উসমানী খিলাফতের ইতিকথা

 

 


 

আমি লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশের মুসলিমদের বিরাট অংশ খিলাফতে রাশেদা, বানু  উমাইয়া খিলাফয়াত ও বানুল আব্বাস খিলাফাত সম্পর্কে যতটুকু অবহিত, উসমানী খিলাফাত সম্পর্কে ততটুকু অবহিত নন। অথচ মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জল ইতিহাসের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে উসমানী খিলাফাত। একাধারে ছয়শত ছত্রিশ বছর ধরে এই খিলাফাত এশীয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার সুবিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পুরোপুরি না হলেও প্রথম ভাগের উসমানী খালীফাগণ আল-কুরআনের বহুবিধ বিধান তাঁদের ব্যাগতিগত জীবন ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁদের জন্য অগ্রগতির রাজপথ উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। দুঃখের বিষয় পরবর্তী কালের খালীফাগণ আল-কুরআনের শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। ফলে তাঁরা ও তাঁদের শাসিতরা অচিরেই জাহিলিয়াতের শীকারে পরিণত হন। তাঁদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, পতন নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

 

এই পুস্তিকায় আমি উসমানী খিলাফাতের উত্থান ও পতনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছি যাতে সম্মানিত পাঠকগণ অল্প সময় খরচ করে একটি দীর্ঘ ইতিহাসের সার-সংক্ষেপের সাথে পরিচিত হতে পারেন।

 

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

 


 

উসমানী খিলাফাত

 

উসমানী খিলাফাত মুসলিম উম্মার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বানুল আব্বাস খিলাফাতের পতনের পর এই খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেই বছর তাতার সমর নায়ক হালাকু খান বানুল আব্বাস খিলাফাতের রাজধানী বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেন, সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন উসমানী খিলাফাতের প্রতিষ্ঠাতা উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মসনদে বসেন। তখন থেকে শুরু করে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন খালীফা ৬৩৬ বছর উসমানী খিলাফাত পরিচালনা করেন।

 

উসমানী খালীফাগণ হচ্ছেন-

 

১। উসমান (১২৮৮-১৩২৬)

 

২। ওরখান (১৩২৬-১৩৫৯)

 

৩। প্রথম মুরাদ (১৩৫৯-১৩৮৯)

 

৪। প্রথম বায়েজিদ (১৩৮৯-১৪০৩)

 

৫। প্রথম মুহাম্মাদ (১৪০৩-১৪২১)

 

৬। দ্বিতীয় মুরাদ (১৪২১-১৪৫১)

 

৭। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ (১৪৫১-১৪৮১)

 

৮। দ্বিতীয় বায়েজিদ (১৪৮১-১৫১২)

 

৯। প্রথম সলিম (১৫১২-১৫২৪)

 

১০। প্রথম সুলাইমান (১৫২৪-১৫৬৬)

 

১১। দ্বিতীয় সলিম (১৫৬৬-১৫৭৪)

 

১২। তৃতীয় মুরাদ (১৫৭৪-১৫৯৫)

 

১৩। তৃতীয় মুহাম্মাদ (১৫৯৫-১৬০৩)

 

১৪। প্রথম আহমাদ (১৬০৩-১৬১৭)

 

১৫। প্রথম মুস্তাফা (১৬১৭-তিনমাস)

 

১৬। দ্বিতীয় উসমান (১৬১৭-১৬২৩)

 

১৭। চতুর্থ মুরাদ (১৬২৪-১৬৪০)

 

১৮। প্রথম ইবরাহীম (১৬৪০-১৬৪৮)

 

১৯। চতুর্থ ইবরাহীম (১৬৪৮-১৬৮৭)

 

২০। দ্বিতীয় সুলাইমান (১৬৮৭-১৬৯১)

 

২১। দ্বিতীয় আহমাদ (১৬৯১-১৬৯৫)

 

২২। দ্বিতীয় মুস্তাফা (১৬৯৫-১৭০৩)

 

২৩। তৃতীয় আহমাদ (১৭০৩-১৭৩০)

 

২৪। প্রথম মাহমুদ (১৭৩০-১৭৫৪)

 

২৫। তৃতীয় উসমান (১৭৫৪-১৭৫৭)

 

২৬। তৃতীয় মুস্তাফা (১৭৫৭-১৭৭৩)

 

২৭। প্রথম আবদুল হামিদ (১৭৭৩-১৭৮৯)

 

২৮। তৃতীয় সলিম (১৭৮৯-১৮০৭)

 

২৯। চতুর্থ মুস্তাফা (১৮০৭০১৮০৮)

 

৩০। দ্বিতীয় মাহমুদ (১৮০৮-১৮৩৯)

 

৩১। প্রথম আবদুল মজিদ (১৮৩৯-১৮৬১)

 

৩২। আবদুল আযীয (১৮৬১-১৮৭১)

 

৩৩। পঞ্চম মুরাদ (১৮৭১-১৮৭৬)

 

৩৪। দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (১৮৭৬-১৯০৯)

 

৩৫। পঞ্চম মুহাম্মদ (১৯০৯-১৯১৮)

 

৩৬। ষষ্ঠ মুহাম্মদ (১৯১৮-১৯২২)

 

৩৭। দ্বিতীয় আবদুল মজিদ (১৯২২-১৯২৪)

 

 

 

১. উসমান

 


 

১. আমীর পদে উসমান

 

আনাতোলিয়ার ছোট্ট একটি জায়গীর ছিলো সুগুত। এর অধিপতি ছিলেন আত্‌তুগ্‌রিলের এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তাঁর নাম রাখা হয় উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্‌তুগরিল ইন্তিকাল করেন। উসমানের বয়স তখন ত্রিশ বছর। তিনি পিতৃ মসনদে বসেন।

 

সুগুতের একজন প্রখ্যাত দীনদার ব্যাক্তি ছিলেন আবিদ আলী। উসমান তাঁর কন্যা মাল খাতুনকে বিয়ে করেন।

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে উসমান ইয়েনি দখল করে রাজ্য সীমা বর্ধিত করেন। তিনি ইয়েনি শহরে তাঁর রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। উসমান ‘আমীর’ উপাধি গ্রহন করেন।

 

২. উসমান যেমন ছিলেন

 

উসমান ছিলেন ইসলামী নৈতিকতার বিমূর্ত রূপ। তাঁর জীবন ছিলো খুবই অনাড়ম্বর। তিনি ছিলেন উঁচু দরের শাসক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিন ইসকলের সুখ-শান্তির কথা ভাবতেন। তিনি তাঁর দীনদার শ্বশুরকে প্রথমে কাযী ও পরে উযীর নিযুক্ত করেছিলেন। উসমান রাজ্যময় মসজিদ নির্মাণ করে সালাত কায়েম এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার সুব্যবস্থা করেন। তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ। সৈনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ তাঁর রণকৌশল ছিলো অত্যন্ত উন্নত মানের। যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে গানীমার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্র-তহবিলে জমা করে বাকি চার ভাগ সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। সাধারণত তিনি কোমলতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু প্রয়োজনে তিনি হতেন ইস্পাতের মতো কঠিন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।

 

তাঁর জীবনে বিলাসিতা ছিলোনা। তিনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্যও কোন ধন-রত্ন জমা করে যাননি। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র ওরখানকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে কখনো যুলুম ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করবোনা। বিজিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সম্মান করবে। শারীয়ার বিধি বিধান মেনে চলবে। ঐশী আইনই আমাদের বড় শক্তি। পরম করুনাময়ের পথেই আমাদের সমৃদ্ধি। প্রজাদের রক্ষনাবেক্ষণ তোমার বড় কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে পারলে তুমি পরম করুনাময়ের অনুগ্রহ ও আশ্রয় লাভ করতে পারবে”

 

৩. রণাংগনে উসমান

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতত্বে তাঁর সৈন্যগণ ইয়েনি দখল করে। এই ইয়েনি শহরই হয় উসমানী খিলাফতের প্রথম রাজধানী।

 

১৩০১ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশ গ্রীসের সাথে উসমানের যুদ্ধ বাধে। গ্রীসই তখন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কুয়ুন হিসার যুদ্ধে গ্রীক সেনাপতি মুজালোনকে পরাজিত করে তিনি গ্রীস সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করেন।

 

১৩০২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমীর উসমানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা পরাজিত হন। তাঁর রাজ্যের এশীয় অঞ্চল উসমানের পদানত হয়।

 

এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে অন্যতম গ্রীক সেনাপতি এভারনোজ আল ইসলামের শ্রেষ্টত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। মুসলিমদের আচরণ, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং শৃংখলা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে খৃষ্টানধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীকালে এভারনোজ এবং তাঁর সাথীদের তলোয়ার ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।

 

১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ওরখান গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রসিদ্ধ ব্রুসা নগরী দখল করেন। অতঃপর এই ব্রুসাই হয় উসমানী খিলাফাতের রাজধানী।

 

৪. উসমানের ইন্তিকাল

 

উসমান ৩৮ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

 

২. ওরখান

 


 

১. সুলতান পদে ওরখান

 

আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রুসা-র মসনদে বসেন। তিনি ‘সুলতান’ উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান।

 

২. ওরখান যেমন ছিলেন

 

আমীর উসমানের মতোই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন। রাজধানী ব্রুসাকে তিনি একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন।

 

পিতার মতোই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।

 

তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতো তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলো না। যুদ্ধের সময় ঘোষনা দেওয়া হতো। আগ্রহী লোকেরা এগিয়ে আসতো। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতো। দূরদর্শী ওরখান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভোগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারোহী বাহিনীকে বলা হতো সিপাই। যুদ্ধবন্দী খ্রিষ্টান যুবকদের মধ্যে থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে ওরখান

 

উসমানের মতোই বীরযোদ্ধা ছিলেন ওরখান। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরখানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরখান তাঁর মুখোমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান সসৈন্যে নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগন মুসলিমদের আচরনে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে। ওরখানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরোপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়োডোরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন।

 

৪. ওরখানের ইন্তিকাল

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ তাঁর বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশে পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিলো খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের বিশপ রাণী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমণের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

৩. প্রথম মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুরাদ

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখানের পুত্র প্রথম মুরাদ ব্রুসার মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুরাদ ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি। কিন্তু তিনি অসাধারন প্রতিভার অধিকারী ছি্লেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তিনিও ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। ইসলামী চিন্তা চেতনার প্রসারের দিকে তাঁরও ছিলো সজাগ নজর।

 

অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের প্রতিও তিনি সহনশীল ছিলেন। তাঁর শাসনকালেও খ্রিষ্টান প্রজাগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি ছিলেন একজন যোগ্য সংগঠক। তাঁর প্রচেষ্টায় উসমানী সেনাবাহিনী আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মুরাদ

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ গ্রীসের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আড্রিয়ানোপল দখল করেন।

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারিৎজা নদীর তীরে সংঘটিত যুদ্ধে খ্রিষ্টান বাহিনীকে পরাজিত করে মেসিডোনিয়া দখল করেন। সমসাময়িককালে প্রথম মুরাদ থ্রেস (বর্তমান রুমানিয়া)দখল করেন।

 

১৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ আড্রিয়ানোপলে রাজাধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

১৩৭২ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে বুলগেরিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। সামাকফ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম মুরাদের পরিচালিত বাহিনী যুদ্ধে জয় লাভ করে। বুলগেরিয়া উসমানী শাসনাধীনে আসে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়ার মাঝখানে অবস্থিত কসোভো রণাংগনে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শোক্তি সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে প্রথম মুরাদের হাতে ভীষনভাবে পরাজিত হয়। ল্যাজারাস বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

৪. প্রথম মুরাদের শাহাদাত

 

কসোভা প্রান্তরে বিজয় লাভের পর কভিলভিচ নামক একজন স্লাভ সৈনিক সুকৌশলে প্রথম মুরাদের নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ শহীদ হন। তিনি ৩০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৪. প্রথম বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম বায়েজিদ

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদের শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র প্রথম বায়েজিদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম বায়েজিদ একজন দৃঢ় ব্যাক্তি ছিলেন। রণক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন করেন। এই জন্য তাঁকে বলা হতো ইলদ্রিম বা বিদ্যুৎ। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে তিনি উসমানী খিলাফাত আরো সসংহত করেন। তবে স্বভাবে তিনি নিষ্ঠুর ছিলেন। আর তাঁর সার্ব স্ত্রীর প্রভাবে তিনি নৈতিক অধপতনের স্বীকার হন। এতে উসমানী খিলাফাতের সুনাম যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়।

 

৩. রণাংগনে প্রথম বায়েজিদ

 

কসোভোর যুদ্ধে পরাজিত ও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের পুত্র স্টিফেন বুলকোভিচ সার্বিয়ার সিংহাসনে বসেন। প্রথম বায়েজিদ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। স্টিফেন প্রথম বায়েজিদের আনুগত্য স্বীকার করে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীন স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। রাজা স্টিফেন তাঁর বোন অলিভেরা ডিসপিনাকে প্রথম বায়েজিদের নিকট বিয়ে দেন। এই সার্ব যুবতী প্রথম বায়েজিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তবে সার্বিয়ার রাজা স্টিফেন সন্ধির শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে থাকেন।

 

১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সুলাইমানকে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। সুলাইমান উত্তর বুলগেরিয়া আক্রমন করে রাজধানী ত্রিনোভা অধিকার করেন।

 

১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পোপ নবম বেনিফাস উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষনা করেন।

 

ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক ফ্রান্সবাসী বারগান্ডির যুবরাজ জন ডি নেভার্সের নেতৃত্বে জমায়েত হয়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, লোম্বার্ডি, স্যাভয়, ব্যাভারিয়া, জার্মেনী, ওয়ালাচিয়া, বোহেমিয়া, অষ্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের রাজণ্যবর্গ এবং ৬০ হাজার খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা অষ্ট্রিয়ার বুদাপেষ্ট শহরে একত্রিত হয়। তারা ড্যানিউব নদীর তীর ধরে অগ্রসর হয়ে বুলগেরিয়ার নিকোপলিস শহরের কাছে এসে শিবির স্থাপন করে। প্রথম বায়েজিদ তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। খ্রিষ্টান ক্রুসেডার ধর্মযোদ্ধাগন টাঁড় বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশ পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিল খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশপ রানী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমনের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

অতঃপর প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন। এই সময় তিনি খবর পান যে তাতার সমর নায়ক তাইমুর খান জর্জিয়া প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের অবরোধ তুলে নিয়ে তাইমুরের মুকাবিলার জন্য অগ্রসর হন।

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে আংকারা প্রান্তরে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রথম বায়েজিদ পরাজিত হন। তিনি ও তাঁর পুত্র বন্দী হন।

 

৪. প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকাল

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে বন্দী অবস্থায় প্রথম বায়েজিদ ইন্তিকাল করেন। তিনি ১৪ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

৫. প্রথম মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুহাম্মাদ

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকালের পর কয়েকটি বছর তাঁর পুত্রদের মধ্যে কলহ চলতে থাকে। অতঃপর প্রথম বায়েজিদের পুত্র মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুহাম্মাদ একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ সুলতান ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ শাসক ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব ব্যক্তি। ন্যায় পরায়ণ শাসক হিসেবে তাঁর স্থান অনেক উর্ধে। তিনি খুবই শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। একবার সার্বিয়া, ওয়ালাচিয়া এবং আলবেনিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দকে তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের নেতাদের বলতে ভুলো না যে আমি সকলকে শান্তি মঞ্জুর করেছি এবং সকলের নিকট থেকে শান্তিই গ্রহন করবো। আল্লাহ শান্তিভংগকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন।”

 

প্রথম মুহাম্মাহ তাঁর খ্রিষ্টান নাগরিকদের প্রতিও অত্যন্ত সদয় ছিলেন। প্রথম মুহাম্মাদ রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করার চেয়ে রাষ্ট্রের সংহতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন।

 

৩. প্রথম মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৬. দ্বিতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুরাদ

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুরাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১৮ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুরাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তাঁর উদারতা, বিজ্ঞতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা সর্বজন বিদিত ছিলো। তিনি দরিদ্র ও দুঃখী মানুষের বন্ধু ছিলেন। দ্বিতীয় মুরাদ একজন সুশাসক  ছিলেন। তাঁর শাসনকালে রাষ্ট্রের সর্বত্র আইন-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত ছিলো। ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ও সংরক্ষণের দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু সংখ্যক মাসজিদ এবং ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। জনগনের সুচিকিৎসার জন্য তিনি বহু হাসপাতাল ও স্থাপন করেছিলেন।

 

ইতিহাসবিদ গীবন বলেন, “ন্যায়নিষ্ঠা এবং সংযত আচরণ ছিলো দ্বিতীয় মুরাদের উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। খ্রিষ্টানগণ ও তা একবাক্যে স্বীকার করেছে। পূর্ব হতে বিশেষভাবে প্ররোচনা দ্বারা দ্বারা বাধ্য না হলে তিনি কখনো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন না। আর সন্ধি চুক্তি প্রতিপালনে তাঁর কথাও ছিলো পবিত্র।”

 

তাঁর রাজ্যে খ্রিষ্টান প্রজাগণ সুখে বসবাস করতো। অন্য সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের খ্রিষ্টানগণ তাঁর শাসিত অঞ্চলে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুরাদ

 

সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য ছিলো। সার্বিয়ার নতুন রাজা জর্জ ব্রাংকোভিচ বোসনিয়া-হারজেগোভিনা, পোলান্ড, ওয়ালাচিয়া, আলবেনিয়া এবং হাংগেরীর রাজাদেরকে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উসকানি দেন। হাংগেরীর বিখ্যাত সেনাপতি হুনিয়াডীর নেতৃত্বে বিশাল খ্রিষ্টান সেনাবাহিনী ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভার্না প্রান্তরে দ্বিতীয় মুরাদের সৈন্য বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। হাংগেরীর রাজা ভ্যাডিসলাস এবং কার্ডিনাল জুলিয়ান এই যুদ্ধে নিহত হন। সেনাপতি হুনিয়াডী পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান।

 

উল্লেখ্য যে হুনিয়াডী সার্বিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনার খ্রিষ্টানদেরকে জোর পূর্বক রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী বানাতে চান। এতে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তারা রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী হওয়ার চেয়ে নিজস্ব ধর্মমতে অটল থেকে উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীনে থাকাকে শ্রেয় মনে করে। ওই সব দেশের রাজা এবং সেনাপতিগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও জনগণ কিন্তু উসমানী খিলাফাতের নিকট আত্নসমপর্ন করাকেই সঠিক মনে করে।

 

৪. দ্বিতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে ৬৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৭. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো ২১ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো খুবই বলিষ্ঠ। এই জন্য তাঁকে ‘নেক আমলের জনক’ বলা হতো। কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ে পর তিনি সেখানে ইয়েনি সারাই নামে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই শহরে তিনি অনেকগুলো মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন।

 

যাকাত, মালে গানীমা এবং জিযইয়া ছিলো রাষ্ট্র তহবিলের আয়ের প্রধান উৎস। বিজিত অঞ্চলের রাজস্ব থেকে একটি অংশ ওয়াকফ সম্পত্তিরূপে আলাদা রাখা হতো এবং এর দ্বারা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ভার বহন করা হতো। মুসলিম নাগরিকদের কাছ থকে উশর (ফসলের যাকাত) আদায় করা হতো।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ বেসামরিক শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি দিওয়ান বা পরিষদ গঠন করেন। উযীর, নিশানজী (সচিব), কাজী এবং খাজাঞ্চী – এই চারজনের ওপর দিওয়ান পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো। দ্বীনী বিষয়ে তিনি প্রধান মুফতির ফতোয়ার উপর নির্ভর করতেন।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখতেন, সকলের প্রতি ন্যায় বিচার করতেন। তিনি বিচার ব্যাবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতেন।

 

শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি খিলাফাতকে কয়েকটি প্রদেশে এবং প্রতিটি প্রদেশকে কয়েকটি জিলায় বিভক্ত করেন। সরকারী কর্মচারীদের ট্রেনিং এর জন্য তিনি রাজধানীতে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন।

 

তিনি ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী। রণকৌশলে তাঁর পারদর্শিতা ছিলো অসাধারণ। তিনি একলক্ষ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুদক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন বসফরাস প্রণালীর উপকূলে প্রাচীন গ্রীক শহর বাইজেনটিয়ামে  তাঁর সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী স্থাপন করে এর নাম রাখেন নোভারোমা বা নয়া রোম। কালক্রমে তাঁর নামানুসারে এই শহরের নাম রাখা হয় কনস্ট্যান্টিনোপল।

 

৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট থিউডোসিয়াস তাঁর দুই পুত্রের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। দুইটি সাম্রাজ্য পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত হয়। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের অপর নাম বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। কনস্ট্যান্টিনোপল হয় বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। তদুপরি এটি খৃষ্টানদের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদের সময় গ্রীসের রাজা কনস্ট্যান্টাইন কনস্ট্যান্টিনোপলের সিংহাসনে আসীন ছিলেন। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাঁর পূর্বসূরীদের মতো কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের উদ্যোগ নিচ্ছেন জেনে রাজা কনস্ট্যান্টাইন পশ্চিম ইউরোপের খৃষ্টান রাজাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন। সমঝোতার খাতিরে তিনি তখন রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনেকগুলো দাবি-দাওয়া মেনে নেন। এতে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের নেতৃবৃন্দ ক্ষেপে যান। গ্রীন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান গ্র্যান্ড ডিউক নোটারাস বলেন যে, রোমান সম্রাটের মুকুট অপেক্ষা তিনি উসমানী সুলতানের পাগড়ি দেখতে বেশি পছন্দ করেন। এই সব কারনে গ্রীসের রাজা বেশি সংখ্যাক যোদ্ধা যোগাড় করতে পারেননি।

 

১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে ২৫ শে মে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ রাজা কনস্ট্যান্টাইনের প্রতিরোধ ভেংগে ফেলে কনস্ট্যান্টিনোপলে প্রবেশ করেন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা নিহত হন। কনস্ট্যান্টিনোপলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। এই মহা বিজয়ের জন্যই দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ফাতিহ মুহাম্মাদ বা বিজেতা মুহাম্মাদ নামে খ্যাত হন।

 

কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের পর দ্বিতীয় মুহাম্মাদ গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের কর্তৃপক্ষকে একটি সনদ প্রদান করেন। খৃষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি অবাধে প্রতিপালনের অধিকার স্বীকৃত হয়।

 

যুদ্ধকালে যেইসব খৃষ্টান শহর ছেড়ে পালিয়েছিলো দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাদেরকে স্বগৃহে ফিরে আসার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বহু খৃষ্টান কনস্ট্যান্টিনোপলে ফিরে আসে।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপল থেকে কনস্ট্যান্টিনোপলে উসমানী খিলাফাতের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

এই সময় বোসনিয়া-হারজেগোভিনার শাসক ছিলেন একজন উগ্র রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টান। নাগরিকদের বেশীরভাগ ছিল বোগোমিল খৃষ্টান। এরা ঈসা (আঃ) এবং মারইয়ামের পূজা করতো না। তাদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি ছিলো না। এরা ক্রসকে ধর্মীয় প্রতীক গণ্য করতো না। তারা মানতো যে ঈসা (আঃ) শূলবিদ্ধ হয়েছেন। এরা মদ্যপান করতো না।

 

বোগোমিলদের ধর্মবিশ্বাস রোম থেকে প্রচারিত পোপের ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো। তাই রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাদের প্রতি খড়গহস্ত ছিলো। বোগোমিলদের উপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালানো হয়। বহু বোগোমিল নিহত হয়। অনেকে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

 

অচিরেই বোসনিয়া-হারজেগোভিনার বোগোমিল খৃষ্টানগণ মুসলিমদের সদাচরণ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে পরিচিত হয়। রোমান ক্যাথলিকদের যুলুম থেকে বাঁচার জন্য তারা মুসলিমদের সাহাযয় প্রার্থনা করেন।

 

১৪৬৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একদল সৈন্য নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনা পৌঁছে গণধিকৃত শাসককে যুদ্ধে পরাজিত করেন। ইসলামের সোউন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার বোগোমিল খৃষ্টান মুসলিম হয়ে যায়। মাত্র একদিনেই ছত্রিশ হাজার খৃষ্টান মুসলিম হয়।

 

১৪৬৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আলবেনিয়ার উদ্দেশ্যে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। আলবেনিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সোউন্দর্যের সাথে পরিচিত হয়ে আলবেনিয়ার অগণিত খৃষ্টান ইসলাম গ্রহন করে আলবেনিয়াকে ইসলামের একটি মজবুত ঘাঁটিতে পরিণত করে।

 

১৪৬৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের অন্যতম দেনাপতি কুদুক আহমান ক্রিমিয়া জয় করেন।

 

১৪৭৭ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি উমার পাশা যুদ্ধক্ষেত্রে ভেনিসের রাজাকে পরাজিত করেন।

 

১৪৮০ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি কুদুক আহমাদ ইতালীর দ্বার অট্রেন্টো দখল করেন। এইভাবে ইতালীর একাংশ উসমানী খিলাফাতের অধীন হয়। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সমগ্র ইতালী জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

 

৪. দ্বিতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৮. দ্বিতীয় বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো পয়ঁত্রিশ বছর।

 

২. দ্বিতীয় বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

তিনি একত্রিশ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। শাসনকালে প্রথম ভাগে তাঁকে ভাইদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে দেখা যায়।

 

শাসক হিসেবে তিনি তেমন কোন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

মিসরের মামলুক শাসকদের সাথে উসমানী খিলাফাতের সংঘর্ষে একটি দুঃখজনক ঘটনা। ১৪৮৪ খৃষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৪৯১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দ্বিতীয় বায়েজিদকে ছয়বার মিসরের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। ১৪৯১ খৃষ্টাব্দে একটি সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হয়।

 

১৪৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ ভেনিস বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৫০৩ খৃষ্টাব্দে ভেনিস তাঁর সাথে শান্তি যুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

দ্বিতীয় বায়েজিদ ইরানের শাহ ইসমাঈলের সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। শাহ ইসমাঈল শিয়া ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় এশিয়া মাইনরে শিয়াগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্নক তৎপরতা শুরু করে।

 

১৫১১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ উযীরে আযম আলী পাশার নেতৃত্বে শীয়াদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। সেভার্স এর সন্নিকটে সংঘটিত যুদ্ধে শিয়াগণ পরাজিত হয়। তবে এই যুদ্ধে একদিকে উযীরে আযম আলী পাশা, অপরিদকে শীয়া নেতা শাহ কুলী নিহত হন।

 

৪. দ্বিতীয় বায়েজিদের ক্ষমতা ত্যাগ

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ জাননিসার এবং অন্যান্য সৈন্যদের চাপের মুখে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র প্রথম সলিমের পক্ষে ক্ষমতা ত্যাগ করেন।

 

৯. প্রথম সলিম

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম সলিম

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। গৃহবিবাদ দমন করে তাঁকে ক্ষমতা পাকাপোখত করতে হয়।

 

২. প্রথম সলিম যেমন ছিলেন

 

প্রথম সলিম অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি দ্বীনি আলোচনায় অংশ নিতে আনন্দ পেতেন। অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও তিনি উদার ছিলেন। তাঁর শাসনকালে খৃষ্টান এবং ইয়াহুদীগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি খুবই বিদ্যানুরাগী ছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করতেন। তা৬র প্রশাসনে বহু জ্ঞানীগুণি ব্যাক্তির সমাবেশ ঘটেছিলো। সাধারনত তিনি দয়ালু ব্যাক্তি ছিলেন। তবে অসাধু ব্যাক্তিদের প্রতি তিনি খুবই কঠোর ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি নিষ্ঠুরতার আশ্রয় ও নিয়েছেন। জনগনের সখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি খুবই সজাগ ছিলেন। সেনাবাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকেও তাঁর নজর ছিলো।

 

৩. রণাংগনে প্রথম সলিম

 

১৫১৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কালদিরান প্রান্তরে ইরানের শিয়া শাসক শাহ ইসমাঈলকে পরাজিত করেন। আহত অবস্থায় ইরানের শাহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যবৃন্দ বন্দী হন। প্রথম সলিম ইরানের রাজধানী তাব্রিজে প্রবেশ করেন। তিনি ইরানের দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান উসমানী খিলাফাএত্র অন্তর্ভুক্ত করে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসেন।

 

১৫১৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের মামলুক শাসক কানসোহ আলঘোরীর নিকট থেকে সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং আরবের বৃহত্তর অংশ দখল করেন।

 

১৫১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের নতুন শাস্ক তুমান বে-কে কায়রোর নিকতবর্তী বিদানিয়া প্রান্তরে পরাজিত করে মিসর উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

 

৪. খালীফা পদবী গ্রহণ

 

বাগদাদ কেন্রিক বিশাল বানুল আব্বাস খিলাফাত তাতারদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছিলো। ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে বাগদাদের পতন ঘটে তাতার সমর নায়ক হালাকু খানের হাতে। বানুল আব্বাসের জীবিত সদস্যগণ পালিয়ে মিসরে গিয়ে পৌঁছে। মিসরে তখন মামলুকদের শাসন।

 

খালীফা পদবী তখন মুসলিম জাহানের আত্নিক ঐক্যের একটি প্রতীকী পদবী ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। প্রথম সলিম যখন মিসর জয় করেন তখন খালীফা পদবীধারী আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিল কায়রোতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ছিলেন মামলুকদের হাতের পুতুল মাত্র। প্রথম সলিম তাঁকে বন্দী করে কন্সট্যান্টিনোপলে নিয়ে আসেন। আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিলকে খালীফা পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দ্যা হয়। প্রথম সলিম খালীফা পদবী গ্রহণ করেন। তখন থেকে উসমানী শাসকগণ একই সময় ‘সুলতান’ ও ‘খালীফা’ পদে অধিষ্ঠিত হতে থাকেন।

 

৫. প্রথম সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে সুলতান ও খালীফা প্রথম সলিম ইন্তিকাল করেন।

 

১০. প্রথম সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম সুলাইমান

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিমের একমাত্র পুত্র প্রথম সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর।

 

২. প্রথম সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

যুবরাজ থাকাকালেই প্রথম সুলাইমান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তখনই তা৬র সততা ও যোগ্যতার কথা সর্বত্র আলোচিত হতো। তিনি খালীফা হওয়ার পর সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রথম সুলাইমান ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম। দৈনন্দিন জীবনে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সাথে প্রতিপালন করতেন। সকল মুসলিম নাগরিক যাতে নিয়মিত ছালাত আদায় এবং ছাওম পালন করে সেই দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। ছালাত এবং ছাওম পালনে শৈথিল্যের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। প্রথম সুলাইমান আল কুরআনের আটটি খন্ড নিজের হাতে কপি করে সুলাইমানিয়া মাসজিদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি কা’বারও সংস্কার সাধন করেন।

 

তিনি অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও উদার মনোভাব পোষন করতেন। তাঁর শাসনকালে ধর্মীয় কোন্দলের কারনে বিপদাপন্ন হয়ে খৃষ্টান দেশগুলো থেকে বহু প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খৃষ্টান তাঁর পরিচালিত রাষ্ট্রে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে। ইতিহাসবিদ লর্ড ক্রেজি বলেন, “খৃষ্টান জগতে রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে অত্যাচার-অবিচারের যুগে সমসাময়িক অন্যকোন নরপতি সুলাইমানের ন্যায় প্রশংসা অর্জন করতে পারেননি।”

 

সাহসিকতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়নতা এবং বদান্যতা তাঁর চরিত্রের ভূষন ছিল। তিনি নাগরিকদের করভার লাঘব করেন।

 

