মান বিষয়। এখনও ব্যাপক হারে প্রচলিত না হলেও কিছু দিনের মধ্যে তা হবে বলে আশা করা যায়।

কোথায় পড়ানো হয়

এই বিষয়টি শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে গত ৫ বছর ধরে পড়ানো হচ্ছে। এছাড়া উপমহাদেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করা যায় না।

উচ্চ শিক্ষ

বাংলাদেশের কোথাও মাস্টর্স এর পর উচ্চ শিক্ষা করা যায় না।

চাকুরি সুবিধা

দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোতে জেন্ডার সংক্রান্ত আলাদা একটি বিভগ থাকে ,যেখানে মূলত এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকুরি পায়। তাছাড়া এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‍বিসিএস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডার এবং গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে তাদের পেশা শুরু করতে পারে।

দর্শন  (philosophy)

পঠিতব্য বিষয়

দর্শন বিষযে স্মাতক পর্যায়ে সাধারণত দার্শনিক বিষয়সমূহ, জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিকের মতবাদ, নন্দন তত্ত্ব,গতিবিদ্যা সহ যুক্তিবিদ্যার বিবিধ বিষয়ে পাঠদান করা হয়।

চাহিদা

দর্শন একটি মৌলিক বিষয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই এ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইনস্টিটিউট বিদ্যামান । ‍

বিষয় ভিত্তিক অবস্থান

কলা অনুষদের বিষয়গুলোর মধ্যে নীচের দিকে।

কোথায় এই বিষয় পড়ানো হয়

ঢাবি, রাবি, জবি, ইবি,শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।

চকুরির সুবিধা

অন্যান্য বিভাগের মতো এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাও বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগ দিতে পারে। তাছাড়া স্কুল/কলেজ /বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, বেসরকারি সংস্থাতেও পেশা শুরু করতে পারে ।

ইসলামিক স্টাডিজ

কি পড়ানো হয়

আল কুরআন ও তার প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থাদি উলুমুল কুরআন,উলুমূল হাদীস, সিহাহ সিত্তাহ,মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস, ফিকহ গ্রন্থাদি, ইসলামী অর্থনীতি,রাষ্ট্রনীতি, ইসলাম ও অন্যান্য মতবাদের তুলনামূলক আলোচনা ।

কোথায় পড়ানো হয়

ঢাবি, রাবি, চবি, ইবিতে পড়ানো হয় । এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভূক্ত বেশ কয়েকটি কলেজে এ বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে ।

ইসলমী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াতে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল হদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজম, দাওয়াহ এন্ড ইসলামি স্টাডিজ নামে তিনটি বিষয় পড়ানো হয় ।এক্ষেত্রে মাদরাসা থেকে আলিম এবং ফাজিল উভয় পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে ।

চাহিদা

সারাবিশ্বে বর্তমানে হতাশাগ্রস্থ মানুষের কছে বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র যখন শান্তির নামে অশান্তিতে ভরে তুলেছে তখন বিশ্ববাসী আজ আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসালামী জীবন ব্যবস্থাকে মানার জন্য । তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসালমী অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আর এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইসলামিক স্টাডিজের ভূমিকা অগ্রগণ্য ।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থন

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যারা মেধাতালিকায় শেষের দিকে থাকে তারাই বিষয় হিসেবে ইসলামিক স্টাডিজ পায় ।

চাকুরির সুবিধা

ইসালামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা অন্যান্য গ্রাজুয়েটদের মতই বিসিএস এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেশায় আত্ম নিয়োগ করতে পারে । তাছাড়া ইসলমী ধ্যান ধারণায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় । গবেষক হিসেবেওে এদের মূল্যারয়ন রয়েছে ।

শিক্ষা ও গবেষণা

 (Education & Research)

কোথায়

ঢাবিতে অনার্স ও মাস্টার্স এবং রাবিতে শুধুমাত্র মাস্টার্স কোর্স করানো হয় ।

যোগ্যতা ও আসন

ঢাবি’র অধীনস্থ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউি-এ অনার্স আলাদাভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করা হয় । চাবিন অন্যান্য ইউনিটগুলোর বর্তি পরীক্ষার কিছুদিন আগে এই ইন্সটিটিউটের নোটিশ দেয়া হয় । অসন বিজ্ঞান বিভাগে ৯০ জন, বাণিজ্যে ২০ জন এবং মানবিক ৪০ জন । ৪র্থ বিষয় বাদে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি তেত মোট ৭.৫০, বাণিজ্যে ৬.৫০ এবং মানবিকে ৬.০০ থাকতে হবে ।

যা পড়ানো হয়

এ বিষয়ে শিক্ষার সম্যক ধরণা, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পদ্ধতি, শিক্ষাক্রম তৈরি, সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির জন্য গবেষণা, শিক্ষাবোর্ড, মন্ত্রণলয়, কারিকুলাম বোর্ড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী পভৃতি পড়ানো হয় ।

স্কলারশীপ এ বিষয়ে স্নাতক করে প্রতিবছর ৭/৮ জন শিক্ষার্থী মাস্টার্স করার জন্য বৃত্তি নিয়ে দেশের বইরে যাওয়ার সুযোগ পায়।

চাকুরি

বিসিএস, বিসিএস একাডেমী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, নায়েম, শিক্ষ অধিদপ্তর প্রভৃতি শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা ও থান শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে এমন বিভিন্ন NGO তে কাজ করার সুযোগ আছে ।

সম্ভাবনা

বাংলাদেশে শুধুমাত্র ঢাবিতে এ বিষয়ে অনার্সের সুযোগ থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় জনশক্তি কম । তাই সহজে চাকুরি পাওয়র সম্ভাবনা আছে ।আরবি/ফার্সি

 (Arabic/Persian)

কি পড়ানো হয়

এ বিভাগে দুটিতে সাধারণত সংশ্লেষ্ট ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস, বিভিন্ন উপন্যাস, বড় বড় কবি সাহিত্যিকদের বিভিন্ন গদ্য ও বিখ্যাত কবিতাগুলো পড়ানো হয়। এছাড়া ফাউন্ডেশন কোর্স হিসাবে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও বংলা এই দুটো বিষয় ভাষা হিসেবে পড়ে থাকে।

চাহিদা

যেসব শিক্ষার্থী আরবী ও ফার্সী ভাষা ও এর বিভন্ন ধারা এবং আরবী ও ফার্সি ভাষার যে বিশাল সাহিত্য ভান্ডার রয়েছে তা জানতে এবং এই সমৃদ্ধ ভাষাদ্বয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী তাদের কাছে এই বিষয় দুটির চাহিদ রয়েছে।

বিষয় ভিত্তিক অবস্থান

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিষযয় হিসেবে এর অবস্থান নীচের দিকে।

কোথায় পড়ানে হয়

বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর এমফিল ও পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সহ পশ্চিমা বিশ্বেও এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

চাকুরি সুবিধা

এই বিভাগ থেকে উত্তির্ণ হবার পর শিক্ষার্থীর সাধারণত বিসিএস-এর মাধ্যমে চাকুরিতে যোগদার করে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের শিক্ষক হিসেবে, বিভিন্ন প্রাইভেটড ফার্ম,ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকের চাকুরিকে তার পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বিদেশেও এ ডিগ্রিধারীদের চাহিদা আছে।

প্রেইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা

মানুষের জীবনে যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদন্ড।কোন জাতি নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত ও পরিচিত করতে চাইলে শিক্ষা ও গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এই শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র সাক্ষরতাকে বুঝায় না বরং সামর্থনুযায়ী সর্বোচ্চ শিক্ষাকে বুঝায়। বহুকাল আগে থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ সুযোগ পেলে অনেক বড় বড় কাজ করতে পারে, রাখতে পারে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশাল অবদান। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছুদিন আগপর্যন্ত এ সুযোগ তথা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত অল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী।জনসংখ্যার তুলনায় দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম থাকয় অনেক সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রী। গুটিকয়েক অর্থবিত্তশলী লোকের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে যেত যার ফলে দেশ থেকে চলে যেত অনেক বেশি মুদ্রা।

এই দুই সমস্যার সমাধান ও দেশের মধ্যে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে ১৯৯২ সাল থেকে এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা হয়। সরকারের কলোপযোগী সিদ্ধান্ত ও কিছু মহৎ ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকের উদ্যোগে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নামে অধিক পরিচিত। ১৯৯২থেকে ২০০৬ সাল,এই ১৪ বছরের মধ্যে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যাতে বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক ছাত্র-ছত্রী পড়াশুনা করছে।

কোন কোন বিষয় পড়ানো হয়

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাখাতে এনেছে এক বিশেষ বিপ্লব। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ পড়াশুনা শেষে ভালো কর্মক্ষেত্রের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে, সেহেতু এদেশের মানুষের জন্য দরকার যুগোপযোগি শিক্ষা ব্যবস্থা। এই চিন্তাকে মাথায় রেখে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলেছে সম্পূর্ণ বজারমুখি বিষয়সমূহ যেমন-বিবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স, আইন, ইংরেজি সাহিত্য, ফার্মেসি, ইলোট্রিক্যাল-ইলেক্ট্রনিক্স,টেলিকমিউনিকেশন, এমবিএ,পাবলিক হেলথ ইত্যাদি। এসব বিষয় থেকে পাশা করার পর সহজে একজন ছাত্র বা ছাত্রী চাকুরি বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

সিলেবাস ও কারিকুলম

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠিত বিষয়সমূহের সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো তাদের সিলেবাস কারিকুলাম। যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সর্বোচ্চ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সেহেতু এসকল বিশ্ববিদ্যালয়র সমস্ত বিষয়ের সিলেবাস প্রনয়ন করা হয়েছে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের। অধিকন্ত সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রয়োজনে প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাসকে পরিবর্তন করা হয় যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানে আপডেটেড হয়ে থাকতে পারে। তবে দেশের কথা ভুলে যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, দেশের কৃষ্টি-কালচার,ইতিহাস, সাহিত্য সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট। তাই একদিকে যেমনি প্রইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে, তেমনি দেশের ব্যাপারে পর্যপ্ত জ্ঞান অর্জন করেছে।

শিক্ষার মাধ্যম,পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা

যদিও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে তথাপি শিক্ষার মাধ্যমও পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে তারা সদা সচেষ্ট। এসকল বিশ্ববিধ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজিকে বেছে নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার লিখিত বই ও পরীক্ষার খাতয় নয়, বরং লেকচার প্রদান, আলোচনা, উপস্থাপনা, পরিবেশনাসহ সতল বিষয়ে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে আন্তর্জাতিক মানের। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্লাসরুম তাপানুকুল  (এসি)হয়ে থাকে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল লইব্রেরি যতে সংগৃহীত রয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যাপ্ত বইপত্র। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছত্রীদেরকে দেয়া হয়ে থাকে পর্যাপ্ত কম্পিউটার জ্ঞান তা সে যে বিষয়েই পড়াশুনা করুক না কেন। রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগসহ পর্যাপ্ত  কম্পিউটার ল্যাব, যা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা নিতে পারে বিনামূল্যে বিশেষ সুযোগ। সর্বক্ষেত্রে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ও ওভারহেড প্রজেক্টর ব্যবহার করে ক্লশ নেয়ার সুযোগ, তাই জটিল চিত্র প্রদর্শন ও আধুনিক মানের শিক্ষাপদ্ধতি খুব সহজেই উপস্থাপন করা হয় এসকল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে।

শিক্ষকদের মান ও শিক্ষাপদ্ধতি

বর্তমানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নামিদামী শিক্ষকসমূহ। দেশ-বিদেশের উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন অনেক শিক্ষক রয়েছে এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর্থিক সন্মানী ও পরিবেশের কারণে ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষকগণ নিযোজিত আছেন এসকল বিশ্ববিদ্যালয়। যেহেতু এসকল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাক্তি বা গ্রুপ দ্বারা প্রতিষ্টিত এবং সর্বদা সর্বোচ্চমান বজায় রাখতে সচেষ্ট তাই এখানকার শিক্ষকদেরকেও থাকতে হয় সদাসচেষ্ট। নিয়মিত পাঠদান, সময়নুবর্তিতা, ক্লাসের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের সময়দান, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক জ্ঞান দান করা প্রতিটি শিক্ষকদের নিয়মিত রুটিন কাজ হিসাবে ধরে নেয়া হয়, তাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান যেমনি ভালো হয়ে থাকে তেমনি ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো সুযোগ পেয়ে থাকে।এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পবীন ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক খন্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন সময়দান করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে করছে আরো  উন্নত।

 সেশনজট ও রাজনীতি

আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমস্যা হলো সেশনজট, যা সধারনত হয়ে থাকে রাজনৈতিক সংঘাত, স্বার্থসিদ্ধি এবং ক্লাস ও পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য। যার ফলে এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায় জীবন থেকে। এসব কিছু মাথায় রেখে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসসমূহকে করেছে রাজনীতি মুক্ত; সময়মত ক্লাস, পরীক্ষা ও রেজাল্ট প্রদানের জন্য এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কথাটি কল্পনা করতেও পারে না। একজন ছাত্র বা ছত্রী অতিসহজে নির্দ্বিধায় যথসময়ে তার পড়াশুনা শেষ করতে পারে।

চাকুরির বাজার

যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বাজার চাহিদার সাথে সংগতি রেখে বিভিন্ন বিষয় খুলে থাকে, তাই এসকল বিষয়ে পড়াশুনা শেষে একজন ছাত্র-ছাত্রি দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে সন্মানজনক চাকুরি পেয়ে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নামকরা ব্যবসায়িরা সংযুক্ত থাকায় নিজেদের কোম্পানিতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিশেষ সুযোগ প্রদান করে থাকে।

চাকুরিজীবী, ঝরে যাওয়া ছত্র-ছাত্রী ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের দেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা বিভিন্ন কারণে পড়াশুনা স্থগিত রাখে অথবা কোন চাকুরিতে যোগদান করে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে পাবলিক বেশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েট লেবেলে ভর্তির সুযোগ না থাকায় এবং সান্ধকালীন পড়াশুনার সুযোগ না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে আর পড়াশুনা করা হয় না। এদের জন্যও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছে অপার সুযোগ। যথাযথ কারণ দর্শিয়ে অতি সহজে শিক্ষা বিরতিরত ছত্র-ছত্রীরা আবার পড়াশুনা শুরু করতে পারে নিজেদের পছন্দসহ বিষসমূহে। চাকুরিজীবীদের জন্য রয়েছে সন্ধ্যাকালীন বিশেষ প্রোগ্রাম, ফলে অনেকেই আবার পড়াশুনার দিকে মনোনিবেশ করছে নিজেদেরকে এবং যার বিশেষ সুফল পেতে শরু করেছে দেশ ও জাতি। শিক্ষার জন্য কোন বয়স নেই- একথাটিকে সত্যে পরিণত করেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

ভর্তির যোগ্যতা

যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিষয় রয়েছে তাই প্রতি বিষয়ে ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন যোগ্যতা থাকতে হয়। তবে অন্ডার গ্রাজুয়েট বিষয়ে পড়াশুনার জন্য অবশ্যই এইচএসসি পাশ হতে হবে। বিষয়ভেদে দ্বিতীয় শ্রেণী অথবা প্রথম রেজাল্ট থাকতে হয়। বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশুনার জন্য এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করতে হবে। যেহেতু নামকরা অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে তাই এসএসসি ও এইচএসসি’ তে ভাল রেজাল্টের পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে তাই এসএসসি ও এইচএসসি’ তে ভাল রেজাল্টের পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হয়। মাস্টার্স লেভেলের প্রোগ্রাম সমূহের জন্য ডিগ্রি/অনার্স ডিগ্রিধারী হতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ রেজাল্ট ও পড়াশুনা থাকতে হয়।

পড়াশুনার খরচ ও আর্থিক সাহায্য

যেহেতু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সেহেতু এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচাদি ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন-ফি থেকে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।এজন্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুরনায় অনেক বেশি খরচ হয়ে থাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালযে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনার জন্য বিভিন্ন পরিমাণে টিউশন ফি দিতে হয়। বিশেষ কিছু সাবজেক্ট বাদে অধিকাংশ বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ২,০০,০০০ টাকা থেকে ৬,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত করচ হয়ে থাকে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচের কথা শুনে যেমনি পিলে চমকে যেতে পারে, তেমনি বিনা খরচের পড়াশুনার সুযোগে আশান্বিত হবার কথা। এসএসসি এবং এইচএসসি বাল রেজাল্ট  (জিপিএ-৫) পেলে অতিসহজে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বিনা টিউশন ফিতে পড়াশুনা করতে পারে। এছাড়াও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের এসএসসি এবং এইচএসসি এর রেজাল্টের জন্য বিশেষ আর্থিক সহযোগিতা  করে থাকে। যদি কোন ছাত্র-ছত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন ভালো রেজাল্ট করে সেক্ষেত্রেও সে ভালো পরিমাণে আর্থিক সহযোগিতা ক্ষেত্র বিশেষে ১০০% টিউশন ফি স্কলারশীপ হিসাবে পেয়ে থাকে।

সীমাবদ্ধতা

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের যেমনি অনেক ভাল গুণ ও সুনাম রয়েছে তেমনি গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের কারণে অনেকের কাছেই আজ তারা প্রশ্নবিদ্ধ।প্রথমত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন অনিয়মের।

তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সরকার ও সচেতন মহলের সতর্কতার ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে, যাদের কিছুটা অনিয়ম ছিল তারা শুধরে নিচ্ছে।

সর্বোপরি আমারা এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে এদেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মান, ছাত্র-ছাত্রীদের মান, ভবিষ্যতের অফুরন্ত সুযোগ, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্ষেত্রের কথা চিন্তা করে যে কোন ছাত্র-ছাত্রী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিতে পারে।

ডক্টরাল ও পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ

বর্তমান বিশ্বে গবেষণা ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত তিনটি টার্ম হচ্ছে এম ফিল, পিএইচ ডি এবং এর বাইরেও শিক্ষাকতার পেশায় এই ডিগ্রি সমূহের মূল্য অপরিসীম। এসব ডিগ্রি প্রাপ্ত Candidate-রা চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবিধা পেয়ে থাকেন। চাকুরি পাওয়ার পরেও আবার প্রমোশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এম ফিল, পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং কলেজের শিক্ষকরা অন্যদের তুলনায় দ্রুত প্রমোশন পেতে পারেন।গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহে চাকুরীরত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুবিধা বলবৎ রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

এসমস্ত ডিগ্রি সমূহের মূ্ল্য এ দেশের প্রশাসনেও দেওয়া হচ্ছে আজকাল। তাই দেখা যায় সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই অফিসাররা এম ফিল/পিএইচডি করার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়ছেন ইদানিং এবং ব্যাপক ভাবে।

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে সমস্ত বিষয় পড়ানো তা হোক না কেন বিজ্ঞান, কলা এবং মানবিক বা বমার্স বিষয়ক সর্ব ক্ষেত্রেই এই ডিগ্রি সমূহ প্রদান করা হয়, বহির্বিশ্বে তো বটেই। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজন প্রথমত সুপারভাইজার নির্বাচন যার তত্ত্বাবধানে থেকে ছাত্র/ছাত্রী তার গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক  (সুপার ভাইজার) নির্বাচন। তিনিই গবেষণার বিষয় ঠিক নির্দেশনা প্রদান করে থারেন। প্রার্থীকে তাই তত্ত্বাতধায়ক নির্বাচন করে নেতে হয় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যামে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হচ্ছে তত্ত্বাতধায়কের গবেষণার ক্ষেত্রে, গবেষণার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছা, আগ্রহ,যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা।

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এম ফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি সমূহ দেশের এবং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ থেকে অর্জন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশ সমূহ সুযোগ সুবিধা বেশি থাকার কারণে প্রার্থীরা প্রথমে সেই সুযোগই সন্ধান করে থাকেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নানাভাবে অর্জন করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে প্রথমে স্কলারশীপ, এর পরে এ্যাসিস্টেন্টশীপ  (রিসার্চ এবং টিচিং)। এর বাইরে অর্থ সংকুলনা পদ্ধতি হচ্ছে নিজে উপার্জন করে পড়াশুন করা অথবা পরিবার থেকে  প্রদত্ত অর্থ দিয়ে এই প্রয়েজন মেটানো। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যে বিশল অংকের অর্থ প্রয়োজন হয় সে দিকে চিন্তা করলে এই শেষোক্ত পদ্ধতিতে অর্থের যোগান দেওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

বর্তমান সময়ে স্কলাররশীপের অর্থ সবচেয়ে বেশি সরবারহ করছে জাপান। এ দেশের সরকারি স্কলারশীপ মনোবুশো  (Monobusho) বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই তুলনায় বাকী দেশসমূহে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য যে পরিমাণ বৃত্তি প্রদান করে থাকে তার সংখ্যা অনেক কম। মনোবুশো কৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পত্রিকার মাধ্যমে বা ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই বৃত্তির সংখ্যা এবং কৃত্তির অর্থের পরিমাণ খুবই আকর্ষণীয়। মনোবুশো বৃত্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণার ক্ষেত্র এবং হবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা দানের জন্য সুপারভাইজার প্রাপ্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কৃত্তি শুধুমত্র পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রদান করা হয়ে থাকে। এবং বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই বৃত্তির জন্য দরখাস্ত করতে হয়।

পাশ্চাত্য দেশসমূহের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এ্যাসিসটেন্টশীপ প্রদান করে থাকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ সম্পর্কিত তথ্য অর্জন করা যেতে পারে। দুই ধরনের এ্যাসিসটেন্টশীপের মাধ্যে রিসার্চ এ্যাসিস্টেন্টশীপের মূল্য এবং সুযোগ সুবিধা বেশি। এটা হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের একটি পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন গবেষণা কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন এবং তার বিনিময়ে কিছু অর্থ উপার্জন করে থাকেন। গবেষণা ক্ষেত্রে এই সগযোগিতা প্রদানের জন্য এই কার্যকে রিসার্চ এ্যাসিস্টেন্টশীপ বলা হয়। দ্বিতীয় সুযোগটি হচ্ছে টিচিং এ্যাসিস্টেন্টশীপ যে ক্ষেত্রে গবেষক তার গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি কোন প্রফেসরকে তাঁর  (প্রফেসর) কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করবেন এবং বিনিময়ে গবেষক পারিশ্রমিক হিসাবে কিছু অর্থ উপিার্জন করবে। এভাবে উপর্জিত অর্থই তার উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড সরবরাহ করে থাকে। রিসার্চ এবং টিচিং এ্যাসিস্টেন্টশীপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য এ্যাসিস্টেন্টশীপ সমূহ অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে এসএসসি, এইচএসসি, বিএ/ বিএসসি/বিকম  (সন্মান) এবং এমএ/ এমএসাসি/ এমকম পরীক্ষার রেজাল্ট। এর পরে আসে ভাষার উপরে দখল প্রসঙ্গ। ভাষার উপরে দখলের মাত্রা প্রমাণের জন্য প্রার্থীকে TOEFL/IELTS  পরীক্ষা দিতে  হয়। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আবার প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিরূপনের জন্য ভিন্নতর কিছু পরীক্ষার স্কোর দেখতে চায়। এ পরীক্ষাগুলো হচ্ছে Graduate Record Examination (GRE), TOEFL, NEWSAT, GMAT ইত্যাদি। উপরোল্লিখিত স্কোরসমূহের সাথে যদি প্রার্থিীর গবেষণা ক্ষেত্র এবং সুপারভাইজার মিলে যায় তবে বিদেশে পিএইচডি করার সুযোগ হয়ে যেতে পারে।

যারা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন এ ধরনের ডিগ্রি অর্জন করার জন্য।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভাল রেজাল্টের পাশাপাশি IELTS, TOEFL, GRE,GMAT, NEWSAT  (পূর্বে যা ছিল SAT-I এবং SAT-II)- এ ভাল স্কোর করা খুব দরকার। এগুলো সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে-

আইইএলটিএস  (IELTS)

আইইএলটিএস  (Intetnational English Testing System) হল ইংরেজি ভাষাতে দক্ষতা নির্ণয় পরীক্ষা পদ্ধতি। উচ্চশিক্ষার্থে অস্ট্রলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে আইইএলটেএস-এ ভাল করতে হবে। এ পরীক্ষার আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি এডুকেশন, অস্ট্রেলিয়া। শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার্থে দেশের কাইরে বিভিন্ন ভার্সিটিতে লেখাপড়া করতে ইচ্ছুকদের আইইএলটিএসের একাডেমি সিডিউলে অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা হয় পেপার বেইসড। পরীক্ষায় থাকে লিসনিং, রিডিং, রাইটিং এবং স্পিকিং।

লিসেনিং: এই পরীক্ষায় চারটি অংশ থাকে। প্রথম দুটি অংশে যথাক্রমে জনগণের আগ্রহের বিষয় সংশ্লিষ্ট সংলাপ এবং বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ অংশে থাকে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ বিষয়ক আলোচনা। প্রার্থীকে একবার প্রশ্ন সম্পর্কিত একটি রেকর্ড শোনানো হয়, প্রশ্ন পড়ে উত্তরপত্রে উত্তর লেখার জন্য ১০ মিনিট সময় দেয়া হয়। লিসনিং পরীক্ষায় বৈচিত্র্যময় প্রশ্ন করা হয় । এ অংশে ৩৮ থেকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় এবং সময় দেয়া হয় ৩০ মিনিট। এ প্রশ্নগুলো হচ্ছে সাধারণত এমসিকিউ, ছোট প্রশ্নে বক্তার বক্তব্য শুনে প্রশ্নের উত্তর লেখা, শূন্যস্থান পূরণ, মিলকরণ-একটি শদ্বের সাথে অন্য শব্দ মিলিয়ে পূর্ণঙ্গ একটি অর্থ দাঁড় করানো, চার্ট পূর্ণ করা প্রভৃতি।

রিডিং: উচ্চশিক্ষার্থে যারা বিদেশে যেতে চান তাদের জন্য একাডেমিক রিডিং এ পরীক্ষা দিতে হয়। এ পরীক্ষায় সংবাদপত্র জার্নাল, বই ও ম্যাগাজিন থেকে যে কোন বিষয় আসতে পারে; তার উপর লিখতে হয়। প্রশ্নের ধরণ সধারণত হয়ে থাকে- এমসিকিউ, অল্প কথায় উত্তর, সারাংশ, কোন নির্দিষ্ট প্যাসেজ, প্যারার টাইটেল প্রদান, মিলকরণ ইত্যাদি। এ অংশে ৩৮ থেকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় এবং সময় নির্ধারিত থারে এক ঘন্টা।

রাইটিং: এ অংশে প্রার্থীর ইংরেজিতে কোন বিষয় বুঝতে পারা ও তার প্রকাশভঙ্গির দক্ষতা নির্ণয় করা হয়। দুধরণের রাইটিং এর মধ্যে বিদেশ গমনেচ্ছুকদেরকে একাডেমিক রাইটিং এ অংশ নিতে হয়। এ অংশে এক ঘন্টার ভিতর দুটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। লেখার সময় যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে তা হল-অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে চলা, যিুক্তি কিংবা দৃষ্টান্তের সঠিক প্রয়োগ করে সংক্ষেপে গুছিয়ে লেখা, জটিল শব্দ পরিহার করে স্পষ্ট করে লেখা। এক ঘন্টার পরীক্ষায় দুটি রচনায় অংশ গ্রহণ করতে হয় পরীক্ষার্থীকে। এ দুটি রচনার প্রথমটিতে একটি গ্রাফ বা চার্টকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে ন্যূনতম ১৫০ শব্দের ভিতরে রচনাটি লিখতে হবে। দ্বিতীয়, যে রচনাটি লিখতে হবে সেখানে মূলত একটি বক্তৃতা দেয়া থাকে। নিজের মত করে  বিষয়টি গুছিয়ে লিখতে হয়। শব্দসংখ্যা ২৫০-এর মধ্যে সীমিত রাখতে হয়।

স্পিকিং: ৫টি ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর ইংরেজি বলার দক্ষতা পরীক্ষা করা হয় এ পর্যয়ে। এখানে পরীক্ষক প্রার্থীকে তার নাম, বয়স,ঠিকানা, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বেষয়ে পড়তে ইচ্ছুক ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করেনে। একটি কার্ডে সমস্যা বা ঘটনার ছবি থাকবে। ছবি দেখে পরীক্ষার্থী পরীক্ষককে প্রশ্ন করবেন। প্রশ্ন হতে হবে যৌত্তিক-”অপ্রাসঙ্গিক নয়। মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার্থী যত বেশি যৌত্তিক ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে পরবেন তার স্কোর তত বেশি হবে। ব্যাখ্যাসহ উপরোক্ত বিষয়ে প্রার্থীকে পরীক্ষকের সাথে আলোচনা করতে হয়। পরীক্ষার জন্য মোট সময় দেয়া হয় ১০-১৫ মিনিট। ১ম অংশের জন্য ৪-৫ মিনিট, ২য় অংশের জন্য ২-৩ মিনিট এবং শেষ অংশের জন্য ৪-৫ মিনিট।

আইইএলটিএস সহায়ক ও সিডি

ক) ক্যামব্রিজ আইইএলটিএস (১,২,৩)

    -ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি সিন্ডিকেট।

খ) প্রিপারেশন ফর আইইএলটিএস

    -ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, সিডনি।

গ) অইইএলটিএস টু প্র্যাকটিস নাউ।

    -গিবসন, ‍রুশেক এন্ড অ্যানি সুয়ান।

ঘ) প্রিপারেশন এন্ড প্রাকটিস

   -উইনডি, জেরেমি এন্ড রিচার্ড স্টুয়ার্ড।

ঙ)পাসপোর্ট টু আইইএলটিএস

   সিডি: ১. ক্যামব্রিজ-৩ এবং ২. সাকসেস টু আইইএলটিএস

ওয়েবসাইট: WWW.ieltd.irg

 টোফেল  (TOEFL)

উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা, যুক্তরাজ্য, যাক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে যেতে চাইলে টোফেল  (Test of English As a foreign Languaue) স্কোর প্রয়োজন। এতে থাকে লিসনিং স্ট্রাকচার, রিডিং কমপ্রিহেনশন এন্ড ভোকাবুলারি এবং রাইটিং কমপ্রিহেনশন।

লিসনিং: মোট বরাদ্দকৃত ৪৫-৭০ মি. সময়ে ৫০টি প্রশ্ন নিয়ে তৈরি লিসনিং পরীক্ষা যার মাধ্যমে প্রার্থীর শোনার দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এতে দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়।  (ক) শর্ট কনভারসেশন; এতে শোনার ক্ষেত্রে শব্দ নির্বাচন ক্ষমতা ও তার প্রকাশভঙ্গি পরীক্ষা করা হয়।  (খ) লংগার কনবারসেশন;এখন শোনার ক্ষেত্রে মানুষ, প্রকৃতি ও বিজ্ঞান নিয়ে বিষয়ভিত্তিক বর্ণনার মাধ্যমে প্রার্থীর দক্ষতা যাচাই করা হয়। এখানকার প্রশ্ন মূলত ‘কে’ এবং ‘কি’ ধরনের হয়ে থাকে।

স্ট্রাকচার: প্রার্থীর ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের দক্ষতা পরীক্ষা। এ অংশে প্রশ্নের ধরণ তুলনামুলক সহজ। এখানে ইংরেজি ব্যাকরণগত শুদ্ধতা,অশুদ্ধ চিহ্নিতকরণ ও শুন্যস্থান পূরণের ইপর প্রশ্ন করা হয়। এই বিষয়ে মোট প্রশ্ন থাকে ৪০টি। সময় নির্ধারিত থাকে ১৫-২০ মিনিট।

রিডিং কমপ্রিহেনশন এন্ড ভোকাবুলারি: এ অংশে প্রর্থীর পড়া ও ভোকাবুলরি বা শব্দভান্ডারের দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। ৩০০ শব্দের দুটি কিংবা তিনটি প্যাসেজ থেকে প্রদত্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে। ৬০টি প্রশ্ন করা হয় এ পর্যায়ে, যার জন্য মোট সময় দেয়া হয় ৭০-৯০ মিনিট।

রাইটিং কমপ্রিহেনশন: রাইটিং কমপ্রিহেনশন পরীক্ষায় প্রার্থীর লেখার ক্ষমতা পরীক্ষা হরা হয়। সাধারণত যে কোন বিষয়ে প্রার্থীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে রচনা লিখতে হয়। রচনা লিখতে প্রার্থীকে ইংরেজি ব্যাকরণ, শব্দচয়ন ও উপস্থাপনায় কৌশলী হতে হবে। রচনা থাকবে ১টি। সময় ৩০ মিনিট।

বাংলাদেশে ঢাকাস্থ বনানীর প্রোমেট্রিক সেন্টারে TOEFL পরীক্ষা অনুষ্ঠি হয়। বিস্তারিত জানতে আমেরিকান সেন্টারে যোগাযোগ করুন-

The American Center

House- 110, Road- 27, Banani, Dhaka.