সুলাইমানিয়া মাসজিদ তাঁর অমর কীর্তি। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গোসলখানা, সেতু ইত্যাদি তৈরী করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করে সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি আপন জামাতাকেও গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে দেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি সমগ্র খিলাফাতকে ২১ টি ওলায়াত (প্রদেশ) এবং ২৫০ টি সানজাকে (জিলা) বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সানজাক আবার কয়েকটি কাদাসে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বলা হতো। সানজাকের শাসনকর্তা ছিলেন পাশা। প্রত্যেকটি কাদাসে ছিলেন একজন কাযী। তবে প্রথম সুলাইমানের আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন পছন্দ করতেন। তাঁর ওপর অন্যতমা স্ত্রী রোক্সেলানার বিশেষ প্রভাব ছিল।

 

তাঁর সমসাময়িক প্রখ্যাত শাসক ছিলেন জার্মেনীর পঞ্চম চার্লস, ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিস, ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ, রাশিয়ার জার আইভানোভিচ, পোল্যান্ডের সিজিসমান্ড, ইরানের শাহ ইসমাঈল এবং ভারতের মোগল সম্রাট আকবর।

 

৩. দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা

 

প্রথম দিকে উসমানী শাসকগণ নিজেদেরকে ইসলামী আইনকানুনের প্রতিভূ মনে করতেন। ধর্মীয় আইনবিদগণ কাযী ও মুফতী নামে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে বিভাগ দুইটিকে প্রধান মুফতীর অধীনে আনা হয়। প্রধান মুফতী শাইখুল ইসলাম নামে পরিচিত হন। ১৬ শতকের মধ্যভাগ থেকে শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাঁর পদমর্যাদা প্রায় উযীরে আযমের পদমর্যাদার সমকক্ষ ছিল। কোন আইন ধর্মীয় বিধান সম্মত কিনা সেই সম্বন্ধে অভিমত দেওয়াই ছিল শাইখুল ইসলামের প্রধান কাজ। সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর দফতরের অধীন ছিল।

 

৪. রণাংগনে প্রথম সুলাইমান

 

হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই খালীফার দূতকে হত্যা করেন। ১৫২১ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান সৈন্য বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে হাংগেরীর তখনকার রাজধানী বেলগ্রেড দখল করেন।

 

১৫২২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান রোডস দ্বীপ জয় করেন।

 

১৫২৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই শক্তি সঞ্চয় করে আবার মুসলিমদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। প্রথম সুলাইমান উযীরে আযম ইবরাহীম পাশার সেনাপতিত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। মোহাক্‌স্‌ প্রান্তরে উভয় বাহিনীর মুকাবিলা হয়। যুদ্ধে দ্বিতীয় লুই পরাজিত ও নিহত হন। হাংগেরীর রাজধানী বুদাপেষ্ট মুসলিমদের দখলে আসে।

 

১৫৫৩ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান ইরানের হাত থেকে ইরাক ছিনিয়ে নেন।

 

১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বাসরা জয় করেন।

 

তিনি প্রধান নৌ সেনাপতি খাইরুদ্দীন বারবারোসা এবং দ্রাগুত পাশা, উলুজ আলী, পিরি পাশা এবং পিয়ালী পাশা নামক কয়েকজন নৌ সেনাপতির সাহায্যে একটি দক্ষ নৌ-বাহিনী গড়ে তোলেন। এই নৌ-বাহিনী ভূমধ্য সাগর, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

 

৫. প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলান বিদ্রোহী হয়ে ওঠলে প্রথম সুলাইমান অভিযানে বের হন। পথিমধ্যে তিনি ক্রোশিয়া দখল করেন। তার পর তিনি সিগেত দুর্গ জয় করেন। সিগেত দুর্গের পতনের পর সেই রাতেই প্রথম সুলাইমান আকস্মিকভাবে ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

১১. দ্বিতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সলিম

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন

 

২. দ্বিতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সলিম ছিলেন অযোগ্য ও আরামপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন কাব্যরসিক। তিনি কবি-সাহিত্যিক এবং চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। প্রাসাদ অভ্যন্তরে অবস্থান করে নারীদের সাহচর্যে থাকা এবং মদ্যপান করা তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। কোন কোন ইতিহাসবিদ তাঁকে ‘মাতাল সেলিম’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন। শাসনকার্যের তিনি অবহেলা প্রদর্শন করতেন। দ্বিতীয় সলিম উসমানী খিলাফাতের পতন যুগের প্রথম খালীফা।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সলিম

 

দ্বিতীয় সলিম যুদ্ধ করার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। তবে তাঁর উযীরে আযম মুহাম্মাদ সুকোল্লি একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ও উদ্যোগে উসমানী সৈন্যরা কয়েকটি সামরিক অভিযানে বের হয়। ক্রীটস দ্বীপ জয়, আরব ও ইয়ামান পুনর্দখল এবং তিউনিসিয়া জয় দ্বিতীয় সলিমের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি লালা মুস্তাফা এবং বেলার বেগ ভেনিসের সেনাপতি ব্রাগাডিনোকে পরাজিত করে সাইপ্রাস জয় করেন।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে ভেনিসের প্ররোচনায় স্পেনরাজ, রোমের পোপ, স্যভয়ের ডিউক এবং মাল্টার নাইট মিলে অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডন জুয়ানের নেতৃত্বে লেপান্টো উপসাগরে উসমানী খিলাফাতের নৌবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। নৌ-সেনাপতি কাপিতান পাশা নিহত হলে উসমানী বাহিনী বিশৃংখল হয়ে পড়ে এবং পরাজয় বরণ করে।

 

ইতিপূর্বে তিউনিস উসমানী খিলাফাতের অধীনে ছিল। লেপান্টো যুদ্ধের বিপর্যয়ের পর অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডোন জুয়ান স্পেনের সাহায্য নিয়ে তিউনিস দখল করেন। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে মুসলিম নৌ-সেনাপতি উলুজ আলীর নেতৃত্বে মুসলিমগণ তিউনিস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যদের দ্বারা তিউনিস পুনরুদ্ধার হওয়ার পর পরই দ্বিতীয় সলিম ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

১২.তৃতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুরাদ

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সলিমের পুত্র তৃতীয় মুরাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর।

 

২. তৃতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুরাদ একজন বিলাসী ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কোন যোগ্যতাই তাঁর ছিলনা। তিনি নারী আর মদ নিয়ে প্রাসাদের অভ্যন্তরে মত্ত থাকতেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি তাঁর সুযোগ্য উযীরদের ক্ষমতা হ্রাস করে খিলাফাতের বিপুল ক্ষতি সাধন করেন। তৃতীয় মুরাদের আম্মা নূর বানু এবং তাঁর ভেনিসীয় স্ত্রী সোফিয়া তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় শেষাবধি সোফিয়াই কৃতকার্য হন।

 

তৃতীয় মুরাদের শাসনকালে প্রশাসনে দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা জেঁকে বসে। স্বজন প্রীতি প্রাধান্য পায়। অনিয়ম সর্বত্র নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুরাদ

 

তৃতীয় মুরাদের কোন সামরিক প্রতিভা ছিল না। যুদ্ধ করার মতো নৈতিক বলও ছিলনা তাঁর।

 

উসমানী খিলাফাতের গৌরব রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উসমান পাশা। ১৫৮৩ খৃষ্টাব্দে ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে তিনি বিজয়ী হন।

 

১৫৯০ খৃষ্টাব্দে ইরান একট শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী জর্জিয়া, তাব্রিজ, আজারবাইজান, শিরওয়ান প্রভৃতি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অংশ বলে স্বীকৃতি লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

 

১৩. তৃতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে মুরাদের পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তিনি ছিলেন রানী সোফিয়ার গর্ভজাত সন্তান।

 

২. তৃতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুহাম্মাদ একজন অপদার্থ সুলতান ছিলেন। ক্ষমতা নিষ্কন্টক করার জন্য তিনি তাঁর উনিশজন ভাইকে হত্যা করেন। রানী সোফিয়া তাঁর পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদের ওপর প্রভাবশালী ছিলেন। তৃতীয় মুহাম্মাদের স্ত্রীও তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। শাসনকার্যে মহিলাদের নির্দেশনা কার্যকর হতে থাকে। অপদার্ত সুলতান উযীরদের ওপর প্রশাসনের যাবতীয় কার্য ন্যস্ত করে নিজে প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারী ও মদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

তৃতীয় মুহাম্মাদের দুর্বলতার সুযোগে পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান অধিপতিগণ উসমানী খিলাফাতের ইউরোপঈয় প্রদেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে।

 

১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার আর্কডিউকের নেতৃত্বে খৃষ্টানগণ সামনে এগুতে থাকে। একান্ত বাধ্য হয়ে তৃতীয় মুহাম্মাদ হাসান সুকোল্লি পাশা, ইবরাহীম পাশা এবং সিকালা পাসাকে সাথে নিয়ে সসৈন্যে ময়দানে নামেন। করেসটিস প্রান্তরে লড়াই হয়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর শেষাবধি মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

১৪. প্রথম আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদের পুত্র প্রথম আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর।

 

২. প্রথম আহমাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আহমাদ তাঁর পূর্বসূরী দুইজন সুলতানের মতো অতো অযোগ্য ছিলেন না। বয়সে নবীন হলেও তিনি সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রশাসনের ওপর মহিলাদের প্রভাব খর্ব করার পদক্ষেপ নেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সেনাপতি লালা মুহাম্মাদ পাশাকে হাংগেরীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং সফলতা লাভ করেন।

 

অতঃপর তিনি অষ্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৬০৬ খৃষ্টাব্দে সিটভাটোরক সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির শর্তানুযায়ী ট্রান্সিলভানিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে স্বায়ত্বশাসন হাছিল করে। এতোকাল অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতকে বার্ষিক ত্রিশ হাজার মুদ্রা কর দিতো। চুক্তি অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তা থেকে অব্যাহতি লাভ করে। তবে যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে এককালীন দুই লাখ মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের সাথে ইরানের সংঘর্ষ চলছিলো। ১৬১১ খৃষ্টাব্দে সুলতান প্রথম আহমাদ ইরানের শসাহ আব্বাসের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান ছাড়া ইরানের অন্যান্য অঞ্চল শাহ আব্বাসকে ফিরিয়ে দেন।

 

প্রথম আহমাদের শাসনকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভেনিস এবং নেদারল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে।

 

৪. প্রথম আহমাদের ইন্তিকাল

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদ ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো উনত্রিশ বছর। তিনি ১৬ বছর খালীফা ছিলেন।

 

১৫. প্রথম মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মুস্তাফা

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদের ভাই প্রথম মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। মানসিক অসুস্থতার কারনে তিনি তিন মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

 

 

 

১৬. দ্বিতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় উসমান

 

১৬১৮ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম মুস্তাফার ভাতিজা দ্বিতীয় উসমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স চৌদ্দ বছর।

 

২. দ্বিতীয় উসমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় উসমান শাসনকার্যে কিছুটা যোগ্যতার পরিচয় দেন। তবে তিনি স্বার্থপর প্রকৃতির লক ছিলেন। তাঁর খামখেয়ালীপনা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ছিল।  তিনি জাননিসার বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

 

৩. দ্বিতীয় উসমানের পদচ্যুতি

 

১৬২২ খৃষ্টাব্দে বিদ্রোহী সৈন্যগণ দ্বিতীয় উসমানকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে। বিদ্রোহীগণ আবার প্রথম মুস্তাফাকে ক্ষমতার মসনদে বসায়। তিনি এবারও শাসনকার্য চালাতে ব্যর্থ হন। ফলে কয়েক মাস পরে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

 

১৭. চতুর্থ মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬২৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় উসমানের পুত্র চতুর্থ মুরাদকে মসনদে বসানো হয়। তখন তাঁর বয়স এগারো বছর।

 

২. চতুর্থ মুরাদ যেমন ছিলেন

 

পতনোন্মুখ উসমানী খিলাফাতের ইতিহাসে চতুর্থ মুরাদ কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী আমেজ দিতে সক্ষম হন। বয়সে তরুণ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের হারানো গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। খালীফা হয়ে তিনি দেখলেন যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটতরাজ, রাহাজানি, বিভেদ বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যাবহারে জনগন অতিষ্ঠ, পুর্ববর্তী বিলাসী সুলতানদের অপব্যয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় তহবিল শূন্য, জাননিসার সোইন্যদল অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল। চতুর্থ মুরাদ অতিগোপলে একটি নতুন সেনাদল গড়ে তোলেন। ছয় স্কোয়াড্রন অশ্বারোহী যোদ্ধা স্বেচ্ছায় এই বাহিনীতে যোগ দেয়। নতুন সৈন্যদের দ্বারা তিনি অবাধ্য ও উছৃংখল সৈন্যদেরকে শায়েস্তা করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। অচিরেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬৩৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাব্রিজ দখল করেন। ইতিমধ্যে ইরানীগণ বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় ছিল চতুর্থ মুরাদের শাসনকালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।

 

৪. চতুর্থ মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৬৪০ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর।

 

১৮. প্রথম ইবরাহীম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম ইবরাহীম

 

চতুর্থ মুরাদের কোন পুত্র সন্তান ছিলো না। ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে তাঁর ভাই প্রথম ইবরাহীম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম ইবরাহীম যেমন ছিলেন

 

প্রথম ইবরাহীম ছিলেন একজন অপদার্থ সুলতান। তবে উযীরে আযম কারা মুস্তাফা ছিলেন একজন যোগ্য শাসক। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারনে তিনি প্রাণ হারান। ফলে রাষ্ট্র আবার দুর্নীতি ও অরাজকতার অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। প্রথম ইবরাহীম বিলাস দ্রব্য আর নারীদের মাঝে ডুবে থাকেন। তাঁর বিলাসিতার অর্থ সংগ্রহের জন্য জনগনের ওপর নানবিধ কর চাপানো হয়।

 

৩. প্রথম ইবরাহীমের হত্যা

 

প্রথম ইবরাহীম এবং তাঁর নতুন উযীরে আযমের গণবিরোধী কার্যকলাপের দরুন রাষ্ট্রে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা উযীরে আযমকে হত্যা করে। ১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারান।

 

১৯. চতুর্থ মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম নিহত হলে তাঁর পুত্র চতুর্থ মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর।

 

২. চতুর্থ মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

বালক চতুর্থ মুহাম্মাদের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ছিলোনা। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যায়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চরম আকার ধারন করে। দিকে দিকে বিদ্রোহের পতাকা উড্ডীন হয়। সৌভাগ্যক্রমে চতুর্থ মুহাম্মাদ উযীরে আযম নিযুক্ত করেন মুহাম্মাদ কুপ্রিলীকে। তিনি একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি কনস্ট্যান্টিনোপলের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের অনুসারী খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেন। জাননিসার বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন। পাঁচ বছর শাসনকার্য চালাবার পর তিনি ইন্তিকাল করেন। চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাক্তন উযীরে আযম মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর সুযোগ্য পুত্র আহমাদ কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। আহমাদ কুপ্রিলীর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়ে চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাসাদ অভ্যন্তরে দাবা খেলায় ডুবে যান।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

আভ্যন্তুরীন শাসনের সাথে সাথে যুদ্ধ বিগ্রহও সামলাতে হতো আহমাদ কুপ্রিলীকে। ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে তিনি ইউরোপীয় খৃষ্টান বাহিনীর সাথে সেন্ট গোথার্ড নামক স্থানে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে আহমাদ কুপ্রিলী পরাজিত হয়। সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তার বহু হারানো অঞ্চল ফিরে পায়।

 

পোল্যান্ড বার বার উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধে চাপিয়ে দেন।

 

১৬৭৬ খৃষতাব্দে আহমাদ কুপ্রিলী ইন্তিকাল করেন। এবার উযীরে আযম নিযুক্ত হন কারা মুস্তাফা। তিনি ছিলেন বড্ড অদূরদর্শী। তাঁর সময়ে রাশিয়া এবং ভিয়েনার সাথে যুদ্ধে নেমে মুসলিম সৈন্যদল পরাজিত হয়।

 

১৬৮১ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তারা রাশিয়াকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন এলাকা ছেড়ে দিয়ে সন্ধি করেন।

 

১৬৮৩ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তাফা সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দিকে অগ্রসর হন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।

 

পূর্বে উসমানী খিলাফাত ছিলো ইউরোপের আতংক। ভিয়েনা অবরোধ ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের খৃষ্টান শক্তিগুলো বুঝতে পারে যে মুসলিমদের অতীতের শক্তি আর নেই। অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী ও অন্যান্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর বার বার হামলা চালাতে থাকে। উসমানী সৈন্যগণও বার বার পরাজিত হতে থাকে।

 

১৬৮৪ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী ক্রোশীয়া থেকে মুসলিম সৈন্যদেরকে হটিয়ে দেয়। অষ্ট্রিয়া বুদাপেষ্ট দখন করে নেয়।

 

১৬৮৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরী উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে নিউহোসেল কেড়ে নেয়।

 

ভেনিস কেড়ে নেয় কোরিস্থ, মোরিয়া, এথেন্স, নাভারিনো প্রভৃতি এলাকা।

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে পোল্যান্ড মোহাকস প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে।

 

যেই উসমানী খিলাফাত এক সময় অপরাজেয় শক্তি বলে গণ্য হতো সেই খিলাফাত এখন প্রায় প্রতিটি রণাংগনেই পরাজয় বরণ করতে থাকে।

 

৪. চতুর্থ মুহাম্মাদের পদচ্যুতি

 

চতুর্থ মুহাম্মাদ আটত্রিশ বছর খালীফা ছিলেন। তাঁর অযোগ্যতার কারনে খিলাফাতের দুর্দিন ঘনিয়ে আসে। দেশে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদ পদচ্যুত হয়ন।

 

২০. দ্বিতীয় সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সুলাইমান সুলতান হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কিংবা সামরিক প্রশিক্ষন লাভের কোন সুযোগ তিনি পাননি। রাষ্ট্রে তখন চলছিলো অরাজকতা। বাইরে শত্রুদের প্রবল চাপ। জাননিসার সৈন্যরা রাজধানীতে হত্যাকান্ড হত্যাকান্ড ঘটায়। তারা উযীরে আযমকেও হত্যা করে। দ্বিতীয় সুলাইমান ধৈর্য ও বিচক্ষনতার সাথে পরিস্থিতি মুকাবিলা করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে বেলগ্রেড কেরে নেয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনা এবং ট্রানসিলভানিয়াতেও অষ্ট্রিয়া বাহিনী বিরাট সাফল্য অর্জন করে। ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরাজিত হন।

 

খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় সুলাইমান মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর দ্বিতীয় পুত্র মুস্তাফা কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন যোগ্য ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি অযোগ্য কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন। সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত করেন।

 

মুস্তাফা কুপ্রিলী একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি উঁচু মানের সামরিক প্রতিভাও ছিলেন।

 

১৬৯০ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কুপ্রিলী অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি ছিনিয়ে নেয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন। তিনি বেলগ্রেডও পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। ট্রানসিলভানিয়া আবার মুসলিম দখলে আসে। এইভাবে রণাংগনে পরাজয়ের গ্লানি কিছুটা মুছে ফেলা সম্ভব হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২১. দ্বিতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় আহমাদ

 

স্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সদেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুন ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

২. দ্বিতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সন্দেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় আহমাদ

 

দ্বিতীয় আহমাদ কোন সামরিক প্রতিভা ছিলেন না। রণাংগনে কোন ভূমিকা রাখার মতো যোগ্যতা ছিলো না তাঁর।

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে উযীরে আযম মুস্তাফা কুপ্রিলী শত্রুপক্ষের গুলির আঘাতে নিহত হন। এতে সৈন্যদল মনোবল হারিয়ে ফেলে। উসমানী সৈন্যগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

৪. দ্বিতীয় আহমাদের ইন্তিকাল

 

দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। ১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে পরাজয় ও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে দ্বিতীয় আহমাদ ভগ্ন হৃদয়ে ইন্তিকাল করেন।

 

২২. দ্বিতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুস্তাফা তাঁর পূর্ববর্তী সলতানের তুলনায় যোগ্য ও সাহসী ছিলেন

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

 

১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে তিনি আবার অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে বের হন। কিন্তু জেন্টা প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।

 

জেন্টা যুদ্ধে পরাজয়ের পর অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী, ভেনিস এবং রাশিয়া দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর নিজেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করে। খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় মুস্তাফা হুসাইন কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। হুসাইন কুপ্রিলী একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি সুসংহত হয়ে ওঠে। হুসাইন কুপ্রিলী ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাথে যথাসম্ভব সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার নীতি অনুসরণ করেন।

 

১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত অষ্ট্রিয়া, রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং ভেনিসের সাথে কার্লোউইজ শহরে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

এই চুক্তি অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত ট্রানসিলভানিয়া এবং বার্নাত ছাড়া গোটা হাংগেরী অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দেয়। পোল্যান্ডও কয়েকটি অঞ্চল পায়। আজোভ অঞ্চল পেলো রাশিয়া। ভেনিস এথেন্স ছেড়ে দেয় এবং ডালমাটিয়া ও মোরিয়া নিয়ে নেয়। এই চুক্তির ফলে কিছুকালের জন্য পূর্ব ইউরোপে শান্তি স্থাপিত হয়। তবে উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার পরিচয় পেয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম শক্তির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

 

প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে হুসাইন কুপ্রিলী পদচ্যুত হন। এর কিছুকাল পরে তিনি মারা যান।

 

৪. দ্বিতীয় মুস্তাফার পদত্যাগ

 

হুসাইন কুপ্রিলীর মতো যোগ্য প্রশাসকের অবর্তমানে দেশ আবার বিশৃংখলার দিকে ধাবিট হয়। চারদিকে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হয়ে ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা পদত্যাগ করেন।

 

 

 

২৩. তৃতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় আহমাদ

 

১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফার ভাই তৃতীয় আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় আহমাদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তবে আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তাঁর শাসনকালের প্রথম ছয়টি বছর রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত ছিলো।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় আহমাদ

 

রাশিয়া কার্লোউইজ চুক্তি করে বিভিন্ন সামরিক তৎপরতা শুরু করে। ইতিমধ্যে সুইডেনের রাজা দ্বাদশ চার্লস রাশিয়ার জার পিটারের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে উসমানী খিলাফাতের আশ্রয় গ্রহন করেন। রাশিয়া সুইডেনের রাজাকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য তৃতীয় আহমাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। তৃতীয় আহমাদ সুইডেনের রাজ্যহারা আশ্রিত রাজাকে তাড়িয়ে দিতে রাজি হলেন না। এতে রাশিয়া মারমুখো হয়ে ওঠে।

 

১৭১০ খৃষ্টাব্দে সুলতানের নির্দেশে উযীরে আযম মুহাম্মাদ পাশার সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। এই অবস্থায় রাণী ক্যাথরিন মূল্যবান স্বর্নালংকার প্রদান করে মুহাম্মাদ পাশাকে বশীভূত করে ফেলেন। ফলে শত্রুকে বাগে পেয়েও শায়েস্তা না করে ১৭১১ খৃষ্টাব্দে প্রুথ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মুহাম্মাদ পাশা ফিরে আসেন।

 

এই ঘটনা জনগনের মাঝে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তৃতীয় আহমাদ উযীরে আযম পদ থেকে মুহাম্মাদ পাশাকে বরখাস্ত করেন।

 

১৭১৭ খৃষ্টাব্দে নতুন উযীরে আযম দামাদ আলী পেটারওয়ারদিন প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শত্রুর গুলিতে দামাদ আলী নিহত হন। উসমানী বাহিনী পরাজয় বরণ করে।

 

১৭১৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী বেলগ্রেড দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে নব নিযুক্ত উযীরে আযম ইবরাহীম পাশা পরিচালিত উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হয়।

 

১৭২৪ খৃষ্টাব্দে ইরানের সাভাবী শাসক শাহ তাহমাসপকে পরাজিত করে একদিকে রাশিয়া এবং অন্যদিকে উসমানী সৈন্যগন অগ্রসর হতে থাকে।

 

পরে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত লাভ করে জর্জিয়া, ইরিভান, শিরওয়ান এবং আজারবাইজান। রাশিয়া লাভ করে দারবান্দ, বাকু এবং জিলান।

 

১৭২৫ খৃষ্টাব্দে উসমানী সোইন্যগণ ইরানের তাব্রিজ দখল করে।

 

১৭২৯ খৃষ্টাব্দে নাদির শাহ ইরানের ক্ষমতা লাভ করেন।

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে নাদির শান উসমানী সৈন্যদেরকে হটিয়ে দিয়ে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেন। ইরানের নিকট পরাজিত হওয়ার খিলাফাতের সর্বত্র প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে জাননিসার সৈন্যদের সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীল সুলতানের প্রাসাদ অবরোধ করে উযীরে আযম ইবরাহীম পাশাসহ অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করে।

 

৪. তৃতীয় আহমাদের পদত্যাগ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে পরস্থিতি আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় আহমাদ তাঁর ভাতিজা প্রথম মাহমুদের অনুকূলে পদত্যাগ করেন।

 

২৪. প্রথম মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মাহমুদ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপ্লের মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মাহমুদ জাননিসার সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।

 

প্রথম মাহমুদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তিনি যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। সৌভাগ্যক্রমে তিনি আগা বাশীর নামক একজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ব্যক্তির সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মাহমুদ

 

১৭২১ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যবাহিনী ইরান আক্রমন করে হামাদান, কিরমান শাহ ও তাব্রিজ দখল করে নেয়। কিন্তু নাদির শাহের পাল্টা আক্রমনের মুখে এইসব স্থান বেশিদিন দখলে রাখা সম্ভব হয়নি।

 

এই দিকে রাশিয়ার জার পিটারের মৃত্যুর পর জারিনা এ্যানি রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি উসমানী খিলাফাত থেকে পূর্ব ইউরোপ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবার জন্য অষ্ট্রিয়ার সাথে এক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের মাঝে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখতে পায়। ফলে রাশিয়ার অগ্রাভিযান প্রতিহত করার জন্য এই দুইটি দেশ উসমানী খিলাফাতের পক্ষাবলম্বন করে।

 

এই প্রেক্ষাপটে ১৭৩৬ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া এক অঘোষিত যুদ্ধের মাধ্যমে উসমানী খিলাফাত থেকে আজোভ এবং ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়। ১৭৩৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার মিত্র অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে নাইস দখল করে নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনার ওপর আক্রমন চালায়। উসমানী সৈন্যগণ এই আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

 

১৭৩৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া আবার হামলা চালায়। উসমানী সৈন্যদের পালটা আক্রমনে অষ্ট্রিয়া সৈন্যবাহিনী পিছু হটে বেলগ্রেড গিয়ে আশ্রয় নেয়।

 

১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়া এবং অষ্ট্রিয়া একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটিকেই বলা হয় বেলগ্রেড চুক্তি। আর এটা ছিলো উসমানী খিলাফাতের জন্য সর্বশেষ সম্মানজনক চুক্তি

 

৪. প্রথম মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুস ইন্তিকাল করেন।

 

২৫. তৃতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় উসমান

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান কন্সট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

তিনি মাত্র তিন বছর খালীফা ছিলেন। এই সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। তাঁর শাসনকালে রাষত্রে শান্তি-শৃংখলা বিরাজমান ছিলো।

 

২. তৃতীয় উসমানের ইন্তিকাল

 

১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৬. তৃতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৫৭ খৃষতাব্দে তৃতীয় উসমানের ভাই তৃতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুস্তাফা তাঁর শাসনকালের প্রথম দিকে বেশ যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর উযীরে আযম রাগিব পাশা খুবই যোগ্য ও দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রনাংগনে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে উযীরে আযম রাগিব পাশা ইন্তিকাল করেন। এতে সুলতান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এই লক্ষ্যে তিনি প্রুশিয়ার রাজার সাথে মৈত্রী গড়ে তোলেন। অষ্ট্রিয়ার রাণী মেরিয়া থেরেসাও তাঁদের সাথে মিলিত হন।

 

১৭৬৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতে সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতকে এবং ইংল্যান্ড রাশিয়াকে সমর্থন করে।

 

বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ হতে থাকে। উভয় পক্ষ কখনো জয় কখনো পরাজয়ের সম্মুখীন হয়।

 

৪. তৃতীয় মুস্তাফার ইন্তিকাল

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফা ইন্তিকাল করেন।

 

২৭. প্রথম আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল হামিদ

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফার পুত্র প্রথম আবদুল হামিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল হামিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল হামিদ ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি যুদ্ধ বিগ্রহ পছন্দ করতেন না। কিন্তু রাশিয়া তাঁকে সুখে থাকতে দেয়নি।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল হামিদ

 

পূর্ব থেকেই উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছিলো। ১৭৭৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ রাশিয়ার সাথে কুটচুককাইনারজি সন্ধি করেন। রাশিয়া কৃষ্ণসাগর এবং ভূ-মধ্য সাগরে অবাধ বাণীজ্যের অধিকার লাভ করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত খৃষ্টানদের অভিভাবকত্ব করার অধিকার লাভ করে। ফলে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। কুটচুককাইনারজি সন্ধি উসমানী খিলাফাতের পতনের প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করে।

 

১৭৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার সাথে উসমানী খিলাফাতের যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে উসমানী সৈন্যগণ বিজয়ী হয়।

 

৪. প্রথম আবদুল হামিদের ইন্তিকাল

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ইন্তিকাল করেন।

 

২৮. তৃতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ভাতিজা তৃতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় সলিম চিলেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। তবে তিনি ইউরোপীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি বিভিন্নমুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে উযীর পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।

 

তৃতীয় সলিম ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর অনুকরনে উসমানী সৈন্যদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফ্রান্সের বহু সামরিক অফিসারকে কাজে লাগান। তিনি ফ্রান্স থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেন। সৈন্যদের জন্য সামরিক পোষাক পরিধান এবং নিয়মিত কুচকাওয়াজ বাধ্যতামূলক করেন। রাশিয়াতে ট্রেনিং প্রাপ্ত উমার পাশাকেও তিনি সেনাবাহিনীর সংস্কারের কাজে লাগান। তিনি সামন্ত প্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি ইউরোপের অনুকরণে বিভিন্ন বিষয় পড়াবার ব্যবস্থা করেন। ইউরোপীয় রাজনীতি, কুটনীতি, সমর নীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান হাছিলের জন্য তিনি বহু তরুণকে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা এবং বার্লিন পাঠান। তবে ইউরোপীয় ধাঁচে সংস্কার সাধন করতে গিয়ে তিনি ইসলামী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় প্রদেশগুলো আক্রমণ করে। উসমানী সৈন্যগণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

 

১৭৯১ খৃষ্টাব্দে সিস্টোভা সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ক্রোশিয়াসহ কিছু এলাকা অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে খিলাফাত বাকি এলাকাগুলোর ওপর দখল বহাল রাখতে সক্ষম হয়।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি খিলাফাতের অন্তর্গত গ্রীক প্রজাদেরকে বিদ্রোহের উসকানী দিতে থাকেন।

 

রাশিয়ার সেনাবাহিনী উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত অঞ্চল বুলগেরিয়া এবং বেসারভিয়ার দিকে সামরিক অভিযান চালায়। উসমানী সৈন্যগণও এগিয়ে আসে। বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হতে থাকে।

 

এই সময় ফ্রান্সে বিপ্লব সংঘটিত হয়। আর ইংল্যান্ডের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাত এবং রাশিয়ার মধ্যে জাসি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইতিমধ্যে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ফ্রান্সের শাসক হন। তিনি উসমানী খিলাফাতের প্রদেশ মিসর, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া দখলের জন্য ওঠে পড়ে লাগেন। যুদ্ধ বেধে যায়।

 

ফ্রান্সের প্রতিপত্তি বেড়ে যাচ্ছে দেখে ইংল্যান্ড এবার উসমানী খিলাফাতের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ফ্রান্স পিছু হটতে বাধ্য হয়।

 

১৮০২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের সাথে আমিন্‌স চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে উসমানী খিলাফাতের সম্পর্ক উন্নতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

 

১৮০৪ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার উসকানিতে সার্বিয়ার খৃষতানগণ কারা জর্জ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।

 

১৮০৬ খৃষতাব্দে উসমানী সোইন্যগণ যখন রাশিয়ার সোইন্যদের সাথে যুদ্ধ রত তখন সার্বিয়া স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়।

 

৩. তৃতীয় সলিমের হত্যা

 

তৃতীয় সলিমের শাসনকালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগ সৃষ্টি হয়। দিকে দিকে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করে আত্নগোপন করেন। ১৮০৮ খৃষতাব্দে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

 

২৯. চতুর্থ মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুস্তাফা

 

১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় সলিমের ভাতিজা চতুর্থ মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। কিন্তু এক বছর পরেই তাঁকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়।

 

৩০. দ্বিতীয় মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

১৮০৮ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মাহমুদ শাসনকার্যে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তবে তিনি তৃতীয় সলিমের সংস্কার ধারা নিয়ে সামনে অগ্রসর হন।

 

এই সময় ইউরোপীয় জীবন দর্শনে অনুপ্রাণিত মুস্তাফা সামী, সাদিক রিফাত প্রমুখ ব্যক্তি তাঁদের লেখার মাধ্যমে নতুন চিন্তার বীজ ছড়াতে থাকেন।

 

পূর্বে উযীরে আযম এবং শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ছিলো ব্যাপক।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে বিভিন্ন দফতরে ভারপ্রাপ্ত উযীর নিয়োগ করেন। প্রতিটি মন্ত্রনালয়ের জন্য গঠিত হয় একটি উপদেষ্টা পরিষদ। পূর্বে শাইখুল ইসলাম ছিলেন ধর্মীয় বিষয় এবং বেসামরিক প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয় মাহমুদ তাঁর ক্ষমতাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় ব্যাপারে সীমাবদ্ধ করে দেন।

 

আইনের খসড়া তৈরীর জন্য তিনি একটি পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে এটি কিছুটা প্রতিনিধিত্বশীল রূপ নেয় এবং এর নাম হয় শূরা-ফী-দাওলাত।

 

দ্বিতীয় মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকতার ‘তাকভীম-ই-ভিখারী’ নামে তুর্কী ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র বের হয়।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ পাগড়ির স্থলে ফেজটুপির প্রচলন করেন। সৈন্যদের জন্য তিনি পাজামার স্থলে পাতলুন এবং জবরজং জুতার পরিবর্তে বুট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

রাশিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৮১৭ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ সার্বিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হন। মিলোস অবরেনোভিচ স্বাধীন সার্বিয়ার প্রথম রাজা হন।

 

১৮১৪ খৃষ্টাব্দে ওডেসোতে চারজন গ্রীক বণিক “হিটারিয়া ফিলকী” নামে এক গুপ্ত সমিতি গঠন করে। ১৮২০ খৃষ্টাব্দে এর সদস্য সংখ্যা হয় দুই লাখ। ইউরোপে উসমানী খিলাফাতের অবসান ঘটিয়ে প্রাচীন গ্রীক সাম্রাজ্যের মতো একটি নতুন গ্রীক সাম্রাজ্য গঠন ছিলো এই সমিতির লক্ষ্য। ইতিহাসবিদ লেনপুল বলেন, “স্বাধীনতার উচ্চাদর্শ এই সমস্ত বিদ্রোহকে যতখানি না উদ্দীপিত করেছিলো তার চাইতে বেশি করেছিলো রাশিয়ার উস্কানি”

 

দ্বিতীয় মাহমুদ মিসরের মুহাম্মাদ আলীর সৈন্যদের সাহায্যে গ্রীক বিদ্রোহীদেরকে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলেছিলেন। এই সময় প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি গ্রীসের প্রতি ইউরোপীয়দের মনে সহানূভূতি জেগে ওঠে।

 

১৮২৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মিলিত বাহিনী নাভারিনোর নৌযুদ্ধে উসমানী নৌবাহিনীকে পরাজিত করে।

 

১৮২৮ খৃষ্টাব্দে গ্রীসের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান চালিয়ে উসমানী বাহিনী আবারো পরাজিত হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় আড্রিয়ানোপল চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী মোলডাভিয়া এবং ওয়ালাচিয়া রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন হয়। এশিয়ার কিছু অংশ ও রাশিয়ার হাতে চলে যায়। রাশিয়া খিলাফাতের সর্বত্র অবাধ বাণীজ্যের অধিকার আদায় করে নেয়।

 

১৮২৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

 

ইতিমধ্যে মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর সাথে দ্বিতীয় মাহমুদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

 

১৮৩১ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ আলীর পুত্র ইবরাহীম সিরিয়া দখলের জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হন। এই নাজুক অবস্থায় দ্বিতীয় মাহমুদ সাহায্য চাইলেন ইংল্যান্ড এবং রাশিয়ার কাছে। রাশিয়া এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বণ্যার পানির মতো রাশিয়ার সৈন্যরা উসমানী খিলাফাতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স শংকিত হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে কুতিরবার চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এই চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় মাহমুদ মুহাম্মাদ আলীকে সিরিয়া, ত্রিপোলী (লিবিয়া) এবং আদানা ছেড়ে দেন। খিলাফাতের সর্বত্র তখন রাশীয়ার সৈন্য।

 

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর আনকিয়ার স্কেলেসি চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দার্দানেলিস প্রণালীতে অবাধে যুদ্ধ জাহাজ চালনার অধিকার লাভ করে। রাশিয়া ছাড়া অন্যান্যদের যুদ্ধজাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাপিচুলেশান বা বিশেষ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা স্বত্বেও ইউরোপীয় বাণিকগণ সন্তুষ্ট ছিলোনা।

 

১৮৩৮ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ অংল্যান্ডের সাথে বাল্টা-লিমান কনভেনশান আনেম এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ফলে খিলাফাতে অবাধ বাণীজ্য নীতি গৃহীত হয়।

 

৪. দ্বিতীয় মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ ইন্তিকাল করেন।

 

প্রাচ্য সমস্যা

 

খৃষ্টীয় ১৬ ও ১৭ শতাব্দীতে উসমানী খিলাফাত ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিলো। পূর্ব ইউরোপের ড্যানিউব নদী থেকে শুরু করে ঈজিয়ান সাগর পর্যন্ত গ্রীক, সার্ব, বুলগার, আলবেনিয়ান প্রভৃতি জাতির বসতিস্থল বলকান অঞ্চলও উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

 

১৮ শতকে এসে উসমানী খিলাফাত দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীন বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানোলিস প্রণালীর ওপর আধিপত্য বিস্তারে চেষ্টিত হয়। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধিতে শংকিত হয়ে ওঠে এবং রাশিয়াকে রুখবার জন্য চেষ্টিত হয়।

 

এই বহুমুখী সমস্যাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ বলে আখ্যায়িত হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ প্রকট আকার ধারন করে।

 

 

 

৩১. প্রথম আবদুল মজিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদের পুত্র প্রথম আবদুল মজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল মজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল মজিদ ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত ছিলেন। রশীদ পাশা, আলী ফুয়াদ পাশা প্রমুখ রাজনীতিবিদগণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা লাভ করেন।

 

তাঁরা ইউরোপীয় ভাবধারায় অনুপ্রানিত ছিলেন। তাঁরা খালীফা প্রথম আবদুল মজিদকে তাঁদের ভাবধারায় দীক্ষিত করেন। তিনি ‘খাত্তি শরীফ’ ও ‘খাত্তি হুমায়ুন’ নামে রাজকীয় ফরমান জারি করে তানযিমাত বা সংস্কার প্র্যাস চালান। তাঁর লক্ষ্য ছিলো উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপীয় কায়দায় গরে তোলা।

 

তানযিমাতের কতগুলো দফা ছিলো প্রশংসনীয়। আবার কতগুলো দফা ছিলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এইগুলো সাধারণ স্বীকৃতি লাভ করেনি। আলেম সমাজ এইগুলোর চরম বিরোধিতা করে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে সংঘটিত হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। ইংল্যান্ডের রাণী ভিকটোরিয়া এক সময় বলেছিলেন, “জার নিকোলাস এবং তাঁর অনুচরদের উচ্চাকাংখার জন্যই এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।”

 

উনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জার নিকোলাস উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি মনে করে তা গ্রাস করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের অমতে তা করা সম্ভব নয় বলে তিনি গোপনে ইংল্যান্ডের কাছে উসমানী খিলাফাত ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার প্রস্তাব পাঠান। ইংল্যান্ড দেখলো যে কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানেলিসের ওপর রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। তাই আপন স্বার্থের খাতিরেই ইংল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের নিরাপত্তা বিধানের নীতি গ্রহণ করে।

 

১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়া কেড়ে নেয়। কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয় খিলাফাতের পক্ষ থেকে। কোন ফলোদয় হয়নি।

 

তাই ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এইভাবে শুরু হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের পক্ষ সমর্থন করে। ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ক্রিমিয়া যুদ্ধ শেষ হয়।

 

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী স্থির হলো যে কৃষ্ণ সাগর সকল জাতির বাণিজ্য জাহাজের জন্য খোলা থাকবে এবং কোন জাতির যুদ্ধজাহাজ এই সাগরে চলাচল করতে পারতে পারবেনা। কৃষ্ণ সাগর এবং দার্দানেলিস উপকূলে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের কোন সামরিক ঘাঁটি থাকবে না। রাশিয়া মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়ার কর্তৃত্ব ত্যাগ করবে। এই দুইটি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অধীনে স্বায়ত্ব শাসন লাভ করবে। ড্যানিউব আন্তর্জাতিক নদীর মর্যাদা পাবে। এতে সকল দেশের জাহাজ চলাচল করবে। রাশিয়া উসমানী খিলাফাতকে বেসারভিয়া ফেরত দেবে। উসমানী খিলাফাতের অধীন খৃষ্টান নাগরিকদের অভিভাবকত্ব রাশিয়ার ওপর থাকবে না। সার্বিয়া স্বায়ত্বশাসন পাবে।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিহত করা হয়। কিন্তু উসমানী খিলাফাতের ওপর ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

 

৪. প্রথম আবদুল মজিদের ইন্তিকাল

 

১৮৬১ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ ইন্তিকাল করেন।

 

৩২. আবদুল আযীয

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে আবদুল আযীয

 

১৮৬১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. আবদুল আযীয যেমন ছিলেন

 

খলীফা আবদুল আযীয \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলনের লোকদের পছন্দ করতেন না।

 

তাদের প্রতি তিনি দমন নীতি অবলম্বন করেন।

 

৩. আবদুল আযীযের ইন্তিকাল

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয ইন্তিকাল করেন।

 

৩৩. পঞ্চম মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুরাদ

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. পঞ্চম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

সুলতান পঞ্চম মুরাদ \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলন পছন্দ করতেন না। তিনিও তাদের ওপর দমন নীতি চালান।

 

৩. পঞ্চম মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৮৭৬ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৩৪. দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

ইয়াং তুর্কস

 

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মুহাম্মদ বে এবং নামিক কামালের নেতৃত্বে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ইয়াং তুর্কস নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত এইসব তরুণ উসমানী খিলাফাতের মূল ভূ-খন্ড তুর্কীতে ইউরোপীয় ধাচের একটি দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। খলীফা আবদুল আযীয শাসনকার্যে এদের হস্তক্ষেপ সহ্য করেন নি। তিনি তাদের প্রতি দমননীতি অবলম্বন করেন। তার কঠোর নীতির ফলে ইয়াং তুর্কস বিদেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আবদুল আযীযের পর পঞ্চম মুরাদ খালীফা হন। তিনিও ইয়াং তুর্কসকে ভালো চোখে দেখতেন না। তার সময়েও তারা বিদেশই অবস্থান করতে থাকে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সময় তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসে। তারা রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তির সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়।

 

এই সময় ইয়াং তুর্কস মিদহাত পাশার নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মিদহাত পাশা একজন যোগ্য সংগঠক ছিলেন। তাকেই ইয়াং তুর্কস-এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সাথে ইয়াং তুর্কস-এর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। কিছুকাল পর মিদহাত পাশার সাথে খালীফার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। খালীফা মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম পদ থেকে বরখাস্ত করেন। শাসনতন্ত্র মুলতবী হয়ে যায়। ইয়াং তুর্কস আত্মগোপন করে। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের অনুকূলে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

 

২. রণাংগনে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতের অন্যতম অঞ্চল বুলগেরিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ দমন করেন। এতে বহু বুলগার প্রান হারায়। ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া বুলগেরিয়ার ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্বে যুদ্ব ঘষণা করে। রাশিয়ায় সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে উসমানী সৈন্যগণ ময়দানে টিকতে পারলো না। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত রাশিয়ার সাথে স্যান স্টিফানো চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দবরুজা অঞ্চলসহ প্রচুর ক্ষতিপূরণ আদায় করে। ড্যানিউব অঞ্চলে উসমানী দুর্গগুলো ভেংগে ফেলতে হয়। রাশিয়া এশিয়া ভূ-খন্ডের বার্টুম, কারস, আরদাহান, বায়েজিদ প্রভৃতি অঞ্চল লাভ করে। বুলগেরিয়াকে স্বায়ত্বশাসিত করদ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হয়। আলবেনিয়া পর্যন্ত বুলগেরিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত করা হয়। সার্বিয়ার স্বাধীনতা আবারো স্বীকৃত হয়। মন্টিনেগ্রোর সীমান্ত পর্যন্ত সার্বিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত হয়। রুমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনাকে একজন খৃষ্টান গভর্ণর জেনারেলের অধীনে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। স্যান স্টিফানো চুক্তি পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্বি করে। উসমানী খিলাফাতের হাতে থাকে কেবল স্যালোনিকা, থেসলী, এপিরাস, আলবেনিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনা। পূর্ব এউরোপে রাশিয়ার প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলো শংকিত হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডই উদ্বিগ্ন হয় সবচে বেশি। অত্র অঞ্চলে সম্প্রসারণের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অষ্ট্রিয়াও নাখোশ হয়। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া দাবি তুললো যে যেহেতু প্রাচ্য সমস্যা ইউরোপের আন্তঃরাষ্ট্র সমস্যা, সেহেতু রাশিয়া এককভাবে এই অঞ্চলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। তাই স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলোর একটি সম্মেলনে পেশ করতে হবে। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া যুদ্বের হুমকিও দেয়। ফলে রাশিয়া স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য রাজি হয়। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দের ১৬ই জুন জার্মেনীর রাজধানী বার্লিনে বিসমার্কের সভাপতিত্বে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সম্মেলন শুরু হয়। বহু আলোচনার পর স্যান স্টিফানো চুক্তি সংশোধন করে স্বাক্ষরিত হয় বার্লিন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী রুমানিয়া, সার্বিয়া এবং মন্টিনেগ্রো স্বাধীনতা লাভ করে। বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে তিন ভাগ করে মেসিডোনিয়া  দেয়া হলো উসমানী খিলাফতের প্রত্যক্ষ শাসনে। দক্ষিনাংশ পূর্ব রুমানিয়া নামে স্ব-শাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। অবশিষ্ট অংশ বুলগেরিয়া নামে পরিচিত হয়।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অখন্ডতা সংরক্ষণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলো, কিন্তু সেই শক্তিগুলোই বার্লিন চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের অংগচ্ছেদ করলো। বার্লিন চুক্তি ইউরোপীয় শক্তিগুলোর স্বার্থপরতার উজ্বল প্রমান।

 

৩. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস

 

১৯০৬ খৃষ্টাব্দে স্যালোনিকায় আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস। তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন তালাত পাশা এবং জামাল পাশা। এই কমিটি ইয়াং তুর্কস-এর সাথে মিলিত হয়ে কাজ করতে থাকে। তুর্কীকে ইউরোপীয় ধাঁচে গঠন, শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ঘোষনা, প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলোর সাথে সহযোগিতা ইত্যাদি ছিলো কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর কর্মসূচী।

 

১৯০৮ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর পক্ষ থেকে আনোয়ার পাশা মেসিডোনিয়ায় একটি শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনীর বিরাট অংশ আনোয়ার পাশার সমর্থনে এগিয়ে আসে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সাথে সমঝোতায় পৌছান। তিনি শাসনতন্ত্র অনুমোদন করেন। তিনি হন রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক প্রধান। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস মনোনীত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারকে মেনে নিতে পারেননি। এই সরকারের কার্যক্রমের মাঝে তাঁর ইসলামের পতন দেখতে পান। তাঁরা সরকার বিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরও উসমানী খিলাফাতের দুরবস্থা অব্যাহত থাকে। রণাংগনে সৈন্যবাহিনী পরাজিত হতে থাকে। একের পর এক অঞ্চল খিলাফাতের হাতছাড়া হয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সমর্থিত পত্রিকাগুলো খালীফাকে আক্রমন করে বিভিন্ন লেখা ছাপতে থাকে। খালীফার বিরুদ্বে এই ধরনের লেখালেখি বহু লোককে মানসিকভাবে আহত করে। খালীফার বিশ্বস্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই সময় আততায়ীর হাতে প্রান হারান।

 

কমিটি সরকার প্রশাসনের পুরোনো অফিসারদেরকে চাকুরিচ্যত করে শূন্যপদে নিজেদের লোক বসাতে শুরু করে। একই নীতি অনুসরণ করা হয় সেনাবাহিনীতে। ব্যাপকহারে পদচ্যুত অফিসারগণ বিক্ষুব্দ হয়। নব নিযুক্ত অফিসারদের অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে বিদ্রুপাত্বক মন্তব্য করতে থাকে এবং সাধারণ সৈনিকদেরকে ধর্মীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর নেতৃবৃন্দ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার প্রতি উদাসীন ছিলেন। এতে সাধারণ লোকদের মনেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

 

১৯০৯ খ্রষ্টাব্দের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে কনস্ট্যান্টিনোপলের সৈন্যরা অফিসারদেরকে তাদের কক্ষে তালাবদ্ধ করে ক্যান্টনমেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পালর্ামেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে তাদের সাথে যোগ দেয় অসংখ্য মানুষ। তারা শারীয়ার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সাধারণ সৈনিকদের হাতে তাদের অনেকে প্রাণ হারায়। কমিটির নেতৃবৃন্দ পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে।

 

স্যালোনিকাতে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর মজবুত ঘাঁটি ছিলো। সাখানকার সেনাবাহিনী কমিটির অনুগত ছিলো। কনস্ট্যান্টিনোপলে কমিটি সরকারের বিপর্যয়ের খবর পেয়ে মাহমুদ শাওকাত পাশার নেতৃত্বে একদল সৈন্য রাজধানী অভিমুখে রওয়ানা হয়। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল পৌছে তা দখল করে নেয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়। ইত্তিহাদ-ই-মুহাম্মদী জামিয়াতি নামক সংস্থাটিও বেআইনী ঘোষিত হয়। বহু বিদগ্ধ ব্যক্তিকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। উসমানী খিলাফাতের অন্যতম ইসলামী তারকা বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীকেও বন্দী করে সামরিক আদালতে পেশ করা হয়। এইভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার দেশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

 

৩. দ্বিতীয় আবদুল হামিদের পদচ্যুতি

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সুলতান ও খলীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে পদচ্যুত করে।

 

৩৫. পঞ্চম মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুহাম্মদ

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস দ্বিতীয় আবদুল হামিদের ভাই পঞ্চম মুহাম্মদকে কষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসায়।

 

২. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর শাসনকাল

 

কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস নানা ধরনের ব্যক্তিদের সমন্বয় গঠিত ছিলো। এতে বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীর মতো ইসলামী ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তবে অধীকাংশ সদস্যই ছিলো জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। কিছু সংখ্যক নাস্তিকও ছিলো এর সদস্য। তদুপরি এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য ছিলো খৃষ্টান এবং ইয়াহুদী। এই কমিটি ক্ষমতা লাভ করে শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। সুলতান ও খলীফা হন শাসনতান্ত্রিক প্রধান। সরকারী সকল ক্ষমতা ছিলো উযীর পরিষদের হাতে।

 

দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়। ক্যাপিচুলেশান প্রথা বাতিল হয়। সকল পর্যায়ে তুর্কী ভাষায় প্রচলন বাধ্যতামূলক করা হয়। বানিজ্যিক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বহু সংখ্য্ক স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। কারিগরি ট্রেনিংয়ের জন্য বহু সংখ্যক যুবককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরন করা হয়। ডেভিড বে নামক একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী চার্লস লরেন্টের সহায়তায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন।

 

আনোয়ার পাশা সেনাবাহিনীর সংস্কারে মনোযোগ দেন। তিনি একদল জার্মেন সামরিক বিশেষজ্ঞ এনে সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে সাজান। আনোয়ার পাশা জার্মেন পদ্ধতির নৌবহরের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি নিজে বার্লিনের শিক্ষালাভ করেন। উসমানী নৌবাহিনীকে পুনর্গঠিত করার জন্য কাউন্ট রুবিলান্ট, এডমিরাল গ্যাম্বল এবং পরবর্তীকালে এডমিরাল লিম্পসের সহযোগিতা নেয়া হয়।

 

উচ্চ শিক্ষার জন্য বহু তরুণকে পাঠানো হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দেশে বহু সংখ্যক সেকুলার স্কুল এবং কলেজ স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞান, সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ক বহু গ্রন্থ তুর্কী ভাষায় অনুবাদ করা হয়। সহশিক্ষা চালু করা হয়। শরীয়া কোর্টগুলোর স্বাতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়।

 

৩. রণাংগনে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার

 

(ক) বলকান যুদ্ধ

 

রাশিয়ার প্ররোচনায় সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস এবং মন্টিনেগ্রো \'দ্যা বলকান লীগ\' নামে একটি সামরিক জোট গঠন করে উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ১৯১২ খৃষ্টাব্দে \'দ্যা বলকান লীগ\' খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় প্রথম বলকান যুদ্ধ। লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী খিলাফাত গ্রীসকে ক্রীট দ্বীপ ছেড়ে দিতে হয়। রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল ছাড়া ইউরোপের আর অংশই উসমানীদের হাতে রইলো না।

 

১৯১৩ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া এলাকাগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে \'দ্যা বলকান লীগের\' অন্তর্ভক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার কিছু পাওয়ার আশায় এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বুখারেষ্ট চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই যুদ্ধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বুলগেরিয়া। আড্রিয়ানোপল এবং থ্রেসের কিছু অংশ উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে।

 

বলকান যুদ্ধের ফলে বলকান উপদ্বীপে খৃষ্টান শক্তিগুলোর বিস্তৃতি ঘটে। উসমানী খিলাফাতের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব আরো সংকুচিত হয়।

 

(খ) প্রথম মহাযুদ্ধ

 

১৯১৪ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন অষ্ট্রেয়ার যুবরাজ ফ্রাঞ্জ ফার্ন্ডিনান্ড বোসনিয়া-হারজেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো সফরে এসে সার্বিয়ার নিযুক্ত আতাতায়ীদের হাতে সস্ত্রীক নিহত হন। ফলে অষ্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে রাশিয়া। পরে ফ্রান্স। আরো পরে ইংল্যান্ড। অনশেষে জাপান, ইতালী, চীন এবং ইউএসএ সার্বিয়ার পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে জার্মেনী। এই মহাযুদ্ধে গোড়ার দিকে উসমানী খিলাফাত নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর চরমপন্থী গ্রুপের নেতা আনোয়ার পাশার চাপে কমিটি সরকার জার্মেনীর পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে নামে।

 

এই মহাযুদ্ধে অষ্ট্রিয়া-জার্মেনী-উসমানী খিলাফাত পরাজিত হয়।

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মেনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে জার্মেনীর ওপর একটি অপমানকর চুক্তি চাপিয়ে দয়া হয়। এটিকেই বলা হয় ভার্সাই চুক্তি।

 

প্রথম মহাযুদ্ধে উসমানী খিলাফাত দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খিলাফাতের সর্বত্র এমন কি রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপলেও মিত্র শক্তির সৈন্যগণ অবস্থান গ্রহন করে। খালীফা পঞ্চম মহাম্মদ দখলদার শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হণ। তিনি তখন জাতীয় পরিষদ ভেংগে দেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। খালীফা নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। অপসারিত সরকারের বহু লোক বন্দী ও নির্বাসিত হয়।

 

৪. পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল করেন।

 

৩৬. ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে ষষ্ঠ মুহাম্মদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. রণাংগনে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের মে মাসে গ্রীস উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত স্মার্ণা দখল করে ব্যাপক হত্যাকান্ড ও লুটতরাজ চালায়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে ১০ই আগষ্ট বিজয়ী মিত্রশক্তি সেভার্স চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের ওপর চরম আঘাত হানে।

 

সেভার্স চুক্তি অনুযায়ী ঈজিয়ান সাগরের কয়েকটি দ্বীপ এবং থ্রেস উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গ্রীসকে দেয়া হয়। মিসর, সুদান, সাইপ্রাস, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং আরব উপদ্বীপ ইংল্যান্ডের কর্তৃত্বাধীনে দেয়া হয়। লেবানন, সিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া প্রভৃতি পেলো ফ্রান্স। কনষ্ট্যান্টিনোপল, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি উসমানী নৌ-বন্দরগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়। উসমানী খিলাফাতের বিমান বহর মিত্র শক্তির হাতে চলে যায়।

 

খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদের হাতে অবশিষ্ট থাকলো রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল এবং পার্বত্য আনাতোলিয়া।

 

এক কালের এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপের বিশাল এলাকা জড়ে বিস্তৃত উসমানী খিলাফাত সব হারিয়ে কনষ্ট্যান্টিনোপল আর আনাতেলিয়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে আনাতোলিয়ায় \'ইয়াং তুর্কস\' ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং গ্রীসের আক্রমন থেকে স্মার্ণা রক্ষা করতে না পারাY ষষ্ঠ মুহাম্মাদের কড়া সমালোচনা করে। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রিফাত রউফ বে এবং আলী ফুয়াদ পাশা।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা তখন সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার। খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদ তাঁকে সামরিক ইনস্পেক্টর জেনারেল হিসেবে আনাতোলিয়া পাঠান \'ইয়াং তুর্কস\'-এর বিদ্রোহ দমন করতে। সেখানে গিয়ে মস্তাফা কামাল পাশা বিদ্রোহীদের দলে ভিড়ে যান।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে \'ইয়াং তুর্কস\' আনাতোলিয়াতে একটি নির্বাহী পরিষদ গঠন করে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান হন মুস্তাফা কামাল পাশা এবং মেম্বার ছিলেন রিফাত রউফ বে, বেকীর সামী বে, রুস্তম বে, মাজাহার বে এবং হায়দার বে। এই নির্বাহী পরিষদ আনাতোলিয়ার শাসনভার গ্রহন করে এবং আংকারাতে রাজধানী স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করে।

 

অবস্থার নাজুকতা উপলব্ধি করে খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আলীরেজার নেতৃত্ব গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী উযীর পরিষদ মুস্তফা কামাল পাশার \'জাতীয় চুক্তি\' অনুমোদন করে। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিলো তুর্ক জাতীয় স্বাধীনতার ঘোষণা।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি। জেনারেল মিলানের নেতৃত্বে মিত্রশক্তিগুলোর সৈন্যগণ ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল দখল করে। কনষ্ট্যান্টিনোপলে মার্শাল L ঘোষণা করা হয়। চল্লিশ জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে বন্দী করে মাল্টায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে মুস্তাফা কামাল পাশা আংকারাতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। এই পরিষদের নাম দেয়া হয় গ্য্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলী। মস্তফা কামাল পাশা হন এই এসেম্বলীর সভাপতি। এইভাবে আংকারাতে কনষ্ট্যান্টিনোপলের সমান্তরাল সরকার কায়েম হয়। আংকারা সরকার ঘোষণা করে যে বিদেশী সৈন্যদের হাতে বন্দী খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তিগুলোও গ্রহনযোগ্য নয়। এতদসত্বেও ১৯২০ খৃষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ মিত্র শক্তির চাপের নিকট নতি স্বীকার করে সেভার্স চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকারের সৈন্যগণ মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে ইনইনুর যুদ্ধে গ্রীক বাহিনীকে পরাজিত করে তাদেরকে স্মার্ণা থেকে তাড়িয়ে দেয়। ১৯২১ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুর্ক বাহিনী সাকারিয়া প্রান্তরে গ্রীকদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে।

 

এই দুইটি সামরিক বিজয় আংকারা সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধি করে। কমিউনিষ্ট রাশিয়া আংকারা সরকারকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ফ্রান্স এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সিলিসিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়। ইতালীও আংকারা সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে আদালিয়া ছেড়ে দেয়।

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গ্রীস আংকারা সরকারের সাথে মুদানিয়া চুক্তি স্বাক্ষর করে স্মার্ণা এবং পূর্ব থ্রেসের ওপর তার দাবি পরিত্যাগ করে। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার এক ঘোষণার মাধ্যমে \'সুলতান\' পদ বিলুপ্ত করে।

 

৩. ষষ্ঠ মুহাম্মাদের পদত্যাগ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার কর্তৃক \'সুলতান\' পদ বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়ার পর ষষ্ঠ মুহাম্মাদ ক্ষমতা ছেড়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

 

৩৭. দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 


 

১. খালীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে খালীফা বলে ঘোষণা করে। রিফাত পাশা আংকারা সরকারের পক্ষে কনষ্ট্যান্টিনোপলের শাসনভার গ্রহন করেন।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দে জুলাই মাসে আংকারা সরকারের চাপে সেভার্স চুক্তি বাতিল করে লুজেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইংল্যান্ড মেনে নেয় যে কনষ্ট্যান্টিনোপল, আনাতোলিয়া এবং পূর্ব থ্রেস তুর্কীর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এইভাবে ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অবশিষ্টাংশ অর্থাৎ তুর্কীর অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা মেনে নেয়।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তুর্কীকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে মুস্তফা কামাল পাশা হন এর প্রেসিডেন্ট এবং ইসমত ইনুনু হন এর প্রাইম মিনিষ্টার। খালীফা পদ তখনো প্রতীকী পদ হিসেবে অবশিষ্ট ছিলো।

 

২. দ্বিতীয় আবদুল মজিদের পদচ্যুত হন

 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ পদচ্যুত হন।

 

 

 

উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি

 


 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশা একটি আইনের মাধ্যমে খিলাফাতের উচ্ছেদ সাধন করেন। তিনি তুর্কীকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তুর্কীর রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল থেকে আংকারা সরিয়ে আনেন।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা চরম ইসলামী বিদ্বেষী ছিলেন। যা কিছু ইসলামী আইন তখনো প্রচলিত ছিলো সেইগুলো বাদ দিয়ে তিনি সুইস কোড (Swiss Code) প্রবর্তন করেন।

 

তিনি পর্দা প্রথার বিলোপ সাধন করেন। একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের সর্বত্র সেকুলার স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। আরবীতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ হয়। আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। পাগড়ি বা ফেজটুপি পরা নিষিদ্ধ হয়। হ্যাট পরিধান করা বাধ্যতামুলক করা হয়। সালাম পরিত্যক্ত হয়।

 