Tel: 88134404

এছাড়া সরাসরি আমেরিকার TOEFL সেন্টারেও আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।

TOEFL Services

Educational Testing Service

p.p. Box- 6115, Princeton, NJ08541- 6151, U|SA. Fax: 0016097717500

E-mail: [email protected], Web: WWW.toefl.org

টোফেল সহায়ক গ্রন্থ ও সিডি

ব্যারনস টোফেল

ক্যামব্রিজ প্রিপারেশন ফর দ্যা টোফেল টেস্ট- জোলেনা এন্ড রবার্ট সিয়ার।

টোফেল ক্লিভাস টেস্ট প্রিপারেশন- সাইকেল, এ পায়েল

টোফেল প্রিপারেশন গাইড- সি পায়েল।

জেনিংস টোফেল

সিপি: ১. ক্যাপলান টোফেল টেস্ট, ২, পিটারসন টোফেল টেস্ট

ওয়েরসাইন: www.ets.org

জিম্যাট (GMAT)

বিদেশে ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষা হলো জিম্যাট  (Grauate Management Admission Test) । এ পরীক্ষায় তিনটি অংশ থাকে, তা হলো কুয়ানটিটেটিভ সেকশন, ভারবল সেকশন এবং অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসম্যান্ট।

কুয়ানটিটেটিভ সেকশন: এই অংশে হিসাবনিকাশ সংক্রান্ত অংক থাকে। মূলত দূ’ধরনের নিরূপণ সংক্রান্ত। মোট প্রশ্ন থাকে ৪১টি। সময় ৭৫ মিনিট। মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতি।

ভারবাল সেকশন: এ অংশে প্রার্থীর ইংরেজি লেখার দক্ষতার পাশাপাশি যে কোন বিষয়ে প্রার্থীর কারণ ও যুক্তির বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখা হয়। এতে তিনটি অংশ থাকে। অংশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে-Reading comprehension, critical reasoning & Sentence Correction । সাধারণত নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন করা হয়। Reading comprehension পরীক্ষায় ৩৫০ শদ্বের ভিতর সামাজিক বিজ্ঞান, ভৌত ও জৈব বিজ্ঞান এবং ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয় পড়ে উওর দিতে হবে। Critical Reasoning যুক্তি তৈরি ও অ্যকশন প্ল্যানের আলোকে উওর দিতে হবে। Sentence Correction এর ক্ষেত্রে বাক্যের গঠন, শুদ্ধ, অশুদ্ধ ও যথাস্থানে সঠিক শব্দচয়ন প্রধান বিবেচ্য। মোট ৭৫ মিনিট এর পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে ৪১টি।

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট: ইংরেজি ভাষাজ্ঞান ও লেখার দক্ষতা নির্ণয় করা হয এ অংশে। এ পরীক্ষার একটি বিষয়ভিত্তিক, অপরটি যুক্তিতর্ক নির্ভর বিশ্লেষণ। সময় ১ ঘন্টা। মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতি।

জিম্যাট সহায়ক গ্রন্থ ও সিডি

১ । দ্যা অফিসিয়াল সাইড ফর জিম্যাট রিভিউ- এডুকেশন টেস্টিং সার্ভিস।

২ । ক্যঅপলান জিম্যাট টেস্ট

৩ । ক্র্যাকিং দ্যা জিম্যাট ২০০৪- জিওফ মার্টস এন্ড অ্যাডম রবিনসন।

সিডি: ১. ডগলাস ফ্রেঞ্জ জিম্যাট টেস্ট

ওয়েবসাইট: www.mba.com

জিআরই  (GRE)

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েটদের যোগ্যতা নিরূপণকারী পরীক্ষাই হল জিআরই   (Graduate Record Exanination) যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য উন্নত দেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চাইলে জিআরই প্রয়োজন।

টিচিং বা রিসার্চ এসিসটেন্টশীপ পেতে বা ফাইন্যানসিয়াল এইড কিংবা শুধুসাত্র ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাডমিশনের জন্যও জিআরই প্রয়োজন। জিআরই টিস্ট দূ’ধরনের। একটি জেনারেল টেস্ট যেটা কম্পিউটার ও পেপার উভয় বেইসড অন্যটি সাবজেক্ট টেস্ট যা শুধুমাত্র পেপার বেইসড। জেনারেল টেস্টে থাকে কুয়ানটিটেটিভ এন্ড ক্রিটিক্যাল থিংকিং, অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং এবং ভারবাল রিজনিং।

কুয়ানটিটেটিভ এন্ড ক্রিটিক্যাল থিংকিং: পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির সমস্যা ও সমাধান এ অংশের প্রধান বিষয়। সাধারণত নৈর্ব্যত্তিক ও ছোট প্রশ্ন করা হয়। ২৮টি প্রশ্নের জন্য সময় ৪৪ মিনিট।

অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং: ইংরেজিতে লেখার ক্ষেত্রে জটিল যে কোন বিষয়ের সুস্পষ্ট ও কার্যকরণ ব্যাখ্যা করার দক্ষতা নির্ধারণ করা হয় এ পর্যায়ে। এ অংশে সংক্ষিপ্ত ভাষার উত্তর লিখতে হয়। ২টি রাইটিং টপিকসের জন্য নির্ধারিত সময় ৭৫ মিনিট।

ভারবাল রিজনিং: বিশ্লেষণ ও গননাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় িএ অংশের মূল প্রতিপাদ্য। প্রশ্নের ধরণ হয়ে থাকে নৈর্ব্যত্তিক। ৩০টি প্রশ্নের জন্য সময় ৩০ মিনিট।

জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট হয় ৮টি বিষয়ের উপর। বিষয়গুলো হচ্ছে- প্রাণরসায়ন, জীববিদ্যা, রসায়ন, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইংরেজি সাহিত্য, গণিত, পদার্থ ও মনোবিজ্ঞান।

প্রাণরসায়ন: যে বিষয়গুলো থাকবে, বায়োকেমিস্ট্রি-৩৬, সেল বায়োলজি-২৮, মলিকুলার বায়োলজি-৩৬। সাধারণত ১৮০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

জীববিদ্যা: এই অংশের বিষয়গুলো যথাক্রমে- সেলুলার এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, ওরগানিজমাল বায়োলজি এবং ইকোলজি এন্ড ইভ্যালুশন। ২০০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

রসায়ন: এই অংশে যে বিষয়গুলো থাকবে, অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি-১৫, ইনঅরগ্যানিক কেমিস্ট্রি-২৫, অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি-৩০, ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি-৩০। ১৩০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

কম্পিউটার বিজ্ঞান: কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই অংশের বিষয়গুলো যথাক্রমে-সফটওয়্যার সিস্টেম এন্ড মেথোডোলজি-৪০, কম্পিউটার অর্গানাইজেশন এ্যান্ড আর্কিটেকচার-১৫, থিওরি এ্যান্ড ম্যাথমেটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড-৪০, অন্যান্য বিষয়-৫০। ৭০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য সময় দেয়া হবে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

ইংরেজি সাহিত্য: যে বিষয়গুলো থাকবে তা হলো, লিটারারি অ্যানালাইসিস-৪০ থেকে ৫৫, আইডেনটিফিকেশন-১৫ থেকে ২০, কালচারাল এন্ড হিস্ট্রিক্যাল কনটেন্ট-৩৫ থেকে ৪০, হিস্ট্রি-১০ থেকে ১৫ । ২৩০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

গণিত: এই অংশে থাকবে, ক্যালকুলাস-৫০, বীজগণিত-২৫ এবং অতিরিক্ত বিষয়-২৫ । মোট ৬৬টি প্রশ্নের জন্য সময় থাকবে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

পদার্থবিদ্য: সাইকোলজি অংশে থাকবে, এক্সপেরিমেন্টাল অব ন্যাচারাল সয়েন্স-৪০, সোসাল সায়েন্স-৪৩, জেনারেল সায়েন্স-১৭ । ২০৫টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।

জিআরই সহায়ক গ্রন্থ ও সিডি

১ । ব্যারন’স জিআরই

২ । জিআরই প্র্যাকটিসিং টু টেক দ্যা জেনারেল টেস্ট-বিসবুক।

৩ । ক্র্যাকিং দ্যা জিআরই ২০০৪

    -শ্যারণ ওয়েডার

সিডি:  (১) ব্যারন’স জিআরই টেস্ট  (২) সেলফ ক্যালরি জিআরই টেস্ট

ওয়েবসাইট: www.gre.org

নিউস্যাট (NEWSAT)

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইংরেজি ও গণিতিক সমস্যা সমাধনের নির্ধারক পরীক্ষাই হলো নিউস্যাট। পূর্বে স্যাট পরীক্ষা স্যাট-ওয়ান ও স্যাট-টুতে বিভক্ত থাকলেও ঐ পরীক্ষার আয়োজকদের কলেজ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০৫ সালের মার্চ থেকে এ পরীক্ষা নতুন আঙ্গিকে নেয়া হচ্ছে। নিউস্যাট পরীক্ষা কম্পিউটার বেইসড। এ পরীক্ষায় দুটি অংশ থাকে ভারবাল, ম্যাথ।

ভারবাল: এ অংশের বিষয়গুলো যথাক্রমে, অ্যানালোজিস-১৯টি, সেন্টেন্স কমপ্লিশন-১৯টি, ক্রিটিক্যাল রিডিং-৪০টি। ৭৯টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের জন্য নির্ধারিত সময় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট।

ম্যাথ: ম্যাথের প্রশ্ন সাধারণত পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির সাধারণ ধারণা থেকে করা হয়। বুদ্ধি ও যুক্তি নির্ভর প্রশ্ন এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। ৬৫টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নের মধ্যে পাটীগণিত ও জ্যামিতি-৩৫, বীজগণিত-১৫, বুদ্ধিমত্তযুক্ত প্রশ্ন-১৫। সময় ৭০ মিনিট।

নিউস্যাট সহায়ক গ্রন্থ ও সিডি

১। টেন রিয়েল নিউস্যাট-কলেজ বোর্ড

২। ক্র্যাকিং নিউস্যাট ২০০৬

   -অ্যাডাম রবিনসন এন্ড জন কাটাসম্যান।

৩। আপ ইয়োর স্কোর-পেসন অ্যাবলস্ক।

সিডি: গুবাস নিউস্যাট প্রিপারেশন টেস্ট

ওয়েবসাইট:www.collegeboard.com

প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু কথা

  • বেশি বেশি ভোকাবুলারি আয়ত্ত্ব করুন। গ্রামারের স্ট্রাকচারাল দিক সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখুন। প্রতিদিন দশটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শিখুন এবং সেগুলো ব্যবহার করে বাক্য গঠন করুন।
  • রাইটিং এ দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিদিন যে কোন বিষয়ের উপর অন্তত এক পৃষ্ঠা ইংরেজি লেখার চর্চা করুন এবং আপনার জানা শব্দগুলোর মধ্যে কমন শব্দগুলো ব্যবহার করুন।
  • রিডিং এর জন্য ইংরেজি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকা নিয়মিত পড়ুন ও বোঝার চেষ্টা করুন।
  • স্পিকিং এর জন্য বিবিসি, সিএনএন টিভি চ্যানেল এবং ভাল শিক্ষামূলক ইংরেজি মুভি দেখুন। তাদের উচ্চারণের দিকে লক্ষ্য রাখুন। আপনার বন্ধুর সাথে এবং হল বা হোস্টেলে অবস্থানের ক্ষেত্রে রুমমেটের সাথে সর্বদা ইংরেজেতে কথা বলার অভ্যাস করুন। সাধারণভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহার করুন।
  • জিআরই ও স্যাট-ওয়ান এর ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরণ দেখে অংকগুলো চর্চা করুন। অংকের ক্ষেত্রে অনুশীলনের বিকল্প নেই।

 

পঞ্চম অধ্যায়

পেশা পরিচিতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

পেশা নির্বাচন বিষয়টি বাংলাদেশে একটি অস্থির এবং জটিল প্রক্রিয়া। সুষম রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উন্নয়নের অভাবে একাডেমিক শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে পেশা নির্বাচন এদেশে অত বেশি গুরুত্ব পায়নি। যেটুকু পেয়েছে পরিমাণগত দিক থেকে তা নিতান্তই সামান্য। এই প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং অন্য নানাবিধ সমকস্যার কারণে মানুষ যা চাচ্ছে এবং যা পাচ্ছে তার মধ্যকার ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশ্যা-প্রপ্তির এ দ্বন্দ্ব মানুষের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে হতাশা। তাছাড়া বিভিন্ন পেশা এবং পেশাজীবীদের মধ্যে নানা বৈষম্য এবং ছুৎমার্গ প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় পেশাজীবীদের মধ্যে সন্তুষ্টি এবং মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে না। এতে অস্থিরতা বাড়ছে পেশাজীবীদের মধ্যে, যার প্রভাব পড়ছে বৃহত্তর সমাজে। আমরা এ অধ্যায়ে বিভিন্ন পেশার বর্ণনা যেমন দিয়েছি তেমনি বাতলে দেবার চেষ্টা করেছি সংশ্লিষ্ট পেশা অর্জনের উপায় সমূহ। প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নির্দেশনার অভাবে দেশের যুবসমাজ অনেক সময় পেশা নির্ধারণে নানা ভাবে বিভ্রান্ত হয়। এ অধ্যায়ের লেখাগুলো সেই বিভ্রান্তি এবং সংশয় দূর করে পেশা নির্বাচনে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আরো বিশ্বাস করি অর্জিত পেশার প্রতি সন্তুষ্টি এবং অনুগত থাকার মাধ্যমে জীবনের সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করা সম্ভব।

শিক্ষকতা

ভূমিকা

আভিধানিক সংজ্ঞায় শিক্ষকতা হলো শিক্ষকের কাজ বা পেশা। জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানই এ পেশার মূল বিষয়। মানুষকে পাশবিক থেকে মানবিক পর্যায়ে উন্নীত এবং অসভ্য থেকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করার পিছনে যে পেশার অবদান শতভাগ তা হচ্ছে শিক্ষকতা। এ পেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার উপর অর্পিত সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সুচারু রূপে পালন করতে পারেন।

শিক্ষকতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ-

সুদূর অতীত থেকে আজ অবধি উপমহাদেশের এ ভূখণ্ডে অর্থাৎ বাংলাদেশে শিক্ষকতাকে একটি মহৎ সেবাধর্মী পেশা হিসেবে গণ্য হয়। তবে পেশার চেয়ে সেবাটাই বেশি গুরুত্ব পাবার কানণে শিক্ষকতায় পেশাদারিত্বের অভাব এখনও কোন কোন বাঙালি মানসে পরিলক্ষিত। কিন্তু দিন বদলের পালায় শিক্ষিত মানুষের পাল্লা ভারী হবার সুবাদে শিক্ষকতা এখন এখানে একটি Smart পেশা এবং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় পেশাজীবী দল এখন শিক্ষক সমাজ।

বাংলাদেশ: শিক্ষকতার ক্ষেত্র-

বাংলাদেশে বহুস্তর বিশিষ্ট শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নুাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রতিটি মানুষের জন্য স্বস্ব ডিগ্রি ও বিষয় অনুযায়ী শিক্ষকতার সুযোগ বিদ্যমান। ক্যারিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে এখনও সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-এ শিক্ষকতার প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে কৃতিত্বপূর্ণ একাডেমিক ফলাফল। এ কারণে এসব পদগুলোতে যাঁদেরকে নির্বাচিত করা হয় তাঁরা শিক্ষা জীবনের প্রতিটি সার্টিফিকেট অর্জনী পরীক্ষায় বিশেষ করে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী (বা সমমানের গ্রেড) পেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে শিক্ষকতার অন্যতম বড় ক্ষেত্র কলেজ এবং সমমানের মাদরাসা। পাঠদানের স্তর অনুযায়ী কলেজগুলো উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ- এ দুভাগে বিভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচএসসি পর্যন্ত পাঠদানে রত কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠ পরিচালনাকারী কলেজই ডিগ্রি কলেজ। কলেজের শ্রেণী যাই হোক না কেন শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষাগত শর্ত সব জায়গায় একই রকম। অর্থাৎ কলেজ শিক্ষকতায় যিনি আসতে চান তার অবশ্যই স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (এ বইয়ের বিসিএস অংশে দেখুন) বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাল ফলাফলই কলেজ শিক্ষক পদের অন্যতম পূর্বশর্ত।

ক্যারিয়ার হিসেবে স্কুল শিক্ষকতা নানা মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা-এ দুটোই স্কুল শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত। সেবা, ত্যাগ ও আদর্শের বীজ স্কুল পর্বেই একজন মানুষের মধ্যে উপ্ত হয়ে থাকে। কেউ যদি জাতির ভাগ্য নির্মাণের কারিগর হতে চান, স্বোপার্জিত আদর্শ, ন্যায় ও কল্যাণের মাধ্যমে মানব সমাজকে উপকৃত করতে চান তাহলে তাকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকের পদ গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (সরকারি ও বেসরকারি) স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে স্নাতক এবং কখনো কখনো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক পদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মহিলা (এসএসসি) এবং পুরুষ (ডিগ্রি পাশ)।

শাহরিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে যারা গ্রামীণ স্নিগ্ধ জীবনে স্বীয় আদর্শ ও বিশ্বাসের সৌরভে সুরভিত করতে চান-এ মাটির সন্তানদের, তাদের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা অনন্য।

এ পেশায় কাদের আসা উচিত

পঠন-পাঠন এবং অনুশীলনের জীবনে যারা বিশ্বাসী, বিত্তের চেয়ে চিত্তের বৈভবে যাদের পক্ষপাতিত্ব, সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অন্যের মনোজগতের গুপ্তধন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত মোটকথা স্রষ্টার রহস্যময় অপার সৃষ্টি যাদেরকে কৌতুহলী করে তাদের জন্য শিক্ষকতা আরামের, আনন্দের। এছাড়া শিক্ষার্থীর প্রতি মমত্ববোধ, প্রখর ধৈর্য, বহির্মুখী স্বভাব এবং অনুসন্ধিৎসু মন থাকলে এ পেশায় ভাল করা সম্ভব।

প্রস্তুতি কখন কিভাবে নেওয়া উচিত-

একজন ব্যক্তির জন্য শিক্ষকতা তখনই ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া উচিত যখন এ পেশার প্রতি তার অগাধ প্রেম এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। আমরা জানি, বাংলাদেশের পেশা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এখন অনেক বেশি জটিল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও এই প্রতিযোগিতার বাইরে নয়। যার ফলে সেই তীব্র প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদী একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সমসাময়িক সমাজের নানা বিষয়ে চোখ কান খোলা রাখা দরকার। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, সাধারণ গণিত বিষয়গুলোতে এসএসসি মানের দখল থাকা অপরিহার্য।

বাংলা প্রবাদ “সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র” মনে রাখলে এবং চর্চা করলে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। মনে রাখা দরকার সুন্দর মুখ মানে সুন্দর কথা বলার ক্ষমতা।

উপসংহার: মানুষের আর্থ-সামজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ‘শিক্ষকতা’কেও প্রভাবিত করেছে নানা মাত্রায়। যার অনিবার্যতায় শিক্ষকতা এখন আর নিছক ঐতিহ্যিক সেবা নয়, চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারও বটে। নানা অবক্ষয়ের এদেশে এখন ক্রান্তিকাল। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কান্ডারির বড় দরকার। একমাত্র আদর্শ দেশ প্রেমিক শিক্ষকরাই পারে সেই কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)

Bangladesh Civil Service (BCS)

ভূমিকা

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিসিএস এখনও সমাজের সবচেয়ে সম্মানজনক চাকরি। দু একটি ক্ষেত্র ব্যতিত চাকরি নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে বিসিএস এর বিকল্প বাংলাদেশে নেই। বেসরকারি চাকরির বিশাল বাজার বাঙালি যুবমানসে এখনও আস্থার সৃষ্টি করতে পারেনি। এ কারণে চাকরিপ্রার্থীরা এখনও বিসিএসকেই চাকরি তালিকার শীর্ষে রাখেন। দেশের রাজনৈতিক সরকার জনগণের স্বার্থে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারি কর্মচারীদের উপর বর্তায় এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন বিসিএস কর্মকর্তারা। সুতরাং এ চাকরির মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে যেভাবে সরাসরি সেবা দেওয়া যায় অন্য কোন চাকরির মাধ্যমে সেটা অসম্ভব।

নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বা Bangladesh Public Service Commission (BPSC)

বিসিএস: জেনারেল ও প্রফেশনাল ক্যাডার-

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন’ বা BPSC (Bangladesh Public Service Commission) । সংবিধানের ১৩৩ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর কাজ এবং কাজের পরিধি বর্ণিত আছে। এই কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা। সরকারের ২৯টি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে থাকে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কাজের ধরন অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক. জেনারেল ক্যাডার দুই. প্রফেসনাল ক্যাডার।

জেনারেল ক্যাডার

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বরং স্নাতক বা স্নাতকোত্তর (নমুনা বিজ্ঞপ্তির সাধারণ ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা অংশ দেখুন) সনদকে প্রার্থীর যোগ্যতার মানদণ্ড ধরা হয়। বিভিন্ন বিষয়ের (বিজ্ঞপ্তির বিঃ দ্রঃ এর ৯ নম্বর দেখুন) উপর সাধারণ জ্ঞান যাচাই পূর্বক একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয় সাধারণ ক্যাডারের পদসমূহের জন্য। সাধারণ ক্যাডারসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব ইত্যাদি। শারীরিখ যোগ্যতা সব ক্যাডারে সমান। পূর্বে পুলিশ ক্যাডারের জন্য শারীরিক উচ্চতা নির্দিষ্ট ছিল, এখন নেই। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ কারণে সামাজিক দিক থেকে এদেশে প্রফেসনাল ক্যাডারের চেয়ে জেনারেল ক্যাডারকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন চাকরিপ্রার্থীরা।

প্রফেসনাল ক্যাডার

মূলত শিক্ষাজীবনে অর্জিত একাডেমিক জ্ঞান কর্মজীবনের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রফেসনাল ক্যাডারের মূল পরিচয়। বিশেষায়িত জ্ঞানের মাধ্যমে রাষ্ট্র তথা সমাজকে উপকৃত করাই এই ক্যাডারসমূহের মূল লক্ষ্য। বিসিএস প্রফেসনাল ক্যাডারের সদস্য হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (চার বছর মেয়াদী) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা আবশ্যক (বিজ্ঞপ্তির প্রফেসনাল ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা অংশ দেখুন) যেমন সরকারি কলেজের শিক্ষক হতে হলে সংশ্লষ্ট বিষয়ে স্নাতক (৪ বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স) অথবা স্নাতকসহ মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হয়।

এছাড়াও বাংলাদেশে প্রফেসনাল ক্যাডারের অন্তর্ভূক্ত এমন কিছু ক্যাডার আছে যেখানে পূর্ব অর্জিত নির্দিষ্ট ডিগ্রি থাকার দরকারনেই। যে কোন বিষয়ে অথবা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলেই চলে। যেমন- বিসিএস  (ইকনমিক) ও বিসিএর (তথ্য) ক্যাডারে প্রফেসনাল পদসমূহের জন্য একক কোন বিষয় নয় বরং বিভিন্ন বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের এসব ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারে প্রফেসনাল পদ রয়েছে (বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে)।

বিসিএস : প্রস্তুতি

বিসিএস পরীক্ষার বিস্তৃতি যেমন ব্যাপক তেমনি এর প্রস্তুতি অনেক বেশি কিন্তু সহজ। কেন এই বিস্তৃতি (Dispersion)? আসলে কর্তৃপক্ষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মানসিক, শারীরিক ও জ্ঞানগত দিক থেকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষকে নির্বাচন (Select) করতে চায়। মানসিক দিক দিয়ে যে কোন ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেকে মানানসই করতে পারা বিসিএস কর্মকর্তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বিচরণ করার ক্ষমতা জরুরি। এর অর্থ এই নয় যে সব বিষয়েই বিশেষজ্ঞ হতে হবে। বরং সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধারণা থাকাই যথেষ্ট। যে কোন একটি বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে আনুপাতিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে কমপক্ষে ৫০/৬০ জনের মধ্যে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে কর্মে যোগদান করতে পারে।

বিসিএস-এ চন্স পাওয়া সহজ যেভাবে!

একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। একটি সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলেন। গ্রামের জনগণ আমার বন্ধুকে (তখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্র) বললেন, ‘তুমি UNO’র সাথে কথা বলবে। যেহেতু তুমি শিক্ষিত।’ সারাদিন UNO’র সাথে থেকে সন্ধ্যা বেলায় UNO’ কে প্রশ্ন করল, ‘স্যার আমি কিভাবে UNO’ হতে পারব?’ UNO’ বললেন, ‘তুমি পারবে যদি এখন থেকেই মনে রাখ যে তুমি ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দিবে। তারপর যা পাবে তাকে মনে করবে তোমার পড়ার বিষয়।’ সত্যি সত্যিই সেদিন থেকে সে মনে মনে বিসিএস এর প্রস্তুতি শুরু করল এবং বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিসিএস প্রশাসান ক্যাডারে কর্মরত আছে।

এতে বুঝা গেল বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতিই প্রথম দরকার। মানসিক প্রস্তুতি থাকলে সহজেই চান্স পাওয়া যাবে।

কখন প্রস্তুতি নিবেন

এ ব্যাপারে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত প্রকাশ করলেও আমার দৃষ্টিতে এইচএসসি পাশ করার পর পরই মানসিকভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। এতে অনার্স এবং মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি এগোতে থাকবে। বিসিএসের মানসিক প্রস্তুতি থাকলে মনে করতে হবে আপনার প্রতিটি ক্লাশ, হলে অবস্থান, শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ, নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সব কিছুই বিসিএসের জন্য জরুরি এবং এতে প্রতিটি কাজে গুরুত্ব বেড়ে যাবে। ফলে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়া সহজ হবে।

পড়তে হবে যা যা

প্রথমে এ রচনার শেষে সংযুক্ত সার্কুলারটি দেখুন এবং একাধিক বার পড়ুন। বিসিএস ক্যাডার, পরীক্ষার বিষয় ও প্রতিটি বিষয়ের নম্বর বণ্টন সম্পর্কে ধারণা অর্জন করুন। আপনার প্রত্যাহিক জীবনে কাজের অবসরে প্রতিটি বিষয়েরই প্রস্তুতি নিতে থাকুন। খুব বেশি সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই, তবে কখনো ভুলা যাবে না যে, আপনি ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হতে চান।

দৈনন্দিন যে যে বিষয় চিন্তায় থাকা উচিত

পত্র পত্রিকা যতটুকু পড়বেন মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তথ্য আত্মস্থ করবেন, অন্যের সাথে শেয়ার করবেন। রেডিও, টিভির নিউজ শুনবেন, বুঝার চেষ্টা করবেন, শেয়ার করবেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলমান ঘটনাবলী বুঝার চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন রেডিও, টিভি চ্যানেলের ইংরেজি নিউজ বুঝার চেষ্টা করবেন, আপনার ইংরেজি বুঝার  ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ভ্রমণ করবেন, প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থান এবং নিদর্শনসমূহ মনে রাখার চেষ্টা করুন। স্কুল কলেজের ছোট ভাই-বোন অথবা অন্যদের সাথে তাদের পাঠ্য বইয়ের যে কোন ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। দেখবেন তারা খুব আনন্দ পাবে এবং আপনার ঐ বিষয়ে বিসিএস এর প্রস্তুতি হয়ে যাবে। নিজ গ্রামের বয়োজৈষ্ঠকে সম্মান করুন, তার কাছে এলাকার গল্প শুনুন ওটা বিসিএসের প্রস্তুতি হবে। আমার দৃষ্টিতে, আপনার ছোট এবং বড় যিনি আপনার কাছে কিছু জানতে চান তিনিই আপনার বিসিএস এর শিক্ষক। তাঁর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবার চেষ্টা করুন, না পারলে সময় নিন, ওটা আপনার বিসিএসের প্রস্তুতি হবে। রাস্তার সাইনবোর্ড, রেডিও, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনও বিসিএসের তথ্য হতে পারে, যদি আপনি সচেতন হন। মোট কথা ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’ এ ধারণা মনে স্থায়ী করুন।

একজন পরোক্ষ শিক্ষক

বিসিএস পরীক্ষার্থীর জন্য একজন পরোক্ষ শিক্ষক হতে পারে তারই একজন ছাত্র (ছোট ভাই বোন অথবা টিউশনির ছাত্র)। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, হাইস্কুলের একজন ছাত্রকে আপনি পড়ানোর দায়িত্ব নিন। ৬ষ্ঠ/৭ম শ্রেণী হলে ভালো। আপনার স্নাতক/ স্নাতকোত্তর জীবনের ৪/৫ বছরে তাকে যত্ন করে পড়াবেন, তার এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট হবে এবং সাথে সাথে আপনার বিসিএসের ভালো প্রস্তুতি হবে।

সার্বক্ষণিক উপকরণ

কিছু বই শুরু থেকে আপনার সঙ্গী হওয়া উচিত অথবা আপনার সংগ্রহে থাকা উচিত। এগুলো- (১) বাংলাদেশের সংবিধান (২) ম্যাপের উপর কিছু বই (৩) নিজের সংগ্রহে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ম্যাপ (৪) নবম ও দশম শ্রেণীর একসেট বই। (৫) Oxford Advanced Learner’s Dictionary, বাংলা একাডেমি ইংরেজি বাংলা অভিধান এবং যে কোন একটি বাংলা টু বাংলা অভিধান। এছাড়া প্রতি মাসে প্রকাশিত যে কোন একটি চাকরির তথ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন। যেমন- কারেন্ট নিউজ, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি।

যেভাবে আত্মস্থ করবেন

ইংরেজি ও বাংলা সংবাদ পড়ুন এবং শুনুন। প্রতিটি News item বুঝার চেষ্টা করুন। দেশের নাম রাজধানী, রাষ্ট্রব্যবস্থা, মুদ্রার নাম ইত্যাদি বিষয় আত্মস্থ করার জন্য আজকের News এ উল্লেখিত দেশটিকেই বেছে নিন। খেলা দেখছেন দেশটাকে বুঝার চেষ্টা করুন। একজন কুটনৈতিক যোগদান করলেন, তার দেশটাকে ভালো করে চিনুন। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোন স্থান হলে একইভাবে চেনার চেষ্টা করুন।  বিষয় ভিত্তিক আলোচনা পরে আসবে।

বিষয়সমূহের পর্যালোচনা

সাধারণ বাংলার অধিকাংশ পড়াশুনা হাই স্কুল বা মাধ্যমিক পর্যায়ের। শুধুমাত্র রচনাটি অনেক বড় মানের। এখানে কবি-সাহিত্যিক ও তাদের রচনা এবং ব্যাকরণগত যে সমস্ত প্রশ্ন আসে তার শতকরা ৭০/৮০ ভাগ মাধ্যমিক পর্যায়ের। সতরাং আপনার ছাত্রই আপনাকে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেতে সহায়তা করবে। অনুরূপভাবে ইংরেজি বিষয় কল্পনা করলে প্রস্তুতির একই চিত্র বের হয়ে আসবে। গাণিতিকি যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা সম্পূর্ণ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় যে সমস্ত গাণিতিক যুক্তি থাকে সেইগুলো চর্চা করলেই এ বিষয়ের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য পত্র-পত্রিকার খবর, ভৌগোলিক জ্ঞান এবং চলমান ঘটনাবলী কে কৌশলের মাধ্যমে আত্মস্থ করার চেষ্টা করুন এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ভূগোলের পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিষয়কে মনোযোগ সহকারে গড়ুন অথবা পড়ান। আপনার প্রস্তুতি যথেষ্ঠ হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য এখন থেকে নিয়মিত পত্রিকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতা পড়তে অভ্যস্থ হোন, বিজ্ঞাপনসমূহ মনোযোগ সহকারে শুনুন, আপনার প্রস্তুতি হয়ে যাবে। তাহলে বিসিএস আর কঠিন থাকলো না।

আপনার পক্ষেও বিসিএস-এ চান্স পাওয়া সম্ভব

আপনি যদি এইচএসসি এর পর এভাবে শুরু করেন তাহলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর যে বিসিএস পাবেন সেটাতেই অংশগ্রহণ করুন, আপনার চান্স পাবার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি আপনি এখন অনার্স ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ যে বর্ষে হোন না কেন আজই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। আপনার পক্ষে Manage করা সম্ভব। সর্বশেষ কথা- এগুলো হল খুব সুন্দর শুরু, শেষ নয়।

কেন আপনার দ্বারা সম্ভব

বিসিএস এর পড়াশুনা দীর্ঘ মেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী নয়। হঠাৎ কয়েক দিন বা কয়েক মাসে বিসিএস এর ব্যাপক পড়াশুনার সম্ভব নয়। সম্ভব কেবল ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘদিন মানসিক দৃঢ়তার সাথে অব্যাহত চর্চার মাধ্যমে। কোন চাপ অনুভব করবেন না। বিসিএস পরীক্ষার আগে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছেন। মানসিক শক্তি আপনাকে সাফল্যের চাবি দিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ।

যা যা পরীক্ষা দিতে হয়

বিসিএস পরীক্ষা ৩ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে প্রিলিমিনারী, পরে লিখিত এবং সর্বশেষ ভাইভা। প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানে আপনি লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। লিখিত উত্তীর্ণ হলেই মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারবেন। চূড়ান্ত মেধা স্কোর লিখিত ও মৌলিক পরীক্ষার নম্বরের আলোকে তৈরি হয়। প্রিলিমিনারী পরীক্ষার নম্বর পরবর্তীতে তেমন ব্যবহার নেই। কত নম্বর পেলে প্রিলিমিনারী উত্তীর্ণ হবেন তার সঠিক হিসাব নেই। উপর থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যককে  উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। এতে সর্বনিম্ন ৪৬ এ উত্তীর্ণ হওয়ার যেমন রেকর্ড আছে তেমনি সর্বনিম্ন ৬৮ এর রেকর্ডও আছে।

আপনিই চান্স পাবেন

একটি পরিসংখ্যান দিলাম। ধরুন একটি বিসিএস পরীক্ষায় ১,২০,০০০ আবেদন পত্র জমা পড়ল। বাস্তবে পরীক্ষার্থী কত। সর্বোচ্চ ১,০০,০০০। বাকী ২০,০০০ ডাবল/ ট্রিপল আবেদনপত্র জমা দেওয়ার Result. Next আসুন ১,০০,০০০ এর মধ্যে BCS পরীক্ষা দিবে এই মানসিকতা নিয়ে আবেদনপত্র জমা দেন কত জন। সর্বোচ্চ ৫০,০০০ জন। আর Preliminary তে উত্তীর্ণ হয় গড়ে ২৫/৩০ হাজার। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীর অর্ধেকই Preliminary উত্তীর্ণ হয়। দেখা যায় ২৫,০০০ প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন ১৬-১৮ হাজার। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১২/১৩ হাজার। অর্থাৎ যারা মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দেয় তারাই উত্তীর্ণ হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষার বিষয়। এখানে টিকে প্রতি চার জনের একজন। সুতরাং ইচ্ছা নিয়ে BCS দিলে ভাইভা পর্যন্ত যাওয়া সহজ। আর একটু খাটুন আপনি অবশ্যই BCS -এ চান্স পাবেন।

সর্বশেষ কথা BCS -এ উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দরকার সঠিক নির্বাচন এবং সেই অনুপাতে প্রস্তুতি। আপনার প্রাথমিক প্রস্তুতি যথাযথ হলেই উন্নততর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে BCS -এ উত্তীর্ণ হওয়া খুবই সহজ।

বিসিএস : নমুনা বিজ্ঞাপ্তি

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের নিম্নলিখিত ক্যাডারের শূন্য পদে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নিকট হইতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব আবেদনপত্র আহ্বান করিতেছেন।

{{{{{{{{ছক}পৃ-১৬০-১৬৪}}}}}}}}}}

২। বিশেষ দ্রষ্টব্য

(ক) যেকোন ক্যাডারের পদের সংখ্যা বাড়াইবার, কমাইবার বা বাতিল করিবার অধিকার সরকার সংরক্ষণ করেন।

(খ) কোন প্রার্থী বিদেশ হইতে অর্জিত তাহার কোন ডিগ্রিকে বিসিএস ক্যাডারের পদ সমূহের পাশে বর্ণিত কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার সমমানের বলিয়া দাবি করিলে তাহাকে এই মর্মে সংশ্লিষ্ট ইকুইভ্যালেন্স কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত ইকুইভ্যালেন্স সার্টিফিকেট এবং মার্কশীটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সহিত জমা দিতে হইবে। ইকুইভ্যালেন্স সনদের জন্য প্রকৌশল বিষয়ের ডিগ্রিধারীদেরকে বুয়েটের সহিত, মেডিকেল ডিগ্রিধারীদেরকে বিএমডিসি’র সহিত এবং সাধারণ বিষয়ে ডিগ্রিধারীদেরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহিত যোগাযোগ করিতে পরামর্শ দেওয়া যাইতেছে। উক্ত সনদ মৌখিক পরীক্ষার আগে জমা দিলেও চলিবে। তাঁহারা ইতোমধ্যে প্রাপ্ত ডিগ্রি সনদ সংযুক্তকরণ পূর্বক বিসিএস পরীক্ষার আবেদনপত্র জমা দিতে পারিবেন।

(গ) যদি কোন প্রার্থী এমন কোন পরীক্ষায় অবর্তীর্ণ হইয়া থাকেন যাহা চাহিদাকৃত শ্রেণী/বিভাগসহ পাস করিলে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করিবেন এবং যদি তাহা ঐ পরীক্ষার ফলাফল বিসিএস এর আবেদনপত্র দাখিলের শেষ তারিখ পর্যন্ত প্রকাশিত না হয় তাহা হইলেও তিনি আবেদনপত্র দাখিল করিতে পারিবেন, তবে তাহা সাময়িকভাবে গ্রহণ করা হইবে। কেবল সেই প্রার্থীকেই অবতীর্ণ প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হইবে যাহার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর লিখিত পরীক্ষা বিসিএস পরীক্ষার আবেদনপত্র গ্রহণের শেষ তারিখের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা শেষ হইয়াছে মর্মে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়সন্ত্রক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত সনদ অবশ্যই আবেদনপত্রের সহিত দাখিল করিতে হইবে। অন্যথায় আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হইবে না। বিসিএস এর মৌখিক পরীক্ষার সময় উক্ত হরীক্ষা পাসের প্রমাণস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল/ সাময়িক সার্টিফিকেট কমিশনে অবশ্যই দাখিল করিতে হিইবে। অন্যথায় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হইবে না এবং প্রার্থীতাও বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। মৌখিক পরীক্ষার সময় অবতীর্ণ সনদের মূলকপি অবশ্যই দাখিল করিতে হইবে।

৩। বয়সসীমা

(ক) মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা/ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য সকল ক্যাডারের প্রার্থীর জন্য ২১ হইতে ৩০ বৎসর।

(খ) মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা/ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য ২১ হইতে ৩২ বৎসর।

(গ) বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের শুধুমাত্র উপজাতীয় প্রার্থীদের বেলায় ২১ হইতে ৩২ বৎসর।

(ঘ) বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কোন পদে বিরতিহীনভাবে এডহক ভিত্তিতে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এডহক নিয়োগের সময় তাঁহারা যদি উর্দ্ধতন বয়সসীমা অতিক্রম না করিয়া থাকেন তাহা হইলে কেবল সেই পদের জন্য তাঁহাদের উর্দ্ধতম সময়সীমা শিথিলযোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবে। যে সকল প্রার্থী বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কোন পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োজিত নহেন তাঁহাদের ক্ষেত্রে উর্দ্ধতম সময়সীমা শিথিলযোগ্য নহে।

বিঃ দ্রঃ প্রার্থীর বয়স একদিনও কম বা বেশি হইলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হইবে না এবং এই জাতীয় প্রার্থীর আবেদনপত্র দাখিল করা উচিত হইবে না।

৪। জাতীয়তা

(ক) প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হইতে হইবে।

(খ) যে সকল প্রার্থী কোন অ-বাংলাদেশী নাগরিককে বিবাহ করিয়াছে অথবা বিবাহ করিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হইয়াছেন তাঁহাদের আবেদনপত্র দাখিল করা উচিত হইবে না।

(গ) প্রার্থী কর্তৃক আবেদনপত্রে উল্লিখিত প্রদত্ত স্থায়ী ঠিকানা যদি ইতিপূর্বে সার্টিফিকেট বা অন্যত্র উল্লিখিত স্থায়ী ঠিকানা হইতে ভিন্ন হয় কিংবা মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করা হয় তবে সেক্ষেত্রে প্রার্থীকে পরিবর্তিত স্থায়ী ঠিকানার স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যন/ ওয়ার্ড কমিশনার/ পৌর চেয়ারম্যান/ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ নোটারী পাবলিক কর্তৃক স্বাক্ষরিত সনদপত্র জমা দিতে হইবে।

৫। আবেদনপত্র ফরম ও অন্যান্য তথ্যাদি প্রাপ্তিস্থান

সোনালী ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শাখা হইতে আবেদনপত্র অর্থাৎ বিপিএসসি ফর্ম- ১ ও বিপিএসসি ফর্ম-২ বিসিএস পরীক্ষার প্রার্থীদের অবশ্য পালনীয় নির্দেশবালী এবং জ্ঞাত বিষয়সমূহ, সিলেবাস, বিপিএসসি ফর্ম-২ পূরণের নির্দেশাবলী ও প্রিলিমিনারী (অবজেকটিভ) টেস্ট সম্বন্ধীয় নির্দেশাবলী ইত্যাদি নগদ ৫০/- (পঞ্চাশ) টাকার বিনিময়ে ব্যাংক খোলা থাকা সাপেক্ষে সংগ্রহ করা যাইবে।

৬। আবেদনপত্র দাখিল

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের নির্ধারিত ফর্মে (বিপিএসসি ফর্ম-১ এবং বিপিএসসি ফর্ম-২) আবেদন করিতে হইবে এবং পূরণকৃত আবেদনপত্র সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন, পুরাতন বিমান বন্দর ভবন, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ ঠিকানায় আবেদনপত্র জমাদানের শেষ তারিখ এর মধ্যে অবশ্যই পৌছাইতে হইবে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের কোন আঞ্চলিক অফিসে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হইবে না। ঢাকাস্থ প্রধান অফিস ব্যতীত কোন আঞ্চলিক অফিসে আবেদন পত্র জমা দিলে তাহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। আবেদনপত্র জমাদানের শেষ তারিখ বিকাল ৪.০০ ঘটিকার পরে প্রাপ্ত আবেদনপত্র সমূহও বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

৭। প্রবেশপত্র

প্রার্থী তাহার নাম, ঠিকানা ও যে কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক উহার নাম বিপিএসসি ফর্ম-১ এর সহিত প্রদত্ত প্রবেশপত্রের যথাস্থানে স্পষ্ট অক্ষরে লিখিবেন। এক কপি ফটো প্রবেশহত্রের যথাস্থানে আঠা দ্বারা লাগাইতে হইবে। প্রবেশপত্রে রেজিষ্টেশন নম্বরের স্থানটি কমিশন সচিবালয় পূরণ করিবেন। প্রবেশপত্র আবেদনপত্রের সহিত লাগান অবস্থায় থাকিবে।

৮। প্রিলিমিনারী অবজেকটিভ টেস্ট

(ক) প্রার্থীদের ১০০ (একশত) নম্বরের একটি লিখিত (MCQ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে হইবে। প্রশ্নের ধরন হইবে নৈর্ব্যত্তিক (অবজেকটিভ টাইপ) এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হইবে।

(খ) এই পরীক্ষায় মোট ১০০ (একশত) টি প্রশ্ন থাকিবে এবং প্রতিটি প্রশ্নের মান হইতে ১ (এক) এবং পরীক্ষার জন্য পূর্ণ সময় দেওয়া হইবে ১ ঘন্টা।

(গ) নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের উপর প্রশ্ন করা হইবে : সাধারণ বাংলা, সাধারণ ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান : বাংলাদেশ বিষয়াবলী, সাধারণ জ্ঞান : আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এবং সাধারণ জ্ঞান : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মানসিক দক্ষতা এবং গাণিতিক যুক্তি।

(ঘ) উপরের প্রতিটি বিষয়ের উপর কমপক্ষে ২০টি করিয়া প্রশ্ন থাকিবে। এই পরীক্ষা বিসিএস প্রিলিমিনারী টেস্ট সম্বন্ধীয় নির্দেশাবলী অনুসরণপূর্বক পরিচালিত হইবে। সুতরাং “প্রিলিমিনারী টেস্ট সম্বন্ধীয় নির্দেশাবলী” ভাল করিয়া পড়িতে হইবে।

(ঙ) বিসিএস প্রিলিমিনারী (অবজেকটিভ) টেস্ট ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হইতে পারে। সঠিক তারিখ, সময় ও আসন ব্যবস্থা (পরীক্ষা হলের নামসহ) যথাসময়ে খবরের কাগজের মাধ্যমে জানান হইবে।

(চ) যে সকল প্রার্থী প্রিলিমিনারী (অবজেকটিভ) টেস্টে উত্তীর্ণ হইবেন শুধু তাহারাই বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন।

৯। পরীক্ষার বিষয়সমূহ ও ইহাদের নম্বর বন্টন

মোট নম্বর : ১০০০।

১। সাধারণ ক্যাডারের জন্য-

(ক) বাংলা                                       – ২০০

(খ) ইংরেজী                                     – ২০০

(গ) বাংলাদেশ বিষয়াবলী                          – ২০০

(ঘ) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী                        – ১০০

(ঙ) গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা           – ১০০

(চ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি                               – ১০০

(ছ) মৌখিক পরীক্ষা                                – ১০০

সর্বমোট                                             ১০০০

২। প্রফেশনাল ক্যাডারের জন্য-

(ক) বাংলা                                       – ১০০

(খ) ইংরেজী                                     – ২০০

(গ) বাংলাদেশ বিষয়াবলী                      – ২০০

(ঘ) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী                    – ১০০

(ঙ) গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা       – ১০০

(চ) সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা                    – ২০০

(ছ) মৌখিক পরীক্ষা                             – ১০০

সর্বমোট                                          ১০০০

বি: দ্র: যে সকল প্রার্থী সাধারণ ও প্রফেশনাল উভয় ক্যাডারের পদে পছন্দক্রম দিতে ইচ্ছুক হইবেন তাহাদেরকে সাধারণ ক্যাডারের ৯০০ নম্বরের অতিরিক্ত প্রফেশনাল ক্যাডারের ২(চ) নং- এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হইবে।

১০। লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর গড়ে ৪৫% মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর গড় ৪০% এবং লিখিত পরীক্ষায় কোন বিষয়ে ২৫% নম্বর এর কম পাইলে উক্ত বিষয়ে কোন নম্বর পায়নি বলিয়া গণ্য হইবে।

১১। স্বাস্থ্য পরীক্ষা

কমিশন কর্তৃক মনোনয়নের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থীদিগকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সম্মুখে উপস্থিত হইতে হইবে। মেডিকেল বোর্ডে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকালীন সময়ে যে সকল পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা ৫” এর কম এবং যে সকল মহিলা প্রার্থীর উচ্চতা ৪”-১০” এর কম হইবে তাহারা কোন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন না। পুরুষ প্রার্থীর ওজন ৪৫ কেজির কম এবং মহিলা প্রার্থীর ওজন ৪০ কেজির কম হইলে তাঁহারাও অস্থায়ীভাবে অযোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন। প্রার্থীদিগকে বিধি অনুযায়ী দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হইতে হইবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী যথা সময়ে জানানো হইবে।

১২। পরীক্ষার উত্তরদানের ভাষা

বাংলা, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষা সম্পর্কিত বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর সংশ্লেষ্ট ভাষাতেই লিখিতে হইবে। অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর বাংলা বা ইংরেজি-এর যে কোন একটিতে লিখিতে হইবে। উভয় ভাষা ব্যবহার করা যাইবে না। কোন বিষয়ের প্রশ্নপত্রে অন্য কোনরূপ নির্দেশ থাকিলে উক্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐ নির্দেশ অনুযায়ী প্রশ্নোত্তর লিখিতে হইবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কেন্দ্র পরিবর্তনের কোন আবেদন গ্রহণ করা হইবে না।

১৩। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবেদনপত্র যে সকল কারণে বাতিল হইতে পারে:

(ক) বোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত এসএসসি, এইচএসসি স্নাতক (পাস/সম্মান) এবং মাস্টার্স ডিগ্রি পরীক্ষার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সহিত জমা না দিলে আবেদনপত্র বাতিল হইবে।

(খ) প্রার্থীর নিজের নাম ও পিতার নাম এসএসসি অথবা সমমানের সনদে যেভাবে লেখা হইয়াছে আবেদনপত্রেও হুবহু সেইভাবে লিখিতে হইবে। নিজের ও পিতার নামে কোনরূপ গড়মিল পরিলক্ষিত হইলে আবেদনহত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

(গ) অবতীর্ণ প্রার্থীদের পরীক্ষা পাশের প্রমাণস্বরূপ মূল সার্টিফিকেট মৌখিক পরীক্ষার সময় অবশ্যই দাখিল করিতে হইবে, অন্যথায় তাহার প্রার্থীতা বাতিল করা হইবে।

(ঘ) শেষ তারিখের পরে কোন আবেদনপত্র গ্রহণ করা হইবে না, কারণ যাহাই হউক না কেন।

(ঙ) এই বিজ্ঞপ্তিতে যে সকল শর্ত আরোপ করা হইল তাহা যদি আবেদনপত্র এবং উহার সহিত প্রদত্ত ফর্মের কোন শর্তের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহা হইলে বিজ্ঞপ্তির শর্ত গ্রহণযোগ্য হইবে।

(চ) বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত সকল শর্ত সম্পর্কে ভালভাবে নিশ্চিত হইয়া আবেদন করিবার জন্য অনুরোধ করা যাইতেছে। বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত শর্তাদির কোন ঘাটতি যেমন সয়স কম বা বেশি, শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব ইত্যাদিসহ অন্য যে কোন ভুলের জন্য প্রার্থী অযোগ্য হইলে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পূর্বে কমিশন তাহার প্রার্থীতা বাতিল করিবেন এবং সেই প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তাহাছাড়াও পরবর্তী পার্যায়ে প্রার্থীর কোন অযোগ্যতা দৃষ্টিগোচর হইলে লিখিত, মৌখিক পরীক্ষার পূর্বে বা পরে যে কোন পর্যায়ে কমিশন তাহার প্রার্থীতা বাতিল করিতে পারিবেন।

১৪। গোপনীয়

প্রার্থীদের পরীক্ষার সকল উত্তরপত্র গোপণীয় দলিল হিসাবে গণ্য হইবে এবং কোন অবস্থাতেই কোন প্রার্থী বা তাঁর প্রতিনিধিকে উহা প্রদর্শন করা হইবে না। উত্তরপত্র সমূহের পুন:পরীক্ষণের কোন অনুরোধও বিবেচনা করা হইবে না। পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে।

১৫। কোন প্রার্থী আবেদনপত্রে জ্ঞাতসারে কোন ভুল তথ্য প্রদান করিলে বা প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করিলে বা কোন জাল সার্টিফিকেট দাখিল করিলে বা সয়সও শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত সার্টিফিকেটের কোন অংশ পরিবর্তন করিলে বা পরীক্ষার হলে কোনরূপ দুর্ব্যবহার করিলে, তাঁহাকে শুধু এই পরীক্ষার জন্যই নয় বরং কমিশন কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী অন্য যে কোন পরীক্ষার জন্য এমনকি সরকারি চাকুরির জন্যও অযোগ্য করা হইতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রার্থীকে ফৌজদারী আইনে সোপর্দ করাও যাইতে পারে। নিয়োগের পর এ জাতীয় কোন ভুল তথ্য প্রকাশ পাইলে প্রার্থীকে চাকুরি হইতে বরখাস্ত করা ছাড়াও তাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে।

গবেষণা পেশা

পেশা হিসাবে গবেষণা অনেক উঁচু মানের পেশা। কোন ক্ষেত্রে গবেষণা করার জন্য যেমন যোগ্যতা দরকার তেমনি সমাজে এ ধরনের পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকেও আলাদাভাবে দেখা হয়ে থাকে। একজন গবেষক বরাবরই সমাজের উঁচু আসনে আসীন হয়ে থাকেন। আমাদের দেশে যদিও গবেষণার সুযোগ সুবিধা সীমিত তথাপি সমাজে গবেষকদের স্থান উঁচুতেই নির্ধারিত হয়েছে।

গবেষক হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞান। এই জ্ঞান হতে হবে সম্যক, বিষয় ভিত্তিক এবং সুগভীর। তাই ছাত্র জীবনে যারা তাদের স্ব স্ব বিষয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে থাকে তাদেরই এখতেয়ার গবেষক হওয়ার। গবেষকদের জ্ঞানের তুলনা করা যেতে পারে টর্চ লাইটের সাথে। পাশাপাশি বিসিএস অফিসারদের সাথে হেজাক লাইটের। হেজাক লাইট অল্প পরিসরে চারিপার্শ্বের অনেকটা স্থান আলোকিত করে। পক্ষান্তরে টর্চ লাইট অল্প স্থান ধরে গভীর দূরত্ব পর্যন্ত স্থানকে আলোকিত করে। একজন গবেষক পৃথিবীর অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন না কখনই, তবে তিনি যেটা নিয়ে চিন্তা করবেন তার আদ্যপান্ত ধরেই এগোবেন। যার মনোভাব এ ধরনের তার জন্য গবেষণার পেশা মানানসই হতে পারে। গবেষকরা কোন জাতির জন্য গর্বের বিষয়। এরা শুধু মাত্র জাতির জন্য নয় সমস্ত মানব জাতির জন্য অবদান রাখেন তদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে। বিদ্যুতের ব্যবহার যে বিজ্ঞানী শিখিয়েছেন তিনি শুধু তার নিজের দেশবাসীকেই এটা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন তা নয়, সারা বিশ্ব এর সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করছে। এভাবেই সভ্যতা এগিয়ে চলছে আবিষ্কারের ফলাফল ধরে।

এবারে আসি কোন্ বিষয়ের উপরে গবেষণা করবো সে প্রসঙ্গে। প্রকৃত পক্ষে সকল বিষয়েই গবেষণা হয়ে থাকে। সকল বিষয়েই প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে এ সকল গবেষণার কারণে। তুমি কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চাও সেটা নির্ভর করবে তোমার ব্যক্তিগত interest এর উপরে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বিশ্বব্যাপী গবেষণার সুযোগ সুবিধা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারই বটে। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন যে বর্তমান শতাব্দীকে জৈব বিজ্ঞানের শতাব্দী বলা হয়। বিজ্ঞানের এই দিকটি এই শতাব্দীতেই সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব পাবে। এ কারণে বিজ্ঞানী হিসাবে তুমি তোমাকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ সুবিধা বেশি পেতে পার যদি এই দিকটা নাও তোমার জন্যে। যে সমস্ত বিষয় এই আওতায় পড়ে তারা হলো Bio-Physics, Bio-Chemistry, Biology, Bio-Medical Engineering ইত্যাদি। গবেষণার কার্যক্রমকে মোটামুটি দুটো ভাগে ভাগ করা যায়- Theoretical এবং Experimentel.