দেশে সেকুলার পত্রপত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক বই-পুস্তক ব্যাপক হারে প্রকাশিত হয়। যুব সমাজ উচ্ছৃংখল হয়ে ওঠে। বেহায়াপনা উলংপনা বৃদ্ধি পায়। মদখোরের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপ হতে থাকে। আলেম সমাজ ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিদেরকে নানাভাবে নাজেহাল ও নির্যাতন করা হয়। মুস্তাফা কামাল পাশা রিপাবলিকান পিপলস পার্টি গঠন করেন। বহুকাল পর্যন্ত এটিই ছিলো তুর্কীর একমাত্র রাজনৈতিক দল।

 

ছয়শত ছত্রিশ বছর উসমানী খিলাফাত ছিলো মুসলিম উম্মার শক্তিকেন্দ্র। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে এই শক্তি কেন্দ্রর পতন ঘটে। এটা সত্য যে উসমানী খালীফাগণ খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো আল্লাহর রাসূলের (সা) হাতে গড়া লোক ছিলেন না। খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো তাঁরা নির্বাচিত খালীফাও ছিলেন না। তবুও এই কথা অনস্বীকার্য যে প্রথম দিককার উসমানী খালীফাগণ নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তাঁরা ব্যক্তিগণ জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতেন। খিলাফাতের সর্বত্র যাতে ছালাত কায়েম থাকে সেই জন্য স্থানে স্থানে তাঁরা বহু সংখ্যক মসজিদ নির্মান করেন। ইসলাম সম্পর্কে ভতিষ্যত জেনারেশনকে জ্ঞান দেবার জন্য তাঁরা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কাযীগন ইসলামী শারীয়া অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতেন। যাতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন তৈরী না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য শাইখুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। জনগনের স্বাস্থ্য-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সর্বত্র হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। স্থানে স্থানে গোসলখানা তৈরী করা হয়। বহু সংখ্যক রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি তৈরী করা হয়। যাকাত ও উশর আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হয়। মসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জান, মাল ও ইযযতের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করা হয়। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধ করা হয়।

 

তাঁরা সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। বিলাসিতা পরিহার করে চলতেন। তাঁরা একদিকে ছিলেন সৎ, অন্য দিকে ছিলেন যোগ্যতাসম্পন্ন। প্রিশাসন চালাতে তাঁরা হিমসিম খেতেন না। শাসনকার্য পরিচালনায় তাঁরা ব্যর্থতার পরিচয় দিতেন না। তাঁরা প্রতিভার কদর করতেন। যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদেরকে সরকারী পদসমূহে নিয়োগ করতেন।

 

আল্লাহর পথে জিহাদকে তাঁরা অতিশয় গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা নিজেরাই ছিলেন মুজাহিদ। যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা নিজেরাই সেনাপতিত্ব করতেন। প্রায় তিনশত বছর উসমানী খিলাফাত এই ধরনের সুলতান ও খালীফা লাভ করে ধন্য হয়েছিলো। তাঁদের আচরণ এবং অনুসৃত সুনীতিতে মুগ্ধ হয়ে বহু সংখ্যক অমুসলিম মুসলিম হয়েছিলো। পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান রাজাগণ খালীফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো কিন্তু তাদের প্রজাদের মাঝে খালীফাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব পরিলক্ষিত হতো।

 

পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান শক্তি উসমানী খিলাফাতের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে চেয়েছিলো, কিন্তু বারবারই উসমানী খিলাফাত এক অপরাজেয় শক্তি প্রমাণিত হয়েছে। পরর্রতী সোয়া তিনশত বছরে যাঁরা খালীফা হয়েছিলেন তাঁরা প্রথম দিককার খালীফাদের মতো ছিলেন না। ইসলামের অনুসরণের ক্ষেত্রে তাঁদের নিষ্ঠার অভাব ছিলো। তাঁরা ছিলেন বিলাসী। তাঁদের অনেকেই নারী আর মদের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েন। শাসক হিসেবে তাঁরা ছিলেন অযোগ্য। যোদ্ধা হিসেবে তাঁরা ছিলেন নিম্নমানের। আল্লাহর পথে জিহাদের গুরুত্ব তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন। গুণীব্যক্তিদের কদর করতে পারননি তাঁদের অনেকেই। ফলে প্রশাসনে অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

শেষ দিকে যাঁরা খালীফা হন তাঁদের কেউ কেউ তো ইসলামী জীবনদর্শন এবং বিধানকেই ভুলে বসেছিলেন। ইউরোপের ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ তাঁদের চিন্তাচেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো। এক দিকে চৈন্তিক ফ্রন্টে, অপরদিকে সামরিক ফ্রন্টে তাঁরা ইউরোপীয়দের নিকট নতি স্বীকার করেন।

 

ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, আল কুরআন ও আল হাদীসে যুগজিজ্ঞাসার জবাব অন্বেষণ এবং যুগোপযোগী সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি তাঁদের উদাসীনতা শেষাবধি তাঁদেরকে ইউরোপীয় শক্তির বশংবদে পরিণত করে। তাঁর ইউরোপীয়দের চিন্তাধারা প্রবেশের জন্য খিলাফাতের দ্বার খুলে দেন। ইউরোপের ভালোমন্দ সব কিছুই বন্যার পানির মতো খিলাফাতের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মুসলিমদের ঘরেই ইসলাম এবং মসলিমদের দুশমন তৈরি হতে থাকে। শেষ পর্যায়ে এরাই উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি এবং ইসলামের উচ্ছেদ সাধন করে।

 

তথ্যসুত্র

 


 

১. আধুনিক ইউরোপের পরিচয়/কে. আলী

 

২. মুসলিম ও আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস/কে.আলী

 

৩. History of Modern Europe Since 1789/V.D. Mahajan

 

৪. Badiuzzaman Said Nursi/Sukran Bahide

 

৫. First World War/A.J.P. Taylor

 

৬. ইসলামের ইতিহাস/কাযী আকরাম হোসাইন

', 'উসমানী খিলাফতের ইতিকথা', '', 'publish', 'closed', 'closed', '', '%e0%a6%89%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80-%e0%a6%96%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be', '', '', '2019-10-31 16:13:25', '2019-10-31 10:13:25', '

\"\"

 

উসমানী খিলাফতের ইতিকথা

 

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

 


 

স্ক্যান কপি ডাউনলোড

 


 

আমি লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশের মুসলিমদের বিরাট অংশ খিলাফতে রাশেদা, বানু  উমাইয়া খিলাফয়াত ও বানুল আব্বাস খিলাফাত সম্পর্কে যতটুকু অবহিত, উসমানী খিলাফাত সম্পর্কে ততটুকু অবহিত নন। অথচ মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জল ইতিহাসের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে উসমানী খিলাফাত। একাধারে ছয়শত ছত্রিশ বছর ধরে এই খিলাফাত এশীয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার সুবিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পুরোপুরি না হলেও প্রথম ভাগের উসমানী খালীফাগণ আল-কুরআনের বহুবিধ বিধান তাঁদের ব্যাগতিগত জীবন ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁদের জন্য অগ্রগতির রাজপথ উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। দুঃখের বিষয় পরবর্তী কালের খালীফাগণ আল-কুরআনের শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। ফলে তাঁরা ও তাঁদের শাসিতরা অচিরেই জাহিলিয়াতের শীকারে পরিণত হন। তাঁদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, পতন নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

 

এই পুস্তিকায় আমি উসমানী খিলাফাতের উত্থান ও পতনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছি যাতে সম্মানিত পাঠকগণ অল্প সময় খরচ করে একটি দীর্ঘ ইতিহাসের সার-সংক্ষেপের সাথে পরিচিত হতে পারেন।

 

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

 


 

উসমানী খিলাফাত

 

উসমানী খিলাফাত মুসলিম উম্মার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বানুল আব্বাস খিলাফাতের পতনের পর এই খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেই বছর তাতার সমর নায়ক হালাকু খান বানুল আব্বাস খিলাফাতের রাজধানী বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেন, সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন উসমানী খিলাফাতের প্রতিষ্ঠাতা উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মসনদে বসেন। তখন থেকে শুরু করে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন খালীফা ৬৩৬ বছর উসমানী খিলাফাত পরিচালনা করেন।

 

উসমানী খালীফাগণ হচ্ছেন-

 

১। উসমান (১২৮৮-১৩২৬)

 

২। ওরখান (১৩২৬-১৩৫৯)

 

৩। প্রথম মুরাদ (১৩৫৯-১৩৮৯)

 

৪। প্রথম বায়েজিদ (১৩৮৯-১৪০৩)

 

৫। প্রথম মুহাম্মাদ (১৪০৩-১৪২১)

 

৬। দ্বিতীয় মুরাদ (১৪২১-১৪৫১)

 

৭। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ (১৪৫১-১৪৮১)

 

৮। দ্বিতীয় বায়েজিদ (১৪৮১-১৫১২)

 

৯। প্রথম সলিম (১৫১২-১৫২৪)

 

১০। প্রথম সুলাইমান (১৫২৪-১৫৬৬)

 

১১। দ্বিতীয় সলিম (১৫৬৬-১৫৭৪)

 

১২। তৃতীয় মুরাদ (১৫৭৪-১৫৯৫)

 

১৩। তৃতীয় মুহাম্মাদ (১৫৯৫-১৬০৩)

 

১৪। প্রথম আহমাদ (১৬০৩-১৬১৭)

 

১৫। প্রথম মুস্তাফা (১৬১৭-তিনমাস)

 

১৬। দ্বিতীয় উসমান (১৬১৭-১৬২৩)

 

১৭। চতুর্থ মুরাদ (১৬২৪-১৬৪০)

 

১৮। প্রথম ইবরাহীম (১৬৪০-১৬৪৮)

 

১৯। চতুর্থ ইবরাহীম (১৬৪৮-১৬৮৭)

 

২০। দ্বিতীয় সুলাইমান (১৬৮৭-১৬৯১)

 

২১। দ্বিতীয় আহমাদ (১৬৯১-১৬৯৫)

 

২২। দ্বিতীয় মুস্তাফা (১৬৯৫-১৭০৩)

 

২৩। তৃতীয় আহমাদ (১৭০৩-১৭৩০)

 

২৪। প্রথম মাহমুদ (১৭৩০-১৭৫৪)

 

২৫। তৃতীয় উসমান (১৭৫৪-১৭৫৭)

 

২৬। তৃতীয় মুস্তাফা (১৭৫৭-১৭৭৩)

 

২৭। প্রথম আবদুল হামিদ (১৭৭৩-১৭৮৯)

 

২৮। তৃতীয় সলিম (১৭৮৯-১৮০৭)

 

২৯। চতুর্থ মুস্তাফা (১৮০৭০১৮০৮)

 

৩০। দ্বিতীয় মাহমুদ (১৮০৮-১৮৩৯)

 

৩১। প্রথম আবদুল মজিদ (১৮৩৯-১৮৬১)

 

৩২। আবদুল আযীয (১৮৬১-১৮৭১)

 

৩৩। পঞ্চম মুরাদ (১৮৭১-১৮৭৬)

 

৩৪। দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (১৮৭৬-১৯০৯)

 

৩৫। পঞ্চম মুহাম্মদ (১৯০৯-১৯১৮)

 

৩৬। ষষ্ঠ মুহাম্মদ (১৯১৮-১৯২২)

 

৩৭। দ্বিতীয় আবদুল মজিদ (১৯২২-১৯২৪)

 

 

 

১. উসমান

 


 

১. আমীর পদে উসমান

 

আনাতোলিয়ার ছোট্ট একটি জায়গীর ছিলো সুগুত। এর অধিপতি ছিলেন আত্‌তুগ্‌রিলের এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তাঁর নাম রাখা হয় উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্‌তুগরিল ইন্তিকাল করেন। উসমানের বয়স তখন ত্রিশ বছর। তিনি পিতৃ মসনদে বসেন।

 

সুগুতের একজন প্রখ্যাত দীনদার ব্যাক্তি ছিলেন আবিদ আলী। উসমান তাঁর কন্যা মাল খাতুনকে বিয়ে করেন।

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে উসমান ইয়েনি দখল করে রাজ্য সীমা বর্ধিত করেন। তিনি ইয়েনি শহরে তাঁর রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। উসমান ‘আমীর’ উপাধি গ্রহন করেন।

 

২. উসমান যেমন ছিলেন

 

উসমান ছিলেন ইসলামী নৈতিকতার বিমূর্ত রূপ। তাঁর জীবন ছিলো খুবই অনাড়ম্বর। তিনি ছিলেন উঁচু দরের শাসক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিন ইসকলের সুখ-শান্তির কথা ভাবতেন। তিনি তাঁর দীনদার শ্বশুরকে প্রথমে কাযী ও পরে উযীর নিযুক্ত করেছিলেন। উসমান রাজ্যময় মসজিদ নির্মাণ করে সালাত কায়েম এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার সুব্যবস্থা করেন। তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ। সৈনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ তাঁর রণকৌশল ছিলো অত্যন্ত উন্নত মানের। যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে গানীমার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্র-তহবিলে জমা করে বাকি চার ভাগ সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। সাধারণত তিনি কোমলতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু প্রয়োজনে তিনি হতেন ইস্পাতের মতো কঠিন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।

 

তাঁর জীবনে বিলাসিতা ছিলোনা। তিনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্যও কোন ধন-রত্ন জমা করে যাননি। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র ওরখানকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে কখনো যুলুম ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করবোনা। বিজিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সম্মান করবে। শারীয়ার বিধি বিধান মেনে চলবে। ঐশী আইনই আমাদের বড় শক্তি। পরম করুনাময়ের পথেই আমাদের সমৃদ্ধি। প্রজাদের রক্ষনাবেক্ষণ তোমার বড় কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে পারলে তুমি পরম করুনাময়ের অনুগ্রহ ও আশ্রয় লাভ করতে পারবে”

 

৩. রণাংগনে উসমান

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতত্বে তাঁর সৈন্যগণ ইয়েনি দখল করে। এই ইয়েনি শহরই হয় উসমানী খিলাফতের প্রথম রাজধানী।

 

১৩০১ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশ গ্রীসের সাথে উসমানের যুদ্ধ বাধে। গ্রীসই তখন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কুয়ুন হিসার যুদ্ধে গ্রীক সেনাপতি মুজালোনকে পরাজিত করে তিনি গ্রীস সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করেন।

 

১৩০২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমীর উসমানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা পরাজিত হন। তাঁর রাজ্যের এশীয় অঞ্চল উসমানের পদানত হয়।

 

এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে অন্যতম গ্রীক সেনাপতি এভারনোজ আল ইসলামের শ্রেষ্টত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। মুসলিমদের আচরণ, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং শৃংখলা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে খৃষ্টানধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীকালে এভারনোজ এবং তাঁর সাথীদের তলোয়ার ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।

 

১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ওরখান গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রসিদ্ধ ব্রুসা নগরী দখল করেন। অতঃপর এই ব্রুসাই হয় উসমানী খিলাফাতের রাজধানী।

 

৪. উসমানের ইন্তিকাল

 

উসমান ৩৮ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২. ওরখান

 


 

১. সুলতান পদে ওরখান

 

আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রুসা-র মসনদে বসেন। তিনি ‘সুলতান’ উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান।

 

২. ওরখান যেমন ছিলেন

 

আমীর উসমানের মতোই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন। রাজধানী ব্রুসাকে তিনি একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন।

 

পিতার মতোই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।

 

তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতো তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলো না। যুদ্ধের সময় ঘোষনা দেওয়া হতো। আগ্রহী লোকেরা এগিয়ে আসতো। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতো। দূরদর্শী ওরখান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভোগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারোহী বাহিনীকে বলা হতো সিপাই। যুদ্ধবন্দী খ্রিষ্টান যুবকদের মধ্যে থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে ওরখান

 

উসমানের মতোই বীরযোদ্ধা ছিলেন ওরখান। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরখানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরখান তাঁর মুখোমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান সসৈন্যে নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগন মুসলিমদের আচরনে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে। ওরখানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরোপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়োডোরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন।

 

৪. ওরখানের ইন্তিকাল

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ তাঁর বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশে পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিলো খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের বিশপ রাণী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমণের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

 

 

৩. প্রথম মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুরাদ

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখানের পুত্র প্রথম মুরাদ ব্রুসার মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুরাদ ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি। কিন্তু তিনি অসাধারন প্রতিভার অধিকারী ছি্লেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তিনিও ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। ইসলামী চিন্তা চেতনার প্রসারের দিকে তাঁরও ছিলো সজাগ নজর।

 

অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের প্রতিও তিনি সহনশীল ছিলেন। তাঁর শাসনকালেও খ্রিষ্টান প্রজাগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি ছিলেন একজন যোগ্য সংগঠক। তাঁর প্রচেষ্টায় উসমানী সেনাবাহিনী আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মুরাদ

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ গ্রীসের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আড্রিয়ানোপল দখল করেন।

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারিৎজা নদীর তীরে সংঘটিত যুদ্ধে খ্রিষ্টান বাহিনীকে পরাজিত করে মেসিডোনিয়া দখল করেন। সমসাময়িককালে প্রথম মুরাদ থ্রেস (বর্তমান রুমানিয়া)দখল করেন।

 

১৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ আড্রিয়ানোপলে রাজাধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

১৩৭২ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে বুলগেরিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। সামাকফ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম মুরাদের পরিচালিত বাহিনী যুদ্ধে জয় লাভ করে। বুলগেরিয়া উসমানী শাসনাধীনে আসে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়ার মাঝখানে অবস্থিত কসোভো রণাংগনে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শোক্তি সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে প্রথম মুরাদের হাতে ভীষনভাবে পরাজিত হয়। ল্যাজারাস বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

৪. প্রথম মুরাদের শাহাদাত

 

কসোভা প্রান্তরে বিজয় লাভের পর কভিলভিচ নামক একজন স্লাভ সৈনিক সুকৌশলে প্রথম মুরাদের নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ শহীদ হন। তিনি ৩০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৪. প্রথম বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম বায়েজিদ

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদের শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র প্রথম বায়েজিদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম বায়েজিদ একজন দৃঢ় ব্যাক্তি ছিলেন। রণক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন করেন। এই জন্য তাঁকে বলা হতো ইলদ্রিম বা বিদ্যুৎ। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে তিনি উসমানী খিলাফাত আরো সসংহত করেন। তবে স্বভাবে তিনি নিষ্ঠুর ছিলেন। আর তাঁর সার্ব স্ত্রীর প্রভাবে তিনি নৈতিক অধপতনের স্বীকার হন। এতে উসমানী খিলাফাতের সুনাম যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়।

 

৩. রণাংগনে প্রথম বায়েজিদ

 

কসোভোর যুদ্ধে পরাজিত ও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের পুত্র স্টিফেন বুলকোভিচ সার্বিয়ার সিংহাসনে বসেন। প্রথম বায়েজিদ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। স্টিফেন প্রথম বায়েজিদের আনুগত্য স্বীকার করে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীন স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। রাজা স্টিফেন তাঁর বোন অলিভেরা ডিসপিনাকে প্রথম বায়েজিদের নিকট বিয়ে দেন। এই সার্ব যুবতী প্রথম বায়েজিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তবে সার্বিয়ার রাজা স্টিফেন সন্ধির শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে থাকেন।

 

১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সুলাইমানকে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। সুলাইমান উত্তর বুলগেরিয়া আক্রমন করে রাজধানী ত্রিনোভা অধিকার করেন।

 

১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পোপ নবম বেনিফাস উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষনা করেন।

 

ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক ফ্রান্সবাসী বারগান্ডির যুবরাজ জন ডি নেভার্সের নেতৃত্বে জমায়েত হয়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, লোম্বার্ডি, স্যাভয়, ব্যাভারিয়া, জার্মেনী, ওয়ালাচিয়া, বোহেমিয়া, অষ্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের রাজণ্যবর্গ এবং ৬০ হাজার খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা অষ্ট্রিয়ার বুদাপেষ্ট শহরে একত্রিত হয়। তারা ড্যানিউব নদীর তীর ধরে অগ্রসর হয়ে বুলগেরিয়ার নিকোপলিস শহরের কাছে এসে শিবির স্থাপন করে। প্রথম বায়েজিদ তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। খ্রিষ্টান ক্রুসেডার ধর্মযোদ্ধাগন টাঁড় বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশ পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিল খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশপ রানী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমনের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

অতঃপর প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন। এই সময় তিনি খবর পান যে তাতার সমর নায়ক তাইমুর খান জর্জিয়া প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের অবরোধ তুলে নিয়ে তাইমুরের মুকাবিলার জন্য অগ্রসর হন।

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে আংকারা প্রান্তরে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রথম বায়েজিদ পরাজিত হন। তিনি ও তাঁর পুত্র বন্দী হন।

 

৪. প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকাল

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে বন্দী অবস্থায় প্রথম বায়েজিদ ইন্তিকাল করেন। তিনি ১৪ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৫. প্রথম মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুহাম্মাদ

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকালের পর কয়েকটি বছর তাঁর পুত্রদের মধ্যে কলহ চলতে থাকে। অতঃপর প্রথম বায়েজিদের পুত্র মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুহাম্মাদ একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ সুলতান ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ শাসক ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব ব্যক্তি। ন্যায় পরায়ণ শাসক হিসেবে তাঁর স্থান অনেক উর্ধে। তিনি খুবই শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। একবার সার্বিয়া, ওয়ালাচিয়া এবং আলবেনিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দকে তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের নেতাদের বলতে ভুলো না যে আমি সকলকে শান্তি মঞ্জুর করেছি এবং সকলের নিকট থেকে শান্তিই গ্রহন করবো। আল্লাহ শান্তিভংগকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন।”

 

প্রথম মুহাম্মাহ তাঁর খ্রিষ্টান নাগরিকদের প্রতিও অত্যন্ত সদয় ছিলেন। প্রথম মুহাম্মাদ রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করার চেয়ে রাষ্ট্রের সংহতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন।

 

৩. প্রথম মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৬. দ্বিতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুরাদ

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুরাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১৮ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুরাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তাঁর উদারতা, বিজ্ঞতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা সর্বজন বিদিত ছিলো। তিনি দরিদ্র ও দুঃখী মানুষের বন্ধু ছিলেন। দ্বিতীয় মুরাদ একজন সুশাসক  ছিলেন। তাঁর শাসনকালে রাষ্ট্রের সর্বত্র আইন-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত ছিলো। ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ও সংরক্ষণের দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু সংখ্যক মাসজিদ এবং ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। জনগনের সুচিকিৎসার জন্য তিনি বহু হাসপাতাল ও স্থাপন করেছিলেন।

 

ইতিহাসবিদ গীবন বলেন, “ন্যায়নিষ্ঠা এবং সংযত আচরণ ছিলো দ্বিতীয় মুরাদের উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। খ্রিষ্টানগণ ও তা একবাক্যে স্বীকার করেছে। পূর্ব হতে বিশেষভাবে প্ররোচনা দ্বারা দ্বারা বাধ্য না হলে তিনি কখনো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন না। আর সন্ধি চুক্তি প্রতিপালনে তাঁর কথাও ছিলো পবিত্র।”

 

তাঁর রাজ্যে খ্রিষ্টান প্রজাগণ সুখে বসবাস করতো। অন্য সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের খ্রিষ্টানগণ তাঁর শাসিত অঞ্চলে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুরাদ

 

সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য ছিলো। সার্বিয়ার নতুন রাজা জর্জ ব্রাংকোভিচ বোসনিয়া-হারজেগোভিনা, পোলান্ড, ওয়ালাচিয়া, আলবেনিয়া এবং হাংগেরীর রাজাদেরকে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উসকানি দেন। হাংগেরীর বিখ্যাত সেনাপতি হুনিয়াডীর নেতৃত্বে বিশাল খ্রিষ্টান সেনাবাহিনী ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভার্না প্রান্তরে দ্বিতীয় মুরাদের সৈন্য বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। হাংগেরীর রাজা ভ্যাডিসলাস এবং কার্ডিনাল জুলিয়ান এই যুদ্ধে নিহত হন। সেনাপতি হুনিয়াডী পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান।

 

উল্লেখ্য যে হুনিয়াডী সার্বিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনার খ্রিষ্টানদেরকে জোর পূর্বক রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী বানাতে চান। এতে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তারা রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী হওয়ার চেয়ে নিজস্ব ধর্মমতে অটল থেকে উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীনে থাকাকে শ্রেয় মনে করে। ওই সব দেশের রাজা এবং সেনাপতিগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও জনগণ কিন্তু উসমানী খিলাফাতের নিকট আত্নসমপর্ন করাকেই সঠিক মনে করে।

 

৪. দ্বিতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে ৬৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৭. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো ২১ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো খুবই বলিষ্ঠ। এই জন্য তাঁকে ‘নেক আমলের জনক’ বলা হতো। কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ে পর তিনি সেখানে ইয়েনি সারাই নামে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই শহরে তিনি অনেকগুলো মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন।

 

যাকাত, মালে গানীমা এবং জিযইয়া ছিলো রাষ্ট্র তহবিলের আয়ের প্রধান উৎস। বিজিত অঞ্চলের রাজস্ব থেকে একটি অংশ ওয়াকফ সম্পত্তিরূপে আলাদা রাখা হতো এবং এর দ্বারা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ভার বহন করা হতো। মুসলিম নাগরিকদের কাছ থকে উশর (ফসলের যাকাত) আদায় করা হতো।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ বেসামরিক শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি দিওয়ান বা পরিষদ গঠন করেন। উযীর, নিশানজী (সচিব), কাজী এবং খাজাঞ্চী – এই চারজনের ওপর দিওয়ান পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো। দ্বীনী বিষয়ে তিনি প্রধান মুফতির ফতোয়ার উপর নির্ভর করতেন।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখতেন, সকলের প্রতি ন্যায় বিচার করতেন। তিনি বিচার ব্যাবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতেন।

 

শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি খিলাফাতকে কয়েকটি প্রদেশে এবং প্রতিটি প্রদেশকে কয়েকটি জিলায় বিভক্ত করেন। সরকারী কর্মচারীদের ট্রেনিং এর জন্য তিনি রাজধানীতে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন।

 

তিনি ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী। রণকৌশলে তাঁর পারদর্শিতা ছিলো অসাধারণ। তিনি একলক্ষ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুদক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন বসফরাস প্রণালীর উপকূলে প্রাচীন গ্রীক শহর বাইজেনটিয়ামে  তাঁর সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী স্থাপন করে এর নাম রাখেন নোভারোমা বা নয়া রোম। কালক্রমে তাঁর নামানুসারে এই শহরের নাম রাখা হয় কনস্ট্যান্টিনোপল।

 

৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট থিউডোসিয়াস তাঁর দুই পুত্রের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। দুইটি সাম্রাজ্য পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত হয়। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের অপর নাম বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। কনস্ট্যান্টিনোপল হয় বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। তদুপরি এটি খৃষ্টানদের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদের সময় গ্রীসের রাজা কনস্ট্যান্টাইন কনস্ট্যান্টিনোপলের সিংহাসনে আসীন ছিলেন। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাঁর পূর্বসূরীদের মতো কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের উদ্যোগ নিচ্ছেন জেনে রাজা কনস্ট্যান্টাইন পশ্চিম ইউরোপের খৃষ্টান রাজাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন। সমঝোতার খাতিরে তিনি তখন রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনেকগুলো দাবি-দাওয়া মেনে নেন। এতে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের নেতৃবৃন্দ ক্ষেপে যান। গ্রীন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান গ্র্যান্ড ডিউক নোটারাস বলেন যে, রোমান সম্রাটের মুকুট অপেক্ষা তিনি উসমানী সুলতানের পাগড়ি দেখতে বেশি পছন্দ করেন। এই সব কারনে গ্রীসের রাজা বেশি সংখ্যাক যোদ্ধা যোগাড় করতে পারেননি।

 

১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে ২৫ শে মে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ রাজা কনস্ট্যান্টাইনের প্রতিরোধ ভেংগে ফেলে কনস্ট্যান্টিনোপলে প্রবেশ করেন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা নিহত হন। কনস্ট্যান্টিনোপলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। এই মহা বিজয়ের জন্যই দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ফাতিহ মুহাম্মাদ বা বিজেতা মুহাম্মাদ নামে খ্যাত হন।

 

কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের পর দ্বিতীয় মুহাম্মাদ গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের কর্তৃপক্ষকে একটি সনদ প্রদান করেন। খৃষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি অবাধে প্রতিপালনের অধিকার স্বীকৃত হয়।

 

যুদ্ধকালে যেইসব খৃষ্টান শহর ছেড়ে পালিয়েছিলো দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাদেরকে স্বগৃহে ফিরে আসার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বহু খৃষ্টান কনস্ট্যান্টিনোপলে ফিরে আসে।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপল থেকে কনস্ট্যান্টিনোপলে উসমানী খিলাফাতের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

এই সময় বোসনিয়া-হারজেগোভিনার শাসক ছিলেন একজন উগ্র রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টান। নাগরিকদের বেশীরভাগ ছিল বোগোমিল খৃষ্টান। এরা ঈসা (আঃ) এবং মারইয়ামের পূজা করতো না। তাদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি ছিলো না। এরা ক্রসকে ধর্মীয় প্রতীক গণ্য করতো না। তারা মানতো যে ঈসা (আঃ) শূলবিদ্ধ হয়েছেন। এরা মদ্যপান করতো না।

 

বোগোমিলদের ধর্মবিশ্বাস রোম থেকে প্রচারিত পোপের ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো। তাই রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাদের প্রতি খড়গহস্ত ছিলো। বোগোমিলদের উপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালানো হয়। বহু বোগোমিল নিহত হয়। অনেকে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

 

অচিরেই বোসনিয়া-হারজেগোভিনার বোগোমিল খৃষ্টানগণ মুসলিমদের সদাচরণ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে পরিচিত হয়। রোমান ক্যাথলিকদের যুলুম থেকে বাঁচার জন্য তারা মুসলিমদের সাহাযয় প্রার্থনা করেন।

 

১৪৬৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একদল সৈন্য নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনা পৌঁছে গণধিকৃত শাসককে যুদ্ধে পরাজিত করেন। ইসলামের সোউন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার বোগোমিল খৃষ্টান মুসলিম হয়ে যায়। মাত্র একদিনেই ছত্রিশ হাজার খৃষ্টান মুসলিম হয়।

 

১৪৬৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আলবেনিয়ার উদ্দেশ্যে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। আলবেনিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সোউন্দর্যের সাথে পরিচিত হয়ে আলবেনিয়ার অগণিত খৃষ্টান ইসলাম গ্রহন করে আলবেনিয়াকে ইসলামের একটি মজবুত ঘাঁটিতে পরিণত করে।

 

১৪৬৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের অন্যতম দেনাপতি কুদুক আহমান ক্রিমিয়া জয় করেন।

 

১৪৭৭ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি উমার পাশা যুদ্ধক্ষেত্রে ভেনিসের রাজাকে পরাজিত করেন।

 

১৪৮০ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি কুদুক আহমাদ ইতালীর দ্বার অট্রেন্টো দখল করেন। এইভাবে ইতালীর একাংশ উসমানী খিলাফাতের অধীন হয়। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সমগ্র ইতালী জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

 

৪. দ্বিতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৮. দ্বিতীয় বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো পয়ঁত্রিশ বছর।

 

২. দ্বিতীয় বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

তিনি একত্রিশ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। শাসনকালে প্রথম ভাগে তাঁকে ভাইদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে দেখা যায়।

 

শাসক হিসেবে তিনি তেমন কোন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

মিসরের মামলুক শাসকদের সাথে উসমানী খিলাফাতের সংঘর্ষে একটি দুঃখজনক ঘটনা। ১৪৮৪ খৃষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৪৯১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দ্বিতীয় বায়েজিদকে ছয়বার মিসরের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। ১৪৯১ খৃষ্টাব্দে একটি সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হয়।

 