আমাদের মত গরীব দেশে Experiment ভিত্তিক গবেষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব অনুভূত হয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। তাই এ ধরনের গবেষণা বাধাগ্রস্থও হয় প্রতিনিয়ত। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের অনেকগুলো ল্যাবরেটরী, সাইন্স ল্যাবরেটরী, ধান গবেষণা কেন্দ্র, পাট গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি।

গবেষক হিসেবে চাকুরি পাওয়ার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হচ্ছে ভাল রেজাল্ট। SSC, HSC, BA (Hons)/ B.Sc (Hons)/ BCom (Hons). MA/MSc/ MCom ইত্যাদি পরীক্ষাতে খুব ভাল মানের ফলাফল প্রয়োজন এ পেশায় যাওয়ার জন্য। এর পরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার জন্য দরকার উচ্চশিক্ষা যেমন MPhil, PhD ইত্যাদি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে Higher Training-ও কাজে লাগে সামনে এগোনোর জন্য। MPhil এবং PhD ডিগ্রি দেশ বিদেশ উভয় স্থান থেকেই পাওয়া যেতে পারে। তুমি যদি খুব ভাল ছাত্র হতে পার তবে বিদেশে পড়াশুনা করে PhD degree অর্জনের জন্য চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়ার সুবিধা অনেকভাবেই অর্জন করা যায় বর্তমান সময়ে। এর জন্যে অবশ্য কিছু প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা রয়েছে, যেমন- TOEFL. GRE, GMAT ইত্যাদি। এদেশেও সীমিত পরিসরে কিছু Stipend/ Scholarship দেওয়া হয়ে থাকে কিছু public বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য অর্গানাইজেশন কর্তৃক এ সকল ডিগ্রি অর্জনের সুবিধার্থে।

গবেষণাকে প্রধান পেশা হিসাবে না নিয়েও কিছু Profession- এর লোকেরা গবেষণা করে যাচ্ছেন এ দেশে এবং বহির্বিশ্বে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রমোশনের জন্য এই গবেষণালব্ধ Research paper- এর প্রয়োজন হয়। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এ দেশের সমস্ত public university- এর শিক্ষকেরা কম বিশি গবেষণা করে থাকেন। তাঁদের জন্যে গবেষণা দু-ধরনের সুযোগ ‍দিয়ে থাকে- প্রথমত, শিক্ষকতার স্বাদ এবং দ্বিতীয়ত, গবেষণার স্বাদ। এই উভয়বিধ স্বাদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে এদেশে সর্বোত্তম পেশা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন কেউ কেউ। এই পর্যায়ে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন পরীক্ষাসমূহে সর্বোত্তম রেজাল্ট।

আইনজীবি

ভূমিকা

পৃথিবীর সব কিছুই কোন না কোন নিয়ম বা আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। মানুষের জীবনও এ সকল আইনের বাইরে নয়। এ আইন ভঙ্গ করে যখন অপরাধ সংঘটিত হয় তখনই সৃষ্টি হয় বিশৃংখলা ও অশান্তি। তাই আইন ভঙ্গ তথা অপরাধ সংঘটনকে নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধ ও অপরাধের কারণ উদঘাটন এবং অপরাধীর বিরূদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আর এ কাজে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঁ যারা পালন করেন তারা হলেন আইনজীবী, যারা অপরাধের সামগ্রিক পর্যালোচনা, কোর্টের সামনে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি, অপরাধী ও সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্টদেরকে প্রশ্নোত্তর এবং নিজেদের মাঝে নানা রকম আইনি যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য এবং অপরাধী চিহ্নিত করার মাধ্যমে আদালতকে তার বিচারিক কাজে সাহায্য করে থাকেন।

আইন পেশা ও এর বিভিন্ন শ্রেণী

আইন বিষয়ে পড়ালেখা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বাদী-বিবাদীকে আইনি সহায়তা প্রদান, প্রয়োজনীয় স্থানে আইনি পরামর্শ প্রদান, আদালতকে বিচারিক কাজে সহায়তা প্রদান এবং সর্বোপরি আইন সংশ্লিষ্ট বিবিধ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণকে জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে বেছে নেয়াই আইন পেশা।

আইন পেশাকে দু’টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমত আইনজীবী হিসেবে কোর্টে মামলা পরিচালনা করা।

দ্বিতীয়ত বিভিন্ন দেশি, বিদেশি ও বহু জাতিক কোম্পানীতে আইন কর্মকর্তা বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করে কাজ করা।

উল্লেখ্য সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন আদালতে আইনজীবীদের মধ্য থেকেই আইন কর্মকর্তা নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টে সরকার পক্ষ থেকে নিয়োজিত আইন কর্মকর্তাদের Attorney General, Deputy Attorney General, Assistant Attorney General বিভিন্ন পদবীতে সম্বোধন করা হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতে নিয়োজিত আইন কর্মকর্তারা পিপি (Public Prosecutor), এপিপি (Assistant Public Prosecutor),জিপি (Government Prosecutor) ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত।

সমাজে এ পেশার প্রয়োজনীয়তা

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠর জন্য আইনজীবীর ভূমিকা অপরিসীম। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে শুরু করে পরিবর, সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্বন্দ্ব- ফ্যাসাদ, হানাহানি একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। তাই এসব সমস্যার সমাধানে রয়েছে আদালত ব্যবস্থা। আর আদালত ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ ও বিশৃংখলা মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সবচে’ বড় হাতিয়ার হলেন আইনজীবীগণ। আইনজীবীরা আদালতের সামনে পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়িয়ে স্বপক্ষের ঘচনাসমূহ ও যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা ও সঠিক বিচারে আদালতকে সাহায্য করে থাকেন। এছাড়া আইনজীবীগণ সমাজের একটি সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত থাকায় ছোট-খাট সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন এবং লোকেরা তাঁদের এসব সমাধান মূলক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়, এমনকি তারাও নিজেদের সমস্যাদি সমাধানের জন্যে তাঁদের (আইনজীবী) নিকট ধর্ণা দিয়ে থাকেন।

এ পেশায় যাবার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিকতা

অনেকেই এই পেশাটিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকেন। আসলে দৃশ্যত যে সব কারণে এ অবজ্ঞার সৃষ্টি, সেগুলো একটু খতিয়ে দেখলেই অবজ্ঞার পরিবর্তে শ্রদ্ধা জাগার কথা। কারণ এঁদের ইতিবাচক ভূমিকা সমাজের জন্য অপরিহার্য বটে। আর যারা এ পেশায় যেতে আগ্রহী সর্বপ্রথম তাদেরকে এর প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলির প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে হবে। এ পেশা যে সত্যিকারার্থে একটি সম্মানজনক পেশা তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সময়ে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সুতরাং উচ্চাকাংক্ষা এবং এপথে বিজয়ী হবার উদ্যম সম্পন্ন একটি চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা প্রয়োজন।

উপরন্তু অনুসন্দ্ধিৎসা, কৌতূহল, সার্বজনীনতা ও উদারতা এবং সমাজের প্রতিটি কোষে কোষে প্রবেশ করার মত কিছুটা এ্যাডভেঞ্চারাস (adventurous) মানসিকতা প্রয়োজন। যেহেতু আইনজীবীরা সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, এ কারণে এ পেশায় যাবার জন্য একটি পরিপূর্ণ সৎ মানসিকতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সর্বোপরি দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ধনাট্য ব্যক্তি পর্যন্ত এবং মুচি-মেথর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের জন-মানুষের মাঝে নিজেকে Matching করিয়ে নেবার মত সর্বভূক মানসিকতা নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হবে এ পেশার গন্তব্য স্থলের দিকে।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

আইন পেশায় আসতে হলে নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায় পাড়ি দিতে হয়।

প্রথমত কোন সরকারি কিংবা স্বীকৃত যে কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (আনার্স) ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এ ছাড়াও ডিগ্রি পাশ করার পর যে কোন স্বীকৃত আইন কলেজ হতে সাধারণ এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করলেও চলবে।

দ্বিতীয়ত আইন বিষয়ে উক্ত ডিগ্রি অর্জন করার পর Advocate হিসেবে Enrolment (অন্তর্ভূক্তি) এর জন্য Bangladesh Bar Council কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে দশ বছরের আইন পেশায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন আইনজীবীর অধীনে চেম্বারে অনূন্য ৬ মাস Pupil (শিক্ষানবীশ) হিসেবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। অত:পর বার কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। এতে কৃতকার্য হলে বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী (Advocate) হিসেবে তালিকাভূক্ত  করা হয় এবং আইনজীবী সনদ পত্র প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য যে, হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতে হলে কোন আইনজীবীকে নিম্ন আদালতে তথা জজ কোর্টে কমপক্ষে দু’বছর প্রাকটিস করতে হবে। তবে যারা UK (যুক্তরাজ্য) থেকে Bar-at-Law সম্পন্ন করেছে অথবা যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে LLM (এলএলএম) পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০% নম্বর অর্জন করে কৃতকার্য হয়েছে তাদের জন্য সুপ্রীম কোর্টের যে কোনো সিনিয়র আইনজীবী (Senior Advocate)-র সাথে কমপক্ষে এক বছর কাজ করলে High Court Division-এ প্রাকটিস করার জন্য Bar Council কর্তৃক নির্দিষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এতে কৃতকার্য হলেই একজন আইনজীবী সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতে পারবেন।

কখন থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে

যেহেতু এ পেশায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আইন বিষয়ের শিক্ষার্থী হতে হয়, তাই HSC পাশ করার পরই কাংক্ষিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে। তবে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ডিগ্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি হলেও যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ না হয় তাহলে Normal ডিগ্রি পাশ করে যে কোন আইন কলেজে অধ্যয়ন করে একটি এলএলবি (যাকে অনার্স বলা হয় না) ডিগ্রি অর্জন করে এ পেশায় আসা যায়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, প্রায় প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন বিভাগ কয়েছে এবং তা একটি স্বতন্ত্র অনুষদের অধীন। ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয় একটি স্বতন্ত্র ইউনিটের Under-এ। সুতরাং উক্ত ইউনিট কর্তৃক ঘোষিত এ্যাডমিশনের বিষয় সমূহের প্রস্তুতি ভালভাবে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা দরকার।

Bar-at-Law কি ও কিভাবে অর্জন করতে হয়?

আইন জগতে Bar-at-Law বা ব্যারিস্টার একটি জনপ্রিয় নাম। আসলে এটি হলো UK, Australia, Canada ইত্যাদি দেশসমূহে উচ্চতর আদালত (Higher Court)- এ প্রাকটিস করার জন্য ঐ সব দেশের Law Society (যেটা আমাদের দেশের Bar Council এর মতো) কর্তৃক প্রদত্ত একটি Certificate. যে কেউ উক্ত দেশসমূহে Law (আইন) বিষয়ে  Graduation করে Bar-at-Law এর জন্য আবেদন করতে পারে। উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইন বিষয়ে Graduation (স্নাতক) ডিগ্রি ঐ দেশ সমূহে Bar-at-Law করার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ডিগ্রি নয়। অবশ্য বর্তমানে বাংলাদেশ থেকেও UK-র কোন University এর অধীনে External Programme-এ ভর্তি হয়ে Law (আইন) বিষয়ে Graduation ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পরবর্তীতে Bar-at-Law করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে UK- তে যেতে হয়। অবশ্য খুশির সংবাদ হলো বাংলাদেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন- Bhuiyan Academy, Newcastle Law Academy ইত্যাদি UK-র বিভিন্ন University র অধীনে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

উল্লেখ্য অতি সম্প্রতি UK- এর Nottingham Trent University বাংলাদেশের Northern University র অধীনে তাদের পরিচালিত আইন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

বিচারক

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক যার আইন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডিগ্রি আছে তিনি এ পেশায় আসতে পারেন। একজন বিচারক সমাজে অতি উঁচু মর্যাদায় সমাসীন। এ পেশায় আসতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা।

নিয়োগ প্রক্রিয়া

বর্তমানে Judicial Service Commission- এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়। এ জন্য উক্ত Commission কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে অংশ গ্রহণ করতে হয়। এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হলে প্রার্থীকে আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী হতে হয়। এছাড়াও সুপ্রীম কোর্টেও বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে একজন আইনজীবী (Advocate) – কে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্যূন দশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয় অথবা কোনো বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

এ পেশার সুযোগ সুবিধা

আইন পেশা একটি স্বাধীন পেশা। একজন সৎ ও যোগ্য আইনজীবী সমাজের উঁচু আসনে সমাসীন ব্যাক্তি হিসেবে সকলের নিকটই স্বীকৃত। তাই সর্ব পর্যায়ের মানুষের নিকট ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাওয়া যায় এ পেশায় গেলে। আইডি কার্ড দেখার পর কোন পুলিশ অন্যান্য সাধারণ মানুষদের মত একজন আইনজীবীকে গ্রেফতার করতে এবং তাকে ঘাটতে ও হয়রানি করতে আসে না। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত- এমন অনেক স্থানেই তাঁর প্রবেশপথে কেউ বাধা দিতে আসে না। আইনজীবী পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানসমূহে ন্যায়সঙ্গত অনেক Extra সুবিধা ও সম্মান পাওয়া যায়। সর্বোপরি ধনী-গরীব, শিল্পপতি, ক্রোড়পতি বা রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সর্ব পর্যায়ের মানুষ একজন সফল আইনজীবীকে সমীহ করে চলে।

জনসেবার সুযোগ

সমাজে এ পেশার গুরুত্ব যেমনই অপরিসীম তেমনই জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবার্থে ভূমিকা পালনের মত আইনজীবীর অভাবও প্রকট। অন্যদিকে জীবনের বিবিধ ক্ষেত্রের  সমস্যা নিয়ে কখনও পক্ষ কখনও প্রতিপক্ষ হয়ে আদালতের আশ্রয় নিতে হয় প্রায় প্রতিটি মানুষকেই। আর আদালত কেন্দ্রিক এবং আইনগত অন্যান্য সমস্যাগুলোই মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা- যার সমাধান তার নিজের পক্ষে তো নয়ই বরং অন্য কোন রথি মহারথিকে দিয়েও সম্ভব নয়, একমাত্র আইনজীবী ছাড়া। তাই যোগ্য ও ভাল আইনজীবীর প্রয়োজনে ছুটে বেড়াতে হয় গুটি কয়েক আইনজীবীর দ্বারে দ্বারে।

সুতরাং খুব সহজেই আমাদের নিকট অনুমেয় হবার কথা যে, জনসেবার বিপুল সুযোগ ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আইন পেশায়।

এ পেশার স্বাদ বা মজা

সমাজের সকল বিভাগে এবং মানব জীবনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ অপরাধ ও সমস্যা জেঁকে বসে আছে, যার মোটামুটি একটি স্বচ্ছ চিত্র আইনজীবীর চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। মজাটা এখানেই। মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের একান্ত সমস্যাগুলো যা সে অন্যদেরকে বলতে পারে না, বলতে চায় না- তা অনায়াসে আইনজীবীর নিকট উগরে দিয়ে থাকে।

একজন কোটিপতির জীবনের সমস্যা এবং একজন নিঃস্ব সহায়সম্বলহীন সমাজের নীচু তলার মানুষের সমস্যার স্বরূপগুলো কেমন- তার একেবারে গভীরে প্রবেশ করে হয়তো বা নিজেকে একজন আইনজীবী নতুনভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় কখনও কখনও। কখনও হয়তো বা তার ব্যক্তিগত জীবন দর্শনও পাল্টে যায় এমনতর নানান ঘটনার দোলাচলে। এসব দিক সহ সকল মানুষের মাঝে শ্রদ্ধা, সম্মান, আত্মমর্যাদা এবং সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আত্মতৃপ্তির সাথে বেঁচে থাকার মজাতো আছেই।

তথ্য প্রযুক্তি

আদিকাল থেকে মানুষ নিজেদের উন্নতির জন্য, সমাজের উন্নতির জন্য, জীবনকে আরো উপভোগ্য করে তোলার জন্য বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে তুলেছে। সভ্যতার বিকাশের সাথে যে কয়েকটি পেশা ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার মধ্যে একটি হলো প্রকৌশল বিদ্যা। এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে মানুষের উদ্ভাবনীশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, প্রখর কল্পনা শক্তি, বাস্তব জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের মানসিকতা ইত্যাদি।

বিজ্ঞানের এ ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আমরা পুরো বিশ্বকে একটি গ্রামের (Global village) সাথে তুলনা করতে পারি। পুরো বিশ্বের সমস্ত তথ্যাদি নিমিষেই সংগ্রহ করতে পারি। বিশ্বের যেকোন প্রান্তের মানুষের সাথে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। তাই বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তির যুগ।

যে দেশ বা জাতি প্রযুক্তিতে যত ভাল সে দেশকে বর্তমানে তত উন্নত দেশ বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকদের তালিকা থেকে আমরা দেখতে পাই প্রথম স্থানসহ প্রথম দশজনের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত।

অতএব আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি মনবুদ্ধি বিকাশ সাধনের জন্য, নিজেকে পুরোপুরি উপস্থাপনের জন্য, অর্থ-বিত্তশালী হওয়ার জন্য, সমাজে সম্মানজনক অবস্থানের জন্য আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশর বিদ্যাকে গ্রহণ করতে পারি।

এ পেশার সাথে জড়িত বিষয়গুলো হচ্ছে-

(ক) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (CSE)

(খ) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি (CIT)

(গ) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল (EEE)

(ঘ) ইলেক্ট্রনিক ও কমিউনিকেশন প্রকৌশল (ECE)

(ঙ) ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশল (ETE)

(চ) তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোর্সসমূহ

বাংলাদেশের মানুষ হিসাবে আমরা জীবন ধারণের জন্য দেশে বা বিদেশে সরকারি বা বেসরকারি চাকুরি করে থাকি। তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা করার পর একজন ছাত্র দেশে অথবা বিদেশে অতি সহজে সম্মানজনক চাকুরি পেতে পারে। তার জন্য খোলা রয়েছে দেশে-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য চাকুরির সুযোগ। প্রয়োজনে সে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্যবসা অতি সহজে শুরু করতে পারে।

এছাড়া অতি মেধাবী, উদ্যমী ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশাল গবেষণার সুযোগ যা থেকে তার সম্মান ও অর্থ দুটোই পাওয়া সম্ভব।

এই বিষয়গুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে নিম্নোক্ত পেশাসমূহ বেছে নেওয়া যেতে পারে-

(ক) টেলিকমিউনিকেশন

– মোবাইল কোম্পানিসমূহ (গ্রামীণ ফোন, একটেল, সিটিসেল, বাংলালিংক, টেলিটক, ওয়ারিদ টেলিকম ইত্যাদি)।

– মোবাইল কোম্পানির সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান (সিমেন্স, এরিকসন, নোকিয়া, হুয়াই ইত্যাদি)।

– মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত কোম্পানিসমূহ

– ল্যান্ডফোন (র‌্যাংগস, বে-ফোন, যুবক ফোন, সেবা টেলিকম, ইত্যাদি)

– সরকারি চাকুরি-টিএন্ডটি, বেতার, টেলিভিশন, ইন্টারনেট (Optical Fiber), Railway, গণপূর্ত (BCS-এর নমুনা বিজ্ঞাপ্তি দেখুন)।

(খ) বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন ও বন্টন

– সরকারি চাকুরি- Power station. Power grid, Power distribution (DESA, DESCO, পল্লী বিদ্যুৎ)

– বিদেশী কোম্পানিসমূহ (বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টন সংক্রান্ত)

(গ) ইলেক্ট্রনিক্স

– ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানীসমূহ (বৈদেশিক)

– বাংলাদেশী ঐ কোম্পানিগুলোর দপ্তর বা ডিলার (SINGER, RANGS, TOSHIBA, KONIKA, KONKA ইত্যাদি)

– মেডিকেল Diagnostic যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ (SIMENS ইত্যাদি)

(ঘ) সফটওয়ার নির্মাণ

– সফটওয়ার ডেভেলপার কোম্পানিসমূহ (দেশী/বিদেশী)

– Private firm

– Corporate Company

– Consultancy

– Outsourcing

(ঙ) হার্ডওয়ার

– কম্পিউটার যন্ত্রাংশ নির্মাণ (বৈদেশিক)

(চ) নেটওয়ার্কিং ও নিরাপত্তা

– অনলাইন ব্যাংকিং

– ওয়েব ডিজাইনিং

-ISP (Internet Service Provider)

– Network Security Specialrst

– Consultancy

(ছ) শিল্পকারখানা

-বিভিন্ন কারখানার যন্ত্রপাতি প্রস্তুত ও রক্ষণাবেক্ষণ

– বৃহৎ শিল্পকারখানার স্বয়ংক্রিয়া ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ

(জ) তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্যবসা

– সফটওয়্যার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান গঠন

– বিদেশী কোম্পানির দেশীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন

– বিভিন্ন হার্ডওয়্যার বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান গঠন

– – Consultancy firm গঠন

(ঝ) শিক্ষকতা

– স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সমূহে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষকতা

– ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিউটে শিক্ষকতা

– বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষকতা

– বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা

(ঞ) স্বাধীন পেশা (Freelancer)

– ঘরে বসে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের Freelancer হিসাবে কাজ করা- যার মধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট Outsourcing কাজ রয়েছে।

(ট) অন্যান্য পেশাসমূহ

তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স করে আরো কিছু কাজের ক্ষেত্র বের করা সম্ভব

-প্রোগ্রামিং (সিসি++, জাভা, ভিজুয়াল বেসিক ইত্যাদি)

– ওয়েব ডিজাইনিং (HTML, Scripting, Java, Flash ইত্যাদি)

– এনিমেশন (3D Studio Max, Flash, Maya ইত্যাদি)

– Video editing

– Computer game making

-Office automation

– CCNA, MCSE, CCSP CCDP ইত্যাদি।

উপরোক্ত পেশাসমূহের তালিকা দেখে আমরা অতি সহজেই বুঝতে পারি তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ক subject এর বিশাল সম্ভাবনার সমাহার। এ সমস্ত পেশায় ভালো ও সম্মানজনক অর্থ উপার্জন সম্ভব। এছাড়াও এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা অনেক উঁচু মানের হয়ে থাকে।

এ পেশার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ। এ সুযোগ যেমনি নিজে করে নেয়া যায়, তেমনি প্রতিষ্ঠান নিজির প্রয়োজনেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সুযোগ করে দেয়। যেকোন প্রতিষ্ঠানের সাথে ভালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারলে, তারাই দেশে- বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করে থাকে। এজন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগও রয়েছে।

উচ্চশিক্ষার মধ্যে রয়েছে MS,PhD ও বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি। দেশের মধ্যে রয়েছে BUET, DU, JU, এছাড়া বিদেশে রয়েছে অসংখ্য সুযোগ। বিদেশের মধ্যে USA, Canada, UK, Australia, Japan, Germany, South Korea অগ্রগণ্য। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের Scholarship রয়েছে। তবে সেগুলো শিক্ষকতা ও গবেষণাকে উদ্বুদ্ধ করে- যেমন Commonwealth Scholarship, Monoboshu Scholarship ইত্যাদি।

এছাড়া বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে Website ও গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ধরনের Scholarship এর ব্যবস্থা করা যায়। এই সব Scholarship এর মাধ্যমে যেমনি ভালো গবেষণা ও ডিগ্রি অর্জন করা যায় তেমনি ভালো পরিমাণে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়।

একজন প্রকৌশলী হিসাবে ও উপরোক্ত পেশাসমূহে অংশগ্রহণের জন্য চাই উল্লেখিত বিষয়সমূহে BSc বা সমমানের ডিগ্রি যা বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় কোর্স করার জন্য রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

এ পেশায় অংশগ্রহণের জন্য HSC তে অবশ্যই Physics, Chemistry ও Math থাকতে হবে। SSC তেও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে। যেহেতু এই পেশাটি খুবই লোভনীয় তাই চান্স পাওয়াটাও কিছুটা কষ্টকর হয়ে থাকে। এজন্য চাই SSC ও HSC তে ভাল GPA (GPA-5 হলে ভালো হয়) এছাড়াও HSC তে Physics, Chemistry ও Math বিষয়ে অবশ্যই ভালো গ্রেড পেতে হবে।

এখানে আরো কিছু ব্যাপার লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যে সকল ছাত্র বিভিন্ন প্রকার গাণিতিক সমস্যা নিজে সমাধান করতে ভালবাসে, মুখন্থ বিদ্যার পরিবর্তে বুঝে ও উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে পড়াশুনা করতে ভালবাসে, নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে ভালবাসে, সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করতে ভালোবাসে, নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে ভালবাসে, সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করতে ভালোবাসে, যারা দৃঢ়চেতা, কোন কাজ ধরলে শেষ না করে ক্ষান্ত হয় না তাদের জন্যা এ পেশা ভালো Adjust করবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে, এই পেশার সাথে মানব সভ্যতার অগ্রগতি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। সুতরাং এটি মূলত মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির সেবার মাধ্যমে জনসেবারই নামান্তর। বিচ্ছিন্নভাবে জনসেবার সুযোগও রয়েছে এ পেশার মাধ্যমে।

প্রস্তুতি পদ্ধতি

স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করা, পাশাপাশি গণিতের বিভিন্ন সমস্যা নিজে সমাধানের চেষ্টা করা। Physics ও জ্যামিতির উপর ভালো জ্ঞান রাখা। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা যেমন কুইজ, IQ, গণিত অলিম্পিয়ার্ড প্রভৃতি।

SSC তে অকশ্যই Science গ্রুপে পড়াশুনা করা এবং ভালো GPA অর্জনের চেষ্টা করা। Math ও Physics এর সমস্ত সমস্যা (অনুশীলনী ও অন্যান্য) সমাধান করা, এবং এক্ষেত্রে যথা সম্ভব নিজের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগানো। HSC পাশের পর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করা ও একই সাথে বিষয় নির্ধারণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার সময় সমস্ত বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন করা। বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা। কিছু প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক রাখা। সর্বোপরি চোখ কান খোলা রেখে নিজের বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো।

বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা-

BUET, DU, IUT, JU, RUET, KUET, DUET, CUET, SUST, KU, NSU, AIUB, BRAC University, NUB, STAMFORD, UIU ইত্যাদি।

প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান-

-দেশে IEB, BCC ইত্যাদি

– বিদেশে IEEE, ACM ইত্যাদি

চিকিৎসা পেশা

(ডেন্টাল এবং টেকনিশিয়ানসহ)

মহৎ পেশা হিসাবে যে বিষয়গুলো অতি প্রাচীন কাল থেকেই গণ্য, চিকিৎসা পেশা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাইতো এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও চিকিৎসা পেশাকে বলা হচ্ছে ‘The most noble profession of the world’. রোগ-শোক, জ্বরা-ব্যাধি মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় ডাক্তারী বা চিকিৎসা পেশার প্রয়োজনীয়তা কখনও কমেনি বরং নিত্য নতুন জটিল রোগের আবির্ভাব এ পেশার উপযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। পাশাপাশি মান বেড়েছে মানুষের জীবন যাত্রার। তাই সবাই চায় যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা। তাই বলা যায় বর্তমান বিশ্বে চাকুরির অন্যতম আকর্ষণীয় সেক্টর হলো চিকিৎসা সেবা। সম্মানের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম পেশা সম্ভবত চিকিৎসকের পেশা। এই পেশায় মানবসেবার যে অবারিত সুযোগ রয়েছে অন্য কোন পেশায় তা নেই। এতে আর্ত মানবতার সেবায় আত্নোৎসর্গ করে স্বর্গীয় সুখ লাভ করা যায় আর তাতেই একজন ডাক্তার নিজেকে সফল ভাবতে পারেন। তাছাড়া উপার্জনের দিক থেকেও চিকিৎসকরা এগিয়ে আছেন অন্যদের চেয়ে।

তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এই পেশায় সৎ থেকে বিপুল অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে যা তাকে নিজস্ব আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের পাশাপাশি সমাজের দুঃখ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিবে। এই পেশায় যে ব্যাক্তি-স্বাধিনতা থাকে তা অন্য পেশায় সত্যিই বিরল। চিকিৎসকগণ ইচ্ছা করলে কোন ধরনের সরকারি কাজে যোগদান করতে পারেন অথবা, “প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমেও সুনাম ও অর্থ বিত্ত লাভ করতে পারেন। পাশাপাশি সমাজ সেবার সুযোগও নিতে পারেন। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তারগণ সরকারি ক্যাডারভূক্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর চাকুরির সুবিধা নিতে পারেন। তবে অসুবিধা হলো বেশির ভাগ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের এই পেশার প্রতি ঝোঁক থাকার দরুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া এখন অনেক চেষ্টা ও সাধনার বিষয়। তাই এই পেশায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য পড়াশুনার ব্যাপারে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে।

যেহেতু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসি এর ফলাফলের উপর ১০০ মার্কস্ থাকে তাই এই পরীক্ষাগুলোতে অবশ্যই জিপিএ ৫ পেতে হবে। যেহেতু পরীক্ষা হবে MCQ পদ্ধতিতে এছাড়া এইচএসসি- এর জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যা বইয়ের প্রতিটি লাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়েও বিশেষ পারদর্শী হতে হবে। কারণ ১০০ মার্কস্ MCQ পরীক্ষায় এখানে থাকবে ২৫। চিকিৎসা শাস্ত্রের বইগুলোর ব্যাপ্তি ও বিষয়বৈচিত্র এতটা ব্যাপক যে একজন মেডিকেল ছাত্রকে অধ্যয়ন নিয়েই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়। তাই অধিক সময় নিয়ে অধ্যয়ন করার অভ্যাস না থাকলে এই পেশায় ভাল করা কষ্টকর। তাছাড়া অধিক সময় নিয়ে রোগীদের কথা শুনতে হয় বলে প্রচুর ধৈর্য ও অধ্যবসায় থাকতে হবে। জরুরি ক্ষেত্রে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে ডাক্তারদের পর্যাপ্ত উপস্থিত বুদ্ধি থাকতে হয়। সবকিছু মিলেয়ে চিকিৎসা পেশা যেমন মহান তেমনি এই পেশায় ভালক করতে হলে যথেষ্ট যোগ্যতাও থাকতে হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য শাখা হল দন্ত চিকিৎসাশাস্ত্র, দ্রুত প্রসারলাভকারী একটি পেশা হিসাবে এটি এখন সর্বজন স্বীকৃত। উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্যান্য শাখাগুলোর তুলনায় দন্ত চিকিৎসাশাস্ত্রটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত। এই পেশাতেও রয়েছে যথেষ্ট সুনাম লাভ করার সুযোগ। তাছাড়া জনসেবার সুযোগতো রয়েছেই। আর্থিক উপার্জনের দিক থেকেও তারা কোন ভাবেই পিছিয়ে নেই। মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার মতই পরিচালিত হয় ডেন্টাল শিক্ষা ব্যবস্থা, শুধুমাত্র দন্তবিজ্ঞানের (Dentology) উপর তাদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মতই। কাজেই কেবলমাত্র মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীরাই এই পেশায় আসার সুযোগ লাভ করবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল মেডিকেল টেকনিশিয়ানরা। একটি হাসপাতাল চালানের জন্য ডাক্তার, নার্সদের পাশাপাশি মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের ভূমিকাও কোন অংশে কম নয়। তাই দেখা যায়, এখন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে টেকনিশিয়ানরা মোট বেতনে কাজ করছে। এই পেশায় যাবার জন্য খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার হয় না। এসএসসি অথবা এইচএসসি,র পরে মেডিকেল  টেকনোলজির যেকোন একটি বিষয়ে ডিপ্লোমা নিলেই হয়। বর্তমান বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজেগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখান থেকে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে ‍ডিপ্লোমা করা যায়। এছাড়া সার্জারীর অপারেশন থিয়েটারে অথবা MRI, CT Scan এর মত যন্ত্রচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসাবে চাকুরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সাংবাদিকতা

ভূমিকা

লেখালেখিতে যিনি আনন্দ পান সাংবাদিকতাকে তিনি পেশা হিসেবে নিতে পারেন। পৃথিবী নামক এ গ্রহে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনকার সংবাদ প্রবাহ যার মধ্যে আগ্রহের জন্ম দেয় তিনি সাংবাদিকতায় ভাল করবেন। বিশ্লেষণী শক্তি দিয়ে মানবজীবন ও মানব সমাজকে আলোচনা, সমালোচনা ও বিবেচনায় যার পক্ষপাতিত্ব তিনি সাংবাদিকতায় সন্তুষ্ট হতে পারেন। নিরপেক্ষ মানসিকতায় যিনি সমাজ ও নিজেকে সবসময় হালনাগাদ (up-to-date) দেখতে চান তাঁর জন্য এ পেশা কল্যাণের। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যিনি নিজেকে ঋণী মনে করেন সাংবাদিকতা পেশার মাধ্যমে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ তাঁর অনেক বেশি। ন্যায়, কল্যাণ ও আদর্শের সেবায় সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। মোটকথা পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য, সময়োপযোগী এবং সম্ভাবনাময়।

সাংবাদিকতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ-

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এদেশে এখন পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং সম্ভাবনাময়। বিশ্বায়নের প্রভাবে এবং গণতন্ত্র বিকাশের সাথে সাথে মিডিয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের অন্যতম শক্তিশালী অংশ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ফলে প্রসারের সুযোগ পাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। দেশি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিদেশীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে সম্ভাবনাময় এ সেক্টরে। আসছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ। ফলে বিনোদনমূলক টিভি ও রেডিও চ্যানেলের পাশাপাশি বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টার বাংলা নিউজ চ্যানেল ও মিউজিক চ্যানেল চালু হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সংবাদ কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- সংবাদ সংস্থাগুলো। এই কিছুদিন আগেও যেখানে সাংবাদিকতা বলতে সংবাদপত্রে কাজ করা বুঝাতো সেখানে এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অপ্রতিরোধ্য অবস্থা। ফলে প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যৌথভাবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রকে করছে অনেক বেশি প্রসারিত। প্রসারের সাথে সাথে বাড়ছে প্রতিযোগিতা।

এ পেশার জন্য প্রয়োজন

পূর্বে সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে (যেমন- সাংবাদিকতা) ডিগ্রি থাকার দরকার ছিল না। যেকোন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত পছন্দে বা আগ্রহে সাংবাদিকতায় আসতে পারত। এখনও সাংবাদিকতায় নিয়োজিত এদেশীয় সংবাদকর্মীদের সিংহভাগের সাংবাদিকতা বিষয়ে একাডেমিক ডিগ্রি নেই। কিন্তু সাংবাদিকতায় গুণগত মান নিশ্চিত করার তাগিদে এখন মানসম্পন্ন সংবাদ সংস্থা, টিভি ও রেডিও চ্যানেল এবং সংবাদপত্রগুলো সাংবাদিকতায় ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সাংবাদিকতায় গ্রাজুয়েট সংখ্যা কম হওয়ায় বাংলাদেশে এখনও যেকোন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিক হবার সুযোগ অবারিত। এমতাবস্থায় এ রচনার ভূমিকাতে বর্ণিত বিষয়সমূহে যারাই সচেতন তারাই Career হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করতে পারেন।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এখন বিকাশমান একটি সেক্টর বাংলাদেশে। এ সেক্টরে আগ্রহী ব্যাক্তিগণের অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি ভাষার সুন্দর উচ্চারণ, কথা বলায় মুন্সিয়ানা, পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি সচেতনতা সর্বোপরি ব্যক্তিগত Smartness বজায় রাখা প্রয়োজন। কারণ এখানে বিষয়গত দক্ষতার পাশাপাশি প্রদর্শনের একটি ব্যাপার বিদ্যমান।

বিশ্বায়নের প্রভাবে সাংবাদিকতা এখন একটি বৈশ্বিক প্রফেশন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাগুলো নিজেদের ব্যবসা ও অন্যান্য স্বার্থের কারণে বিভিন্ন দেশে তাদের সংবাদদাতা নিয়োগ করে থাকেন। বাংলাদেশেও এ ধরনের বহু বিদেশী সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা বর্তমানে তাদের রিপোর্টার হিসেবে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়োগ দেন। এক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি বহুল ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির উপর ব্যাপক দক্ষতা থাকা অপরিহার্য।

শুরুর সময়-

ছাত্রজীবনই সাংবাদিকতা শুরুর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এদেশে সাংবাদিকদের প্রায় শতভাগ ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা পাঠ শুরু করেন। যারা সাংবাদিকতা কিংবা অন্যান্য বিষয়ে পড়েন কিন্তু সাংবাদিক হতে চান তাঁরা সকলে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রজীবনেই কোন না কোন সাংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফলে লেখাপড়া শেষে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বেই প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাটুকু অর্জিত হয়। সুতরাং স্নাতক প্রথম অথবা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই একজন ভবিষ্যত সাংবাদিককে কাজ শুরু করা উচিত।

উপসংহার

সাংবাদিকতাকে কেউ যদি পেশা (Career) হিসেবে নিতে চান তাহলে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো সাংবাদিকতা ক্রমাগত অনুশীলনে হয়ে উঠা একটি প্রফেশন। গভীর মমতা, ধৈর্য্য, সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘ অনুশীলনে এ পেশা আপনাকে পৌছে দিতে পারে সফলতার শীর্ষ চূড়ায়। আপনি হয়ে উঠতে পারেন জাতির গর্বিত সন্তান।

মিডিয়া টেকনোলজি

(Media Technolgy)

ভূমিকা

প্রযুক্তির প্রভাবে গুহাবাসী আদিম মানুষ এখন পৃথিবী থেকে বহু হাজার মাইল দূরের ভিনগ্রহে বসবাসের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। জীবনের প্রতিটি অর্জন এখন প্রযুক্তিময়। প্রযুক্তির স্পর্শ ছাড়া সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং আনন্দময় মানব জীবন এখন ভাবনার অতীত। আধুনিক মানুষের জীবন ভাবনায় অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান হচ্ছে গণমাধ্যম বা মিডিয়া, যার সিংহভাগ প্রযুক্তি নির্ভর। গণমাধ্যমের সাহায্যে মানুষের উপর যে প্রভাব বিস্তার করা যায় অন্যকোন মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও ইহুদিরা শুধুমাত্র মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব অক্ষুন্ন রেখেছে যুগের পর যুগ। কিন্তু মিডিয়া পরিচালনার জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সে প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য দক্ষ প্রযুক্তিকর্মী – যারা মিডিয়ার নেপথ্য নায়ক।

মিডিয়া টেকনোলজিতে বাংলাদেশ

বহু আগে থেকেই বাংলাদেশে মিডিয়া টেকনোলজির ব্যবহার ছিল, সিনেমা, নাটক, টিভি প্রোগ্রাম নির্মাণ, পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। হালে স্যাটেলাইট সম্প্রচার ও কম্পিউটার প্রযুক্তির কারণে এ গতিতে অভূতপূর্ব নতুন মাত্রা সংযুক্ত হয়েছে। ফলে চাহিদা বেড়েছে-মিডিয়া টেকনিসিয়ানদের। Media related যন্ত্রপাতি অপারেটরদের এ কাজ এখন বাংলাদেশে একটি মূল্যবান পেশা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তাছাড়া বহির্বিশ্বেও এ পেশার লোকদের চাহিদা ব্যাপক।

মিডিয়া টেকনোলজি যেভাবে

মিডিয়া টেকনোলজি গণমাধ্যমের নানাবিধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে শুধু মিডিয়ার ক্ষেত্রে যেগুলো দরকার তা হলো-প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রেস পরিচালনায় দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং ফটো সাংবাদিক। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে বিষয়টি ব্যাপক, কারণ Audio এবং Video দুটি বিষয়ই ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আধুনিক বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা পরিচালনার দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। ক্যামেরায় ধারণকৃত বিষয়গুলো এডিটিং, ডাবিং, রেকর্ডিং ইত্যাদি প্রয়োজনে ল্যাব অপরিহার্য। ল্যাব মানেই সেখানে প্রয়োজন টেকনিসিয়ান।

যেভাবে এ পেশায় আসা যায়

ব্যক্তিগত আগ্রহ হচ্ছে এ পেশায় আসার একমাত্র উপায়। শখ হিসেবে এক সময় যে ব্যক্তিবর্গ ক্যামেরা হতে নিয়েছিলেন- তাদের অনেকেই এখন এ বিষয়ের পেশাজীবী। যেকোন একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে এ ক্ষেত্রে কাজ করা যেতে পারে। তবে এ পেশায় উন্নতি করতে হলে ট্রেনিং ও একাডেমিক ডিগ্রির বিকল্প নেই।

আজকাল যে কেউ Video Photo ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়ে Photo সাংবাদিক অথবা Video সাংবাদিক হয়ে বিভিন্ন Audio, Video অথবা Print Media- তে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে পারেন। এজন্য মূলত দরকার একাগ্রতা এবং কাজকে আপন করে নেওয়ার মানসিকতা।

একজন শিক্ষার্থী ছাত্রাবস্থায়ই এ কাজ শুরু করতে পারেন। কারণ ডিগ্রি বড় হবার পাশাপাশি দক্ষতার ব্যবহারের ক্ষেত্র অনেক বড় হতে থাকবে। Print, Photo এবং Video একটি ডকুমেন্ট বা দলিল হিসাবে কাজ করে এবং তা মানুষের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়।

এ বিষয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

ক) জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউট

খ) প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (PIB)

গ) ফটোগ্রাফির উপর বিভিন্ন কোর্স-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় TSC- তে এ ধরনের সংগঠন আছে।

ঘ) ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট ইত্যাদি

এইচএসসি উত্তর সম্ভাবনাময় পেশাসমূহ

আমাদের দেশে সর্বাগ্রে ভাল চাকুরি পাওয়ার সুযোগ বলতে গেলে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীতেই রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই এই পেশায় প্রবেশের জন্য দরখাস্ত করা যায়। এখানে Chance পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে সাহসিকতা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা, শারিরীক যোগ্যতা ও সুস্থতা, সঠিক (Proper) মনোস্তাত্ত্বিক মান, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, ক্ষিপ্রতা ইত্যাদি। সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে শুধুমাত্র চৌকষ ছেলে/ মেয়েরাই এই পেশায় Selected হওয়ার উপযোগী। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষার উপরে কথ্য এবং লেখ্য উভয় পর্যায়ে ভাল মানের দখল এই পেশায় সুযোগের অন্যতম পূর্ব শর্ত।

Selection পাওয়ার জন্য এখানে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এবং এর পরে দুই বছরের কঠিন ট্রেনিং গ্রহণ করতে হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী অর্থাৎ এ সকল ক্ষেত্রেই এই নিয়ম একই ধরনের। তবে সেনা মেডিক্যাল কোরের জন্য ক্যাডেট নির্বাচনে দু’ধরনের প্রথা চালু রয়েছে। প্রথমতঃ এইচএসসি পাশ করার পরে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়া এবং সেনাবাহিনীর খরচে এম বি বি এস পড়া। আর্মড কোর্সেস মেডিকেল কলেজে এই ধরনের ক্যাডেটদেরকে এম বি বি এস ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে প্রার্থী এম বি বি এম পাশ করার পরে আর্মি মেডিকেল কোরের অফিসার হিসাবে নির্বাচনী পরীক্ষাসমূহে অংশ গ্রহণ করবে।

সামরিক বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগের পাশাপাশি এইচএসসি পাশ Candidate- এর অল্প বয়সে ভাল চাকুরি পাওয়ার আরও একটি ভাল সুযোগ রয়েছে। তা হলো মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পেশা গ্রহণ করার। এই সুযোগও একই রয়সে আসে।

এসব পেশাসমূহে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে একটি নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। তা হলো নির্বাচিত হওয়ার পরে দুই বছরের ট্রেনিং। এই ট্রেনিং চলাকালীন ট্রেনিং-এর পাশাপাশি বিএ/বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়নের সুযোগ। তাই ট্রেনিং সমাপ্তির সাথে সাথেই Candidate গ্রেজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করে থাকে।

এই ট্রেনিং এর আর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা হচ্ছে ট্রেনিং প্রাপ্তির পরে ব্যক্তি ভিন্ন ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হবে। বলা হয়ে থাকে যে কোথাও যদি একশত জন ব্যক্তি একত্রে জটলা করতে থাকেন আর সেখানে যদি সামরিক বাহিনীর একজন মাত্র অফিসার উপস্থিত থাকেন তবে তাকে সহজেই Identify করা যাবে। কেননা সামরিক বাহিনীর ট্রেনিং একজন ব্যক্তির চলা, ফেরা, বসা, দাঁড়ানো, কথা বলার ভঙ্গি তথা পম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করে দেয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সমস্ত ক্ষেত্রে এই ট্রেনিং-এর প্রভাব অপরিসীম। এরা জানে ঝড়ের গতিতে সমস্যার অকুস্থলে পৌঁছাতে, ঠান্ডা মাথায় সমস্যার সমাধান করতে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং দৃঢ় পদক্ষেপে গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে। তাই সাহসী সৈনিক জীবন যুদ্ধে সাধারণত হেরে যায় না। বরং যুদ্ধ ক্ষেত্রের ক্ষিপ্রতা তার সকল কর্মকাণ্ডে পরিলক্ষিত হয়- এমনকি বেসামরিক কর্মক্ষেত্রেও। সে জানে সামষ্টিক কর্মকাণ্ডে কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়।

সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড প্রাপ্তি এবং মেরিন একাডেমীতে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হলো।

দেশ যখন বহিশত্রুর আক্রমণের সম্মুখীন হয়। জাতীয় জীবনে যখন সমূহ বিপদের ঘনঘটা, স্বাধীনতা যখন সংকটময় অবস্থায় পৌঁছে, তেমনি দূর্দিনে এই সাহসী সৈনিকেরাই দেশের কান্ডারী হয়ে থাকেন। জীবন বাজী রেখে তারা এগোতে থাকেন শত্রু মুক্ত করার মানসে। এই যুদ্ধ জীবন-মরণের। তাই এর স্বাদ ভিন্নতর। দেশপ্রেম তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সামনে এগোনোর, আর প্রেরণা যোগায় সমস্ত দেশবাসী সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে যেতে।

সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি

সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি প্রকৃতপক্ষে যৌবনের জন্য একটি উপযোগী পেশা। পেশা হিসেবে উত্তম ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে এটা একটা। এই পেশায় যেমন রয়েছে একদিকে সম্মান, দেশ সেবার সুযোগ, সুন্দরভাবে জীবন যাপনের সুযোগ আবার পাশাপাশি বেতন, ভাতা, প্রমোশন, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা। সর্বোপরি অল্প বয়সে ভাল চাকুরি পাওয়ার এটি সবচেয়ে বড় সুযোগ।

সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো- সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী। এই বাহিনীসমূহ যথাক্রমে স্থলভূমি, জলভূমি (সমুদ্র ভাগ) এবং আকাশ অঞ্চল পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সর্বাপেক্ষা বেশি বলে সেনাবাহিনীর সেপাইদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর সেপাইদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাদের পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের সংখ্যাও বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে। সে কারণে সেনাবাহিনীতে প্রমোশনের সুযোগও বেশি হয়ে থাকে। এর পরে এই ধরনের সুযোগ যথাক্রমে নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সাধারণভাবে এই তিনটি বাহিনীতে চাকুরির জন্য বা চাকুরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী হচ্ছে: সাহসিকতা, শৃংখলাবোধ, বুদ্ধিমত্তা, আনুগত্য, আজ্ঞানুবর্তিতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ইত্যাদি। বাংলাপ এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখ্য ও কথ্য উভয় ক্ষেত্রেই ভাষার উপরে দখল এই পেশায় চাকুরি পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত। এই বাহিনীসমূহে চাকুরি পাওয়ার জন্য উপরোক্ত গুণাবলী ব্যতিরেকেও শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। তা হলো ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা (কম পক্ষে) এবং শারীরিক ভাবে সুস্থতা। বুকের মাপ : পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৭৬ সে.মি. (স্বাভাবিক),  ৮১ সে.মি. (সম্প্রসারিত); মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৭১ সে.মে (স্বাভাবিক), ৭৬ সে.মি. (সম্প্রসারিত)। বৈবহিক অবস্থা : অবিবাহিত। নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে সাধারণভাবে উচ্চ মাধ্যমেক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন:

সেনাবাহিনী : মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট/ সমমান পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০/ ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ। তবে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন প্রার্থীগণও শর্তসাপেক্ষে আবেদন করতে পারবে।

নৌবাহিনী : গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানসহ জিপিএ ৩.০/ ২য় বিভাগে এসএসসি (বিজ্ঞান)/ ও লেভেল এবং এইচএসসি (বিজ্ঞান), এ লেভেল অথবা সমমানের পরীক্ষায় পাস।

বিমান বাহিনী : উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় গণিতসহ দ্বিতীয় বিভাগ/ সমমানের জিপিএ ৩.০০ পেতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন প্রার্থীরাও শর্তসাপেক্ষে আবেদন করতে পারবে।

বিমানবাহিনীর অন্যান্য শাখা : মেইন্টেন্যান্স টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগ/সমমান (জিপিএ-৩) সহ উভয় পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থ বিদ্যায় সর্বনিম্ন ৫০% নম্বর অথবা সমতুল্য গ্রেডপ্রাপ্ত। এছাড়া মেইন্টেন্যান্স টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন এন্ড ইলেকট্রনিক্স এবং মেইন্টন্যান্স টেকনিক্যাল আর্মামেন্ট শাখায় একই ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। লজিস্টিক শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ অথবা সমমান জিপিএ (৩.০০)। এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ/সমমান (জিপিএ ৩.০০)। এডিডব্লিউসি (এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন্স কন্ট্রোলার)-এর জন্য একই যোগ্যতা লাগে। একাউন্টস শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান/ ব্যবসায় শিক্ষা) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ অথবা সমমান জিপিএ (৩.০০)। মেটিয়রলজি শাখার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পরীক্ষায় পদার্থ ও গণিতসহ দ্বিতীয়/ সমমান জিপিএ (৩.০০)।

প্রার্থীকে নিম্নোক্ত বয়স সীমার মধ্যে থাকতে হবে: ১৭ বৎসর- ২১ বৎসর

ভর্তি প্রার্থীর অযোগ্যতা

 সেনা/ নৌ/ বিমান বাহিনী অথবা যে কোন সরকারি চাকুরি হতে অপসারিত/ বরখাস্ত।

 আইএসএসবি কর্তৃক স্ক্রিনড আউট/ প্রত্যাখ্যান (একবার স্ক্রিনড আউট ও একবার প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদন করা যাবে

 যে কোন বিচারালয় হতে দণ্ডপ্রাপ্ত।

 সিএমবি বা আপিল মেডিক্যাল বোর্ড কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত।

 ক্রটিপূর্ণ/ অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র।

সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অতিক্রম করতে হবে:

(ক) প্রাথমিক ইন্টারভিউ

এ পর্যায়ে শুধুমাত্র একটি মৌখিক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে প্রার্থীকে। যে সমস্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তা সাধারণতঃ প্রার্থীর নিজস্ব পরিচয় সম্পর্কিত, পরিবার সম্পর্কিত, যে বিষয়ে পড়াশুনা করছে সেই বিষয়ের উপরে, বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্ব সম্পর্কে। এর বাইরে কিছু মনস্তাত্তিক বিষয়ক প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করা হতে পারে।

(খ) লিখিত পরীক্ষা

লিখিত পরীক্ষার সময় ও মানবন্টনঃ বিভিন্ন বাহিনীর ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার সময় ও মানবন্টন এক পলকে জেনে নেয়া যাক।

সেনাবাহিনী

বিষয় সময় নম্বর
বাংলা

 

ইংরেজী

গণিত

সাধারণ জ্ঞান

১ ঘন্টা

 

১ ঘন্টা

৩০ মিনিট

১ ঘন্টা

৫০

 

৫০

৫০

৫০

নৌবাহিনী

বিষয় সময় নম্বর
পদার্থ বিজ্ঞান

 

ইংরেজী

গণিত

সাধারণ জ্ঞান

১ ঘন্টা

 

১ ঘন্টা

১ ঘন্টা

১ ঘন্টা

১০০

 

১০০

১০০

১০০

বিমানবাহিনী

বিষয় সময় নম্বর
আইকিউ

 

ইংরেজী

১ ঘন্টা

 

১ ঘন্টা

১০০

 

১০০

এই পরীক্ষাসমূহে উচ্চ মাধ্যমিক মানের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। অবশ্য গনিতের প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার সাধারণ গণিতের মানের মত প্রশ্ন হয়ে থাকে।

গ) ISSB পরীক্ষাঃ সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হচ্ছে ISSB । এটা ৩/৪ দিনের পরীক্ষা যে সময়ের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর অনেকগুলো পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে- (ক) আই কিউ (Intelligence Quotient), (খ) ব্যাক্তিগত বাধা অতিক্রম, (গ) দলগত বাধা অতিক্রম, (ঘ) অর্ধদলগত বাধা অতিক্রম, (ঙ) গল্প লেখা (ছবি দেখে এবং অসমাপ্ত গল্প সমাপ্ত করা), (চ) অতি অল্পসময়ের মধ্যে প্রদত্ত শব্দ ব্যবহার করে বাক্য গঠন, (ছ) অসমাপ্ত বাক্য সমাপ্ত করণ, (জ) প্ল্যানিং, (ঝ) রচনা লিখন, (ঞ) কিছু মনস্তাত্তিক বিষয়ক পরীক্ষা, (ট) ISSB এর প্রেসিডেন্টের সাথে ভাইভা।

এ সকল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে অতি অল্প সময় দিয়ে অনেক কাজ করতে বলা হয়ে থাক দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারাই হচ্ছে এই পরীক্ষাসমূহের সবচেয়ে বড় বিষয়। এর বাহিরে দুটো বিষয় অতি জরুরি – পরীক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা এবং তার মনস্তাত্তিক মান। সবগুলো পরীক্ষাতেই দ্রুততার সাথে বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর ‍দিতে হয়। পরীক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এসকল পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে।

উপরোক্ত  পরীক্ষা ছাড়াও আর এক ধরনের পরীক্ষা রয়েছে, তা হচ্ছে ডাক্তারী পরীক্ষা। বেশ নিখুত ভাবেই এই পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে পরীক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য।

ব্যক্তিগত বাধা অতিক্রম: পরীক্ষায় ভাল করার জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি দরকার। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকে ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ৮টি বাধা অতিক্রম করতে হয়। এগুলো হলো- উচ্চ লম্ফ (চার ফুট উচ্চতা), দীর্ঘ লম্ফ (নয় ফুট), টারজান সুইং, বার্মা ব্রীজ, উপরে ঝুলানো টায়ারের মধ্যে দিয়ে পার হওয়া, মানকিজ রোপ, Jig jug obstacle । এই বাধাসমূহে পাশ করার জন্যে শারীরিক stamina সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় কৌশলের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও এই আড়াই মিনিট সময় পরিপূর্ণ রূপে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রার্থীর শারীরিক stamina বৃদ্ধির। সেজন্যে প্রত্যহ কমপক্ষে ২ মাইল জগিং করা দরকার।

Presidenntial viva- তে ভাল করার জন্য সুন্দরভাবে কথা বলার দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। ভাইভতে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ঠিকভাবে বুঝে অল্প কথায় সঠিক উত্তর দিতে হবে। ISSB পরীক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভাল করার জন্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপরে পড়াশুনা করতে হয়।

সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। একই সাথে যেমন শারীরিক প্রস্তুতি দরকার পাশাপাশি ভাষার উপরে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য প্রার্থীকে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখ্য ও কথ্য উভয় দিকেই যোগ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। এর জন্য জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া দরকার নিষ্ঠার সাথে।

ব্যাংকার

ভূমিকা একটি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অন্যতম পূর্ব শর্ত হল সেই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা। ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর মূলস্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একটি দেশের ব্যাংকিং খাত যত বেশী সুপ্রতিষ্ঠিত সেই দেশের অর্থনীতি তত দ্রুত উন্নতি লাভ করবে। স্বাধীনতালগ্নে এই দেশে গুটিকয়েক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিানের সূচনা  হলেও ৯০ এর দশকের পর এই দেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং কাঠামোতে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। এইসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যেমনভাবে অবদান রাখছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, তেমনিভাবে অবদান রেখে চলেছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধানে। অধিক বেতন আর সুন্দর ও স্বচ্ছল জীবন-যাপনের আশায় আজ দেশের বহু শিক্ষিত যুবক পেশা হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংককে বেছে নিতে শুরু করেছে।

কেন পেশা হিসেবে ব্যাংকে চাকুরি?