১৪৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ ভেনিস বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৫০৩ খৃষ্টাব্দে ভেনিস তাঁর সাথে শান্তি যুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

দ্বিতীয় বায়েজিদ ইরানের শাহ ইসমাঈলের সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। শাহ ইসমাঈল শিয়া ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় এশিয়া মাইনরে শিয়াগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্নক তৎপরতা শুরু করে।

 

১৫১১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ উযীরে আযম আলী পাশার নেতৃত্বে শীয়াদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। সেভার্স এর সন্নিকটে সংঘটিত যুদ্ধে শিয়াগণ পরাজিত হয়। তবে এই যুদ্ধে একদিকে উযীরে আযম আলী পাশা, অপরিদকে শীয়া নেতা শাহ কুলী নিহত হন।

 

৪. দ্বিতীয় বায়েজিদের ক্ষমতা ত্যাগ

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ জাননিসার এবং অন্যান্য সৈন্যদের চাপের মুখে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র প্রথম সলিমের পক্ষে ক্ষমতা ত্যাগ করেন।

 

 

 

৯. প্রথম সলিম

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম সলিম

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। গৃহবিবাদ দমন করে তাঁকে ক্ষমতা পাকাপোখত করতে হয়।

 

২. প্রথম সলিম যেমন ছিলেন

 

প্রথম সলিম অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি দ্বীনি আলোচনায় অংশ নিতে আনন্দ পেতেন। অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও তিনি উদার ছিলেন। তাঁর শাসনকালে খৃষ্টান এবং ইয়াহুদীগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি খুবই বিদ্যানুরাগী ছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করতেন। তা৬র প্রশাসনে বহু জ্ঞানীগুণি ব্যাক্তির সমাবেশ ঘটেছিলো। সাধারনত তিনি দয়ালু ব্যাক্তি ছিলেন। তবে অসাধু ব্যাক্তিদের প্রতি তিনি খুবই কঠোর ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি নিষ্ঠুরতার আশ্রয় ও নিয়েছেন। জনগনের সখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি খুবই সজাগ ছিলেন। সেনাবাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকেও তাঁর নজর ছিলো।

 

৩. রণাংগনে প্রথম সলিম

 

১৫১৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কালদিরান প্রান্তরে ইরানের শিয়া শাসক শাহ ইসমাঈলকে পরাজিত করেন। আহত অবস্থায় ইরানের শাহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যবৃন্দ বন্দী হন। প্রথম সলিম ইরানের রাজধানী তাব্রিজে প্রবেশ করেন। তিনি ইরানের দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান উসমানী খিলাফাএত্র অন্তর্ভুক্ত করে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসেন।

 

১৫১৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের মামলুক শাসক কানসোহ আলঘোরীর নিকট থেকে সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং আরবের বৃহত্তর অংশ দখল করেন।

 

১৫১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের নতুন শাস্ক তুমান বে-কে কায়রোর নিকতবর্তী বিদানিয়া প্রান্তরে পরাজিত করে মিসর উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

 

৪. খালীফা পদবী গ্রহণ

 

বাগদাদ কেন্রিক বিশাল বানুল আব্বাস খিলাফাত তাতারদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছিলো। ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে বাগদাদের পতন ঘটে তাতার সমর নায়ক হালাকু খানের হাতে। বানুল আব্বাসের জীবিত সদস্যগণ পালিয়ে মিসরে গিয়ে পৌঁছে। মিসরে তখন মামলুকদের শাসন।

 

খালীফা পদবী তখন মুসলিম জাহানের আত্নিক ঐক্যের একটি প্রতীকী পদবী ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। প্রথম সলিম যখন মিসর জয় করেন তখন খালীফা পদবীধারী আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিল কায়রোতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ছিলেন মামলুকদের হাতের পুতুল মাত্র। প্রথম সলিম তাঁকে বন্দী করে কন্সট্যান্টিনোপলে নিয়ে আসেন। আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিলকে খালীফা পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দ্যা হয়। প্রথম সলিম খালীফা পদবী গ্রহণ করেন। তখন থেকে উসমানী শাসকগণ একই সময় ‘সুলতান’ ও ‘খালীফা’ পদে অধিষ্ঠিত হতে থাকেন।

 

৫. প্রথম সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে সুলতান ও খালীফা প্রথম সলিম ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

১০. প্রথম সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম সুলাইমান

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিমের একমাত্র পুত্র প্রথম সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর।

 

২. প্রথম সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

যুবরাজ থাকাকালেই প্রথম সুলাইমান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তখনই তা৬র সততা ও যোগ্যতার কথা সর্বত্র আলোচিত হতো। তিনি খালীফা হওয়ার পর সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রথম সুলাইমান ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম। দৈনন্দিন জীবনে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সাথে প্রতিপালন করতেন। সকল মুসলিম নাগরিক যাতে নিয়মিত ছালাত আদায় এবং ছাওম পালন করে সেই দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। ছালাত এবং ছাওম পালনে শৈথিল্যের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। প্রথম সুলাইমান আল কুরআনের আটটি খন্ড নিজের হাতে কপি করে সুলাইমানিয়া মাসজিদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি কা’বারও সংস্কার সাধন করেন।

 

তিনি অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও উদার মনোভাব পোষন করতেন। তাঁর শাসনকালে ধর্মীয় কোন্দলের কারনে বিপদাপন্ন হয়ে খৃষ্টান দেশগুলো থেকে বহু প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খৃষ্টান তাঁর পরিচালিত রাষ্ট্রে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে। ইতিহাসবিদ লর্ড ক্রেজি বলেন, “খৃষ্টান জগতে রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে অত্যাচার-অবিচারের যুগে সমসাময়িক অন্যকোন নরপতি সুলাইমানের ন্যায় প্রশংসা অর্জন করতে পারেননি।”

 

সাহসিকতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়নতা এবং বদান্যতা তাঁর চরিত্রের ভূষন ছিল। তিনি নাগরিকদের করভার লাঘব করেন।

 

সুলাইমানিয়া মাসজিদ তাঁর অমর কীর্তি। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গোসলখানা, সেতু ইত্যাদি তৈরী করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করে সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি আপন জামাতাকেও গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে দেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি সমগ্র খিলাফাতকে ২১ টি ওলায়াত (প্রদেশ) এবং ২৫০ টি সানজাকে (জিলা) বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সানজাক আবার কয়েকটি কাদাসে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বলা হতো। সানজাকের শাসনকর্তা ছিলেন পাশা। প্রত্যেকটি কাদাসে ছিলেন একজন কাযী। তবে প্রথম সুলাইমানের আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন পছন্দ করতেন। তাঁর ওপর অন্যতমা স্ত্রী রোক্সেলানার বিশেষ প্রভাব ছিল।

 

তাঁর সমসাময়িক প্রখ্যাত শাসক ছিলেন জার্মেনীর পঞ্চম চার্লস, ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিস, ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ, রাশিয়ার জার আইভানোভিচ, পোল্যান্ডের সিজিসমান্ড, ইরানের শাহ ইসমাঈল এবং ভারতের মোগল সম্রাট আকবর।

 

৩. দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা

 

প্রথম দিকে উসমানী শাসকগণ নিজেদেরকে ইসলামী আইনকানুনের প্রতিভূ মনে করতেন। ধর্মীয় আইনবিদগণ কাযী ও মুফতী নামে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে বিভাগ দুইটিকে প্রধান মুফতীর অধীনে আনা হয়। প্রধান মুফতী শাইখুল ইসলাম নামে পরিচিত হন। ১৬ শতকের মধ্যভাগ থেকে শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাঁর পদমর্যাদা প্রায় উযীরে আযমের পদমর্যাদার সমকক্ষ ছিল। কোন আইন ধর্মীয় বিধান সম্মত কিনা সেই সম্বন্ধে অভিমত দেওয়াই ছিল শাইখুল ইসলামের প্রধান কাজ। সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর দফতরের অধীন ছিল।

 

৪. রণাংগনে প্রথম সুলাইমান

 

হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই খালীফার দূতকে হত্যা করেন। ১৫২১ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান সৈন্য বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে হাংগেরীর তখনকার রাজধানী বেলগ্রেড দখল করেন।

 

১৫২২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান রোডস দ্বীপ জয় করেন।

 

১৫২৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই শক্তি সঞ্চয় করে আবার মুসলিমদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। প্রথম সুলাইমান উযীরে আযম ইবরাহীম পাশার সেনাপতিত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। মোহাক্‌স্‌ প্রান্তরে উভয় বাহিনীর মুকাবিলা হয়। যুদ্ধে দ্বিতীয় লুই পরাজিত ও নিহত হন। হাংগেরীর রাজধানী বুদাপেষ্ট মুসলিমদের দখলে আসে।

 

১৫৫৩ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান ইরানের হাত থেকে ইরাক ছিনিয়ে নেন।

 

১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বাসরা জয় করেন।

 

তিনি প্রধান নৌ সেনাপতি খাইরুদ্দীন বারবারোসা এবং দ্রাগুত পাশা, উলুজ আলী, পিরি পাশা এবং পিয়ালী পাশা নামক কয়েকজন নৌ সেনাপতির সাহায্যে একটি দক্ষ নৌ-বাহিনী গড়ে তোলেন। এই নৌ-বাহিনী ভূমধ্য সাগর, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

 

৫. প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলান বিদ্রোহী হয়ে ওঠলে প্রথম সুলাইমান অভিযানে বের হন। পথিমধ্যে তিনি ক্রোশিয়া দখল করেন। তার পর তিনি সিগেত দুর্গ জয় করেন। সিগেত দুর্গের পতনের পর সেই রাতেই প্রথম সুলাইমান আকস্মিকভাবে ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

১১. দ্বিতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সলিম

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন

 

২. দ্বিতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সলিম ছিলেন অযোগ্য ও আরামপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন কাব্যরসিক। তিনি কবি-সাহিত্যিক এবং চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। প্রাসাদ অভ্যন্তরে অবস্থান করে নারীদের সাহচর্যে থাকা এবং মদ্যপান করা তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। কোন কোন ইতিহাসবিদ তাঁকে ‘মাতাল সেলিম’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন। শাসনকার্যের তিনি অবহেলা প্রদর্শন করতেন। দ্বিতীয় সলিম উসমানী খিলাফাতের পতন যুগের প্রথম খালীফা।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সলিম

 

দ্বিতীয় সলিম যুদ্ধ করার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। তবে তাঁর উযীরে আযম মুহাম্মাদ সুকোল্লি একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ও উদ্যোগে উসমানী সৈন্যরা কয়েকটি সামরিক অভিযানে বের হয়। ক্রীটস দ্বীপ জয়, আরব ও ইয়ামান পুনর্দখল এবং তিউনিসিয়া জয় দ্বিতীয় সলিমের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি লালা মুস্তাফা এবং বেলার বেগ ভেনিসের সেনাপতি ব্রাগাডিনোকে পরাজিত করে সাইপ্রাস জয় করেন।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে ভেনিসের প্ররোচনায় স্পেনরাজ, রোমের পোপ, স্যভয়ের ডিউক এবং মাল্টার নাইট মিলে অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডন জুয়ানের নেতৃত্বে লেপান্টো উপসাগরে উসমানী খিলাফাতের নৌবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। নৌ-সেনাপতি কাপিতান পাশা নিহত হলে উসমানী বাহিনী বিশৃংখল হয়ে পড়ে এবং পরাজয় বরণ করে।

 

ইতিপূর্বে তিউনিস উসমানী খিলাফাতের অধীনে ছিল। লেপান্টো যুদ্ধের বিপর্যয়ের পর অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডোন জুয়ান স্পেনের সাহায্য নিয়ে তিউনিস দখল করেন। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে মুসলিম নৌ-সেনাপতি উলুজ আলীর নেতৃত্বে মুসলিমগণ তিউনিস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যদের দ্বারা তিউনিস পুনরুদ্ধার হওয়ার পর পরই দ্বিতীয় সলিম ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

 

 

১২.তৃতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুরাদ

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সলিমের পুত্র তৃতীয় মুরাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর।

 

২. তৃতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুরাদ একজন বিলাসী ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কোন যোগ্যতাই তাঁর ছিলনা। তিনি নারী আর মদ নিয়ে প্রাসাদের অভ্যন্তরে মত্ত থাকতেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি তাঁর সুযোগ্য উযীরদের ক্ষমতা হ্রাস করে খিলাফাতের বিপুল ক্ষতি সাধন করেন। তৃতীয় মুরাদের আম্মা নূর বানু এবং তাঁর ভেনিসীয় স্ত্রী সোফিয়া তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় শেষাবধি সোফিয়াই কৃতকার্য হন।

 

তৃতীয় মুরাদের শাসনকালে প্রশাসনে দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা জেঁকে বসে। স্বজন প্রীতি প্রাধান্য পায়। অনিয়ম সর্বত্র নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুরাদ

 

তৃতীয় মুরাদের কোন সামরিক প্রতিভা ছিল না। যুদ্ধ করার মতো নৈতিক বলও ছিলনা তাঁর।

 

উসমানী খিলাফাতের গৌরব রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উসমান পাশা। ১৫৮৩ খৃষ্টাব্দে ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে তিনি বিজয়ী হন।

 

১৫৯০ খৃষ্টাব্দে ইরান একট শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী জর্জিয়া, তাব্রিজ, আজারবাইজান, শিরওয়ান প্রভৃতি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অংশ বলে স্বীকৃতি লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

 

 

 

১৩. তৃতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে মুরাদের পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তিনি ছিলেন রানী সোফিয়ার গর্ভজাত সন্তান।

 

২. তৃতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুহাম্মাদ একজন অপদার্থ সুলতান ছিলেন। ক্ষমতা নিষ্কন্টক করার জন্য তিনি তাঁর উনিশজন ভাইকে হত্যা করেন। রানী সোফিয়া তাঁর পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদের ওপর প্রভাবশালী ছিলেন। তৃতীয় মুহাম্মাদের স্ত্রীও তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। শাসনকার্যে মহিলাদের নির্দেশনা কার্যকর হতে থাকে। অপদার্ত সুলতান উযীরদের ওপর প্রশাসনের যাবতীয় কার্য ন্যস্ত করে নিজে প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারী ও মদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

তৃতীয় মুহাম্মাদের দুর্বলতার সুযোগে পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান অধিপতিগণ উসমানী খিলাফাতের ইউরোপঈয় প্রদেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে।

 

১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার আর্কডিউকের নেতৃত্বে খৃষ্টানগণ সামনে এগুতে থাকে। একান্ত বাধ্য হয়ে তৃতীয় মুহাম্মাদ হাসান সুকোল্লি পাশা, ইবরাহীম পাশা এবং সিকালা পাসাকে সাথে নিয়ে সসৈন্যে ময়দানে নামেন। করেসটিস প্রান্তরে লড়াই হয়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর শেষাবধি মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

 

 

১৪. প্রথম আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদের পুত্র প্রথম আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর।

 

২. প্রথম আহমাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আহমাদ তাঁর পূর্বসূরী দুইজন সুলতানের মতো অতো অযোগ্য ছিলেন না। বয়সে নবীন হলেও তিনি সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রশাসনের ওপর মহিলাদের প্রভাব খর্ব করার পদক্ষেপ নেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সেনাপতি লালা মুহাম্মাদ পাশাকে হাংগেরীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং সফলতা লাভ করেন।

 

অতঃপর তিনি অষ্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৬০৬ খৃষ্টাব্দে সিটভাটোরক সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির শর্তানুযায়ী ট্রান্সিলভানিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে স্বায়ত্বশাসন হাছিল করে। এতোকাল অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতকে বার্ষিক ত্রিশ হাজার মুদ্রা কর দিতো। চুক্তি অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তা থেকে অব্যাহতি লাভ করে। তবে যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে এককালীন দুই লাখ মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের সাথে ইরানের সংঘর্ষ চলছিলো। ১৬১১ খৃষ্টাব্দে সুলতান প্রথম আহমাদ ইরানের শসাহ আব্বাসের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান ছাড়া ইরানের অন্যান্য অঞ্চল শাহ আব্বাসকে ফিরিয়ে দেন।

 

প্রথম আহমাদের শাসনকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভেনিস এবং নেদারল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে।

 

৪. প্রথম আহমাদের ইন্তিকাল

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদ ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো উনত্রিশ বছর। তিনি ১৬ বছর খালীফা ছিলেন।

 

 

 

১৫. প্রথম মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মুস্তাফা

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদের ভাই প্রথম মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। মানসিক অসুস্থতার কারনে তিনি তিন মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

 

 

 

১৬. দ্বিতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় উসমান

 

১৬১৮ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম মুস্তাফার ভাতিজা দ্বিতীয় উসমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স চৌদ্দ বছর।

 

২. দ্বিতীয় উসমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় উসমান শাসনকার্যে কিছুটা যোগ্যতার পরিচয় দেন। তবে তিনি স্বার্থপর প্রকৃতির লক ছিলেন। তাঁর খামখেয়ালীপনা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ছিল।  তিনি জাননিসার বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

 

৩. দ্বিতীয় উসমানের পদচ্যুতি

 

১৬২২ খৃষ্টাব্দে বিদ্রোহী সৈন্যগণ দ্বিতীয় উসমানকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে। বিদ্রোহীগণ আবার প্রথম মুস্তাফাকে ক্ষমতার মসনদে বসায়। তিনি এবারও শাসনকার্য চালাতে ব্যর্থ হন। ফলে কয়েক মাস পরে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

 

 

 

১৭. চতুর্থ মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬২৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় উসমানের পুত্র চতুর্থ মুরাদকে মসনদে বসানো হয়। তখন তাঁর বয়স এগারো বছর।

 

২. চতুর্থ মুরাদ যেমন ছিলেন

 

পতনোন্মুখ উসমানী খিলাফাতের ইতিহাসে চতুর্থ মুরাদ কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী আমেজ দিতে সক্ষম হন। বয়সে তরুণ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের হারানো গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। খালীফা হয়ে তিনি দেখলেন যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটতরাজ, রাহাজানি, বিভেদ বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যাবহারে জনগন অতিষ্ঠ, পুর্ববর্তী বিলাসী সুলতানদের অপব্যয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় তহবিল শূন্য, জাননিসার সোইন্যদল অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল। চতুর্থ মুরাদ অতিগোপলে একটি নতুন সেনাদল গড়ে তোলেন। ছয় স্কোয়াড্রন অশ্বারোহী যোদ্ধা স্বেচ্ছায় এই বাহিনীতে যোগ দেয়। নতুন সৈন্যদের দ্বারা তিনি অবাধ্য ও উছৃংখল সৈন্যদেরকে শায়েস্তা করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। অচিরেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬৩৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাব্রিজ দখল করেন। ইতিমধ্যে ইরানীগণ বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় ছিল চতুর্থ মুরাদের শাসনকালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।

 

৪. চতুর্থ মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৬৪০ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর।

 

 

 

১৮. প্রথম ইবরাহীম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম ইবরাহীম

 

চতুর্থ মুরাদের কোন পুত্র সন্তান ছিলো না। ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে তাঁর ভাই প্রথম ইবরাহীম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম ইবরাহীম যেমন ছিলেন

 

প্রথম ইবরাহীম ছিলেন একজন অপদার্থ সুলতান। তবে উযীরে আযম কারা মুস্তাফা ছিলেন একজন যোগ্য শাসক। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারনে তিনি প্রাণ হারান। ফলে রাষ্ট্র আবার দুর্নীতি ও অরাজকতার অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। প্রথম ইবরাহীম বিলাস দ্রব্য আর নারীদের মাঝে ডুবে থাকেন। তাঁর বিলাসিতার অর্থ সংগ্রহের জন্য জনগনের ওপর নানবিধ কর চাপানো হয়।

 

৩. প্রথম ইবরাহীমের হত্যা

 

প্রথম ইবরাহীম এবং তাঁর নতুন উযীরে আযমের গণবিরোধী কার্যকলাপের দরুন রাষ্ট্রে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা উযীরে আযমকে হত্যা করে। ১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারান।

 

 

 

১৯. চতুর্থ মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম নিহত হলে তাঁর পুত্র চতুর্থ মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর।

 

২. চতুর্থ মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

বালক চতুর্থ মুহাম্মাদের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ছিলোনা। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যায়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চরম আকার ধারন করে। দিকে দিকে বিদ্রোহের পতাকা উড্ডীন হয়। সৌভাগ্যক্রমে চতুর্থ মুহাম্মাদ উযীরে আযম নিযুক্ত করেন মুহাম্মাদ কুপ্রিলীকে। তিনি একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি কনস্ট্যান্টিনোপলের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের অনুসারী খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেন। জাননিসার বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন। পাঁচ বছর শাসনকার্য চালাবার পর তিনি ইন্তিকাল করেন। চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাক্তন উযীরে আযম মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর সুযোগ্য পুত্র আহমাদ কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। আহমাদ কুপ্রিলীর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়ে চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাসাদ অভ্যন্তরে দাবা খেলায় ডুবে যান।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

আভ্যন্তুরীন শাসনের সাথে সাথে যুদ্ধ বিগ্রহও সামলাতে হতো আহমাদ কুপ্রিলীকে। ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে তিনি ইউরোপীয় খৃষ্টান বাহিনীর সাথে সেন্ট গোথার্ড নামক স্থানে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে আহমাদ কুপ্রিলী পরাজিত হয়। সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তার বহু হারানো অঞ্চল ফিরে পায়।

 

পোল্যান্ড বার বার উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধে চাপিয়ে দেন।

 

১৬৭৬ খৃষতাব্দে আহমাদ কুপ্রিলী ইন্তিকাল করেন। এবার উযীরে আযম নিযুক্ত হন কারা মুস্তাফা। তিনি ছিলেন বড্ড অদূরদর্শী। তাঁর সময়ে রাশিয়া এবং ভিয়েনার সাথে যুদ্ধে নেমে মুসলিম সৈন্যদল পরাজিত হয়।

 

১৬৮১ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তারা রাশিয়াকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন এলাকা ছেড়ে দিয়ে সন্ধি করেন।

 

১৬৮৩ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তাফা সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দিকে অগ্রসর হন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।

 

পূর্বে উসমানী খিলাফাত ছিলো ইউরোপের আতংক। ভিয়েনা অবরোধ ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের খৃষ্টান শক্তিগুলো বুঝতে পারে যে মুসলিমদের অতীতের শক্তি আর নেই। অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী ও অন্যান্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর বার বার হামলা চালাতে থাকে। উসমানী সৈন্যগণও বার বার পরাজিত হতে থাকে।

 

১৬৮৪ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী ক্রোশীয়া থেকে মুসলিম সৈন্যদেরকে হটিয়ে দেয়। অষ্ট্রিয়া বুদাপেষ্ট দখন করে নেয়।

 

১৬৮৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরী উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে নিউহোসেল কেড়ে নেয়।

 

ভেনিস কেড়ে নেয় কোরিস্থ, মোরিয়া, এথেন্স, নাভারিনো প্রভৃতি এলাকা।

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে পোল্যান্ড মোহাকস প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে।

 

যেই উসমানী খিলাফাত এক সময় অপরাজেয় শক্তি বলে গণ্য হতো সেই খিলাফাত এখন প্রায় প্রতিটি রণাংগনেই পরাজয় বরণ করতে থাকে।

 

৪. চতুর্থ মুহাম্মাদের পদচ্যুতি

 

চতুর্থ মুহাম্মাদ আটত্রিশ বছর খালীফা ছিলেন। তাঁর অযোগ্যতার কারনে খিলাফাতের দুর্দিন ঘনিয়ে আসে। দেশে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদ পদচ্যুত হয়ন।

 

 

 

২০. দ্বিতীয় সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সুলাইমান সুলতান হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কিংবা সামরিক প্রশিক্ষন লাভের কোন সুযোগ তিনি পাননি। রাষ্ট্রে তখন চলছিলো অরাজকতা। বাইরে শত্রুদের প্রবল চাপ। জাননিসার সৈন্যরা রাজধানীতে হত্যাকান্ড হত্যাকান্ড ঘটায়। তারা উযীরে আযমকেও হত্যা করে। দ্বিতীয় সুলাইমান ধৈর্য ও বিচক্ষনতার সাথে পরিস্থিতি মুকাবিলা করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে বেলগ্রেড কেরে নেয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনা এবং ট্রানসিলভানিয়াতেও অষ্ট্রিয়া বাহিনী বিরাট সাফল্য অর্জন করে। ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরাজিত হন।

 

খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় সুলাইমান মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর দ্বিতীয় পুত্র মুস্তাফা কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন যোগ্য ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি অযোগ্য কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন। সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত করেন।

 

মুস্তাফা কুপ্রিলী একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি উঁচু মানের সামরিক প্রতিভাও ছিলেন।

 

১৬৯০ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কুপ্রিলী অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি ছিনিয়ে নেয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন। তিনি বেলগ্রেডও পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। ট্রানসিলভানিয়া আবার মুসলিম দখলে আসে। এইভাবে রণাংগনে পরাজয়ের গ্লানি কিছুটা মুছে ফেলা সম্ভব হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২১. দ্বিতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় আহমাদ

 

স্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সদেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুন ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

২. দ্বিতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সন্দেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় আহমাদ

 

দ্বিতীয় আহমাদ কোন সামরিক প্রতিভা ছিলেন না। রণাংগনে কোন ভূমিকা রাখার মতো যোগ্যতা ছিলো না তাঁর।

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে উযীরে আযম মুস্তাফা কুপ্রিলী শত্রুপক্ষের গুলির আঘাতে নিহত হন। এতে সৈন্যদল মনোবল হারিয়ে ফেলে। উসমানী সৈন্যগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

৪. দ্বিতীয় আহমাদের ইন্তিকাল

 

দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। ১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে পরাজয় ও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে দ্বিতীয় আহমাদ ভগ্ন হৃদয়ে ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২২. দ্বিতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুস্তাফা তাঁর পূর্ববর্তী সলতানের তুলনায় যোগ্য ও সাহসী ছিলেন

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

 

১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে তিনি আবার অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে বের হন। কিন্তু জেন্টা প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।

 

জেন্টা যুদ্ধে পরাজয়ের পর অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী, ভেনিস এবং রাশিয়া দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর নিজেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করে। খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় মুস্তাফা হুসাইন কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। হুসাইন কুপ্রিলী একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি সুসংহত হয়ে ওঠে। হুসাইন কুপ্রিলী ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাথে যথাসম্ভব সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার নীতি অনুসরণ করেন।

 

১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত অষ্ট্রিয়া, রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং ভেনিসের সাথে কার্লোউইজ শহরে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

এই চুক্তি অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত ট্রানসিলভানিয়া এবং বার্নাত ছাড়া গোটা হাংগেরী অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দেয়। পোল্যান্ডও কয়েকটি অঞ্চল পায়। আজোভ অঞ্চল পেলো রাশিয়া। ভেনিস এথেন্স ছেড়ে দেয় এবং ডালমাটিয়া ও মোরিয়া নিয়ে নেয়। এই চুক্তির ফলে কিছুকালের জন্য পূর্ব ইউরোপে শান্তি স্থাপিত হয়। তবে উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার পরিচয় পেয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম শক্তির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

 

প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে হুসাইন কুপ্রিলী পদচ্যুত হন। এর কিছুকাল পরে তিনি মারা যান।

 

৪. দ্বিতীয় মুস্তাফার পদত্যাগ

 

হুসাইন কুপ্রিলীর মতো যোগ্য প্রশাসকের অবর্তমানে দেশ আবার বিশৃংখলার দিকে ধাবিট হয়। চারদিকে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হয়ে ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা পদত্যাগ করেন।

 

 

 

২৩. তৃতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় আহমাদ

 

১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফার ভাই তৃতীয় আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় আহমাদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তবে আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তাঁর শাসনকালের প্রথম ছয়টি বছর রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত ছিলো।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় আহমাদ

 

রাশিয়া কার্লোউইজ চুক্তি করে বিভিন্ন সামরিক তৎপরতা শুরু করে। ইতিমধ্যে সুইডেনের রাজা দ্বাদশ চার্লস রাশিয়ার জার পিটারের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে উসমানী খিলাফাতের আশ্রয় গ্রহন করেন। রাশিয়া সুইডেনের রাজাকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য তৃতীয় আহমাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। তৃতীয় আহমাদ সুইডেনের রাজ্যহারা আশ্রিত রাজাকে তাড়িয়ে দিতে রাজি হলেন না। এতে রাশিয়া মারমুখো হয়ে ওঠে।

 

১৭১০ খৃষ্টাব্দে সুলতানের নির্দেশে উযীরে আযম মুহাম্মাদ পাশার সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। এই অবস্থায় রাণী ক্যাথরিন মূল্যবান স্বর্নালংকার প্রদান করে মুহাম্মাদ পাশাকে বশীভূত করে ফেলেন। ফলে শত্রুকে বাগে পেয়েও শায়েস্তা না করে ১৭১১ খৃষ্টাব্দে প্রুথ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মুহাম্মাদ পাশা ফিরে আসেন।

 

এই ঘটনা জনগনের মাঝে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তৃতীয় আহমাদ উযীরে আযম পদ থেকে মুহাম্মাদ পাশাকে বরখাস্ত করেন।

 

১৭১৭ খৃষ্টাব্দে নতুন উযীরে আযম দামাদ আলী পেটারওয়ারদিন প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শত্রুর গুলিতে দামাদ আলী নিহত হন। উসমানী বাহিনী পরাজয় বরণ করে।

 

১৭১৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী বেলগ্রেড দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে নব নিযুক্ত উযীরে আযম ইবরাহীম পাশা পরিচালিত উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হয়।

 

১৭২৪ খৃষ্টাব্দে ইরানের সাভাবী শাসক শাহ তাহমাসপকে পরাজিত করে একদিকে রাশিয়া এবং অন্যদিকে উসমানী সৈন্যগন অগ্রসর হতে থাকে।

 

পরে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত লাভ করে জর্জিয়া, ইরিভান, শিরওয়ান এবং আজারবাইজান। রাশিয়া লাভ করে দারবান্দ, বাকু এবং জিলান।

 

১৭২৫ খৃষ্টাব্দে উসমানী সোইন্যগণ ইরানের তাব্রিজ দখল করে।

 

১৭২৯ খৃষ্টাব্দে নাদির শাহ ইরানের ক্ষমতা লাভ করেন।

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে নাদির শান উসমানী সৈন্যদেরকে হটিয়ে দিয়ে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেন। ইরানের নিকট পরাজিত হওয়ার খিলাফাতের সর্বত্র প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে জাননিসার সৈন্যদের সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীল সুলতানের প্রাসাদ অবরোধ করে উযীরে আযম ইবরাহীম পাশাসহ অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করে।

 

৪. তৃতীয় আহমাদের পদত্যাগ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে পরস্থিতি আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় আহমাদ তাঁর ভাতিজা প্রথম মাহমুদের অনুকূলে পদত্যাগ করেন।

 

 

 

২৪. প্রথম মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মাহমুদ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপ্লের মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মাহমুদ জাননিসার সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।

 

প্রথম মাহমুদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তিনি যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। সৌভাগ্যক্রমে তিনি আগা বাশীর নামক একজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ব্যক্তির সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মাহমুদ

 

১৭২১ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যবাহিনী ইরান আক্রমন করে হামাদান, কিরমান শাহ ও তাব্রিজ দখল করে নেয়। কিন্তু নাদির শাহের পাল্টা আক্রমনের মুখে এইসব স্থান বেশিদিন দখলে রাখা সম্ভব হয়নি।

 

এই দিকে রাশিয়ার জার পিটারের মৃত্যুর পর জারিনা এ্যানি রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি উসমানী খিলাফাত থেকে পূর্ব ইউরোপ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবার জন্য অষ্ট্রিয়ার সাথে এক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের মাঝে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখতে পায়। ফলে রাশিয়ার অগ্রাভিযান প্রতিহত করার জন্য এই দুইটি দেশ উসমানী খিলাফাতের পক্ষাবলম্বন করে।

 

এই প্রেক্ষাপটে ১৭৩৬ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া এক অঘোষিত যুদ্ধের মাধ্যমে উসমানী খিলাফাত থেকে আজোভ এবং ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়। ১৭৩৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার মিত্র অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে নাইস দখল করে নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনার ওপর আক্রমন চালায়। উসমানী সৈন্যগণ এই আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

 

১৭৩৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া আবার হামলা চালায়। উসমানী সৈন্যদের পালটা আক্রমনে অষ্ট্রিয়া সৈন্যবাহিনী পিছু হটে বেলগ্রেড গিয়ে আশ্রয় নেয়।

 

১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়া এবং অষ্ট্রিয়া একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটিকেই বলা হয় বেলগ্রেড চুক্তি। আর এটা ছিলো উসমানী খিলাফাতের জন্য সর্বশেষ সম্মানজনক চুক্তি

 

৪. প্রথম মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুস ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৫. তৃতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় উসমান

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান কন্সট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

তিনি মাত্র তিন বছর খালীফা ছিলেন। এই সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। তাঁর শাসনকালে রাষত্রে শান্তি-শৃংখলা বিরাজমান ছিলো।

 

২. তৃতীয় উসমানের ইন্তিকাল

 

১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৬. তৃতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৫৭ খৃষতাব্দে তৃতীয় উসমানের ভাই তৃতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুস্তাফা তাঁর শাসনকালের প্রথম দিকে বেশ যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর উযীরে আযম রাগিব পাশা খুবই যোগ্য ও দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রনাংগনে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে উযীরে আযম রাগিব পাশা ইন্তিকাল করেন। এতে সুলতান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এই লক্ষ্যে তিনি প্রুশিয়ার রাজার সাথে মৈত্রী গড়ে তোলেন। অষ্ট্রিয়ার রাণী মেরিয়া থেরেসাও তাঁদের সাথে মিলিত হন।

 

১৭৬৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতে সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতকে এবং ইংল্যান্ড রাশিয়াকে সমর্থন করে।

 

বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ হতে থাকে। উভয় পক্ষ কখনো জয় কখনো পরাজয়ের সম্মুখীন হয়।

 

৪. তৃতীয় মুস্তাফার ইন্তিকাল

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফা ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৭. প্রথম আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল হামিদ

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফার পুত্র প্রথম আবদুল হামিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল হামিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল হামিদ ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি যুদ্ধ বিগ্রহ পছন্দ করতেন না। কিন্তু রাশিয়া তাঁকে সুখে থাকতে দেয়নি।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল হামিদ

 

পূর্ব থেকেই উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছিলো। ১৭৭৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ রাশিয়ার সাথে কুটচুককাইনারজি সন্ধি করেন। রাশিয়া কৃষ্ণসাগর এবং ভূ-মধ্য সাগরে অবাধ বাণীজ্যের অধিকার লাভ করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত খৃষ্টানদের অভিভাবকত্ব করার অধিকার লাভ করে। ফলে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। কুটচুককাইনারজি সন্ধি উসমানী খিলাফাতের পতনের প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করে।

 

১৭৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার সাথে উসমানী খিলাফাতের যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে উসমানী সৈন্যগণ বিজয়ী হয়।

 

৪. প্রথম আবদুল হামিদের ইন্তিকাল

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৮. তৃতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ভাতিজা তৃতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় সলিম চিলেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। তবে তিনি ইউরোপীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি বিভিন্নমুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে উযীর পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।

 

তৃতীয় সলিম ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর অনুকরনে উসমানী সৈন্যদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফ্রান্সের বহু সামরিক অফিসারকে কাজে লাগান। তিনি ফ্রান্স থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেন। সৈন্যদের জন্য সামরিক পোষাক পরিধান এবং নিয়মিত কুচকাওয়াজ বাধ্যতামূলক করেন। রাশিয়াতে ট্রেনিং প্রাপ্ত উমার পাশাকেও তিনি সেনাবাহিনীর সংস্কারের কাজে লাগান। তিনি সামন্ত প্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি ইউরোপের অনুকরণে বিভিন্ন বিষয় পড়াবার ব্যবস্থা করেন। ইউরোপীয় রাজনীতি, কুটনীতি, সমর নীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান হাছিলের জন্য তিনি বহু তরুণকে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা এবং বার্লিন পাঠান। তবে ইউরোপীয় ধাঁচে সংস্কার সাধন করতে গিয়ে তিনি ইসলামী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় প্রদেশগুলো আক্রমণ করে। উসমানী সৈন্যগণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

 

১৭৯১ খৃষ্টাব্দে সিস্টোভা সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ক্রোশিয়াসহ কিছু এলাকা অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে খিলাফাত বাকি এলাকাগুলোর ওপর দখল বহাল রাখতে সক্ষম হয়।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি খিলাফাতের অন্তর্গত গ্রীক প্রজাদেরকে বিদ্রোহের উসকানী দিতে থাকেন।

 

রাশিয়ার সেনাবাহিনী উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত অঞ্চল বুলগেরিয়া এবং বেসারভিয়ার দিকে সামরিক অভিযান চালায়। উসমানী সৈন্যগণও এগিয়ে আসে। বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হতে থাকে।

 

এই সময় ফ্রান্সে বিপ্লব সংঘটিত হয়। আর ইংল্যান্ডের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাত এবং রাশিয়ার মধ্যে জাসি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইতিমধ্যে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ফ্রান্সের শাসক হন। তিনি উসমানী খিলাফাতের প্রদেশ মিসর, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া দখলের জন্য ওঠে পড়ে লাগেন। যুদ্ধ বেধে যায়।

 

ফ্রান্সের প্রতিপত্তি বেড়ে যাচ্ছে দেখে ইংল্যান্ড এবার উসমানী খিলাফাতের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ফ্রান্স পিছু হটতে বাধ্য হয়।

 

১৮০২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের সাথে আমিন্‌স চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে উসমানী খিলাফাতের সম্পর্ক উন্নতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

 

১৮০৪ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার উসকানিতে সার্বিয়ার খৃষতানগণ কারা জর্জ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।

 

১৮০৬ খৃষতাব্দে উসমানী সোইন্যগণ যখন রাশিয়ার সোইন্যদের সাথে যুদ্ধ রত তখন সার্বিয়া স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়।

 

৩. তৃতীয় সলিমের হত্যা

 

তৃতীয় সলিমের শাসনকালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগ সৃষ্টি হয়। দিকে দিকে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করে আত্নগোপন করেন। ১৮০৮ খৃষতাব্দে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

 

 

 

২৯. চতুর্থ মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুস্তাফা

 

১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় সলিমের ভাতিজা চতুর্থ মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। কিন্তু এক বছর পরেই তাঁকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়।

 

 

 

৩০. দ্বিতীয় মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

১৮০৮ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মাহমুদ শাসনকার্যে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তবে তিনি তৃতীয় সলিমের সংস্কার ধারা নিয়ে সামনে অগ্রসর হন।

 

এই সময় ইউরোপীয় জীবন দর্শনে অনুপ্রাণিত মুস্তাফা সামী, সাদিক রিফাত প্রমুখ ব্যক্তি তাঁদের লেখার মাধ্যমে নতুন চিন্তার বীজ ছড়াতে থাকেন।

 

পূর্বে উযীরে আযম এবং শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ছিলো ব্যাপক।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে বিভিন্ন দফতরে ভারপ্রাপ্ত উযীর নিয়োগ করেন। প্রতিটি মন্ত্রনালয়ের জন্য গঠিত হয় একটি উপদেষ্টা পরিষদ। পূর্বে শাইখুল ইসলাম ছিলেন ধর্মীয় বিষয় এবং বেসামরিক প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয় মাহমুদ তাঁর ক্ষমতাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় ব্যাপারে সীমাবদ্ধ করে দেন।

 

আইনের খসড়া তৈরীর জন্য তিনি একটি পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে এটি কিছুটা প্রতিনিধিত্বশীল রূপ নেয় এবং এর নাম হয় শূরা-ফী-দাওলাত।

 

দ্বিতীয় মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকতার ‘তাকভীম-ই-ভিখারী’ নামে তুর্কী ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র বের হয়।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ পাগড়ির স্থলে ফেজটুপির প্রচলন করেন। সৈন্যদের জন্য তিনি পাজামার স্থলে পাতলুন এবং জবরজং জুতার পরিবর্তে বুট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

রাশিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৮১৭ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ সার্বিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হন। মিলোস অবরেনোভিচ স্বাধীন সার্বিয়ার প্রথম রাজা হন।

 

১৮১৪ খৃষ্টাব্দে ওডেসোতে চারজন গ্রীক বণিক “হিটারিয়া ফিলকী” নামে এক গুপ্ত সমিতি গঠন করে। ১৮২০ খৃষ্টাব্দে এর সদস্য সংখ্যা হয় দুই লাখ। ইউরোপে উসমানী খিলাফাতের অবসান ঘটিয়ে প্রাচীন গ্রীক সাম্রাজ্যের মতো একটি নতুন গ্রীক সাম্রাজ্য গঠন ছিলো এই সমিতির লক্ষ্য। ইতিহাসবিদ লেনপুল বলেন, “স্বাধীনতার উচ্চাদর্শ এই সমস্ত বিদ্রোহকে যতখানি না উদ্দীপিত করেছিলো তার চাইতে বেশি করেছিলো রাশিয়ার উস্কানি”

 

দ্বিতীয় মাহমুদ মিসরের মুহাম্মাদ আলীর সৈন্যদের সাহায্যে গ্রীক বিদ্রোহীদেরকে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলেছিলেন। এই সময় প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি গ্রীসের প্রতি ইউরোপীয়দের মনে সহানূভূতি জেগে ওঠে।

 

১৮২৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মিলিত বাহিনী নাভারিনোর নৌযুদ্ধে উসমানী নৌবাহিনীকে পরাজিত করে।

 

১৮২৮ খৃষ্টাব্দে গ্রীসের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান চালিয়ে উসমানী বাহিনী আবারো পরাজিত হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় আড্রিয়ানোপল চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী মোলডাভিয়া এবং ওয়ালাচিয়া রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন হয়। এশিয়ার কিছু অংশ ও রাশিয়ার হাতে চলে যায়। রাশিয়া খিলাফাতের সর্বত্র অবাধ বাণীজ্যের অধিকার আদায় করে নেয়।

 

১৮২৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

 

ইতিমধ্যে মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর সাথে দ্বিতীয় মাহমুদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

 

১৮৩১ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ আলীর পুত্র ইবরাহীম সিরিয়া দখলের জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হন। এই নাজুক অবস্থায় দ্বিতীয় মাহমুদ সাহায্য চাইলেন ইংল্যান্ড এবং রাশিয়ার কাছে। রাশিয়া এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বণ্যার পানির মতো রাশিয়ার সৈন্যরা উসমানী খিলাফাতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স শংকিত হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে কুতিরবার চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এই চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় মাহমুদ মুহাম্মাদ আলীকে সিরিয়া, ত্রিপোলী (লিবিয়া) এবং আদানা ছেড়ে দেন। খিলাফাতের সর্বত্র তখন রাশীয়ার সৈন্য।

 

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর আনকিয়ার স্কেলেসি চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দার্দানেলিস প্রণালীতে অবাধে যুদ্ধ জাহাজ চালনার অধিকার লাভ করে। রাশিয়া ছাড়া অন্যান্যদের যুদ্ধজাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাপিচুলেশান বা বিশেষ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা স্বত্বেও ইউরোপীয় বাণিকগণ সন্তুষ্ট ছিলোনা।

 

১৮৩৮ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ অংল্যান্ডের সাথে বাল্টা-লিমান কনভেনশান আনেম এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ফলে খিলাফাতে অবাধ বাণীজ্য নীতি গৃহীত হয়।

 

৪. দ্বিতীয় মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ ইন্তিকাল করেন।

 

প্রাচ্য সমস্যা

 

খৃষ্টীয় ১৬ ও ১৭ শতাব্দীতে উসমানী খিলাফাত ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিলো। পূর্ব ইউরোপের ড্যানিউব নদী থেকে শুরু করে ঈজিয়ান সাগর পর্যন্ত গ্রীক, সার্ব, বুলগার, আলবেনিয়ান প্রভৃতি জাতির বসতিস্থল বলকান অঞ্চলও উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

 

১৮ শতকে এসে উসমানী খিলাফাত দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীন বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানোলিস প্রণালীর ওপর আধিপত্য বিস্তারে চেষ্টিত হয়। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধিতে শংকিত হয়ে ওঠে এবং রাশিয়াকে রুখবার জন্য চেষ্টিত হয়।

 

এই বহুমুখী সমস্যাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ বলে আখ্যায়িত হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ প্রকট আকার ধারন করে।

 

 

 

৩১. প্রথম আবদুল মজিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদের পুত্র প্রথম আবদুল মজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল মজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল মজিদ ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত ছিলেন। রশীদ পাশা, আলী ফুয়াদ পাশা প্রমুখ রাজনীতিবিদগণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা লাভ করেন।

 

তাঁরা ইউরোপীয় ভাবধারায় অনুপ্রানিত ছিলেন। তাঁরা খালীফা প্রথম আবদুল মজিদকে তাঁদের ভাবধারায় দীক্ষিত করেন। তিনি ‘খাত্তি শরীফ’ ও ‘খাত্তি হুমায়ুন’ নামে রাজকীয় ফরমান জারি করে তানযিমাত বা সংস্কার প্র্যাস চালান। তাঁর লক্ষ্য ছিলো উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপীয় কায়দায় গরে তোলা।

 

তানযিমাতের কতগুলো দফা ছিলো প্রশংসনীয়। আবার কতগুলো দফা ছিলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এইগুলো সাধারণ স্বীকৃতি লাভ করেনি। আলেম সমাজ এইগুলোর চরম বিরোধিতা করে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে সংঘটিত হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। ইংল্যান্ডের রাণী ভিকটোরিয়া এক সময় বলেছিলেন, “জার নিকোলাস এবং তাঁর অনুচরদের উচ্চাকাংখার জন্যই এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।”

 

উনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জার নিকোলাস উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি মনে করে তা গ্রাস করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের অমতে তা করা সম্ভব নয় বলে তিনি গোপনে ইংল্যান্ডের কাছে উসমানী খিলাফাত ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার প্রস্তাব পাঠান। ইংল্যান্ড দেখলো যে কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানেলিসের ওপর রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। তাই আপন স্বার্থের খাতিরেই ইংল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের নিরাপত্তা বিধানের নীতি গ্রহণ করে।

 

১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়া কেড়ে নেয়। কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয় খিলাফাতের পক্ষ থেকে। কোন ফলোদয় হয়নি।

 

তাই ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এইভাবে শুরু হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের পক্ষ সমর্থন করে। ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ক্রিমিয়া যুদ্ধ শেষ হয়।

 

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী স্থির হলো যে কৃষ্ণ সাগর সকল জাতির বাণিজ্য জাহাজের জন্য খোলা থাকবে এবং কোন জাতির যুদ্ধজাহাজ এই সাগরে চলাচল করতে পারতে পারবেনা। কৃষ্ণ সাগর এবং দার্দানেলিস উপকূলে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের কোন সামরিক ঘাঁটি থাকবে না। রাশিয়া মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়ার কর্তৃত্ব ত্যাগ করবে। এই দুইটি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অধীনে স্বায়ত্ব শাসন লাভ করবে। ড্যানিউব আন্তর্জাতিক নদীর মর্যাদা পাবে। এতে সকল দেশের জাহাজ চলাচল করবে। রাশিয়া উসমানী খিলাফাতকে বেসারভিয়া ফেরত দেবে। উসমানী খিলাফাতের অধীন খৃষ্টান নাগরিকদের অভিভাবকত্ব রাশিয়ার ওপর থাকবে না। সার্বিয়া স্বায়ত্বশাসন পাবে।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিহত করা হয়। কিন্তু উসমানী খিলাফাতের ওপর ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

 

৪. প্রথম আবদুল মজিদের ইন্তিকাল

 

১৮৬১ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৩২. আবদুল আযীয

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে আবদুল আযীয

 

১৮৬১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. আবদুল আযীয যেমন ছিলেন

 

খলীফা আবদুল আযীয \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলনের লোকদের পছন্দ করতেন না।

 

তাদের প্রতি তিনি দমন নীতি অবলম্বন করেন।

 

৩. আবদুল আযীযের ইন্তিকাল

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৩৩. পঞ্চম মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুরাদ

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. পঞ্চম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

সুলতান পঞ্চম মুরাদ \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলন পছন্দ করতেন না। তিনিও তাদের ওপর দমন নীতি চালান।

 

৩. পঞ্চম মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৮৭৬ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৩৪. দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

ইয়াং তুর্কস

 

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মুহাম্মদ বে এবং নামিক কামালের নেতৃত্বে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ইয়াং তুর্কস নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত এইসব তরুণ উসমানী খিলাফাতের মূল ভূ-খন্ড তুর্কীতে ইউরোপীয় ধাচের একটি দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। খলীফা আবদুল আযীয শাসনকার্যে এদের হস্তক্ষেপ সহ্য করেন নি। তিনি তাদের প্রতি দমননীতি অবলম্বন করেন। তার কঠোর নীতির ফলে ইয়াং তুর্কস বিদেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আবদুল আযীযের পর পঞ্চম মুরাদ খালীফা হন। তিনিও ইয়াং তুর্কসকে ভালো চোখে দেখতেন না। তার সময়েও তারা বিদেশই অবস্থান করতে থাকে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সময় তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসে। তারা রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তির সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়।

 

এই সময় ইয়াং তুর্কস মিদহাত পাশার নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মিদহাত পাশা একজন যোগ্য সংগঠক ছিলেন। তাকেই ইয়াং তুর্কস-এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সাথে ইয়াং তুর্কস-এর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। কিছুকাল পর মিদহাত পাশার সাথে খালীফার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। খালীফা মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম পদ থেকে বরখাস্ত করেন। শাসনতন্ত্র মুলতবী হয়ে যায়। ইয়াং তুর্কস আত্মগোপন করে। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের অনুকূলে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

 

২. রণাংগনে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতের অন্যতম অঞ্চল বুলগেরিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ দমন করেন। এতে বহু বুলগার প্রান হারায়। ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া বুলগেরিয়ার ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্বে যুদ্ব ঘষণা করে। রাশিয়ায় সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে উসমানী সৈন্যগণ ময়দানে টিকতে পারলো না। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত রাশিয়ার সাথে স্যান স্টিফানো চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দবরুজা অঞ্চলসহ প্রচুর ক্ষতিপূরণ আদায় করে। ড্যানিউব অঞ্চলে উসমানী দুর্গগুলো ভেংগে ফেলতে হয়। রাশিয়া এশিয়া ভূ-খন্ডের বার্টুম, কারস, আরদাহান, বায়েজিদ প্রভৃতি অঞ্চল লাভ করে। বুলগেরিয়াকে স্বায়ত্বশাসিত করদ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হয়। আলবেনিয়া পর্যন্ত বুলগেরিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত করা হয়। সার্বিয়ার স্বাধীনতা আবারো স্বীকৃত হয়। মন্টিনেগ্রোর সীমান্ত পর্যন্ত সার্বিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত হয়। রুমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনাকে একজন খৃষ্টান গভর্ণর জেনারেলের অধীনে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। স্যান স্টিফানো চুক্তি পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্বি করে। উসমানী খিলাফাতের হাতে থাকে কেবল স্যালোনিকা, থেসলী, এপিরাস, আলবেনিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনা। পূর্ব এউরোপে রাশিয়ার প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলো শংকিত হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডই উদ্বিগ্ন হয় সবচে বেশি। অত্র অঞ্চলে সম্প্রসারণের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অষ্ট্রিয়াও নাখোশ হয়। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া দাবি তুললো যে যেহেতু প্রাচ্য সমস্যা ইউরোপের আন্তঃরাষ্ট্র সমস্যা, সেহেতু রাশিয়া এককভাবে এই অঞ্চলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। তাই স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলোর একটি সম্মেলনে পেশ করতে হবে। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া যুদ্বের হুমকিও দেয়। ফলে রাশিয়া স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য রাজি হয়। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দের ১৬ই জুন জার্মেনীর রাজধানী বার্লিনে বিসমার্কের সভাপতিত্বে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সম্মেলন শুরু হয়। বহু আলোচনার পর স্যান স্টিফানো চুক্তি সংশোধন করে স্বাক্ষরিত হয় বার্লিন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী রুমানিয়া, সার্বিয়া এবং মন্টিনেগ্রো স্বাধীনতা লাভ করে। বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে তিন ভাগ করে মেসিডোনিয়া  দেয়া হলো উসমানী খিলাফতের প্রত্যক্ষ শাসনে। দক্ষিনাংশ পূর্ব রুমানিয়া নামে স্ব-শাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। অবশিষ্ট অংশ বুলগেরিয়া নামে পরিচিত হয়।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অখন্ডতা সংরক্ষণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলো, কিন্তু সেই শক্তিগুলোই বার্লিন চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের অংগচ্ছেদ করলো। বার্লিন চুক্তি ইউরোপীয় শক্তিগুলোর স্বার্থপরতার উজ্বল প্রমান।

 

৩. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস

 

১৯০৬ খৃষ্টাব্দে স্যালোনিকায় আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস। তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন তালাত পাশা এবং জামাল পাশা। এই কমিটি ইয়াং তুর্কস-এর সাথে মিলিত হয়ে কাজ করতে থাকে। তুর্কীকে ইউরোপীয় ধাঁচে গঠন, শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ঘোষনা, প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলোর সাথে সহযোগিতা ইত্যাদি ছিলো কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর কর্মসূচী।

 

১৯০৮ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর পক্ষ থেকে আনোয়ার পাশা মেসিডোনিয়ায় একটি শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনীর বিরাট অংশ আনোয়ার পাশার সমর্থনে এগিয়ে আসে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সাথে সমঝোতায় পৌছান। তিনি শাসনতন্ত্র অনুমোদন করেন। তিনি হন রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক প্রধান। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস মনোনীত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারকে মেনে নিতে পারেননি। এই সরকারের কার্যক্রমের মাঝে তাঁর ইসলামের পতন দেখতে পান। তাঁরা সরকার বিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরও উসমানী খিলাফাতের দুরবস্থা অব্যাহত থাকে। রণাংগনে সৈন্যবাহিনী পরাজিত হতে থাকে। একের পর এক অঞ্চল খিলাফাতের হাতছাড়া হয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সমর্থিত পত্রিকাগুলো খালীফাকে আক্রমন করে বিভিন্ন লেখা ছাপতে থাকে। খালীফার বিরুদ্বে এই ধরনের লেখালেখি বহু লোককে মানসিকভাবে আহত করে। খালীফার বিশ্বস্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই সময় আততায়ীর হাতে প্রান হারান।

 

কমিটি সরকার প্রশাসনের পুরোনো অফিসারদেরকে চাকুরিচ্যত করে শূন্যপদে নিজেদের লোক বসাতে শুরু করে। একই নীতি অনুসরণ করা হয় সেনাবাহিনীতে। ব্যাপকহারে পদচ্যুত অফিসারগণ বিক্ষুব্দ হয়। নব নিযুক্ত অফিসারদের অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে বিদ্রুপাত্বক মন্তব্য করতে থাকে এবং সাধারণ সৈনিকদেরকে ধর্মীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর নেতৃবৃন্দ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার প্রতি উদাসীন ছিলেন। এতে সাধারণ লোকদের মনেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

 

১৯০৯ খ্রষ্টাব্দের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে কনস্ট্যান্টিনোপলের সৈন্যরা অফিসারদেরকে তাদের কক্ষে তালাবদ্ধ করে ক্যান্টনমেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পালর্ামেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে তাদের সাথে যোগ দেয় অসংখ্য মানুষ। তারা শারীয়ার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সাধারণ সৈনিকদের হাতে তাদের অনেকে প্রাণ হারায়। কমিটির নেতৃবৃন্দ পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে।

 

স্যালোনিকাতে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর মজবুত ঘাঁটি ছিলো। সাখানকার সেনাবাহিনী কমিটির অনুগত ছিলো। কনস্ট্যান্টিনোপলে কমিটি সরকারের বিপর্যয়ের খবর পেয়ে মাহমুদ শাওকাত পাশার নেতৃত্বে একদল সৈন্য রাজধানী অভিমুখে রওয়ানা হয়। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল পৌছে তা দখল করে নেয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়। ইত্তিহাদ-ই-মুহাম্মদী জামিয়াতি নামক সংস্থাটিও বেআইনী ঘোষিত হয়। বহু বিদগ্ধ ব্যক্তিকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। উসমানী খিলাফাতের অন্যতম ইসলামী তারকা বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীকেও বন্দী করে সামরিক আদালতে পেশ করা হয়। এইভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার দেশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

 

৩. দ্বিতীয় আবদুল হামিদের পদচ্যুতি

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সুলতান ও খলীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে পদচ্যুত করে।

 

 

 

৩৫. পঞ্চম মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুহাম্মদ

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস দ্বিতীয় আবদুল হামিদের ভাই পঞ্চম মুহাম্মদকে কষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসায়।

 

২. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর শাসনকাল

 

কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস নানা ধরনের ব্যক্তিদের সমন্বয় গঠিত ছিলো। এতে বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীর মতো ইসলামী ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তবে অধীকাংশ সদস্যই ছিলো জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। কিছু সংখ্যক নাস্তিকও ছিলো এর সদস্য। তদুপরি এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য ছিলো খৃষ্টান এবং ইয়াহুদী। এই কমিটি ক্ষমতা লাভ করে শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। সুলতান ও খলীফা হন শাসনতান্ত্রিক প্রধান। সরকারী সকল ক্ষমতা ছিলো উযীর পরিষদের হাতে।

 

দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়। ক্যাপিচুলেশান প্রথা বাতিল হয়। সকল পর্যায়ে তুর্কী ভাষায় প্রচলন বাধ্যতামূলক করা হয়। বানিজ্যিক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বহু সংখ্য্ক স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। কারিগরি ট্রেনিংয়ের জন্য বহু সংখ্যক যুবককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরন করা হয়। ডেভিড বে নামক একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী চার্লস লরেন্টের সহায়তায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন।

 

আনোয়ার পাশা সেনাবাহিনীর সংস্কারে মনোযোগ দেন। তিনি একদল জার্মেন সামরিক বিশেষজ্ঞ এনে সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে সাজান। আনোয়ার পাশা জার্মেন পদ্ধতির নৌবহরের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি নিজে বার্লিনের শিক্ষালাভ করেন। উসমানী নৌবাহিনীকে পুনর্গঠিত করার জন্য কাউন্ট রুবিলান্ট, এডমিরাল গ্যাম্বল এবং পরবর্তীকালে এডমিরাল লিম্পসের সহযোগিতা নেয়া হয়।

 

উচ্চ শিক্ষার জন্য বহু তরুণকে পাঠানো হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দেশে বহু সংখ্যক সেকুলার স্কুল এবং কলেজ স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞান, সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ক বহু গ্রন্থ তুর্কী ভাষায় অনুবাদ করা হয়। সহশিক্ষা চালু করা হয়। শরীয়া কোর্টগুলোর স্বাতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়।

 

৩. রণাংগনে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার

 

(ক) বলকান যুদ্ধ

 

রাশিয়ার প্ররোচনায় সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস এবং মন্টিনেগ্রো \'দ্যা বলকান লীগ\' নামে একটি সামরিক জোট গঠন করে উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ১৯১২ খৃষ্টাব্দে \'দ্যা বলকান লীগ\' খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় প্রথম বলকান যুদ্ধ। লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী খিলাফাত গ্রীসকে ক্রীট দ্বীপ ছেড়ে দিতে হয়। রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল ছাড়া ইউরোপের আর অংশই উসমানীদের হাতে রইলো না।

 

১৯১৩ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া এলাকাগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে \'দ্যা বলকান লীগের\' অন্তর্ভক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার কিছু পাওয়ার আশায় এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বুখারেষ্ট চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই যুদ্ধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বুলগেরিয়া। আড্রিয়ানোপল এবং থ্রেসের কিছু অংশ উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে।

 

বলকান যুদ্ধের ফলে বলকান উপদ্বীপে খৃষ্টান শক্তিগুলোর বিস্তৃতি ঘটে। উসমানী খিলাফাতের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব আরো সংকুচিত হয়।

 

(খ) প্রথম মহাযুদ্ধ

 

১৯১৪ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন অষ্ট্রেয়ার যুবরাজ ফ্রাঞ্জ ফার্ন্ডিনান্ড বোসনিয়া-হারজেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো সফরে এসে সার্বিয়ার নিযুক্ত আতাতায়ীদের হাতে সস্ত্রীক নিহত হন। ফলে অষ্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে রাশিয়া। পরে ফ্রান্স। আরো পরে ইংল্যান্ড। অনশেষে জাপান, ইতালী, চীন এবং ইউএসএ সার্বিয়ার পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে জার্মেনী। এই মহাযুদ্ধে গোড়ার দিকে উসমানী খিলাফাত নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর চরমপন্থী গ্রুপের নেতা আনোয়ার পাশার চাপে কমিটি সরকার জার্মেনীর পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে নামে।

 

এই মহাযুদ্ধে অষ্ট্রিয়া-জার্মেনী-উসমানী খিলাফাত পরাজিত হয়।

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মেনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে জার্মেনীর ওপর একটি অপমানকর চুক্তি চাপিয়ে দয়া হয়। এটিকেই বলা হয় ভার্সাই চুক্তি।

 

প্রথম মহাযুদ্ধে উসমানী খিলাফাত দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খিলাফাতের সর্বত্র এমন কি রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপলেও মিত্র শক্তির সৈন্যগণ অবস্থান গ্রহন করে। খালীফা পঞ্চম মহাম্মদ দখলদার শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হণ। তিনি তখন জাতীয় পরিষদ ভেংগে দেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। খালীফা নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। অপসারিত সরকারের বহু লোক বন্দী ও নির্বাসিত হয়।

 

৪. পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

৩৬. ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে ষষ্ঠ মুহাম্মদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. রণাংগনে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের মে মাসে গ্রীস উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত স্মার্ণা দখল করে ব্যাপক হত্যাকান্ড ও লুটতরাজ চালায়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে ১০ই আগষ্ট বিজয়ী মিত্রশক্তি সেভার্স চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের ওপর চরম আঘাত হানে।

 

সেভার্স চুক্তি অনুযায়ী ঈজিয়ান সাগরের কয়েকটি দ্বীপ এবং থ্রেস উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গ্রীসকে দেয়া হয়। মিসর, সুদান, সাইপ্রাস, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং আরব উপদ্বীপ ইংল্যান্ডের কর্তৃত্বাধীনে দেয়া হয়। লেবানন, সিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া প্রভৃতি পেলো ফ্রান্স। কনষ্ট্যান্টিনোপল, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি উসমানী নৌ-বন্দরগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়। উসমানী খিলাফাতের বিমান বহর মিত্র শক্তির হাতে চলে যায়।

 

খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদের হাতে অবশিষ্ট থাকলো রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল এবং পার্বত্য আনাতোলিয়া।

 