প্রায় ১৪.৪৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশে বেকার সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ বেকার। তার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিক্ষিত বেকার। বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন অধিক কর্মসংস্থান। ৯০ দশকের পর বাংলাদেশে একটি বিকাশমান কর্মসংস্থান হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৬ অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ৪টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৫টি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিদেশী ব্যাংক ৯টি। এই সকল ব্যাংকগুলোর মোট শাখা রয়েছে ৬৪১২টি। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রসারের সাথে ব্যাংকিং খাতেরও প্রসার ঘটছে যেখানে প্রতিবছর কর্মসংস্থান হচ্ছে বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের। ব্যাংক একটি চ্যালেঞ্জিং চাকুরি। পাশাপাশি রয়েছে অধিক বেতনের নিশ্টয়তা এবং উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ। প্রযুক্তি প্রসারের এই যুগে ব্যাংককে পেশা হিসেবে নিয়ে দেশ বিদেশে নিজেকে একজন চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী যতই অর্থনীতির প্রসার ঘটবে ব্যাংক খাতেরও প্রসার ঘটবে সেই অনুপাতে। সুতরাং নিজেকে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্ত করা, দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করা, উন্নত জীবন-যাপন, নিজেকে দেশ বিদেশে অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যাংক হতে পারে একটি অন্যতম ক্ষেত্র।

সমাজে এই Profession এর প্রয়োজনীয়তা

ব্যাংকে চাকুরি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, এই চ্যালেঞ্জিং পেশার মাধ্যমে সমাজকে বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করা যায়। যার মাধ্যমে সমাজে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শক্ত ভিত তৈরি করা যায়, যা সমাজে এই পেশার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য-

দেশ ও সমাজকে অর্থনৈতিক মুক্তি দান।

সমাজ থেকে দারিত্র বিমোচন করা।

অর্থনৈতিকভাবে নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন।

ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের অর্থ সঠিক ও বৈধ উপায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করা।

অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করা।

দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ।

ভু-স্বামী ও জোতদারদের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করা।

ঋণ প্রদান ও তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদেরকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা।

সমাজে সৎ ও যোগ্য মানুষ সৃষ্টিতে সহায়তা করা।

উপরোক্ত দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে একজন ব্যাংকার সমাজ ও দেশকে সহায়তা করতে পারে বিভিন্নভাবে। প্রতিষ্ঠা করতে পারে অর্থনৈতিক সুশাসন, মুক্ত করতে পারে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান যা দেশ ও জাতিকে দিতে পারে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি। সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান লাঘব, সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি সমাজ ও দেশে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যা বহু পেশার মানুষেল দ্বারা সম্ভব নয়। তাই বলা যায় সমাজে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যাংকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

এই Profession এ যাওয়ার জন্য কোন ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন

ব্যাংক যেহেতু একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা সুতরাং এই পেশায় আসার পূর্বে নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতার জন্ম দিতে হবে। সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, পরিশ্রম করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। উধ্বতনদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা ও অন্যের কাছ থেকে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

ব্যাংকিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে। যথা-

(ক) শিক্ষাগত যোগ্যতা। যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হলে ব্যাংককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ থাকবে, তবে বিশেষ করে বিবিএ ও এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি) ডিগ্রি থাকলে বর্তমানে ব্যাংকে চাকুরি পাওয়ার জন্য সুবিধা হয়। তবে বিশেষ কোন বিষয় উল্লেখ না থাকলে যে কোন বিষয়ে পাশ করে ব্যাংকে চাকুরির জন্য আবেদন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে অফিসার ও সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ সকল বিষয়ের জন্য উন্মক্ত থাকে। তবে টেকনিক্যাল পোস্টে (যেমন কম্পিউটার) নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ থাকতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগের জন্য কর্মার্সের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। Computer বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থা Computer ভিত্তিক।

শারীরিক যোগ্যতা

সরকারি/ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের পূর্বে শারীরিক যোগ্যতা পরিমাপের জন্য মেডিকেল বোর্ডের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।

মানসিক যোগ্যতা

ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে সর্বদাই আর্থিক লেনদেনের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর্থিক লেনদেনকে সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন সততা ও কর্তব্য নিষ্ঠার। ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সততা, নিয়মানুবর্তিত, সময়ানুবর্তিতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি উল্লেখিত বিষয়গুলো নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে নিজেকে একজন ভলো ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

নিয়োগ পরীক্ষায় কৃতকার্য

ব্যাংকে চাকুরি পেশা হিসেবে নিতে হলে আপনাকে যোগদানের পূর্বে একটি প্রতিযোগিতা মূলক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে।

লিখিত পরীক্ষা

ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা পরিচালনা ও খাতা মূল্যায়ন সংক্রান্ত সমূদয় কাজ মূলতঃ সম্পাদন করে থাকে আইবিএ ও বিআইবিএম। এর ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য থাকে না। দুই অংশে বিভক্ত (MCQ I Written) পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা (১ ঘন্টা + ২ ঘন্টা) ও পূর্ণমান ২০০ (১০০+১০০)। তবে এটি ব্যাংক ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। MCQ অংশের সবকটি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা, গাণিতিক যুক্তি, আইকিউ, দৈনিন্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে ৩৫/৪০ নম্বরের গাণিতিক বিষয় আসে। এছাড়া English Language & Communication Skill, Grammar & Composition থেকেই ৪০/৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য যে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলো হচ্ছে ব্যাংক সংক্রান্ত, IQ Test, Computer literacy, Data Presentation ইত্যাদি। তবে ইসলামী ব্যাংকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন পত্রে একটি অংশ থাকে ইসলামী বিষয়ের উপর।

মনে রাখতে হবে লিখিত পরীক্ষা মোটামুটি Standard এবং ইংরেজি বিষয়ের উপর বেশি নজর দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার কোন নির্দিষ্ট নম্বর নেই তবে সাধারণত ৭০ শতাংশ এর উপর নম্বর পেলে কৃতকার্য হওয়া যেতে পারে। সুতরাং একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি নিজেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য তৈরি করে তুলতে পারেন। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য সহজ ও সোজা কোন পথ নেই। এর জন্য আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদী এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

মৌখিক পরীক্ষা

লিখিত পরীক্ষায় ‍কৃতকার্য হওয়ার পর প্রার্থীকে একটি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এখানে আপনাকে বিষয়ভিত্তিক, চাকুরি সংক্রান্ত, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের (বিশেষ করে চলমান বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গের) উপর প্রশ্ন করা হতে পারে। মনে রাখতে হবে মৌখিক পরীক্ষায় একটি পদের জন্য একাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই এখান থেকেও বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে কৃতকার্য হওয়ার জন্য নিজেকে তথ্য বহুল করে গড়ে তুলতে হবে।

এই পেশার সুযোগ সুবিধা

ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে সেবা করার যেমন সুযোগ আছে তেমনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা আছে। যেমন-

(ক) Social Status: সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ আছে এই পেশার মাধ্যমে। যার কারণে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ একজন ব্যাংকারকে শ্রদ্ধা করে থাকেন যদি তিনি একজন সৎ ও কর্তব্য পরায়ন ব্যাংকার হয়ে থাকেন। সমাজের বিভিন্ন প্রকার নীতি নির্ধারণে একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যা তার Social Status কে বৃদ্ধি করে থাকে।

(খ) পদোন্নতির সুযোগ: প্রত্যেক চাকুরিজীবী তার চাকুরি জীবনে পদোন্নতির আশা করে থাকে। সময়মত পদোন্নতি হলে কাজে আসে গতিশীলতা। ব্যাংকে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যায় যদি আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একজন কর্মঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৎ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে।

(গ) বেতন ভাতার সুযোগ সুবিধা: সরকারি ব্যাংকগুলোতে জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে বেতন প্রদান করা হয়। তবে এখানে রয়েছে ভবিষ্যৎ তহবিল সুবিধা, কর্মচারী কল্যাণ সুবিধা, যৌথ বীমা সুবিধা, মেডিক্যাল সুবিধা, বেনা ভোলেন্ড ফান্ড সুবিধা, বাসা ভাড়া সুবিধা, বোনাস সুবিধা ইত্যাদি। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকে জাতীয় বেতনস্কেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সঠিক হারে বেতন প্রদান করে থাকে যা এই চাকুরিতে আসার জন্য সবাইকে আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে রয়েছে যাতায়াত ভাতার সুবিধা, বাড়ি ভাড়া সুবিধা, পিএফ সুবিধা একাধিক বোনাস সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা।

(ঘ) ঋণ পাওয়া সুবিধা: একজন ব্যাংকার হিসেবে আপনি আপনার ব্যাংক থেকে ব্যাংক রেটে House building loan, Car loan, Motor cycle loan, Marriage loan, Computer loan, সহ অন্যান্য loan পেতে পারেন যা অন্য কোন চাকুরি থেকে ব্যাংক রেটে পাওয়া সম্ভব নয়। এই Loan পরিশোধ করাও আপনার জন্য সুবিধা। করাণ বেতন থেকে তা কর্তনের মাধ্যমে Adjust করা হয়।

(ঙ) প্রশিক্ষণ সুবিধা: ব্যাংক চাকুরি করার সুবাদে আপনি আপনার চাকুরি জীবনে Basic Training থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন যা আপনাকে একজন সঠিক Prefessional person হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। অধিকতর যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে আপনি বিদেশেও প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে পারেন। ব্যাংক যেহেতু একটি টেকনিক্যাল পেশা সেহেতু এখানে প্রশিক্ষণের সুবিধা অনেক বেশি। (Basic Training, Credit Management Training, Time Management Training, Human Resources Development Training, Computer Training, File Management Training, Import & Export Management Training, Money Laundering Training, Branch Management Training, Rural Credit Management Training, Small and Cottage Industries Development Training ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুবিধা আছে)।

জনসেবার সুযোগ

মানুষের বেশিরভাগ পার্থিব কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংক জনসাধারণকে নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই একজন ব্যাংকার হিসেবে অন্য যে কোন পেশার চেয়ে সমাজকে সেবা করার সুযোগ অনেক বিশি। নিম্নলিখিতভাবে আপনি ব্যাংকার হিসেবে সমাজকে সেবা করতে পারেন। যথা :-

(ক) Micro Credit এর মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা।

(খ) ব্যাংকের অর্থ ঋণ গ্রহীতাকে প্রদান ও তা সঠিক তদারকীর মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নে সাহায্য করা।

(গ) মানুষের কাছে পড়ে থাকা অলস অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এবং তা ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা দান করা।

(ঘ) একজন সৎ কর্তব্যপরায়ণ নিয়মানুবর্তী, সহযোগী ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে যা দেশ ও জাতির বড়ই প্রয়োজন।

কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন

অধিক জনসংখ্যায় ভরপুর এবং বেকারত্বের অভিশাপ যুক্ত এই দেশে চাকুরি একটি সোনার হরিণ। এই সোনার হরিণকে বাগে পাওয়ার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে প্রবেশ করছে চাকুরি বাজারে। সেইভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবকের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে আপনাকে ধরতে হবে চাকুরি নামের সোনার হরিণটি। নিম্নলিখিতভাবে প্রস্তুতি নিলে একজন ব্যাংকার হিসেবে চাকুরি নামের সোনার হরিণটি ধরা গেলেও যেতে পারে। আর এ জন্য দরকার

(ক) বিষয়ভিত্তিক পড়া লেখা সঠিকভাবে পরিচালনা করা।

(খ) ইংরেজি শিখার উপর জোর দেওয়া এবং প্রতিদিন তা চর্চা করা।

(গ) সাধারণ জ্ঞান শেখার পাশাপাশি আই কিউ বৃদ্ধি করা।

(ঘ) নিয়মিত পত্রিকা পাঠ এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নথিভূক্ত করা।

(ঙ) Time table & life table প্রণয়নের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা।

(চ) দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া, (গানিতিক যুক্তির জন্য ৯ম/১০ম শ্রেণীর পাটিগনিত, বীজগনিত, জ্যামিতি ও অংশিদ্বারিত্বের অংক বেশি চর্চা করা)

(ছ) বেশি বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা (এই ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা বাজার থেকে প্রশ্নব্যাংক বই কিনে তা চর্চা করা)।

(জ) ইসলামী জ্ঞান চর্চা করা।

(ঝ) কম্পিউটার এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করা।

(ঞ) গ্রুপ ভিত্তিক পড়া লেখা করা।

(ট) বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করা।

(ঠ) সর্বোপরি নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি করে তোলা।

(ড) সময় ও সুযোগ থাকলে বিবিএ অথবা এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করা।

শেষ কথা

সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী ব্যবসা যেভাবে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন এবং ঝুকিপূর্ণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসা এখন আর পূর্বের মত সহজ নয়। নতুন নতুন কৌশলের বহুমাত্রিক ব্যবহার এখন ব্যাংকিং ব্যবসায় এসে পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে ম্যানেজমেন্ট টেকনিক ও প্রোডাক্ট ডিজাইনারের প্রতিযোগিতা চলছে। এখন ব্যাংক মানে প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো ছাপানো কাগজের নির্দেশাবলী নয়। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রাহকের বন্ধু হয়ে যেতে হয়। যার মাধ্যমে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা এবং আমানতকারী সকলেই উপস্থিত হন। সতরাং নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী এবং তথ্য প্রযুক্তির যুগের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একজন সফল ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে সাহায্য করা সম্ভব।

অফিস এক্সিকিউটিভ

ব্যবসা সম্পর্কিত সকল কাজ পরিচালনা করাই হচ্ছে ব্যাবস্থাপনা এবং যিনি পরিচালনা করেন তিনিই হচ্ছেন ব্যবস্থাপক। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ঘটেছে জ্যামিাতক হারে। আর এই সম্প্রসারণের সাথে বাংলাদেশ তালমেলাতে চাচ্ছে সমন্তরালভাবে। ব্যাবসা যতই বাড়ছে, বাড়ছে ততই ব্যবস্থাপকের প্রয়োজনীয়তা। ব্যবস্থাপনায় (Management- এ) দক্ষ ব্যক্তিরাই হতে পারেন ব্যবস্থাপক। Management- কে বলা হয় Function of Executive Leadership. একদিনের Management Trainee Graduate, Trainee, Probationary Officer এক কথায় সকল Entry Level Officers or Executives পরিপূর্ণতা পেয়ে হয়ে যান ব্যবস্থাপক (Manager) ।

এই পেশার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা

Business এর প্রকৃতি যাই হোক না কেন প্রত্যেক Business- এ প্রয়োজন Business Executives, যারা কাজ করে থাকেন Management Trainee, Graduate Trainee, Director of the Business, Assistant General Manager, Divisional General Manager, General Manager ইত্যাদি হিসেবে। দীর্ঘ দিনের Business Experience কাজে লাগিয়ে অনেকেই আবার নিজেই ব্যবসা (Business) শুরু করে হয়ে যান Managing Director বা Chairman of the Business ।

কারা আসবেন এই পেশায়

যারা অধিক স্নায়ুবিক চাপ সহ্য করতে পারেন, যাদের আছে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ-ক্ষমতা (Decision Making), পুর্বানুমান (Forcasting), এবং সাংগঠনিক (Organizing) যোগ্যতার অধিকারী ব্যক্তিগণই এ পেশার উপযুক্ত। এছাড়া Business Executives- গণ কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন (Coordinating), নিয়ন্ত্রণ (Controlling) ও উৎসাহ দানের (Motivating) যোগ্যতা সম্পন্ন হবেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

এই পেশায় আসার জন্য ব্যবসায় প্রসাশনে উচ্চতর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। এই ডিগ্রি গুলি হতে পারে Business এর উপর Bachelor অথবা Masters, যেমন BBA (Bachelor in Business Administation), MBA (Masters in Business Administration) । বর্তমানে Specialized Degree-কে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং এগুলোর চাহিদাও বেশি। আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দেশেও এখন Accounting, Management, Finance, Marketing, Human Resources Management, Development Economics, Management Information System, Entrepreneurship Development ইত্যাদির উপর BBA এবং MBA ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এখন সাধারণত General BBA, MBA দেওয়া হয় না।

কোথা থেকে ডিগ্রি নিবেন

বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেতে পারেন এই ডিগ্রি গুলি। যেমনঃ Institue of Business Administration (IBA)- ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়, Department of Business Administration- জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং Faculty of Business Studies ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন MBA Program এবং দেশের সকল Private University থেকে এই ডিগ্রি নেওয়া যাবে, তবে এই উভয় ক্ষেত্রেই ব্যয়ের পরিমাণ বেশি।

কোথায় পাবেন এই পেশার সুযোগ

এই পেশার সুযোগ সরকারি-বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রে থাকলেও সকরারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ বেশি। দেশে-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি Multinational company- তেও আছে ব্যাপক সুযোগ।

কিভাবে হবেন একজন Business Exerutive

সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন মত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। বর্তমানে আরো একটি পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটি হচ্ছে নিজ থেকে প্রতিষ্ঠানের Human Resources Division-এ Curriculum Vitae Drop করা। এটি সারাসবি অথবা ডাকযোগে করা যেতে পারে।

এছাড়াও অনেক Business Organization Website এর মাধ্যমে Advertisement দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে bdjobs.com এর উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। এটি বাংলাদেশের বৃহৎ Jobsite, সুতরাং ভাল চাকুরি পেতে হলে আপনাকে Internet এর মাধ্যমেও CV Subrnit করতে হবে।

Recruitment Test-এবং প্রস্তুতি

মৌখিক অথবা লিখিত আবার কখনও উভয় ধরনের Test এর মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। Manager Entry Level এর জন্য সাধারণত উভয়টিই এবং Mid level এবং Top level এর জন্য শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। Business Organization- গুলি Candidate-দের Academic Field এর পাশাপাশি English, General Math, Analytical Ability এর উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষায় Candidate-এর Smartness এবং Communication Capability দেখা হয়।

কেন আসবেন এই পেশায়

এই পেশাতে পাবেন নিজেকে বিকশিত করার পুরো সুযোগ, পারবেন নিজের সৎ চিন্তাকে কাজে লাগাতে। পাশাপাশি জীবন নির্বাহ করার জন্য পাবেন বড় অংকের আয়ের সুযোগ। একজন Business Executive Entry Level- এ Remuneraution পেতে পারেন ১০,০০০-৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। এটি নির্ভর করবে ব্যক্তির দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপর। সাধারণত দেশি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিদেশি এবং Multination প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বেতন দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি ইচ্ছে করলে  হতে পারেন একজন অফিস এক্সিকিউটিভ। এজন্য আপনাকে আপনার Undergraduate Level থেকে Preparation নেওয়া জরুরি। আপনার Math, English, Critical Reasoning, Analytical ability-এর ভিত মজবুত হওয়া দরকার আগে থেকেই। Smartness এবং সুন্দর Attitude নিয়ে যেতে পারে আপনাকে অনেক দূর।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা

স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সম্মানজনক পেশা গ্রহণের সুযোগ পায়। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বছরের যে কোন সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন মারফত এসব পদে নিয়োগ দান করে। এ পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দ্রুত প্রতিষ্ঠা লাভ, সম্মানজনক জীবিকা অর্জন সেই সাথে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভাল ভূমিকা রাখা যেতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে সফলতার জন্য চাই প্রস্তুতিমূলক পড়াশুনা এবং কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।

সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে এ পেশায় লোক নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্নের প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য-

সরকারি প্রতিষ্ঠান

 

ক) পাবলিক ইউনিভার্সিটি

খ) সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অন্যান্য অফিসে

গ) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহে

ঘ) সামরিক বাহিনীর বেসামরিক পদে

ঙ) লাইব্রেরি ইত্যাদি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান

 

ক) প্রাইভেট ইউনিভার্সিাট

খ) প্রাইভেট কলেজ ও ইন্সটিটিউট

গ) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি

ঘ) বায়িং হাউজ

ঙ) প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক

চ) জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানী

ছ) আন্তর্জাতিক সংস্থা

জ) ব্যবসায়িক সংগঠনের অফিস

ঝ) বিভিন্ন কারখানার অফিসে

চাহিদা

পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, অনুষদ, হলসহ মূল প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ যেমন একাডেমিক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সংস্থাপনসহ বিভিন্ন বিভাগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, সকল প্রকার তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব প্রশাসনিক কর্মকর্তার। তিনি তার বিভাগের অধঃস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে তার কাজ সমাধা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অনান্য সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগকে দেখাশুনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিই Admin offcer হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এসব পদগুলো হলো-

(ক) জনসংযোগ কর্মকর্তা/ পরিচালক, জনসংযোগ বিভাগ।

(খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা।

(গ) হিসাব কর্মকর্তা।

এছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী দায়িত্বে অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। যেমন-

(ক) উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা

(খ) পল্লী-উন্নয়ন বোর্ড পরিচালক ইত্যাদি

যোগ্যতা

বিএ/ বিএসসি/ বিকম/ বিএসএস পাশ/ সম্মান। (সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ, তবে কখনও কখনও একটি তৃতীয় বিভাগকেও সুযোগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন একটিতে ১ম বিভাগ প্রয়োজন হতে পারে।)

কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।

অনেক সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে সম্পর্কিত Subject- এ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। লাইব্রেরিয়ানের ক্ষেত্রে লাইব্রেরি সায়েন্সএ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। সমাজসেবা অফিসারের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, সমাজকর্মকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

অগ্রাধিকার

Computer এ দক্ষতা। এক্ষেত্রে MS Word, Excel, Power Point এর Program জানাই যথেষ্ট।

English এ বলা, লেখাকে প্রাধান্য দেয়া হয় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে।

আজকাল এমবিএকে বেশ প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

অভিজ্ঞতা

কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১-৫ বছরের সংশ্লিষ্ট চাকুরির অভিজ্ঞতা চায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াও চাকুরি করা সম্ভব।

বিষয়ভিত্তিক অবস্থান

এ পেশাকে ১ম ও ২য় শ্রেণীর মান দেয়া হলেও সিদ্ধন্ত গ্রহণকারী ক্ষমতা না থাকায় এ পেশাকে বোরিং লাগাতে পারে। ১ম শ্রেণীর পেশা হলেও বিসিএস ক্যাডারদের মত সমাজে তাদের সম্মান দেয়া হয় না।

মজা

নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ

পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট পেশা

আধুনিক যুগের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার

সুযোগ সুবিধা

পর্যপ্ত Bonus এর এর ব্যবস্থা

Promotion এর ব্যবস্থা

সেবার সুযোগ

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে কোন কোন কর্মকর্তা জণগণের সাথে অধিক সম্পর্কিত আবার অনেকেই অফিসের টেবিলেই বসে কাজ করে থাকেন।

নির্বাচন পদ্ধতি

Step-1

জাতীয় পত্র-পত্রিকা মারফত বিজ্ঞাপন দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।

দরখাস্তের সাথে সাধারণত ফটো, বায়োডাটা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) সত্যায়িতসহ ফটোকপি জমা দিতে হয়।

বিজ্ঞাপ্তির সাধারণত ৭-২০ দিনের মধ্যে দরখাস্ত জমা দিতে হয়।

Step-2

আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর তা ইস্যু করে প্রবেশপত্র তৈরি করে পরীক্ষার অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে প্রার্থীর নিকট পাঠানো হয়।

Step-3

আবেদনপত্রসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।

পরীক্ষার বর্ণনামূলক বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হতে পারে। কখনও ৫০% বর্ণনামূলক এবং ৫০% সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হয়ে থাকে।

পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ দক্ষতা, আইকিউ, দৈনন্দিন জ্ঞানের উপরই হয়ে থাকে।

পরীক্ষার একটা অংশকে বাছাইয়ের জন্য মূল্যায়ন করা হয়।

 বাছাইকৃত প্রার্থীদেরকে তার ফলাফল পত্রিকা মারফত জেনে নিতে হয়।

Step-4

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।

এখানকার মৌখিক পরীক্ষায় তেমন কোন কঠিন প্রশ্ন থাকে না, মূলত প্রার্থীর মনোভাব যাচাই করা হয়।

মৌখিক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেই তার ঠিকানায় নিয়োগ পত্র পাঠানো হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কখনও কখনও অবশ্য PSC এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আবার কিছু পদে ঐ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব সার্কুলারে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে।

ফার্মাসিস্ট

ফার্মাসিস্ট এর কাজ একটি মহৎ পেশা। ডাক্তারদের মত তারাও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে ডাক্তারদেরকে মানুষ যেভাবে চেনে, ফার্মাসিস্টরা সেভাবে পরিচিত নন। বলতে গেলে তারা অনেকটা নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। রোগী, ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্টকে একই ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়, অর্থাৎ একজন রোগীর চিকিৎসায় কারও অবদানই কম নয়, যেমনটি শিশুর জন্য মা-বাবার অবদান সমান। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্রটি দেখা যায়না। দেখা যেত যদি উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে hospital ও community pharmacy থাকতো। তারপরও আমরা আশা করি আমাদের দেশেও একসময় hospital ও community pharmacy হবে এবং ফার্মাসিস্টরাও পৌঁছে যাবেন সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায়।

এবার আসা যাক আমাদের দেশে ফার্মেসী পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায়।

ফার্মেসী কোথায় পড়ানো হয়

ফার্মেসী একসময় শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলোতে পড়ানো হলেও এখন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হচ্ছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক বেশী ব্যয়বহুল। বর্তমানে যেখানে ফার্মেসী পড়ানো হয় তার মোটামুটি একটি তালিকা তুলে দিচ্ছি।

সরকারি: ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাইভেট: North South South East, East-West, Stamford, UDA, Manarat, Eastern, Atish Diponkor, Northern, Asia Pacific, Dhaka International University, USTC

এখন পাবলিকি ও প্রাইভেট দুই ক্ষেত্রেই চারবছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে year ও semester system থাকলেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র semester system.

খরচ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: অনেক কম এবং সাবার আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: Tution fee বাবদ খরচ ২ লক্ষ টাকা প্রায়। তবে North-South সহ আরো কয়েকটি University- তে খরচ আরো অনেক বেশি।

ভর্তি পরীক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে পরীক্ষার্থীকে কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এজন্য আগে থেকে ভাল রকম প্রস্তুতির সাথে সাথে ভাল রেজাল্ট প্রয়োজন হয়। ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি MCQ এবং লিখিত উভয় পদ্ধতিই চালু আছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে কঠিন এবং প্রশ্ন হয় MCQ পদ্ধতিতে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশাল Tution fee দেওয়ার মত আর্থিক ক্ষমতা।

প্রস্তুতি

এইচ এস সি পরীক্ষা পাসের পরপরই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। থাকতে হবে বইয়ের উপর প্রচন্ড দখল। এজন্য কোচিং এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, তবে মনে রাখবে কোচিং ছাড়াও চান্স পাওয়া সম্ভব। কারণ কোচিং অপরিহার্য নয় বরং প্রয়োজন। প্রশ্ন করা হয় সাধারণত পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও জীব বিজ্ঞান থেকে। তবে ফার্মেসীতে ভাল করতে হলে রসায়নে ভাল দখল থাকতে হবে।

বিষয়বস্তু

ফার্মেসীতে মূলত ঔষুধ নিয়েই পড়াশুনা। তবে একজন শিক্ষার্থীকে ঔষধ সম্বন্ধে দক্ষ করে তোলার জন্য যা প্রয়োজন সব শেখানো হয় এখানে। তাছাড়াও ঔষুধ প্রস্তুতি, বিপনন, নতুন ঔষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে hospital ও community pharmacy পড়ানো হয়।

চাহিদা ও চাকুরি সুবিধা

যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন রোগ ব্যাধি থাকবে এবং মানুষকে ঔষধ থেতে হবে। তাই আমাদের দেশে ফার্মেসী বিষয় খোলার পর থেকেই চাকুরির ক্ষেত্রটা সব সময়ই অবারিত। কারণ বাংলাদেশে ঔষূধ কোম্পানী ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, বাড়ছে চাকুরি সুবিধা। ঔষুধ কোম্পানীতে চাকুরি ছাড়াও রয়েছে hospital ও community pharmacy তে নিজের career গড়ার সুবিধা। যদিও বাংলাদেশ এ দু’ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু বিদেশে রয়েছে hospital ও community pharmacist এর ব্যাপক চাহিদা। তবে আমাদের দেশে hospital ফার্মাসিস্ট হিসাবে নিয়োগ শুরু হলেও পরবর্তিতে যেকোন ভাবেই হোক তা বন্ধ রয়েছে। আরো রয়েছে শিক্ষকতার মত মহৎ পেশা ছাড়াও বিসিএস এর সুবিধা। যদিও ডাক্তারদের মত ফার্মাসিস্টদের জন্য কোন special বিসিএস নেই। সব মিলিয়ে বলা যায়- ফার্মেসী একটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। তা আরো অনেকদিন চাকুরীর বাজারে ভালভাবেই রাজত্ব করবে।

সম্ভাবনা

বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তৈরি পোশাক, আর দ্বিতীয় ঔষধ। ধারণা করা হচ্ছে আর কয়েক বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে ঔষধ শিল্প চলে আসবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস হিসাবে। বর্তমানে চাহিদার ৯৭% ঔষধ দেশেই তৈরি হয় এবং বাংলাদেশের ঔষধ পৃথিবীর প্রায় ৫৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে কয়েক শতাংশ ঔষধ বাংলাদেশে তৈরি হয়না সেগুলো এশিয়ার কোন দেশে তৈরি হয়না। এমনকি আমাদের ঔষধ প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক বেশি মানসম্পন্ন। তবে এখনও আমরা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ঔষধ রপ্তানি করতে পারিনা। কারণ আমাদের কোন Reference Laboratory নেই। তবে এ অভাব পূরণ হলে ঔষধ শিল্প আরো সাফল্য লাভ করবে। আর এ কৃতিত্ব এদেশের ফার্মাস্টিদের, যাদের মেধা আর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের আজ এ অবস্থান।

Scholarship

বর্তমান যুগ হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগ। যার কারণে ফার্মেসীর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে Scholarship এর অনেক সুযোগ। আমাদের দেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভাল করে উচ্চ শিক্ষার জন্য Scholarship নিয়ে যাওয়া যায় বিশ্বের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেখানে রয়েছে আকর্ষণীয় চাকুরি সুবিধা। তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও ভাল ফলাফলের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে Scholarship এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রয়েছে Tution fee-র বিশাল ছাড়।

আত্ম কর্মসংস্থান/ ব্যবসা

আমাদের সমাজে রয়েছে অসংখ্য আলোক বর্তিকা, অসংখ্য সম্ভাবনা, অফুরন্ত সম্পদ ভান্ডার, ‍শুধু দুই চক্ষু মেলে দেখতে হবে, আর দেখার মত চোখ থাকতে হবে। অমিত সম্ভাবনার দেম এই বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ২ কোটি উচ্চ শিক্ষিত তাগড়া জোয়ান যারা প্রতিদিন চাকুরি নামক সোনার হরিণ ধারার জন্য আবেদন পত্র লিখতে লিখতে কাগজ সম্পদ ধ্বংস করছে এবং সেই সাথে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়? এই সমস্যার সমাধান জানার জন্য নিচের অংশগুলো মনোযোগসহকারে পড়ুন এবং পড়া শেষে আপনিই মনের অজান্তে বলতে বাধ্য হবেন এতদিন কোথায় ছিল আলাদিনের এই চেরাগ?

সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশকৃত ছেলেকে বাবা বলছে, “বাবা! তোমার পড়াশুনা তো শেষ হলো, এবার একটি চাকুরি যোগাড় করে নাও।” ছেলে পত্যুত্তরে বলল, “ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমার অর্জন করেছি স্বাধীনতা। আর চাকুরি মানে হচ্ছে পরাধীনতা। আমি পরাধীন থাকতে পারবে না।” তাই আপনাকেই বলছি যদি অন্যের অধীনে থেকে চাকুরি করতে না চান তাহলে নিজেই এমন কোন পেশা পছন্দ করুন যাতে আপনিই হতে পারেন অন্যের চাকুরিদাতা। আর এজন্যই প্রয়োজন সমাজে ব্যাপকহারে চালু করা সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট বা আত্ম-কর্মসংস্থান পদ্ধতি। আর দেরি না করে আজই নেমে পড়ুন আত্ম-কর্মসংস্থানে।

Allah helps those who help themselves । যারা নিজে চেষ্টা করে আল্লাহ তাদের সহায় হন। প্রবাদটি চরম সত্য এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। আত্ম কর্মসংস্থান বা Self Employment বলতে আমরা বুঝি পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজের কর্মসংস্থান নিজেই প্রস্তুত করা। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অন্যের অধীনে কাজ করতে অপছন্দ করেন। তাদের জন্য উত্তম পদ্ধতি হলো আত্ম কর্মসংস্থান পদ্ধতি। এজন্য প্রয়োজন আত্মপ্রত্যয়, উদ্যম, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা এবং সর্বোপরি অধ্যবসায়।

কেন আত্মকর্মসংস্থান?

মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক কেন আমি আত্মকর্মসংস্থান করব বা আত্মকর্মসংস্থানে লাভই বা কি? একটু ভেবে দেখুন সমাজে কদর করা বেশি, যিনি চাকুরিদাতা নাকি যিনি চাকুরি গ্রহীতা। নিশ্চয়ই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, যিনি চাকুরি দেন। তাহলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে হতে পারবেন চাকুরিদাতাদের একজন এবং সেই সাথে পেয়ে যাবেন সামাজিক মর্যাদার উচ্চ আসনটি। ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চিত ভাব চলে আসে মনে। ১৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি দেশ বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ বেকারত্বের হার দিন দিন যে হারে বেড়েই চলেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই শিক্ষিত যুবকদের ঘরে বসে চাকুরির আবেদনপত্র লিখে লিখে দেউলিয়া হওয়ার মত ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বেছে না নিয়ে আত্ম কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসা উচিত। নিম্নবর্ণিত কারণে আত্মকর্মসংস্থান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার।

ক. সরাকারি চাকুরির উপর চাপ কমানো।

খ. বেকার সমস্যার সমাধান।

গ. জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর এবং এর সুষম ব্যবহার।

ঘ. সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি।

ঙ. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন ও ব্যাপকহারে দেশিয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখা।

চ. সর্বোপরি পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা কমিয়ে আত্মতৃপ্তি অর্জন।

আত্মকর্মসংস্থান চ্যারেঞ্জ গ্রহণে যোগ্যতা

মানুষ যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি পৃথিবীতে জন্মগহণ করে না। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে দিনে দিনে মানুষ যোগ্যতা অর্জন করে। তেমনিভাবে আত্মকর্মসংস্থানে আত্মনিয়োগ করার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা।

ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা

পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও পেশা সম্পর্কে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ন্যূনতম স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা করা উচিত। তাছাড়া সমাজের লোকদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি হওয়াই বাঞ্চনীয় অন্যথায় মূর্খতা হতে পারে বিষফোঁড়ের মত যন্ত্রণাদায়ক।

খ. মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতা

যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জকে সহজেই মোকাবেলা করার জন্য থাকতে হবে অদম্য স্পৃহা। আর মানসিক শক্তি তো আসবে শরীর থেকেই। তাই শরীরকে রোগমুক্ত রাখার যাবতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করা, যাতে অসুস্থতা কোন কাজেই বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

গ. অন্যকে Convince/pursue করার ক্ষমতা

এজন্য দরকার লোকসমাজে নিয়মিত উঠাবসা করা, সবার সাথে ভাল ব্যবহার করা, নিজেকে অন্যের জন্য প্রয়োজনীয়/আকর্ষণীয় করে তোলা। এছাড়া সামাজিক কর্মকাণ্ডে স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ. নেতৃত্বের যোগ্যতা

নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের পরিচালনার জন্য ও তাদের সব সময় চাঙ্গা রাখার জন্য প্রয়োজন নেতৃত্বের গুণাবলী। এজন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত আবশ্যকীয় কাজের মধ্যে একটি।

ঙ. Innovativeness

নিজেকে ছোট্টগন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে ভিন্ন মাত্রার ও ভিন্ন স্বাদের কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে কখনই বোরিং/একঘেয়েমি আসবে না।

চ. Forecasting Ability

বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় এবং এরই প্রেক্ষিতে কিভাবে ভবিষ্যতে লাভবান হওয়া যায় তা অনুমানের যোগ্যতা থাকতে হবে। এর ফলে যে কোন সমস্য উদ্ভুত হওয়ার আগেই সমাধান করা সম্ভব হবে।

ছ. ধৈর্য

সব সময় মনে রাখতে হবে- ইন্নালাহা মা’আস সবেরীন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। কোন কাজে তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্যের সাথে ধীরে সুস্থে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। সাফল্য লাভের জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

জ. সততা

সততা হলো এমন একটি গুণ যা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা আসবেই। ব্যক্তি কেন্দ্রিক সততা যেমন গুরত্বপূর্ণ তেমনি ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য সামষ্টিক সততা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোন ধরণের পেমা পছন্দ করবেন?

পেশা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান বলতে আমরা মূলত ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিতে চাই। এক্ষেত্রে ব্যবসা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে পণ্য অথবা সেবা উৎপাদন, বিপনন এবং ক্রয় বিক্রয়কেই বুঝায়। ব্যবসা মানব সভ্যতার সমবয়েসি। সময়ের বিবর্তনে মানুষের চাহিদার ধরন এবং মাত্রাতেও এসেছে নানা বৈচিত্র। এসব বৈচিত্রময় চাহিদার অনিবার্য ফলাফল ব্যবসা জগতের সীমাহীন বিস্তৃতি। ব্যবসা এখন ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে সমানতালে। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী এবং প্রভাবশালী পেশাজীবী গোষ্ঠী এখন ব্যবসায়ী সমাজ। ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রও এখন বড় ব্যবসায়ী সংগঠন।

ব্যবসার ধরন

ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য সর্ব প্রথম যেটা দরকার সেটা হলো অর্থ। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এককভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাই ব্যবসাকে আমরা অত্র টেক্সটে দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করব।

১. অর্থভিত্তিক:

ক. ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, খ. মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, গ. বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান

২. মালিকানাভিত্তিক:

ক. একক মালিকানা, খ. অংশীদারী, গ. কোম্পানী, ঘ. সমবায় সমিাত

ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আর্থিক দিক দিয়ে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। এক্ষেত্রে নিজের অল্পকিছু মূলধন দিয়ে এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনমত ঋণ গ্রহণ করলেই এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে মুনাফার হার যেমন কম তেমনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহজ। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান একক মালিকানায় হওয়া ভাল তাতে নিজেকে অন্তত প্রতিষ্ঠানের একক অধিপতি মনে হবে এবং সেই সঙ্গে উঠে আসবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর।

মাঝারি মানের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য একক মালিকানায় না গিয়ে যৌথ বা অংশীদারী হওয়ার যুক্তিযুক্ত। তাতে ঝুঁকি অনেক হ্রাস পায় এবং যৌথ সিদ্ধান্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য মূলধন বা অর্থ সংগ্রহ কষ্টকর হয় বলে যৌথভাবে কাজ শুরু করলে ব্যংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহজে ঋণ ‍দিয়ে থাকে। তাই তো কথায় বলে দশের লাঠি একের বোঝা। আমাদের দেশে যৌথ বা অংশীদারী মালিকানায় ব্যবসায় সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা অনেক বড়। তাই মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বে এসকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

বড় ধরনের শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের আওতায় গঠন করাই উত্তম। এক্ষেত্রে দরকার প্রচুর অর্থ, উচচ শিক্ষিত লোকবল, বিশ্বস্ত পার্টনার এবং সর্বোপরি অনুকূল পরিবেশ। যেহেতেু এখানে এককভাবে অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব হয় না তাই প্রয়োজনে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

সমবায় সমিতির মাধ্যমেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে গড়ে তুলতে পারেন মিল্ক ভিটার মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। কেননা মিল্ক ভিটা তার কার্যক্রম শুরু থেকেই সমবায় সমিতির মাধ্যমেই পরিচালনা করে আসছে। সমবায় মানেই সম অধিকার। তাই সফলতা লাভের জন্য সকল সদস্যকে সৎ হতে হবে এবং সাম্য ও মৈত্রীর অনুশীলন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা কুরআনে ঘোষনা করেছেন, ‘তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।’ সমবায়ে সফলতা লাভের জন্য অবশ্যই সংঘবদ্ধভাবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।

নিম্নবর্ণিত যে কোন ধরনের ব্যবসা আপনি আপনার পছন্দমত নির্বাচন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আত্ম প্রত্যয়, বলিষ্ঠ মনোভাব এবং নিজের যোগ্যতা যাচাই করেই এগিয়ে আসা উচিত।

  আত্মকর্মসংস্থান  
ক. উৎপাদনমূলক – ১. কৃষি ভিত্তিক :

 

হাঁস-মুরগী পালন

পশুপালন

মৎস্য চাষ (পুকুর)

চিংড়ি চাষ

মাশরুম চাষ

নার্সারী (গাছের চারা)

হ্যাচারী (মাছের পোনা)

২. শিল্পভিত্তিক :

 

পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস)

হিমায়িত খাদ্য শিল্প (কোল্ড স্টোরেজ, চিংড়ি রপ্তানি)

ফুড প্রসেসিং (দুধ, জুস, আইসক্রিম)

প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন

খ. সেবামূলক – Transportation Business (পরিবহন)

 

রিয়েল এস্টেট

ডিজাইন

এ্যাড ফার্ম

ভ্যারাইটি স্টোর/ দোকান

কনসালটেন্সি ফার্ম

এজেন্সী/ ডিলারসীপ

শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়)

হোটেল, রেস্টুরেন্ট স্থাপন

ট্যুর আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান

টেইলারিং

প্রেস (ছাপাখানা)

হাসপাতাল

নিরাপত্তা প্রদানকারী ফার্ম

 

এছাড়াও আরও এমন পেশা নিজের ইচ্ছেমত  নির্বাচন করতে পারবেন যা আপনার সামর্থ্যের মধ্যে।

যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন?

যেকোন কাজের পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে তার ফলাফল কাঙ্ক্ষিত মানের হয় না। তাই আত্মকর্মসংস্থানের মত চ্যালেঞ্জিং পেশা প্রহণ করার পূর্বে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

ক. পড়াশুনা

সমাজে শিক্ষিত লোকের কদর অশিক্ষিত লোকের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কমপক্ষে স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা করা ভাল যাতে সামাজিক মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে।

খ. পেশা পছন্দকরণ

পড়াশুনা শেষ করার পর উপরোল্লিখিত পেশাসমূহের মধ্য হতে যে কোন পেশা বা নিজের ইচ্ছেমত লাভজনক পেশা নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে একাধিক পেশা নির্বাচন করে তার সুযোগ-সুবিধা, ঝুঁকি, সম্ভাবনা ইত্যাদি মূল্যায়ন করে র‌্যাংকিং করা যেতে পারে। র‌্যাংকিংকৃত পেশা হতে সম্ভাবনাময় লাভজনক পেশা পছন্দ করাই যুক্তিসংগত।

গ. ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ

বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেগুলো আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং পাশাপাশি শহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত যুব উন্নয়নে ট্রেনিং গ্রহণ করা যেতে পারে।

ঘ. স্থান নির্বাচন

পেশা নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একেবারে নির্বোধ না হলে যেমন কেউ মরুভূমিতে জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে না তেমনি বুদ্ধিমান লোকেরাও অলাভজনক জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন না। এক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের জন্য গ্রামের কাছাকাছি যেখানে প্রচুর কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবস্থা আছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন স্থান নির্বাচন করা যেতে পারে। আবার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান শহরের সন্নিকটে উপশহর এলাকায় হলে ভাল। কিন্তু হোটেল বা রেস্টুরেন্ট স্থাপন করতে হবে এমন স্থানে যেখানে কাঁচা টাকার লোকের উঠাবসা বেশি এবং ব্যস্তময় এলাকা।

ঙ. অর্থ সংগ্রহ

এমন এক সময় ছিল যখন ব্যবসা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ ছিল কলিন্সের চন্দ্র অভিযানের মতই দু:সাহসিক। কিন্তু বর্তমানে অনেক ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে বসে আছে বিনিয়োগের সুযোগকে সহজ করে দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী উন্সুরেন্স কোম্পানি, ও অনেক ইসলামি এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসকল প্রতিষ্ঠন দিচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ। তাই চাকুরী খুঁজতে গিয়ে দামী জুতার তলা ক্ষয় না করে আজই নেমে পড়ুন সহজ শর্তে ঋণের খোঁজে। আর নিজের গাঁটে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে তো কোন কথাই নেই।

চ. কর্মী নির্বাচন

প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য অবশ্যই সৎ, দক্ষ ও  পরিশ্রমী কর্মীর কোন বিকল্প নেই। তাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সংগ্রহ করার জন্য তাদের উপরোক্ত গুণাবলীর প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

ছ. অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ

নির্বাচিত পেশা অনুযায়ী সরকারি অনুমতিপত্র/ লাইসেন্স, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং, মেশিনারী, আসবাপত্র, কাঁচামাল প্রভৃতি সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য অবশ্যই কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

জ. চুড়ান্তভাবে কাজ শুরু

সবকিছু গুছিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আত্মকর্মসংস্থানে সফলতার পূর্বশর্ত

যে কোন কাজে সাফল্য লাভের জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। আত্মকর্মসংস্থানও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে পরিশ্রমটা অবশ্যই হতে হবে পরিকল্পনা মাফিক, অন্যথায় পরিশ্রম হবে পান্ত ভাতে ঘি ঢালার মত। অন্যদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষ্ঠন এমন স্থানে স্থাপন করা দরকার যেখানে সহজে ও স্বল্পমূল্যে জনশক্তি পাওয়া যায় এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজার ভাল। পণ্যের বিজ্ঞাপন/ প্রচার এমনভাবে দিতে হবে যাতে অল্প খরচে অধিক সংখ্যক ক্রেতার নিকট তথ্য উপস্থাপন করা যায়।

প্রতিদিনের সূচি কাজের আগের দিন তৈরি করা এবং সূচি অনুসারে কাজ করলে সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দিতে বাধ্য। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের ঠিকমত পরিচালনা করলে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ ও অপচয় রোধ করলে আপনিও হতে পারবেন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের গর্বিত মালিক।

আমাদের সমাজে সমালোচনা করার মত অনেক বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন লোক বাস করে যাদের কাজই শুধু অন্যের সমালোচনা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা। যেমন আপনি যদি বিএ, এমএ পাশ করে গ্রামে এসে মৎস চাষের মত লাভজনক মহৎ পেশায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে অনেকেই বলবে বিএ পাশ করে হয়েছে জেলে। এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। কেননা আত্মকর্মসংস্থান একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তাই সমালোচকদের খোড়াই কেয়ার করে আপনি যখন সাফল্যলাভ করতে শুরু করবেন তখন তারাই তাদের ভুল বুঝতে পেরে আপনার প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করবে। বর্তমানে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে তাগড়া জোয়ানদের। তাই তো কবি কাজী নজরুল বলেছিলেন, আমি সবসময় তরুণদের দলে কেননা তরুণরাই পারে জরাজীর্ণ পৃথিবীটাকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়তে।

চারুকলা

বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও ফাইনআর্টস (Fine Arts) বা চারুকলা ‍শুধুমাত্র সাজ-সজ্জার বিষয় হিসেবে কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে আর গণ্য করা হচ্ছে না। এখন এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নানাবিধ এবং দিন দিন উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা নানামুখী কর্মক্ষেত্রে তাদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

যেভাবে শুরু করবেন

ছবি আঁকা, নকশা, ডিজাইন ইত্যাদি বিষয়ে যারা আগ্রহী, কিংবা সৃজনশীল বিষয় নিয়ে ভাবতে যারা ভালোবাসেন তারা এদিকে এগুতে পারেন।

যেখানে পড়বেন

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু চারুকলা মহাবিদ্যালয় ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক অর্থাৎ বিএফএ (ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস) এবং স্নাতকোত্তর অর্থাৎ এসএফএ (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) এই দুই পর্বের ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।

আগ্রহ ও ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা চিত্রকলা, ডিজাইন, সিরামিকস, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে তাদের মেধার বিকাশ ঘটচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে নানাবিধ সরকারি, বেসরকারি, প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন।

১। ফ্রিল্যান্স শিল্পী

চারুশিল্পীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নিজেদেরকে স্বাধীন রেখে তাদের কাজ পরিচালনা করে। এরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বাধিনভাবে ইচ্ছামত শিল্পকর্মের কাজ করে। বিনিময়ে ভাল অংকের আর্থিক সম্মানী লাভ করে।

২। মিডিয়াতে

প্রিন্টিং মিডিয়ায় ডিজাইনার হিসেবে কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন নির্মাণ থেকে শুরু করে সেট ডিজাইন, অলংকরণ, ক্যামেরার পেছনে চারুকলার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সাফল্য দেখাতে সক্ষস হচ্ছেন। চলচ্চিত্র শিল্পেও একজন চারুকলার শিক্ষার্থীর অনেক ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রাইভেট চ্যানেল টিভি ও রেডিও এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহে চারুকলার শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি কদর। বিভিন্ন পত্রিকার কার্টুন তৈরি, বইয়ের প্রচ্ছদ অংকনের মাধ্যমেও শিল্পীদের রয়েছে দেশ জোড়া সুনাম।

৩। শিক্ষাক্ষেত্রে

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে – হাইস্কুল, প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (PTI) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে।

৪। ড্রেস ডিজাইন কিংবা ফ্যাশন শিল্পে

এই সেক্টরে বর্তমান সময়ে দেশে ও বিদেশে চারুশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষণীয়। নিত্য নতুন ও অভিনব ড্রেস ডিজাইনসহ পোশাকের শৈল্পিক সৌন্দর্যের অন্বেষণ ও বিকাশ আমাদের নজর কাড়ে।

৫। সিরামিকস, টেরাকোটাশিল্পসহ গিফট আইটেম

এখানেও শিল্পী তার মনকে গড়ে তোলে সৌন্দর্যের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি। সর্বোপরি বর্তমান সময়ে চারুকলা (Fine Arts) শুধুমাত্র সাজ-সজ্জা কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশই নয় বরং নানাবিধ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।

Appendix

Scholarships

Name of the Scholarships

Al-Azar University Education Scholarship

Asian Youth Fellowship

Australian Development Scholarships- ADS

Bsngladesh Lions Foundations

Bhola District Council

Bogra Shamity Education Trust

Borguna Kalayan Trust Scholarship

Borisal District Council

Chuadanga District Council

Comilla District Council

DAAD Scholarship (Fellowships for a Doctorate Degree in Germany)

DAAD Scholarship (Fellowships for ph.D. Registered Scholars)

DAAD Scholarship (Fellowships for Recent post Doctoral Scholars)

DAAD Dcholarship (for phD Researchers in Bangladesh)

DAAD Scholarship (for phD Researchers in Germany)

DAAD Scholarship (for Postgrad with Relevance to Developing Countries)

DAAD Scholarship (for Short term phD Researchers in Bangladesh)

DAAD Scholarship (for University Teachers)

DAAD Scholarship (former DAAD Fellowship Holders from Bangladesh)

DAAD Scholarship (Postdoctoral Research Fellowships)

DAAD Scholarship (postgrad with Relev to Developing Countries for prof)

Dinajpur District Council

Dutch-Bangla Bank Foundation

Education Ministry (Chinese Govt. Scholarship)

Education Ministry (Indonesian Govt. Scholarship)

Fair and Lovely Foundation

Faridpur District Council

Feni District Council

Gaibandha District Council

Gazipur District Council

Gopalgonj District Council

Imdad-Sitara Khan Foundation Scholarship

Indian Scholarships

Jamalpur District Council

Jessore District Council

Jessore Education Trust

Joypurhat District Council

Khan A Sabur Truat Education Scholarship

Laxmipur District Council

Madaripur District Council

Meherpur District Council

Monbukagakusho Scholarship for prof Train School Student of Bangladesh

Monbukagakusho Scholarship for Research Student of Bangladesh

Monbukagakusho Scholarship for Technology Student of Bangladesh

Monbukagakusho Scholarship for Undergrad Student of Bangladesh

Moulvibazar District Council

Munshigonj District Council

Mymensingh District Council

Naogaon District Council

Netrokona District Council

Pabna District Council

Rajbari District Council

Rangamati Hill District Council

Sherpur District Council

Shibchar Thana Somity Scholarship

Shirajgonj District Council

Sunamgonj District Council

Sylhet District Council

Turkey Govt. Scholarship

International Scholarship Programme

MONBUKAGAKUSHO SCHOLARSHIP

The Japan Foundation offers scholarship to study the Japanese language for Asian students, who wish to study at graduate schools in Japan and have a strong wish to contribute to regional cooperation, after obtaining a Master or ph.D Degree

Field of Study

We welcome students wishing to studying in the fields of: Humanities, Sicial Sciences, Engineering and Natural Sciences.

Fields of study must de one of those available at Japanese universities. Practical training given by factories or companies is excluded.

Japanese Studies or Japanese Culture Studies are not fit for the purpose of this program.

FEATURES OF THE ASIAN YOUTH FELLOWSHP PTOGRAM

The scholarship grantees shall take a preparatory course in the Japanese language and other subjects for approxirnately 7 months at the Japan Grantees shall live in the provided dormitory theough the Program.

Grantees will thereafter be matriculated into Japanese universities as Japanese Government (Monbukagakusho) scholarship students (Research Student or regular course students) from April 2008.

QUALIFICATIONS

Nationality

Applicants must be nationals of one of following countries; Bangladesh, Brunei, Cambodia, Indonesia, Laod, Malaysia, Myanmar, Philippines, Singapore, Thailand or Vietnam.

Age Applicants must be under 35 years of age as of April 1, 2008 (i.e.born on or after April 2,1973)

Academic Backgrounds

Applicants must be university or college graduates, who have completed the fundamental education of their countries, basically of 16 years (those who will graduate from a university or college by the Registration Day of AYF may apply).

Study Area

The study area must be in sane field as the applicant has studied (or is now studying) or a related one.

Others:

  • Applicants should not have Japanese language proficiency. Those who have learned Japanese language and already acquired Japanese

Proficiency comparable to Japanese Proficiency Test Level 3 are excluded.

  • Good proficiency in English is required.
  • Military men and military civilian employees resgistered on the personnel list are excluded.
  • Applicants should be in good health.
  • The grants may be canceled if grantees fail to arrive in Osaka, Japan, by the Registration Day of AYF, 2007.
  • The applicant whose spouse has already won a Japanese Government scholarship will not be selected as a grantee, and likewise in the case of a couple applying at the sane time.
  • The applicant who has been awarded a Japanese Government (Monbukagakusho) scholarship in the past will not be selected as a grantee unless he/she has had a few years research or teaching experience after returning to his/her country.
  • It is not recommended for his/her family to accompany the applicant to Japan during the AYF program.

TERMS OF SCHOLARSHIP

The scholarship will be granted for a period of about 7 months, in principle, from the date of arrival in Osaka to March 2008. After completing the AYF program, the Japanese Government (Monbukagakusho) scholarship will be granted according to its own regulation.

GRANT COVEREGE DURING PREPARATORY COURSE

  1. Expenses necessary for participation in the official curriculum (transportation, teaching material, etc,)
  2. Meals during the program (partly in the of cash allowances) and a set amount of allowances to cover miscellaneous living expenses.
  3. Accommodation (a single room) at the institute.
  4. Overseas travel insurance for disease and injury for the duration of the program.
  5. Round-trip, economy-class airline between the nearest International Airport from your residence and Kansai International Airport (Osaka, Japan) on the most direct and economical route.
  6. Japanese visa as a trainee.

The above terms of the grant will be effective from the date of arrival in kansai to March 2008. After completing the AYF program, grantees will proceed to Japanese universities as Monbukagakusho Scholarship students. Allowances, accommodations, and other status are subject to Monbukagakusho regulations.

SELECTION

  1. Japanese diplomatic missions concerned will select preliminary candidates from among applicants by means of a review of the documents submitted, in cooperation with the foreign governments concerned.
  2. Those who have been selected as the preliminary candidates will be recommended to Asian Youth Fellowship Screening Committee, Tokyo, Japan. The Committee will select grantees from among the preliminary candidates by means of an interview made in their respective countries by a mission member assigned and dispatched by the Committee.
  3. Final announcement will be provided by the Embassy of Japan in writing after Monbukagakusho approval to the decision by the AYF Screening Committee. The grantees of the Japanese Government (Monbukagakusho) scholarship for 2008 will be finally selected after the university placement has been made, provided they have passed the final examination of AYF.

AYF will provide the students with information on Japanese universities through the program.

Commonwealth Learning

Scholarships Programme

The Commonwealth Learning Scholarships Programme was introduced in 2004 to assist students from low socio-economic status backgrounds, particularly those from regional and remote areas and Indigenous ctudents, who are Australian citizens or holders of permanent humanitarian visas, with costs associated with higher education. There are two scholarships- one for educational costs and one for accommodation costs. Both are awarded on a competitive basis, are non-repayable and target students from low socio-economic status backgrounds. Over the five- year period, 2005 to 2009, the $406 million that the Government will provide will help about 43,000 student meet the costs associated with participating in higher education.

The Commonwealth Education Costs Scholarships and the Commonwealth Accommodation Scholarships are allocated annually to eligible higher education providers. The Commonwealth issues guidelines to providers for the allocation of these scholarships but providers determine their own application and selection processes. The scholarships are not treated as income for Social Security and Veterans Affairs pensions and allowances, or for ABSTUDY.

Applying for Scholarships

The Commonwealth Learning Scholarships programme is administered on behalf of the Australian Government by eligible higher education providers. Providers are responsible for conducting their own application and selection procedures on the basis of guidelines issued by the Commonwealth. Potential applicants need to the higher education providers where they are studying or plan to study.

On this page

  • Commonwealth Education Costs Scholarships
  • Commonwealth Accommodation Scholarships
  • 2006 Commonwealth Learning Scholarships Guidelines
  • Commonwealth Learning Scholarships (CLS) Allocations and Grant Amounts for 2006

Commonwealth Education Costs Scholarships

Many students from low socio-economic status backgrounds and Indigenous students face particular challenges in meeting their education costs. Commonwealth Education Costs Scholarships have been introduced to provide such students with a scholarship of approximately $2,000 per year (indexed annually) for up to four years to assist with their education costs. Higher education prividers must give special consideration to Indigenous students when selecting scholarship recipients to ensure a fair proportion of scholarships are awarded to Indigenous students. Since 2004, 12,576 CECS have been allocated to higher education providers, with funding totaling $5 million in 2004, over $15 million in 2005 and over $26 million in 2006.[Return to Top]

Commonwealth Accommodation Scholarships

The cost of accommodation can be a significant burden for students (and/or their parents) form regional and remote areas who need to move away from home to commence higher education, particularly those from low socio-economic status and/or Indigenous backgrounds. Commonwealth Accommodation scholarships provide selected students from low socio-economic backgrounds from regional and remote areas with approximately $4,000 per year (indexed annually) for up to four years to assist them with accommodation costs when they move to undertake higher education. Since 2004,10,049 CAS have been allocated to higher education providers, with funding totaling $12 million in 2004, over $26 million in 2005 and over $41 million in 2006.