এক কালের এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপের বিশাল এলাকা জড়ে বিস্তৃত উসমানী খিলাফাত সব হারিয়ে কনষ্ট্যান্টিনোপল আর আনাতেলিয়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে আনাতোলিয়ায় \'ইয়াং তুর্কস\' ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং গ্রীসের আক্রমন থেকে স্মার্ণা রক্ষা করতে না পারাY ষষ্ঠ মুহাম্মাদের কড়া সমালোচনা করে। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রিফাত রউফ বে এবং আলী ফুয়াদ পাশা।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা তখন সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার। খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদ তাঁকে সামরিক ইনস্পেক্টর জেনারেল হিসেবে আনাতোলিয়া পাঠান \'ইয়াং তুর্কস\'-এর বিদ্রোহ দমন করতে। সেখানে গিয়ে মস্তাফা কামাল পাশা বিদ্রোহীদের দলে ভিড়ে যান।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে \'ইয়াং তুর্কস\' আনাতোলিয়াতে একটি নির্বাহী পরিষদ গঠন করে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান হন মুস্তাফা কামাল পাশা এবং মেম্বার ছিলেন রিফাত রউফ বে, বেকীর সামী বে, রুস্তম বে, মাজাহার বে এবং হায়দার বে। এই নির্বাহী পরিষদ আনাতোলিয়ার শাসনভার গ্রহন করে এবং আংকারাতে রাজধানী স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করে।

 

অবস্থার নাজুকতা উপলব্ধি করে খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আলীরেজার নেতৃত্ব গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী উযীর পরিষদ মুস্তফা কামাল পাশার \'জাতীয় চুক্তি\' অনুমোদন করে। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিলো তুর্ক জাতীয় স্বাধীনতার ঘোষণা।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি। জেনারেল মিলানের নেতৃত্বে মিত্রশক্তিগুলোর সৈন্যগণ ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল দখল করে। কনষ্ট্যান্টিনোপলে মার্শাল L ঘোষণা করা হয়। চল্লিশ জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে বন্দী করে মাল্টায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে মুস্তাফা কামাল পাশা আংকারাতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। এই পরিষদের নাম দেয়া হয় গ্য্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলী। মস্তফা কামাল পাশা হন এই এসেম্বলীর সভাপতি। এইভাবে আংকারাতে কনষ্ট্যান্টিনোপলের সমান্তরাল সরকার কায়েম হয়। আংকারা সরকার ঘোষণা করে যে বিদেশী সৈন্যদের হাতে বন্দী খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তিগুলোও গ্রহনযোগ্য নয়। এতদসত্বেও ১৯২০ খৃষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ মিত্র শক্তির চাপের নিকট নতি স্বীকার করে সেভার্স চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকারের সৈন্যগণ মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে ইনইনুর যুদ্ধে গ্রীক বাহিনীকে পরাজিত করে তাদেরকে স্মার্ণা থেকে তাড়িয়ে দেয়। ১৯২১ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুর্ক বাহিনী সাকারিয়া প্রান্তরে গ্রীকদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে।

 

এই দুইটি সামরিক বিজয় আংকারা সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধি করে। কমিউনিষ্ট রাশিয়া আংকারা সরকারকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ফ্রান্স এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সিলিসিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়। ইতালীও আংকারা সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে আদালিয়া ছেড়ে দেয়।

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গ্রীস আংকারা সরকারের সাথে মুদানিয়া চুক্তি স্বাক্ষর করে স্মার্ণা এবং পূর্ব থ্রেসের ওপর তার দাবি পরিত্যাগ করে। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার এক ঘোষণার মাধ্যমে \'সুলতান\' পদ বিলুপ্ত করে।

 

৩. ষষ্ঠ মুহাম্মাদের পদত্যাগ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার কর্তৃক \'সুলতান\' পদ বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়ার পর ষষ্ঠ মুহাম্মাদ ক্ষমতা ছেড়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

 

 

 

৩৭. দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 


 

১. খালীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে খালীফা বলে ঘোষণা করে। রিফাত পাশা আংকারা সরকারের পক্ষে কনষ্ট্যান্টিনোপলের শাসনভার গ্রহন করেন।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দে জুলাই মাসে আংকারা সরকারের চাপে সেভার্স চুক্তি বাতিল করে লুজেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইংল্যান্ড মেনে নেয় যে কনষ্ট্যান্টিনোপল, আনাতোলিয়া এবং পূর্ব থ্রেস তুর্কীর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এইভাবে ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অবশিষ্টাংশ অর্থাৎ তুর্কীর অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা মেনে নেয়।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তুর্কীকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে মুস্তফা কামাল পাশা হন এর প্রেসিডেন্ট এবং ইসমত ইনুনু হন এর প্রাইম মিনিষ্টার। খালীফা পদ তখনো প্রতীকী পদ হিসেবে অবশিষ্ট ছিলো।

 

২. দ্বিতীয় আবদুল মজিদের পদচ্যুত হন

 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ পদচ্যুত হন।

 

 

 

উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি

 


 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশা একটি আইনের মাধ্যমে খিলাফাতের উচ্ছেদ সাধন করেন। তিনি তুর্কীকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তুর্কীর রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল থেকে আংকারা সরিয়ে আনেন।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা চরম ইসলামী বিদ্বেষী ছিলেন। যা কিছু ইসলামী আইন তখনো প্রচলিত ছিলো সেইগুলো বাদ দিয়ে তিনি সুইস কোড (Swiss Code) প্রবর্তন করেন।

 

তিনি পর্দা প্রথার বিলোপ সাধন করেন। একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের সর্বত্র সেকুলার স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। আরবীতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ হয়। আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। পাগড়ি বা ফেজটুপি পরা নিষিদ্ধ হয়। হ্যাট পরিধান করা বাধ্যতামুলক করা হয়। সালাম পরিত্যক্ত হয়।

 

দেশে সেকুলার পত্রপত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক বই-পুস্তক ব্যাপক হারে প্রকাশিত হয়। যুব সমাজ উচ্ছৃংখল হয়ে ওঠে। বেহায়াপনা উলংপনা বৃদ্ধি পায়। মদখোরের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপ হতে থাকে। আলেম সমাজ ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিদেরকে নানাভাবে নাজেহাল ও নির্যাতন করা হয়। মুস্তাফা কামাল পাশা রিপাবলিকান পিপলস পার্টি গঠন করেন। বহুকাল পর্যন্ত এটিই ছিলো তুর্কীর একমাত্র রাজনৈতিক দল।

 

ছয়শত ছত্রিশ বছর উসমানী খিলাফাত ছিলো মুসলিম উম্মার শক্তিকেন্দ্র। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে এই শক্তি কেন্দ্রর পতন ঘটে। এটা সত্য যে উসমানী খালীফাগণ খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো আল্লাহর রাসূলের (সা) হাতে গড়া লোক ছিলেন না। খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো তাঁরা নির্বাচিত খালীফাও ছিলেন না। তবুও এই কথা অনস্বীকার্য যে প্রথম দিককার উসমানী খালীফাগণ নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তাঁরা ব্যক্তিগণ জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতেন। খিলাফাতের সর্বত্র যাতে ছালাত কায়েম থাকে সেই জন্য স্থানে স্থানে তাঁরা বহু সংখ্যক মসজিদ নির্মান করেন। ইসলাম সম্পর্কে ভতিষ্যত জেনারেশনকে জ্ঞান দেবার জন্য তাঁরা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কাযীগন ইসলামী শারীয়া অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতেন। যাতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন তৈরী না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য শাইখুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। জনগনের স্বাস্থ্য-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সর্বত্র হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। স্থানে স্থানে গোসলখানা তৈরী করা হয়। বহু সংখ্যক রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি তৈরী করা হয়। যাকাত ও উশর আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হয়। মসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জান, মাল ও ইযযতের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করা হয়। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধ করা হয়।

 

তাঁরা সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। বিলাসিতা পরিহার করে চলতেন। তাঁরা একদিকে ছিলেন সৎ, অন্য দিকে ছিলেন যোগ্যতাসম্পন্ন। প্রিশাসন চালাতে তাঁরা হিমসিম খেতেন না। শাসনকার্য পরিচালনায় তাঁরা ব্যর্থতার পরিচয় দিতেন না। তাঁরা প্রতিভার কদর করতেন। যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদেরকে সরকারী পদসমূহে নিয়োগ করতেন।

 

আল্লাহর পথে জিহাদকে তাঁরা অতিশয় গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা নিজেরাই ছিলেন মুজাহিদ। যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা নিজেরাই সেনাপতিত্ব করতেন। প্রায় তিনশত বছর উসমানী খিলাফাত এই ধরনের সুলতান ও খালীফা লাভ করে ধন্য হয়েছিলো। তাঁদের আচরণ এবং অনুসৃত সুনীতিতে মুগ্ধ হয়ে বহু সংখ্যক অমুসলিম মুসলিম হয়েছিলো। পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান রাজাগণ খালীফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো কিন্তু তাদের প্রজাদের মাঝে খালীফাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব পরিলক্ষিত হতো।

 

পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান শক্তি উসমানী খিলাফাতের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে চেয়েছিলো, কিন্তু বারবারই উসমানী খিলাফাত এক অপরাজেয় শক্তি প্রমাণিত হয়েছে। পরর্রতী সোয়া তিনশত বছরে যাঁরা খালীফা হয়েছিলেন তাঁরা প্রথম দিককার খালীফাদের মতো ছিলেন না। ইসলামের অনুসরণের ক্ষেত্রে তাঁদের নিষ্ঠার অভাব ছিলো। তাঁরা ছিলেন বিলাসী। তাঁদের অনেকেই নারী আর মদের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েন। শাসক হিসেবে তাঁরা ছিলেন অযোগ্য। যোদ্ধা হিসেবে তাঁরা ছিলেন নিম্নমানের। আল্লাহর পথে জিহাদের গুরুত্ব তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন। গুণীব্যক্তিদের কদর করতে পারননি তাঁদের অনেকেই। ফলে প্রশাসনে অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

শেষ দিকে যাঁরা খালীফা হন তাঁদের কেউ কেউ তো ইসলামী জীবনদর্শন এবং বিধানকেই ভুলে বসেছিলেন। ইউরোপের ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ তাঁদের চিন্তাচেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো। এক দিকে চৈন্তিক ফ্রন্টে, অপরদিকে সামরিক ফ্রন্টে তাঁরা ইউরোপীয়দের নিকট নতি স্বীকার করেন।

 

ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, আল কুরআন ও আল হাদীসে যুগজিজ্ঞাসার জবাব অন্বেষণ এবং যুগোপযোগী সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি তাঁদের উদাসীনতা শেষাবধি তাঁদেরকে ইউরোপীয় শক্তির বশংবদে পরিণত করে। তাঁর ইউরোপীয়দের চিন্তাধারা প্রবেশের জন্য খিলাফাতের দ্বার খুলে দেন। ইউরোপের ভালোমন্দ সব কিছুই বন্যার পানির মতো খিলাফাতের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মুসলিমদের ঘরেই ইসলাম এবং মসলিমদের দুশমন তৈরি হতে থাকে। শেষ পর্যায়ে এরাই উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি এবং ইসলামের উচ্ছেদ সাধন করে।

 

 

 

তথ্যসুত্র

 


 

১. আধুনিক ইউরোপের পরিচয়/কে. আলী

 

২. মুসলিম ও আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস/কে.আলী

 

৩. History of Modern Europe Since 1789/V.D. Mahajan

 

৪. Badiuzzaman Said Nursi/Sukran Bahide

 

৫. First World War/A.J.P. Taylor

 

৬. ইসলামের ইতিহাস/কাযী আকরাম হোসাইন

', 0, 'http://icsbook.info/?p=1088', 0, 'post', '', 0); INSERT INTO `bulxm_posts` (`ID`, `post_author`, `post_date`, `post_date_gmt`, `post_content`, `post_title`, `post_excerpt`, `post_status`, `comment_status`, `ping_status`, `post_password`, `post_name`, `to_ping`, `pinged`, `post_modified`, `post_modified_gmt`, `post_content_filtered`, `post_parent`, `guid`, `menu_order`, `post_type`, `post_mime_type`, `comment_count`) VALUES (4605, 310, '2019-10-31 16:13:25', '2019-10-31 10:13:25', '

 

 

উসমানী খিলাফতের ইতিকথা

 

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

 


 

স্ক্যান কপি ডাউনলোড

 


 

আমি লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশের মুসলিমদের বিরাট অংশ খিলাফতে রাশেদা, বানু  উমাইয়া খিলাফয়াত ও বানুল আব্বাস খিলাফাত সম্পর্কে যতটুকু অবহিত, উসমানী খিলাফাত সম্পর্কে ততটুকু অবহিত নন। অথচ মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জল ইতিহাসের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে উসমানী খিলাফাত। একাধারে ছয়শত ছত্রিশ বছর ধরে এই খিলাফাত এশীয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার সুবিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পুরোপুরি না হলেও প্রথম ভাগের উসমানী খালীফাগণ আল-কুরআনের বহুবিধ বিধান তাঁদের ব্যাগতিগত জীবন ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁদের জন্য অগ্রগতির রাজপথ উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। দুঃখের বিষয় পরবর্তী কালের খালীফাগণ আল-কুরআনের শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। ফলে তাঁরা ও তাঁদের শাসিতরা অচিরেই জাহিলিয়াতের শীকারে পরিণত হন। তাঁদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, পতন নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

 

এই পুস্তিকায় আমি উসমানী খিলাফাতের উত্থান ও পতনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছি যাতে সম্মানিত পাঠকগণ অল্প সময় খরচ করে একটি দীর্ঘ ইতিহাসের সার-সংক্ষেপের সাথে পরিচিত হতে পারেন।

 

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

 


 

উসমানী খিলাফাত

 

উসমানী খিলাফাত মুসলিম উম্মার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বানুল আব্বাস খিলাফাতের পতনের পর এই খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেই বছর তাতার সমর নায়ক হালাকু খান বানুল আব্বাস খিলাফাতের রাজধানী বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেন, সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন উসমানী খিলাফাতের প্রতিষ্ঠাতা উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মসনদে বসেন। তখন থেকে শুরু করে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন খালীফা ৬৩৬ বছর উসমানী খিলাফাত পরিচালনা করেন।

 

উসমানী খালীফাগণ হচ্ছেন-

 

১। উসমান (১২৮৮-১৩২৬)

 

২। ওরখান (১৩২৬-১৩৫৯)

 

৩। প্রথম মুরাদ (১৩৫৯-১৩৮৯)

 

৪। প্রথম বায়েজিদ (১৩৮৯-১৪০৩)

 

৫। প্রথম মুহাম্মাদ (১৪০৩-১৪২১)

 

৬। দ্বিতীয় মুরাদ (১৪২১-১৪৫১)

 

৭। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ (১৪৫১-১৪৮১)

 

৮। দ্বিতীয় বায়েজিদ (১৪৮১-১৫১২)

 

৯। প্রথম সলিম (১৫১২-১৫২৪)

 

১০। প্রথম সুলাইমান (১৫২৪-১৫৬৬)

 

১১। দ্বিতীয় সলিম (১৫৬৬-১৫৭৪)

 

১২। তৃতীয় মুরাদ (১৫৭৪-১৫৯৫)

 

১৩। তৃতীয় মুহাম্মাদ (১৫৯৫-১৬০৩)

 

১৪। প্রথম আহমাদ (১৬০৩-১৬১৭)

 

১৫। প্রথম মুস্তাফা (১৬১৭-তিনমাস)

 

১৬। দ্বিতীয় উসমান (১৬১৭-১৬২৩)

 

১৭। চতুর্থ মুরাদ (১৬২৪-১৬৪০)

 

১৮। প্রথম ইবরাহীম (১৬৪০-১৬৪৮)

 

১৯। চতুর্থ ইবরাহীম (১৬৪৮-১৬৮৭)

 

২০। দ্বিতীয় সুলাইমান (১৬৮৭-১৬৯১)

 

২১। দ্বিতীয় আহমাদ (১৬৯১-১৬৯৫)

 

২২। দ্বিতীয় মুস্তাফা (১৬৯৫-১৭০৩)

 

২৩। তৃতীয় আহমাদ (১৭০৩-১৭৩০)

 

২৪। প্রথম মাহমুদ (১৭৩০-১৭৫৪)

 

২৫। তৃতীয় উসমান (১৭৫৪-১৭৫৭)

 

২৬। তৃতীয় মুস্তাফা (১৭৫৭-১৭৭৩)

 

২৭। প্রথম আবদুল হামিদ (১৭৭৩-১৭৮৯)

 

২৮। তৃতীয় সলিম (১৭৮৯-১৮০৭)

 

২৯। চতুর্থ মুস্তাফা (১৮০৭০১৮০৮)

 

৩০। দ্বিতীয় মাহমুদ (১৮০৮-১৮৩৯)

 

৩১। প্রথম আবদুল মজিদ (১৮৩৯-১৮৬১)

 

৩২। আবদুল আযীয (১৮৬১-১৮৭১)

 

৩৩। পঞ্চম মুরাদ (১৮৭১-১৮৭৬)

 

৩৪। দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (১৮৭৬-১৯০৯)

 

৩৫। পঞ্চম মুহাম্মদ (১৯০৯-১৯১৮)

 

৩৬। ষষ্ঠ মুহাম্মদ (১৯১৮-১৯২২)

 

৩৭। দ্বিতীয় আবদুল মজিদ (১৯২২-১৯২৪)

 

 

 

১. উসমান

 


 

১. আমীর পদে উসমান

 

আনাতোলিয়ার ছোট্ট একটি জায়গীর ছিলো সুগুত। এর অধিপতি ছিলেন আত্‌তুগ্‌রিলের এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তাঁর নাম রাখা হয় উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্‌তুগরিল ইন্তিকাল করেন। উসমানের বয়স তখন ত্রিশ বছর। তিনি পিতৃ মসনদে বসেন।

 

সুগুতের একজন প্রখ্যাত দীনদার ব্যাক্তি ছিলেন আবিদ আলী। উসমান তাঁর কন্যা মাল খাতুনকে বিয়ে করেন।

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে উসমান ইয়েনি দখল করে রাজ্য সীমা বর্ধিত করেন। তিনি ইয়েনি শহরে তাঁর রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। উসমান ‘আমীর’ উপাধি গ্রহন করেন।

 

২. উসমান যেমন ছিলেন

 

উসমান ছিলেন ইসলামী নৈতিকতার বিমূর্ত রূপ। তাঁর জীবন ছিলো খুবই অনাড়ম্বর। তিনি ছিলেন উঁচু দরের শাসক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিন ইসকলের সুখ-শান্তির কথা ভাবতেন। তিনি তাঁর দীনদার শ্বশুরকে প্রথমে কাযী ও পরে উযীর নিযুক্ত করেছিলেন। উসমান রাজ্যময় মসজিদ নির্মাণ করে সালাত কায়েম এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার সুব্যবস্থা করেন। তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ। সৈনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ তাঁর রণকৌশল ছিলো অত্যন্ত উন্নত মানের। যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে গানীমার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্র-তহবিলে জমা করে বাকি চার ভাগ সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। সাধারণত তিনি কোমলতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু প্রয়োজনে তিনি হতেন ইস্পাতের মতো কঠিন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।

 

তাঁর জীবনে বিলাসিতা ছিলোনা। তিনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্যও কোন ধন-রত্ন জমা করে যাননি। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র ওরখানকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে কখনো যুলুম ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করবোনা। বিজিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সম্মান করবে। শারীয়ার বিধি বিধান মেনে চলবে। ঐশী আইনই আমাদের বড় শক্তি। পরম করুনাময়ের পথেই আমাদের সমৃদ্ধি। প্রজাদের রক্ষনাবেক্ষণ তোমার বড় কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে পারলে তুমি পরম করুনাময়ের অনুগ্রহ ও আশ্রয় লাভ করতে পারবে”

 

৩. রণাংগনে উসমান

 

১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতত্বে তাঁর সৈন্যগণ ইয়েনি দখল করে। এই ইয়েনি শহরই হয় উসমানী খিলাফতের প্রথম রাজধানী।

 

১৩০১ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশ গ্রীসের সাথে উসমানের যুদ্ধ বাধে। গ্রীসই তখন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কুয়ুন হিসার যুদ্ধে গ্রীক সেনাপতি মুজালোনকে পরাজিত করে তিনি গ্রীস সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করেন।

 

১৩০২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমীর উসমানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা পরাজিত হন। তাঁর রাজ্যের এশীয় অঞ্চল উসমানের পদানত হয়।

 

এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে অন্যতম গ্রীক সেনাপতি এভারনোজ আল ইসলামের শ্রেষ্টত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। মুসলিমদের আচরণ, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং শৃংখলা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে খৃষ্টানধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীকালে এভারনোজ এবং তাঁর সাথীদের তলোয়ার ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।

 

১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ওরখান গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রসিদ্ধ ব্রুসা নগরী দখল করেন। অতঃপর এই ব্রুসাই হয় উসমানী খিলাফাতের রাজধানী।

 

৪. উসমানের ইন্তিকাল

 

উসমান ৩৮ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

 

২. ওরখান

 


 

১. সুলতান পদে ওরখান

 

আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রুসা-র মসনদে বসেন। তিনি ‘সুলতান’ উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান।

 

২. ওরখান যেমন ছিলেন

 

আমীর উসমানের মতোই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন। রাজধানী ব্রুসাকে তিনি একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন।

 

পিতার মতোই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।

 

তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতো তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলো না। যুদ্ধের সময় ঘোষনা দেওয়া হতো। আগ্রহী লোকেরা এগিয়ে আসতো। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতো। দূরদর্শী ওরখান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভোগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারোহী বাহিনীকে বলা হতো সিপাই। যুদ্ধবন্দী খ্রিষ্টান যুবকদের মধ্যে থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে ওরখান

 

উসমানের মতোই বীরযোদ্ধা ছিলেন ওরখান। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরখানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরখান তাঁর মুখোমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান সসৈন্যে নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগন মুসলিমদের আচরনে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে। ওরখানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরোপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়োডোরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন।

 

৪. ওরখানের ইন্তিকাল

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ তাঁর বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশে পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিলো খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের বিশপ রাণী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমণের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

৩. প্রথম মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুরাদ

 

১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখানের পুত্র প্রথম মুরাদ ব্রুসার মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুরাদ ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি। কিন্তু তিনি অসাধারন প্রতিভার অধিকারী ছি্লেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তিনিও ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। ইসলামী চিন্তা চেতনার প্রসারের দিকে তাঁরও ছিলো সজাগ নজর।

 

অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের প্রতিও তিনি সহনশীল ছিলেন। তাঁর শাসনকালেও খ্রিষ্টান প্রজাগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি ছিলেন একজন যোগ্য সংগঠক। তাঁর প্রচেষ্টায় উসমানী সেনাবাহিনী আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মুরাদ

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ গ্রীসের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আড্রিয়ানোপল দখল করেন।

 

১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারিৎজা নদীর তীরে সংঘটিত যুদ্ধে খ্রিষ্টান বাহিনীকে পরাজিত করে মেসিডোনিয়া দখল করেন। সমসাময়িককালে প্রথম মুরাদ থ্রেস (বর্তমান রুমানিয়া)দখল করেন।

 

১৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ আড্রিয়ানোপলে রাজাধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

১৩৭২ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে বুলগেরিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। সামাকফ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম মুরাদের পরিচালিত বাহিনী যুদ্ধে জয় লাভ করে। বুলগেরিয়া উসমানী শাসনাধীনে আসে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়ার মাঝখানে অবস্থিত কসোভো রণাংগনে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শোক্তি সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে প্রথম মুরাদের হাতে ভীষনভাবে পরাজিত হয়। ল্যাজারাস বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

৪. প্রথম মুরাদের শাহাদাত

 

কসোভা প্রান্তরে বিজয় লাভের পর কভিলভিচ নামক একজন স্লাভ সৈনিক সুকৌশলে প্রথম মুরাদের নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করে।

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ শহীদ হন। তিনি ৩০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৪. প্রথম বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম বায়েজিদ

 

১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদের শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র প্রথম বায়েজিদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম বায়েজিদ একজন দৃঢ় ব্যাক্তি ছিলেন। রণক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন করেন। এই জন্য তাঁকে বলা হতো ইলদ্রিম বা বিদ্যুৎ। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে তিনি উসমানী খিলাফাত আরো সসংহত করেন। তবে স্বভাবে তিনি নিষ্ঠুর ছিলেন। আর তাঁর সার্ব স্ত্রীর প্রভাবে তিনি নৈতিক অধপতনের স্বীকার হন। এতে উসমানী খিলাফাতের সুনাম যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়।

 

৩. রণাংগনে প্রথম বায়েজিদ

 

কসোভোর যুদ্ধে পরাজিত ও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের পুত্র স্টিফেন বুলকোভিচ সার্বিয়ার সিংহাসনে বসেন। প্রথম বায়েজিদ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। স্টিফেন প্রথম বায়েজিদের আনুগত্য স্বীকার করে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীন স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। রাজা স্টিফেন তাঁর বোন অলিভেরা ডিসপিনাকে প্রথম বায়েজিদের নিকট বিয়ে দেন। এই সার্ব যুবতী প্রথম বায়েজিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তবে সার্বিয়ার রাজা স্টিফেন সন্ধির শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে থাকেন।

 

১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সুলাইমানকে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। সুলাইমান উত্তর বুলগেরিয়া আক্রমন করে রাজধানী ত্রিনোভা অধিকার করেন।

 

১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পোপ নবম বেনিফাস উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষনা করেন।

 

ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক ফ্রান্সবাসী বারগান্ডির যুবরাজ জন ডি নেভার্সের নেতৃত্বে জমায়েত হয়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, লোম্বার্ডি, স্যাভয়, ব্যাভারিয়া, জার্মেনী, ওয়ালাচিয়া, বোহেমিয়া, অষ্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের রাজণ্যবর্গ এবং ৬০ হাজার খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা অষ্ট্রিয়ার বুদাপেষ্ট শহরে একত্রিত হয়। তারা ড্যানিউব নদীর তীর ধরে অগ্রসর হয়ে বুলগেরিয়ার নিকোপলিস শহরের কাছে এসে শিবির স্থাপন করে। প্রথম বায়েজিদ তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। খ্রিষ্টান ক্রুসেডার ধর্মযোদ্ধাগন টাঁড় বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশ পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

 

নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিল খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।

 

১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশপ রানী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমনের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

 

অতঃপর প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন। এই সময় তিনি খবর পান যে তাতার সমর নায়ক তাইমুর খান জর্জিয়া প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের অবরোধ তুলে নিয়ে তাইমুরের মুকাবিলার জন্য অগ্রসর হন।

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে আংকারা প্রান্তরে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রথম বায়েজিদ পরাজিত হন। তিনি ও তাঁর পুত্র বন্দী হন।

 

৪. প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকাল

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে বন্দী অবস্থায় প্রথম বায়েজিদ ইন্তিকাল করেন। তিনি ১৪ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

৫. প্রথম মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম মুহাম্মাদ

 

১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকালের পর কয়েকটি বছর তাঁর পুত্রদের মধ্যে কলহ চলতে থাকে। অতঃপর প্রথম বায়েজিদের পুত্র মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মুহাম্মাদ একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ সুলতান ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ শাসক ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব ব্যক্তি। ন্যায় পরায়ণ শাসক হিসেবে তাঁর স্থান অনেক উর্ধে। তিনি খুবই শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। একবার সার্বিয়া, ওয়ালাচিয়া এবং আলবেনিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দকে তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের নেতাদের বলতে ভুলো না যে আমি সকলকে শান্তি মঞ্জুর করেছি এবং সকলের নিকট থেকে শান্তিই গ্রহন করবো। আল্লাহ শান্তিভংগকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন।”

 

প্রথম মুহাম্মাহ তাঁর খ্রিষ্টান নাগরিকদের প্রতিও অত্যন্ত সদয় ছিলেন। প্রথম মুহাম্মাদ রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করার চেয়ে রাষ্ট্রের সংহতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন।

 

৩. প্রথম মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 

 

 

৬. দ্বিতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুরাদ

 

১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুরাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১৮ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুরাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তাঁর উদারতা, বিজ্ঞতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা সর্বজন বিদিত ছিলো। তিনি দরিদ্র ও দুঃখী মানুষের বন্ধু ছিলেন। দ্বিতীয় মুরাদ একজন সুশাসক  ছিলেন। তাঁর শাসনকালে রাষ্ট্রের সর্বত্র আইন-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত ছিলো। ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ও সংরক্ষণের দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু সংখ্যক মাসজিদ এবং ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। জনগনের সুচিকিৎসার জন্য তিনি বহু হাসপাতাল ও স্থাপন করেছিলেন।

 

ইতিহাসবিদ গীবন বলেন, “ন্যায়নিষ্ঠা এবং সংযত আচরণ ছিলো দ্বিতীয় মুরাদের উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। খ্রিষ্টানগণ ও তা একবাক্যে স্বীকার করেছে। পূর্ব হতে বিশেষভাবে প্ররোচনা দ্বারা দ্বারা বাধ্য না হলে তিনি কখনো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন না। আর সন্ধি চুক্তি প্রতিপালনে তাঁর কথাও ছিলো পবিত্র।”

 

তাঁর রাজ্যে খ্রিষ্টান প্রজাগণ সুখে বসবাস করতো। অন্য সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের খ্রিষ্টানগণ তাঁর শাসিত অঞ্চলে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুরাদ

 

সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য ছিলো। সার্বিয়ার নতুন রাজা জর্জ ব্রাংকোভিচ বোসনিয়া-হারজেগোভিনা, পোলান্ড, ওয়ালাচিয়া, আলবেনিয়া এবং হাংগেরীর রাজাদেরকে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উসকানি দেন। হাংগেরীর বিখ্যাত সেনাপতি হুনিয়াডীর নেতৃত্বে বিশাল খ্রিষ্টান সেনাবাহিনী ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভার্না প্রান্তরে দ্বিতীয় মুরাদের সৈন্য বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। হাংগেরীর রাজা ভ্যাডিসলাস এবং কার্ডিনাল জুলিয়ান এই যুদ্ধে নিহত হন। সেনাপতি হুনিয়াডী পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান।

 

উল্লেখ্য যে হুনিয়াডী সার্বিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনার খ্রিষ্টানদেরকে জোর পূর্বক রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী বানাতে চান। এতে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তারা রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী হওয়ার চেয়ে নিজস্ব ধর্মমতে অটল থেকে উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীনে থাকাকে শ্রেয় মনে করে। ওই সব দেশের রাজা এবং সেনাপতিগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও জনগণ কিন্তু উসমানী খিলাফাতের নিকট আত্নসমপর্ন করাকেই সঠিক মনে করে।

 

৪. দ্বিতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে ৬৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৭. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো ২১ বছর।

 

২. দ্বিতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো খুবই বলিষ্ঠ। এই জন্য তাঁকে ‘নেক আমলের জনক’ বলা হতো। কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ে পর তিনি সেখানে ইয়েনি সারাই নামে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই শহরে তিনি অনেকগুলো মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন।

 

যাকাত, মালে গানীমা এবং জিযইয়া ছিলো রাষ্ট্র তহবিলের আয়ের প্রধান উৎস। বিজিত অঞ্চলের রাজস্ব থেকে একটি অংশ ওয়াকফ সম্পত্তিরূপে আলাদা রাখা হতো এবং এর দ্বারা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ভার বহন করা হতো। মুসলিম নাগরিকদের কাছ থকে উশর (ফসলের যাকাত) আদায় করা হতো।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ বেসামরিক শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি দিওয়ান বা পরিষদ গঠন করেন। উযীর, নিশানজী (সচিব), কাজী এবং খাজাঞ্চী – এই চারজনের ওপর দিওয়ান পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো। দ্বীনী বিষয়ে তিনি প্রধান মুফতির ফতোয়ার উপর নির্ভর করতেন।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখতেন, সকলের প্রতি ন্যায় বিচার করতেন। তিনি বিচার ব্যাবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতেন।

 

শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি খিলাফাতকে কয়েকটি প্রদেশে এবং প্রতিটি প্রদেশকে কয়েকটি জিলায় বিভক্ত করেন। সরকারী কর্মচারীদের ট্রেনিং এর জন্য তিনি রাজধানীতে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন।

 

তিনি ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী। রণকৌশলে তাঁর পারদর্শিতা ছিলো অসাধারণ। তিনি একলক্ষ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুদক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ

 

৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন বসফরাস প্রণালীর উপকূলে প্রাচীন গ্রীক শহর বাইজেনটিয়ামে  তাঁর সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী স্থাপন করে এর নাম রাখেন নোভারোমা বা নয়া রোম। কালক্রমে তাঁর নামানুসারে এই শহরের নাম রাখা হয় কনস্ট্যান্টিনোপল।

 

৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট থিউডোসিয়াস তাঁর দুই পুত্রের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। দুইটি সাম্রাজ্য পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত হয়। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের অপর নাম বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। কনস্ট্যান্টিনোপল হয় বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। তদুপরি এটি খৃষ্টানদের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদের সময় গ্রীসের রাজা কনস্ট্যান্টাইন কনস্ট্যান্টিনোপলের সিংহাসনে আসীন ছিলেন। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাঁর পূর্বসূরীদের মতো কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের উদ্যোগ নিচ্ছেন জেনে রাজা কনস্ট্যান্টাইন পশ্চিম ইউরোপের খৃষ্টান রাজাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন। সমঝোতার খাতিরে তিনি তখন রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনেকগুলো দাবি-দাওয়া মেনে নেন। এতে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের নেতৃবৃন্দ ক্ষেপে যান। গ্রীন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান গ্র্যান্ড ডিউক নোটারাস বলেন যে, রোমান সম্রাটের মুকুট অপেক্ষা তিনি উসমানী সুলতানের পাগড়ি দেখতে বেশি পছন্দ করেন। এই সব কারনে গ্রীসের রাজা বেশি সংখ্যাক যোদ্ধা যোগাড় করতে পারেননি।

 

১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে ২৫ শে মে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ রাজা কনস্ট্যান্টাইনের প্রতিরোধ ভেংগে ফেলে কনস্ট্যান্টিনোপলে প্রবেশ করেন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা নিহত হন। কনস্ট্যান্টিনোপলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। এই মহা বিজয়ের জন্যই দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ফাতিহ মুহাম্মাদ বা বিজেতা মুহাম্মাদ নামে খ্যাত হন।

 

কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের পর দ্বিতীয় মুহাম্মাদ গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের কর্তৃপক্ষকে একটি সনদ প্রদান করেন। খৃষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি অবাধে প্রতিপালনের অধিকার স্বীকৃত হয়।

 

যুদ্ধকালে যেইসব খৃষ্টান শহর ছেড়ে পালিয়েছিলো দ্বিতীয় মুহাম্মাদ তাদেরকে স্বগৃহে ফিরে আসার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বহু খৃষ্টান কনস্ট্যান্টিনোপলে ফিরে আসে।

 

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপল থেকে কনস্ট্যান্টিনোপলে উসমানী খিলাফাতের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

 

এই সময় বোসনিয়া-হারজেগোভিনার শাসক ছিলেন একজন উগ্র রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টান। নাগরিকদের বেশীরভাগ ছিল বোগোমিল খৃষ্টান। এরা ঈসা (আঃ) এবং মারইয়ামের পূজা করতো না। তাদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি ছিলো না। এরা ক্রসকে ধর্মীয় প্রতীক গণ্য করতো না। তারা মানতো যে ঈসা (আঃ) শূলবিদ্ধ হয়েছেন। এরা মদ্যপান করতো না।

 

বোগোমিলদের ধর্মবিশ্বাস রোম থেকে প্রচারিত পোপের ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো। তাই রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাদের প্রতি খড়গহস্ত ছিলো। বোগোমিলদের উপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালানো হয়। বহু বোগোমিল নিহত হয়। অনেকে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

 

অচিরেই বোসনিয়া-হারজেগোভিনার বোগোমিল খৃষ্টানগণ মুসলিমদের সদাচরণ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে পরিচিত হয়। রোমান ক্যাথলিকদের যুলুম থেকে বাঁচার জন্য তারা মুসলিমদের সাহাযয় প্রার্থনা করেন।

 

১৪৬৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ একদল সৈন্য নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনা পৌঁছে গণধিকৃত শাসককে যুদ্ধে পরাজিত করেন। ইসলামের সোউন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হাজার হাজার বোগোমিল খৃষ্টান মুসলিম হয়ে যায়। মাত্র একদিনেই ছত্রিশ হাজার খৃষ্টান মুসলিম হয়।

 

১৪৬৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ আলবেনিয়ার উদ্দেশ্যে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। আলবেনিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সোউন্দর্যের সাথে পরিচিত হয়ে আলবেনিয়ার অগণিত খৃষ্টান ইসলাম গ্রহন করে আলবেনিয়াকে ইসলামের একটি মজবুত ঘাঁটিতে পরিণত করে।

 

১৪৬৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের অন্যতম দেনাপতি কুদুক আহমান ক্রিমিয়া জয় করেন।

 

১৪৭৭ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি উমার পাশা যুদ্ধক্ষেত্রে ভেনিসের রাজাকে পরাজিত করেন।

 

১৪৮০ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি কুদুক আহমাদ ইতালীর দ্বার অট্রেন্টো দখল করেন। এইভাবে ইতালীর একাংশ উসমানী খিলাফাতের অধীন হয়। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ সমগ্র ইতালী জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

 

৪. দ্বিতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৮. দ্বিতীয় বায়েজিদ

 


 

১. সুলতান পদে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

১৪৮১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুহাম্মাদের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো পয়ঁত্রিশ বছর।

 

২. দ্বিতীয় বায়েজিদ যেমন ছিলেন

 

তিনি একত্রিশ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। শাসনকালে প্রথম ভাগে তাঁকে ভাইদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে দেখা যায়।

 

শাসক হিসেবে তিনি তেমন কোন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় বায়েজিদ

 

মিসরের মামলুক শাসকদের সাথে উসমানী খিলাফাতের সংঘর্ষে একটি দুঃখজনক ঘটনা। ১৪৮৪ খৃষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৪৯১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দ্বিতীয় বায়েজিদকে ছয়বার মিসরের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। ১৪৯১ খৃষ্টাব্দে একটি সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হয়।

 

১৪৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ ভেনিস বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৫০৩ খৃষ্টাব্দে ভেনিস তাঁর সাথে শান্তি যুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

দ্বিতীয় বায়েজিদ ইরানের শাহ ইসমাঈলের সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। শাহ ইসমাঈল শিয়া ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় এশিয়া মাইনরে শিয়াগণ উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্নক তৎপরতা শুরু করে।

 

১৫১১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ উযীরে আযম আলী পাশার নেতৃত্বে শীয়াদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। সেভার্স এর সন্নিকটে সংঘটিত যুদ্ধে শিয়াগণ পরাজিত হয়। তবে এই যুদ্ধে একদিকে উযীরে আযম আলী পাশা, অপরিদকে শীয়া নেতা শাহ কুলী নিহত হন।

 

৪. দ্বিতীয় বায়েজিদের ক্ষমতা ত্যাগ

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় বায়েজিদ জাননিসার এবং অন্যান্য সৈন্যদের চাপের মুখে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র প্রথম সলিমের পক্ষে ক্ষমতা ত্যাগ করেন।

 

৯. প্রথম সলিম

 


 

১. সুলতান পদে প্রথম সলিম

 

১৫১২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। গৃহবিবাদ দমন করে তাঁকে ক্ষমতা পাকাপোখত করতে হয়।

 

২. প্রথম সলিম যেমন ছিলেন

 

প্রথম সলিম অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি দ্বীনি আলোচনায় অংশ নিতে আনন্দ পেতেন। অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও তিনি উদার ছিলেন। তাঁর শাসনকালে খৃষ্টান এবং ইয়াহুদীগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি খুবই বিদ্যানুরাগী ছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি পড়াশুনা করতেন। তা৬র প্রশাসনে বহু জ্ঞানীগুণি ব্যাক্তির সমাবেশ ঘটেছিলো। সাধারনত তিনি দয়ালু ব্যাক্তি ছিলেন। তবে অসাধু ব্যাক্তিদের প্রতি তিনি খুবই কঠোর ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি নিষ্ঠুরতার আশ্রয় ও নিয়েছেন। জনগনের সখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি খুবই সজাগ ছিলেন। সেনাবাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকেও তাঁর নজর ছিলো।

 

৩. রণাংগনে প্রথম সলিম

 

১৫১৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম কালদিরান প্রান্তরে ইরানের শিয়া শাসক শাহ ইসমাঈলকে পরাজিত করেন। আহত অবস্থায় ইরানের শাহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যবৃন্দ বন্দী হন। প্রথম সলিম ইরানের রাজধানী তাব্রিজে প্রবেশ করেন। তিনি ইরানের দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান উসমানী খিলাফাএত্র অন্তর্ভুক্ত করে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসেন।

 

১৫১৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের মামলুক শাসক কানসোহ আলঘোরীর নিকট থেকে সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং আরবের বৃহত্তর অংশ দখল করেন।

 

১৫১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিম মিসরের নতুন শাস্ক তুমান বে-কে কায়রোর নিকতবর্তী বিদানিয়া প্রান্তরে পরাজিত করে মিসর উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

 

৪. খালীফা পদবী গ্রহণ

 

বাগদাদ কেন্রিক বিশাল বানুল আব্বাস খিলাফাত তাতারদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছিলো। ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে বাগদাদের পতন ঘটে তাতার সমর নায়ক হালাকু খানের হাতে। বানুল আব্বাসের জীবিত সদস্যগণ পালিয়ে মিসরে গিয়ে পৌঁছে। মিসরে তখন মামলুকদের শাসন।

 

খালীফা পদবী তখন মুসলিম জাহানের আত্নিক ঐক্যের একটি প্রতীকী পদবী ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। প্রথম সলিম যখন মিসর জয় করেন তখন খালীফা পদবীধারী আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিল কায়রোতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ছিলেন মামলুকদের হাতের পুতুল মাত্র। প্রথম সলিম তাঁকে বন্দী করে কন্সট্যান্টিনোপলে নিয়ে আসেন। আহমাদ আল্মুতাওয়াক্কিলকে খালীফা পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দ্যা হয়। প্রথম সলিম খালীফা পদবী গ্রহণ করেন। তখন থেকে উসমানী শাসকগণ একই সময় ‘সুলতান’ ও ‘খালীফা’ পদে অধিষ্ঠিত হতে থাকেন।

 

৫. প্রথম সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে সুলতান ও খালীফা প্রথম সলিম ইন্তিকাল করেন।

 

১০. প্রথম সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম সুলাইমান

 

১৫২০ খৃষ্টাব্দে প্রথম সলিমের একমাত্র পুত্র প্রথম সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর।

 

২. প্রথম সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

যুবরাজ থাকাকালেই প্রথম সুলাইমান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তখনই তা৬র সততা ও যোগ্যতার কথা সর্বত্র আলোচিত হতো। তিনি খালীফা হওয়ার পর সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রথম সুলাইমান ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম। দৈনন্দিন জীবনে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সাথে প্রতিপালন করতেন। সকল মুসলিম নাগরিক যাতে নিয়মিত ছালাত আদায় এবং ছাওম পালন করে সেই দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিলো। ছালাত এবং ছাওম পালনে শৈথিল্যের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। প্রথম সুলাইমান আল কুরআনের আটটি খন্ড নিজের হাতে কপি করে সুলাইমানিয়া মাসজিদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি কা’বারও সংস্কার সাধন করেন।

 

তিনি অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতিও উদার মনোভাব পোষন করতেন। তাঁর শাসনকালে ধর্মীয় কোন্দলের কারনে বিপদাপন্ন হয়ে খৃষ্টান দেশগুলো থেকে বহু প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খৃষ্টান তাঁর পরিচালিত রাষ্ট্রে এসে নিরাপদে বসবাস করতে থাকে। ইতিহাসবিদ লর্ড ক্রেজি বলেন, “খৃষ্টান জগতে রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে অত্যাচার-অবিচারের যুগে সমসাময়িক অন্যকোন নরপতি সুলাইমানের ন্যায় প্রশংসা অর্জন করতে পারেননি।”

 

সাহসিকতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়নতা এবং বদান্যতা তাঁর চরিত্রের ভূষন ছিল। তিনি নাগরিকদের করভার লাঘব করেন।

 

সুলাইমানিয়া মাসজিদ তাঁর অমর কীর্তি। রাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গোসলখানা, সেতু ইত্যাদি তৈরী করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীদেরকে বরখাস্ত করে সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি আপন জামাতাকেও গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে দেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি সমগ্র খিলাফাতকে ২১ টি ওলায়াত (প্রদেশ) এবং ২৫০ টি সানজাকে (জিলা) বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সানজাক আবার কয়েকটি কাদাসে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বলা হতো। সানজাকের শাসনকর্তা ছিলেন পাশা। প্রত্যেকটি কাদাসে ছিলেন একজন কাযী। তবে প্রথম সুলাইমানের আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন পছন্দ করতেন। তাঁর ওপর অন্যতমা স্ত্রী রোক্সেলানার বিশেষ প্রভাব ছিল।

 

তাঁর সমসাময়িক প্রখ্যাত শাসক ছিলেন জার্মেনীর পঞ্চম চার্লস, ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিস, ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ, রাশিয়ার জার আইভানোভিচ, পোল্যান্ডের সিজিসমান্ড, ইরানের শাহ ইসমাঈল এবং ভারতের মোগল সম্রাট আকবর।

 

৩. দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা

 

প্রথম দিকে উসমানী শাসকগণ নিজেদেরকে ইসলামী আইনকানুনের প্রতিভূ মনে করতেন। ধর্মীয় আইনবিদগণ কাযী ও মুফতী নামে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে বিভাগ দুইটিকে প্রধান মুফতীর অধীনে আনা হয়। প্রধান মুফতী শাইখুল ইসলাম নামে পরিচিত হন। ১৬ শতকের মধ্যভাগ থেকে শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাঁর পদমর্যাদা প্রায় উযীরে আযমের পদমর্যাদার সমকক্ষ ছিল। কোন আইন ধর্মীয় বিধান সম্মত কিনা সেই সম্বন্ধে অভিমত দেওয়াই ছিল শাইখুল ইসলামের প্রধান কাজ। সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর দফতরের অধীন ছিল।

 

৪. রণাংগনে প্রথম সুলাইমান

 

হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই খালীফার দূতকে হত্যা করেন। ১৫২১ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান সৈন্য বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে হাংগেরীর তখনকার রাজধানী বেলগ্রেড দখল করেন।

 

১৫২২ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান রোডস দ্বীপ জয় করেন।

 

১৫২৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় লুই শক্তি সঞ্চয় করে আবার মুসলিমদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। প্রথম সুলাইমান উযীরে আযম ইবরাহীম পাশার সেনাপতিত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। মোহাক্‌স্‌ প্রান্তরে উভয় বাহিনীর মুকাবিলা হয়। যুদ্ধে দ্বিতীয় লুই পরাজিত ও নিহত হন। হাংগেরীর রাজধানী বুদাপেষ্ট মুসলিমদের দখলে আসে।

 

১৫৫৩ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমান ইরানের হাত থেকে ইরাক ছিনিয়ে নেন।

 

১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বাসরা জয় করেন।

 

তিনি প্রধান নৌ সেনাপতি খাইরুদ্দীন বারবারোসা এবং দ্রাগুত পাশা, উলুজ আলী, পিরি পাশা এবং পিয়ালী পাশা নামক কয়েকজন নৌ সেনাপতির সাহায্যে একটি দক্ষ নৌ-বাহিনী গড়ে তোলেন। এই নৌ-বাহিনী ভূমধ্য সাগর, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

 

৫. প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলান বিদ্রোহী হয়ে ওঠলে প্রথম সুলাইমান অভিযানে বের হন। পথিমধ্যে তিনি ক্রোশিয়া দখল করেন। তার পর তিনি সিগেত দুর্গ জয় করেন। সিগেত দুর্গের পতনের পর সেই রাতেই প্রথম সুলাইমান আকস্মিকভাবে ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

১১. দ্বিতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সলিম

 

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন

 

২. দ্বিতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সলিম ছিলেন অযোগ্য ও আরামপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন কাব্যরসিক। তিনি কবি-সাহিত্যিক এবং চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। প্রাসাদ অভ্যন্তরে অবস্থান করে নারীদের সাহচর্যে থাকা এবং মদ্যপান করা তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। কোন কোন ইতিহাসবিদ তাঁকে ‘মাতাল সেলিম’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন। শাসনকার্যের তিনি অবহেলা প্রদর্শন করতেন। দ্বিতীয় সলিম উসমানী খিলাফাতের পতন যুগের প্রথম খালীফা।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সলিম

 

দ্বিতীয় সলিম যুদ্ধ করার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। তবে তাঁর উযীরে আযম মুহাম্মাদ সুকোল্লি একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ও উদ্যোগে উসমানী সৈন্যরা কয়েকটি সামরিক অভিযানে বের হয়। ক্রীটস দ্বীপ জয়, আরব ও ইয়ামান পুনর্দখল এবং তিউনিসিয়া জয় দ্বিতীয় সলিমের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি লালা মুস্তাফা এবং বেলার বেগ ভেনিসের সেনাপতি ব্রাগাডিনোকে পরাজিত করে সাইপ্রাস জয় করেন।

 

১৫৭১ খৃষ্টাব্দে ভেনিসের প্ররোচনায় স্পেনরাজ, রোমের পোপ, স্যভয়ের ডিউক এবং মাল্টার নাইট মিলে অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডন জুয়ানের নেতৃত্বে লেপান্টো উপসাগরে উসমানী খিলাফাতের নৌবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। নৌ-সেনাপতি কাপিতান পাশা নিহত হলে উসমানী বাহিনী বিশৃংখল হয়ে পড়ে এবং পরাজয় বরণ করে।

 

ইতিপূর্বে তিউনিস উসমানী খিলাফাতের অধীনে ছিল। লেপান্টো যুদ্ধের বিপর্যয়ের পর অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডোন জুয়ান স্পেনের সাহায্য নিয়ে তিউনিস দখল করেন। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে মুসলিম নৌ-সেনাপতি উলুজ আলীর নেতৃত্বে মুসলিমগণ তিউনিস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সলিমের ইন্তিকাল

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যদের দ্বারা তিউনিস পুনরুদ্ধার হওয়ার পর পরই দ্বিতীয় সলিম ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

১২.তৃতীয় মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুরাদ

 

১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সলিমের পুত্র তৃতীয় মুরাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর।

 

২. তৃতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুরাদ একজন বিলাসী ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কোন যোগ্যতাই তাঁর ছিলনা। তিনি নারী আর মদ নিয়ে প্রাসাদের অভ্যন্তরে মত্ত থাকতেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি তাঁর সুযোগ্য উযীরদের ক্ষমতা হ্রাস করে খিলাফাতের বিপুল ক্ষতি সাধন করেন। তৃতীয় মুরাদের আম্মা নূর বানু এবং তাঁর ভেনিসীয় স্ত্রী সোফিয়া তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় শেষাবধি সোফিয়াই কৃতকার্য হন।

 

তৃতীয় মুরাদের শাসনকালে প্রশাসনে দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা জেঁকে বসে। স্বজন প্রীতি প্রাধান্য পায়। অনিয়ম সর্বত্র নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুরাদ

 

তৃতীয় মুরাদের কোন সামরিক প্রতিভা ছিল না। যুদ্ধ করার মতো নৈতিক বলও ছিলনা তাঁর।

 

উসমানী খিলাফাতের গৌরব রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উসমান পাশা। ১৫৮৩ খৃষ্টাব্দে ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে তিনি বিজয়ী হন।

 

১৫৯০ খৃষ্টাব্দে ইরান একট শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী জর্জিয়া, তাব্রিজ, আজারবাইজান, শিরওয়ান প্রভৃতি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অংশ বলে স্বীকৃতি লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

 

১৩. তৃতীয় মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে মুরাদের পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তিনি ছিলেন রানী সোফিয়ার গর্ভজাত সন্তান।

 

২. তৃতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুহাম্মাদ একজন অপদার্থ সুলতান ছিলেন। ক্ষমতা নিষ্কন্টক করার জন্য তিনি তাঁর উনিশজন ভাইকে হত্যা করেন। রানী সোফিয়া তাঁর পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদের ওপর প্রভাবশালী ছিলেন। তৃতীয় মুহাম্মাদের স্ত্রীও তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। শাসনকার্যে মহিলাদের নির্দেশনা কার্যকর হতে থাকে। অপদার্ত সুলতান উযীরদের ওপর প্রশাসনের যাবতীয় কার্য ন্যস্ত করে নিজে প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারী ও মদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় মুহাম্মাদ

 

তৃতীয় মুহাম্মাদের দুর্বলতার সুযোগে পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান অধিপতিগণ উসমানী খিলাফাতের ইউরোপঈয় প্রদেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে।

 

১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার আর্কডিউকের নেতৃত্বে খৃষ্টানগণ সামনে এগুতে থাকে। একান্ত বাধ্য হয়ে তৃতীয় মুহাম্মাদ হাসান সুকোল্লি পাশা, ইবরাহীম পাশা এবং সিকালা পাসাকে সাথে নিয়ে সসৈন্যে ময়দানে নামেন। করেসটিস প্রান্তরে লড়াই হয়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর শেষাবধি মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

 

৪. তৃতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন

 

১৪. প্রথম আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদের পুত্র প্রথম আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর।

 

২. প্রথম আহমাদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আহমাদ তাঁর পূর্বসূরী দুইজন সুলতানের মতো অতো অযোগ্য ছিলেন না। বয়সে নবীন হলেও তিনি সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রশাসনের ওপর মহিলাদের প্রভাব খর্ব করার পদক্ষেপ নেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আহমাদ

 

১৬০৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সেনাপতি লালা মুহাম্মাদ পাশাকে হাংগেরীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং সফলতা লাভ করেন।

 

অতঃপর তিনি অষ্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৬০৬ খৃষ্টাব্দে সিটভাটোরক সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির শর্তানুযায়ী ট্রান্সিলভানিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে স্বায়ত্বশাসন হাছিল করে। এতোকাল অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতকে বার্ষিক ত্রিশ হাজার মুদ্রা কর দিতো। চুক্তি অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তা থেকে অব্যাহতি লাভ করে। তবে যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে এককালীন দুই লাখ মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের সাথে ইরানের সংঘর্ষ চলছিলো। ১৬১১ খৃষ্টাব্দে সুলতান প্রথম আহমাদ ইরানের শসাহ আব্বাসের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান ছাড়া ইরানের অন্যান্য অঞ্চল শাহ আব্বাসকে ফিরিয়ে দেন।

 

প্রথম আহমাদের শাসনকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভেনিস এবং নেদারল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে।

 

৪. প্রথম আহমাদের ইন্তিকাল

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদ ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো উনত্রিশ বছর। তিনি ১৬ বছর খালীফা ছিলেন।

 

১৫. প্রথম মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মুস্তাফা

 

১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদের ভাই প্রথম মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। মানসিক অসুস্থতার কারনে তিনি তিন মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

 

 

 

১৬. দ্বিতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় উসমান

 

১৬১৮ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম মুস্তাফার ভাতিজা দ্বিতীয় উসমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স চৌদ্দ বছর।

 

২. দ্বিতীয় উসমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় উসমান শাসনকার্যে কিছুটা যোগ্যতার পরিচয় দেন। তবে তিনি স্বার্থপর প্রকৃতির লক ছিলেন। তাঁর খামখেয়ালীপনা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ছিল।  তিনি জাননিসার বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

 

৩. দ্বিতীয় উসমানের পদচ্যুতি

 

১৬২২ খৃষ্টাব্দে বিদ্রোহী সৈন্যগণ দ্বিতীয় উসমানকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে। বিদ্রোহীগণ আবার প্রথম মুস্তাফাকে ক্ষমতার মসনদে বসায়। তিনি এবারও শাসনকার্য চালাতে ব্যর্থ হন। ফলে কয়েক মাস পরে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

 

১৭. চতুর্থ মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬২৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় উসমানের পুত্র চতুর্থ মুরাদকে মসনদে বসানো হয়। তখন তাঁর বয়স এগারো বছর।

 

২. চতুর্থ মুরাদ যেমন ছিলেন

 

পতনোন্মুখ উসমানী খিলাফাতের ইতিহাসে চতুর্থ মুরাদ কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী আমেজ দিতে সক্ষম হন। বয়সে তরুণ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের হারানো গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। খালীফা হয়ে তিনি দেখলেন যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটতরাজ, রাহাজানি, বিভেদ বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যাবহারে জনগন অতিষ্ঠ, পুর্ববর্তী বিলাসী সুলতানদের অপব্যয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় তহবিল শূন্য, জাননিসার সোইন্যদল অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল। চতুর্থ মুরাদ অতিগোপলে একটি নতুন সেনাদল গড়ে তোলেন। ছয় স্কোয়াড্রন অশ্বারোহী যোদ্ধা স্বেচ্ছায় এই বাহিনীতে যোগ দেয়। নতুন সৈন্যদের দ্বারা তিনি অবাধ্য ও উছৃংখল সৈন্যদেরকে শায়েস্তা করেন।

 

তিনি দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। অচিরেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুরাদ

 

১৬৩৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাব্রিজ দখল করেন। ইতিমধ্যে ইরানীগণ বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় ছিল চতুর্থ মুরাদের শাসনকালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।

 

৪. চতুর্থ মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৬৪০ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর।

 

১৮. প্রথম ইবরাহীম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম ইবরাহীম

 

চতুর্থ মুরাদের কোন পুত্র সন্তান ছিলো না। ১৬৪০ খৃষ্টাব্দে তাঁর ভাই প্রথম ইবরাহীম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম ইবরাহীম যেমন ছিলেন

 

প্রথম ইবরাহীম ছিলেন একজন অপদার্থ সুলতান। তবে উযীরে আযম কারা মুস্তাফা ছিলেন একজন যোগ্য শাসক। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারনে তিনি প্রাণ হারান। ফলে রাষ্ট্র আবার দুর্নীতি ও অরাজকতার অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। প্রথম ইবরাহীম বিলাস দ্রব্য আর নারীদের মাঝে ডুবে থাকেন। তাঁর বিলাসিতার অর্থ সংগ্রহের জন্য জনগনের ওপর নানবিধ কর চাপানো হয়।

 

৩. প্রথম ইবরাহীমের হত্যা

 

প্রথম ইবরাহীম এবং তাঁর নতুন উযীরে আযমের গণবিরোধী কার্যকলাপের দরুন রাষ্ট্রে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা উযীরে আযমকে হত্যা করে। ১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারান।

 

১৯. চতুর্থ মুহাম্মাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

১৬৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রথম ইবরাহীম নিহত হলে তাঁর পুত্র চতুর্থ মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর।

 

২. চতুর্থ মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন

 

বালক চতুর্থ মুহাম্মাদের পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ছিলোনা। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যায়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র চরম আকার ধারন করে। দিকে দিকে বিদ্রোহের পতাকা উড্ডীন হয়। সৌভাগ্যক্রমে চতুর্থ মুহাম্মাদ উযীরে আযম নিযুক্ত করেন মুহাম্মাদ কুপ্রিলীকে। তিনি একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি কনস্ট্যান্টিনোপলের গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের অনুসারী খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেন। জাননিসার বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন। পাঁচ বছর শাসনকার্য চালাবার পর তিনি ইন্তিকাল করেন। চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাক্তন উযীরে আযম মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর সুযোগ্য পুত্র আহমাদ কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। আহমাদ কুপ্রিলীর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়ে চতুর্থ মুহাম্মাদ প্রাসাদ অভ্যন্তরে দাবা খেলায় ডুবে যান।

 

৩. রণাংগনে চতুর্থ মুহাম্মাদ

 

আভ্যন্তুরীন শাসনের সাথে সাথে যুদ্ধ বিগ্রহও সামলাতে হতো আহমাদ কুপ্রিলীকে। ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে তিনি ইউরোপীয় খৃষ্টান বাহিনীর সাথে সেন্ট গোথার্ড নামক স্থানে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে আহমাদ কুপ্রিলী পরাজিত হয়। সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তার বহু হারানো অঞ্চল ফিরে পায়।

 

পোল্যান্ড বার বার উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধে চাপিয়ে দেন।

 

১৬৭৬ খৃষতাব্দে আহমাদ কুপ্রিলী ইন্তিকাল করেন। এবার উযীরে আযম নিযুক্ত হন কারা মুস্তাফা। তিনি ছিলেন বড্ড অদূরদর্শী। তাঁর সময়ে রাশিয়া এবং ভিয়েনার সাথে যুদ্ধে নেমে মুসলিম সৈন্যদল পরাজিত হয়।

 

১৬৮১ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তারা রাশিয়াকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন এলাকা ছেড়ে দিয়ে সন্ধি করেন।

 

১৬৮৩ খৃষ্টাব্দে কারা মুস্তাফা সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দিকে অগ্রসর হন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।

 

পূর্বে উসমানী খিলাফাত ছিলো ইউরোপের আতংক। ভিয়েনা অবরোধ ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের খৃষ্টান শক্তিগুলো বুঝতে পারে যে মুসলিমদের অতীতের শক্তি আর নেই। অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী ও অন্যান্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর বার বার হামলা চালাতে থাকে। উসমানী সৈন্যগণও বার বার পরাজিত হতে থাকে।

 

১৬৮৪ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী ক্রোশীয়া থেকে মুসলিম সৈন্যদেরকে হটিয়ে দেয়। অষ্ট্রিয়া বুদাপেষ্ট দখন করে নেয়।

 

১৬৮৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরী উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে নিউহোসেল কেড়ে নেয়।

 

ভেনিস কেড়ে নেয় কোরিস্থ, মোরিয়া, এথেন্স, নাভারিনো প্রভৃতি এলাকা।

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে পোল্যান্ড মোহাকস প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে।

 

যেই উসমানী খিলাফাত এক সময় অপরাজেয় শক্তি বলে গণ্য হতো সেই খিলাফাত এখন প্রায় প্রতিটি রণাংগনেই পরাজয় বরণ করতে থাকে।

 

৪. চতুর্থ মুহাম্মাদের পদচ্যুতি

 

চতুর্থ মুহাম্মাদ আটত্রিশ বছর খালীফা ছিলেন। তাঁর অযোগ্যতার কারনে খিলাফাতের দুর্দিন ঘনিয়ে আসে। দেশে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদ পদচ্যুত হয়ন।

 

২০. দ্বিতীয় সুলাইমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৭ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় সুলাইমান যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় সুলাইমান সুলতান হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কিংবা সামরিক প্রশিক্ষন লাভের কোন সুযোগ তিনি পাননি। রাষ্ট্রে তখন চলছিলো অরাজকতা। বাইরে শত্রুদের প্রবল চাপ। জাননিসার সৈন্যরা রাজধানীতে হত্যাকান্ড হত্যাকান্ড ঘটায়। তারা উযীরে আযমকেও হত্যা করে। দ্বিতীয় সুলাইমান ধৈর্য ও বিচক্ষনতার সাথে পরিস্থিতি মুকাবিলা করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সুলাইমান

 

১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে বেলগ্রেড কেরে নেয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনা এবং ট্রানসিলভানিয়াতেও অষ্ট্রিয়া বাহিনী বিরাট সাফল্