In determining whether an applicant has come from a regional or remote area, higher education providers should be guided by the Australian Standard Geographic Classification (ASGC) Remoteness Areas classification. Applicants form localities other than those beganing to the major cities of Australia classification may meet that particular requirement the following document provides a quick look-up tool by postcode.

Name of the scholarships

DAAD Scholarship (Fellowships for a Doctorate Degree in Germany)

DAAD Scholarship (Fellowships for ph.D. Registered Scholars)

DAAD Scholarship (Fellowships for Recent post Doctoral Scholars)

The Aga Khan Foundation provides a limited number of scholarships each year for postgraduate studies to outstanding students from developing countries who have no other means of financing their studies. Scholarships are awarded on a 50% grant: 50% loan basis through a competitive application process once a year in June or July. The Foundation gives priority to requests for Master’s level courses but is also willing to consider applications for phD programmes, when doctoral degrees are necessary for the career objectives of the student. Requests will also be considered for travel and study awards for phD students doing their research in Third world countries on topics judged to be of interest to the Aga Khan Development Network. Applications for short-term courses are not considered; neither are applications from students who have already started their course of study.

Geographic Scope

The Foundation accepts applications from countries where it has branches, affiliates or other AKDN agencies which can help with processing applications and interviewing applicants. At present, these are Bangladesh, India, Pakistan, Afghanistan, Tajikistan, Syria, Kenya, Tanzania, Uganda, Mozambique, Madagascar, France, Portugal, UK, USA and Canada.

Selection Criteria

The main criteria for selecting award winners are:

1)excellent academic records,

2)genuine financial need,

3)admission to a reputable institution of higher learning and

4)thoughtful and coherent educational and career plans

Candidates are also evaluate on their extra-curricular interests and achievements, potential to achieve their goals and likelihood to succeed in a foreign academic environment. Applicants are expected to have some years of work experience in their field of interest.

Age Limit: Preference is given to students under 30 years of age.

Financial Assistance

The Foundation assists students with tuition fees and living expenses only.

The cost of travel is not included in AKF scholarships. Applicants are requested to make every effort to obtain funding from other sources as well, so that the amount requested from the Foundation can be reduced to a minimum. Preference is given to those who have been able to secure some funding from alternative sources.

Loan Conditions

Half of the scholarship amount is considered as a loan, which must be reimbursed with an annual service charge of 5%. A guarantor is required to co-sign the loan agreement. The payback period is five years, starting six months after the study period funded by the Aga Khan Foundation.

Application Procedures

The application procedures of AKF’s International Scholarship Programme are decentralised. Students may obtain application forms as of January 1st each yeae from AKF offices or Aga Khan Education Services/Boards in their countries of current residence. Compketed applications should be returned to the agency from which the form was obtained, or to the address indicated for submission of applications is March 31.

The annual Scholarship Selection Meeting takes place in late June or early July and the Aga Khan Foundation notifies all students of the outcome of their application shortly thereafter.

Scholarships for M.Sc. Study at UK

We have information about the following scholarships for taught MSc students:

  • UK Government Scholarships
  • Queen Mary, University of London-College Scholarships
  • Department of Electronic the UK Government’s Chevening Scholarship Programme. This programme is a special worldwide scheme to fund Master’s study by international students. This programme is a special worldwide scheme to fund Master’s study by international students. For further information please go to http://www.chevening.com/or contact your local British Council office http://www.britishcouncil.org/.

Queen Mary attracts about 20 Chevening Scholarship winners every year. In 2002/3 the winners are studying for masters degrees in Law, Electronic Engineering, public Policy, Film Studies and Chemistry.

Your local British Council office will also be able to inform you of other scholarships opportunities open to you.

Queen Mary, University of London-College Scholarships

Every year the Department of Electronic Engineering offers a limited number of scholarships worth 1500 each to MSc students. The scholarships are awarded on the basis of exceptional academic merit, on a first come first served basis and made at the of application. In order to claim a College Scholarship students must first accept their of a place at QMUL.

Department of Electronic Engineering Scholarships for International Students

As a leading international force in teaching and research the Department of Electronic Engineering at Queen Mary attracts students of the highest caliber and, in recognition of the important investment that students are making in their education, is pleased to offer a range of scholarships to reward outstanding academic achievement.

The Department of Electronic Engineering is pleased to be able to offer students from selected countries a 2000 scholarship for each of all programmes listed below:

  • MSc in Internet Computing
  • MSc in Internet Computing in the Business Environment
  • MSc in Internet Computing in the Business Environment
  • MSc in Internet Computing with Law
  • MSc in E-Commerce Engineering in the Business Environment
  • MSc in E-Commerce Engineering with Law
  • MSc in Telecommunications
  • MSc in Telecommunications in the Business Environment
  • MSc in Telecommunications with Law
  • MSc in Digital Signal Processing
  • MSc in Internet Signal Processing
  • MSc in wireless Networks
  • MSc in Digital Music Processing
  • MSc in Multimedia Systems Technology

Students from the following places are eligible for these scholarships:

  • Bangladesh
  • India
  • Malaysia
  • Russia
  • Thailand
  • Brazil
  • Iran
  • Nigeria
  • Sri Lanka
  • China
  • Kenya
  • Pakistan
  • South Korea
  • Vietnam, In order to be eligible for these awards you must:
  • Be nationals of the applicable countries listed above AND be classified as an international student for fees purposes.
  • AND apply for a masters programme by July 30 of the year of entry.

Please note:

  • There is no need to make a separate scholarship application. All eligible candidates will be considered on the basis of the information provided in their application form. You will be informed whether you have been awarded a scholarship when we make you an offer.
  • Early application will increase the probability of you being awarded a scholarship
  • Candidates must not be in receipt of any other University scholarship or a full fees scholarship from any other source (e.g. The Chevening Scheme)
  • The scholarship awards will be deducted from tuition fees payable to the University
  • Please note that in most cases the University only awards partial scholarship and competition for these awards is intense. Students must be able to finance the remainder of their tuition fees and living expenses.

For further information please contact Marie Campbell, Programme Manager for Department of Electronic Engineering. Marie. [email protected]

Other Sources of Information

Further information on scholarship and general guidelines for international students can also be obtained from UKCOSA, The Council for International Education.

UKCOSA

9-17 St Albans place

London

N1 0NX,United Kingdom

Tel: 020 7226 3762

e-mail: [email protected]

You may also like to browse the British Council web site, Education UK, which has a search facility, allowing you to find other institutions which offer scholarships.

See also: PostgraduateStudentships.co.uk and Scholarship Search UK Funding for postgraduate ‘home` students may also be obtained through a career development loan. Details are available from high street banks.

Petroleum Scholarships

(Scholarships for Petroleum Engineering Students)

Gus Archie Memorial Scholarship

The Gus Archie Memorial Scholarship is supported by the Archie fund of the SPE Foundation. Each year the SPE Foundation, working through the SPE Section Scholarship support Program, as well as working with individual applicants, awards the Archie Scholarship to the most outstanding incoming freshman enrolled in an accredited program. The curriculum must lead to an undergraduate degree in petroleum engineering. The Archie Fund endows each scholarship at $5,000 per year. The program contemplates support of an individual student through four years of university study, provided he/she makes satisfactory academic progress. The program ordinarily requires a GPA of 3.0/4.0 or higher for the current semester and a GPA of 3.0/4.0 or higher on a cumulative basis. Students rotate off the program after 4 years of scholarship support. Qualifications

SPE Sections

Many SPE sections around the world offer scholarship programs to students pursuing petroleum engineering degrees. Please check with the SPE sections near your place of residence to see whether they offer any scholarships for which you night be eligible. If you have already been accepted to a particular university, you may want to check with the section nearest that section scholarship, regardless of their place of residence.

Your University

Please check with the university(ies) to which you have applied regarding scholarship opportunities. Many universities with petroleum engineering programs have scholarship for students that have been endowed by alumni. You may find these listed on the university website, or you may need to contact the petroleum engineering department, and or financial aid department for more information.

Scholarship for Other Petroleum Disciplines

If you are interested in geology or geophysics as a career, you may find more information about scholarship through the American Association of Petroleum Geologists, the Society of Exploration Geophysicists, or the European Association of Geoscientists and Engineers.

Most countries, and many states and provinces have some sort of geological survey either as part of the government or working closely with it. You may want to contact the geological survey organization nearest to you to see whether they offer, or are aware of, any scholarship opportunities.

For both undergraduate and graduate opportunities, the U.S. National Laboratories (affiliated with the U.S. Department of Energy) offer science related scholarship and fellowships. These opportunities are often listed on the websites of the individual National Laboratories.

Fellowships/Internships

The U.S. Department of Energy’s Mickey Leland Energy Fellowships are designed to create opportunities for minority students. The program offers summer internships to minority students studying academic disciplines related to fossil energy.

The U.S. Department of Energy has also instituted a Technical Career Intern program to attract recent college graduates in technical fields to federal government work.

If you would like to suggest additions to this webpage, please send your suggestions to [email protected].

ADB- Japan Scholarship program

[Funded by the Govt. of Japan]

General Information

  1. Citizen of developing member countries of Asian Development Bank (ADP) [Bangladesh is a member country]
  2. Intended level of education: post graduate (diploma, masters, doctorate) studies in economics, management, science and technology and other development fields.
  3. Duration 1-2 years.
  4. Coverage: tuition fee, book, subsistence and housing allowance, insurance, economy airfare, and research subsidy.
  5. Students must be admitted in designated course the following institutions
  6. Australia: National Centre for Development Studies/ Australian National University, University of Melbourne, University of Sydney.
  7. China: Peoples Republic of University of Hong kong.
  8. India: Indian Institute of Technology, Delhi.
  9. Japan: International University of Japan, Nagoya University (Graduate School of International Development), Keio University (International Graduate Programs on Advanced Science and Technology), National Graduate Institute for policy Studies, Ritsumeikan University (Master in Economics), Saitama University (Department of Civil and Environmental Engineering), University of Tokyo (Department of Civil Engineering, School of international Health, Institute of Environmental Studies, and Department of Urban Engineering).
  10. New Zealand: University of Auckland.
  11. Pakistan: Lahore University Management Science.
  12. Philippines: Asian Institute of Management, International Rice Research Institute/ University of the Philippines in los Banos.
  13. Singapore: National University of Singapore.
  14. Thailand: Asian Institute of Technology, Thammasat University.
  15. USA: East-West Center.

Eligibility Information

  1. Proficient in oral and written English communication skill to be able to pursue studies.
  2. Two years working experience.
  3. Age not more than 35 years.

For further information visit: http://www.abd.org/jsp/

Australia High Commission, Bangladesh

High Commission address : 184 Gulshan Avenue, Gulshan-2 – Telephone :8813101 – Fax: 8811125.

Australia Development Scholarships (ADS)

Australia provides assistance to meet the human resource development needs of Bangladesh through the Australia Development Scholarships (ADS) program. The areas of study are selected based on the priority areas of development identified by both the governments of Australia and Bangladesh. Even though scholarships by their nature are offered to individuals, the goal of scholarships is to help meet the human resource development needs of developing countries and contribute to their development in varies sectors. The ADS program plays an important role in fostering and sustaining Australia’s relation with developing countries, particularly in the Asia-Pacific region.

Since 1998 Australia has provided around 360 scholarships to Bangladesh the ADS program. Under the current ADS selection process the candidates are selected through the government and non-government partner agencies. Nominated partner agencies short-list and recommend the candidates to AusAID for final selection. The government partner/ministries are selected in consultation with the Government of Bangladesh.

Duration: Ongoing

Australian Development Scholarships (ADS) -2007 Intake

Applications are invited from chittagong Hil Tracts (CHT)

under ADS – CHT 2007 intake (2nd semester). please click on http://www.bangladesh. embassy.gov.au/daca/ADSCHTO7.html to get further details.

Disclaimer privacy An Australian Government website Copyright Commonwealth of Australia.

AKTEL Scholarships

Multimedia University, Malaysia

Scholarship Detail

As a committed corporate citizen of  Bangladesh, AKTEL invites applications for the yearly scholarships to meritorious and financially needy Bangladeshi students for Bachelor degrees in Multimedia University, Malaysia for the academic year 2006-07 in the following courses and requirements.

Eligibility

course of Study

 

 

 

Engineering

 

 

IT

 

 

 

 

BBA

Duration

 

 

 

4 years

 

 

4 years

 

 

 

 

3 years

Requisite subjects and minimum grades

 

Mathematics, physics, Chemistry;

in each

subject Grade A+/ min 80% in HSC or A Level

Mathematics, physics, Chemistry;

in each

subject Grade A+/ min 70% in HSC or Grade B/ min 70% in A Level Business Studies, Economics,

Accounting: in each subject Grade A-/ min 60% in HSC or Grade 3/min 60% in A Level

Students for other disciplines having GPA 4/min 70% in HSC or min 2Bs and 1C in A Laval may also apply.

Candidate Criteria

 

 

Candidates should possess

 

 

English Language proficiency

 

Physical and Mental fitness

 

Surety bond & Financial Obligation

HSC (GPA 4/min 700 marks) & SSC (min 700 marks) or A Laval (min 2Bs and 1C) & O Laval (min 4As)

 

TOEFL score 190 (computer based) or 520 (Paper based) or IELTS

score 5.5

students who expect to complete their TOEFL/IELTS by December, 2005 may also apply

 

Capable of overseas study for a period of 3 to 4 years

 

Scholarship recipient will sign a surety bond with AKTEL and be able to finance initial registration expenditure (partial- reimbursable) of Tk. 80000 (approximate).

Application Form available

Download and complete the Scholarship Application Form from http://www.aktel.com/

The documents to be attached with the Application Form

Copies of Academic Certificate (in English) attested by respective head of Institution

Copies of Mark sheets (in English) attested by respective head of Institution

02 (two) recent passport size photographs authenticated by respective head of Institution

TOEFL/IELTS score record

Birth Certificate

Income Certificate of Guardian

Attested photocopy of passport (first five pages). passport must have sufficient validity.

Note: Write the degree program you wish to pursue on the top of the envelope.

for further details

Head of Human Resource (HR division)

AKTEL

silver Tower (5th floor), 52 South Gulshan C/A, Gulshan-1, Dhaka-1212

National Scholarship Programme

Prime Minister Research and Higher

Education Fund

Scholarship in ph. D/M. phil

Admission Detail

Application are invited in the prescribed form for prime Minister Research and Higher Education Fund gives to M. phil/ ph.D Laval students.

Name of Subjects

Economics/Social Science

Biology, pharmacy and Medical Science/ Community Medicine

Science, Engineering, Computer Science and Marine Science

Food and Agricultural Science

Eligibility for Application

1st division/ class in all exam

General Information

Age is not over 35. (45 for service holders).

Candidates employed at Govt/Semi Govt/private/Autonomous organization should apply through authority.

Candidates who have admitted to the university by self and collect letter of acceptance.

Candidates who already admitted in phD course or in MPhil/equivalent toward phD degree started in July, 2005 can apply. Candidates who got Letter of Acceptance for the course started January, 2006 can also apply.

  1. 30,000/- for phD researcher for Data collection, buying books. thesis publishing and computer compose.

After completion the research word TK. 30,000/- remuneration for Supervisor of Research of phD course.

Amount of Scholarship for phD degree for 03 (three) years.

1st year TK. 10,000/-per month

2nd year TK. 12,000/-per month

3rd year TK. 10,000/-per month

Amount of Scholarship for MPhil or equivalent toward phD : TK. 8,000/- per month for one year.

Application Form Collection and Submission

Application form is available at Registrar, Govt. Universities/Bangladesh Agricultural Research Council/Bangladesh Agricultural Research Institute/ Bangladesh Rice Research

Institute/BMSSU/Atomic Energy Commission/BCSIR/BIDS/BMD/DUET/RUET/KUET/CUET by depositing Tk. 10 (ten).

Completed application forms must be submitted by registry post to Dr. Mohd. Abu Yousuf, Director on working days within 30 April, 2006.

Documents to be submitted along with Application

Copies of all academic certificates and mark sheets.

02 (two) copies of pass port size photograph.

Important Dates

Last Date of Submission: 30 Apr ‘06

University Grants Commission of Bangladesh

PhD/MPhil Fellowship

Admission Detail

Applications are invited in the prescribed form from the teachers of universities and government colleges for UGC PhD and MPhil fellowships.

Eligibility

  1. i) Applicant must be a teacher holding permanent substantive position in a public university/government college.
  2. ii) No part time teacher will be considered.

iii) Must have enrollment in PhD/MPhil course in public universities.

  1. iv) If finally selected by the UGC for the fellowship, applicants must be granted study leave/deputation by the concerned authorities.
  2. v) A PhD fellow shall receive an allowance of Tk. 4000 per month and an MPhill Tk.3000 per month.
  3. vi) Every fellow shall be liable to refund the total amount received form UGC in case the applicant prematurely discontinues his/her work without valid reason acceptable to the UGC.
  4. i) Prescribed application forms may be obtained from the Scholarship and Fellowship Section, University Grants Commission of Bangladesh (3rd floor), Agargaon, Dhaka- 1207 by Pay-Order/Bank Draft of Tk. 100 from any branch of Janata Bank.
  5. Applications must be submitted through proper channel.
  6. Incomplete applications will be rejected.
  7. Complete application with necessary documents must be submitted to ‘The Secretary, University Grants Commission of Bangladesh, Agargaon, Dhaka- 1207 within given time.

For further details

Deputy Secretary

University Grants Commission, Bangladesh

Tel: 9133464

Shahid Zia I.C.T Scholarship

(Funded by Education Ministry, Bangladesh)

Eligibility of the Applicants

 

Level of Scholarship and Instutes

Secondary Level

a) School level

b) Madrasa level

c) Technical School & College (VTI)

Higher Secondary level

a) College level

b) Madrasa level

c) HSC (Business management) Computer trade

d) HSC (Vocational) Computer trade

Polytechnic

Graduate level

a) National University affiliated institute

b) Public University

c) Private University

No. of Scholarship

 

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

2 schlarships in the country

6 scholarships in 6 division

6 scholarships in 6 division

1 scholarships/ university

10 scholarships

Scholarship Rate (per month) taka

 

300

300

300

400

500

1000

1000

1000

Qualification of Applicant

 

a) studied in class 9 in 2004 at school. madrasa or technical college

b) have passed class 8 with minimum 80% number

c) should have the subject ‘Computer’ in class 9.

d) should have at least 90% attendance in last year within 30-09-2004.

a) higher secondary, alim, HSC(BM). HSC(voc) can apply

b) pass SSC/ equlvalent with at least GPA 4

c) have to study ‘computer science’ at HSC.

d) attendance should be minimum 80% within 30-09-2005

a) 1st year student of Diploma in computer science at Polytechnic Institue can apply.

b) pass SSC/ equivalent with at least GPA 4.

c) attendance should be minimum 80% within 30-09-2005

a) 1st year student of computer science Hons/ Eng can apply.

b) pass HSC/equivalent with at least 70% or GPA 4.

c) attendance should be minimum 80% within 30-09-2005

  1. Send application in own hand writing with necessary documents and recommendation from Head of the Institution/Department within given time at the following address:

Director, Education Information  and Statistics Burro

1 Shonargoan Road, Palashi, Nilkhet, Dhaka- 1205

Phone: 7167107

  1. Level of the scholarship should be mentioned on the envelop.
  2. Application should contain the following information:
  3. Name of the candidate.
  4. Father’s name.
  5. Present address.
  6. Date of birth.
  7. Description of the currently studying institution. (Name of the institute, Year/semester, Section, Roll No.)
  8. Description of passing exam (Name of the Exam, passing year, earned GPA. numbers according to the subjects, educational board.)
  9. Scholarship name and the amount of the money if he got any fund from another source.
  10. Signature of the candidate.
  11. Comments of the head of the Department/ Institution.
  12. Following documents should be enclosed:
  13. SSC/HSC Mark Sheet photocopy attested by the head of the institution.
  14. One copy passport size Photograph (attested)
  15. Income certificate of parents
  16. Class attendance certificate.

Bangladesh Scholarship Council

Scholarship for the Students at University Level

Admission Detail

Eligibility of the Applicants

  1. Candidates should be meritorious but financially not solvent.
  2. Candidates should be studying at University level.

Application should contain following information:

Application submission last date: September 20, 2005

Following documents should be enclosed:

  1. Two copies passport size Photograph (attested)
  2. Mark sheets photocopy.
  3. Recommendation letter from Head of the Department..
  4. Guardians annual income report.
  5. Biodata

Subject : Medical, Agriculture, Engineering, Science & Technology, Commerce and Arts.

Amount of Scholarship (Annual) : Tk. 12000/-

Quantity of Scholarship : 300

For further details

Secretary

Bangladesh Scholarship Council (BSC)

  1. M.M Ali Road

WASA more, Chittagong-4000

Clinical Fellowship Programme

ICDDR,B: Center for Health and Population Research

Scholarship Detail

ICDDRB: Centre for Health and Population Research plans to prepare a Panel for offer of CLINICAL FELLOWSHIPS. at the Clinical Research & Service Centre under the Clinical Sciences Division.

Eligibility

Bangladeshi nationality

MBBS degree recognised by the BMDC

Completion of  one year internship

Registration with the BMDC

Excellent academic record

A minimum of one year’s training either in Paediatrics or in Internal Medicine recognised for pursuing post-graduate studies foe DCH and FCPS

Duration: Duration of fellowship is initially for a period of one year, extendible for another year depending on placement opportunities and evaluation for performance.

Stipend: Monthly stipend amounting Tk. 14,500/- (taka fourteen thousand five hundred) only and free transportation to and from the duty stations, subject to Centre’s rules and availability of transports.

Evaluation and Certification: The progress will be monitored and evaluated. Written and clinical examinations may be offered at the end of the fellowships. On successful completion of training and final evaluation, the fellows will be awarded certificates.

Application Form Collection and Submission

Interested and eligible candidates may submit their Online Applications using ICDDR,B Website (http://www.aktel.com/) Or

Candidates may also submit their applications with bio-data detailing experience and other particulars along with a recent passport size photograph to the Advertiser Box # A-268, C/O: The Daily Star, 19 Kawran Bazar, Dhaka-1215 by 11 December, 2005.

Last date for submission: 11 December, 2005

Special Information

ICDDRB is an equal opportunity employer and particularly welcomes applications from women candidates. Please write the position applied for at the top of the envelop.

For further details

website: http://www.icddrb.org/

Dutch-Bangla Bank Limited

MPhil/Doctoral/Post-Doctoral Studies

Admission Detail

Dutch-Bangla Bank Limited has decided to award 50 fellowship for pursuing M,Phil/Doctoral/Post-Doctoral studies in any Public University of the country.

Eligibility

Masters Degree in any discipline from a reputed university having at least three First Class/Division and no third division/class in any exam.

Other Eligibility

Researcher availing Scholarship/Fellowship from other sources will not qualify for Dutch-Bangla Bank Foundation Fellowship. In case of opting Dutch-Bangla Bank Foundation Fellowship, one has to surrender Scholarship/Fellowship if already availed from other source.

All applications should be routed through the respective Supervisor/Any teacher of the concerned department with due recommendation along with attested copies of related documents/certificates.

Duration of Studies

For M.Phil/Doctoral/Post-Doctoral – as required by the university curriculum.

Amount of Fellowship: Tk. 5,000/- (Five thousand) per month

Application Submission

Interested and eligible candidates may submit their Applications to the Coordinator. Dutch-Bangla Bank Foundation, Senakalyan Bhaban (15th Floor), 195 Motijheel C/A, Dhaka-1000

Last date for submission: 20 February 2006

For further details

Coordinator

Dutch-Bangla Bank Foundation, Senakalyan Bhaban (15th Floor), 195 Motijheel C/A, Dhaka-1000

Imdad-Sitara Khan Foundation

Scholarship

[Funded by SpaandanB]

Eligibility of the Applicants

  1. Meritorious but financially not solvent
  2. Bangladeshi National
  3. Class attendance 80% [up to 30 November 2004]
  4. Scholarship will be awarded according to following chart
Level Passing Year No. of Scholarship Amount/Month (Taka) Earned GPA
HSC 1st Year (Science) SSC 2004 30 1200.00 5.0
HSC 1st Year (Science) SSC 2004 30 1200.00 5.0
BSc (Hons) 1st Year (Science) HSC 2003 30 1200.00 4.8
BSc 1st Year (Engg) HSC 2003 30 1200.00 4.8
MBBS 1st Year HSC 2003 30 1200.00 4.8
  1. Send application in own hand writing with necessary documents and recommendation from Head of the Institution/Department within January 15,2005 at the following address:

Imdad-Sitara Khan Foundation Scholarship

C/O : Prof. Syed Rashidul Hasan

Treasurer, Dhaka University, Dhaka-1000.

  1. Level of the scholarship should be mentioned on the envelop.
  2. Application should contain the following information:
  3. Name of the candidate.
  4. Father’s name.
  5. Present address.
  6. Permanent address.
  7. Date of birth.
  8. Description of the currently studying institution. (Name of the institute, Year/semester, Section, Roll No.)
  9. Description of passing exam (Name of the Exam, passing year, earned GPA, numbers according to the subjects, educational board.)
  10. Scholarship name and the amount of the money if he got from other source.
  11. Signature of the candidate.
  12. Comments of the head of the Department/Institution.
  13. Following documents should be enclosed:
  14. SSC/HSC Mark Sheet photocopy attested by the head of the institution.
  15. One copy passport size Photograph (attested)
  16. Income certificate of parents
  17. Class attendance certificate.

Lions Education Scholarship

Scholarship Details

Applications are invited from prospective students for the Lions Education Scholarships-2006.

Eligibility of the Applicants

Poor but meritorious students.

Member of Blind and Lame family will get special consideration.

Following documents should be enclosed

Own hand written application with Name, Father’s Name, Address, Age, Name of Institution.

Photocopy of the last examination certificate and mark sheet issued by the Head of the present Institution.

Father/Guardian’s Income certificate recommended by UP Chairman/ Word Commissioner.

If got any scholarship must submit an attested application with the year of getting scholarship and one passport size photo recommended by the Head of the Institution.

Application Submission

Completed set of application should be submitted to Secretary General, Bangladesh Lions Foundation, Lions Bhabon, Agargaon, Dhaka-1207 within specified time given by the authority.

For further details

Ln Dr. MS Zaglul A. Mazumder

Secretary Lions Faoundation

Lions Bhabon, Agargaon, Dhaka-1207

Tel: 9122242

Bangladeshi American Community

Scholarship

Documents to be submitted

Testimonial issued by the Head of the Institute

Marks Sheet

Citizenship Certificate issued by UP Chairman.

Documents attested by local UNO/DC.

photo: 2 copies

General Information

Scholarship for Bangladesh secondary school and

Madrasha students.

Only 20 (twenty) student will get Scholarship.

Monthly TK. 1000/- per student.

Scholarship continued Upto Master’s degree on basis of good result of HSC.

Application Form Submission

Applicants should submit the complete Application to Secretary, BACS Bangladesh Branch, 72/B (old), 145/B (new), Fakirapul (2nd floor),Dhaka- 1000 on or before the given time.

Address:

Secretary

BACS Bangladesh Branch

72/B(old), 145/B (new)

Fakirapul (2nd floor)

Dhaka-1000

Khan A Sabur Trust Education Scholarship

Eligibility of the Applicants

Candidates who have passed SSC and HSC or Epuivalnt before 2002 and 2004 are need not to apply.

Total GPA 8.0 in SSC and HSC (Min GPA 3.5 in each SSC and HSC)

Min GPA 1.0 in Biology in HSC.

Education Scholarship for: MBBS

No of Education Scholarship: 01 (one)

Application should contain following information:

Applicants who will apply this category could not apply another category.

Applicant will not pay development and education fee, only to pay admission fee if selected for the Scholarship.

If the Students who are irregular or failed in every final examination in five time must refund total fees.

No remuneration in internship.

Admission Form and prospectus is available at Bangladesh Medical college, 14/A. Dhanmondi, Dhaka.

Important Date

Application Submission last date: Given in the news paper

Preliminary Test: Application must be submitted to DC, Khulna and Managing Trusty, Khan A Sabur Trust, Khulna (Date mentioned)

Interview date (applicant with Guardian): DC, Khulna and Managing Trusty, khan a Sabur Trust, Khulna. (Date mentioned)

for further details

DC, Khulna and Managing Trusty, Khan A Sabur Trusty, Khulna

Special note of Scholarship

In addition to the information given above some additional information is available from the following web sites:

www.myfastweb.com

www.worldbank.org/wbi/scholarships

the first web site contains information of about ten thousand scholarships. This is a remarkable web site for scholarships of different age-group students.

ক্যারিয়ার বিকশিত জীবনের দ্বার

আইসিএস পাবলিকেশন

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড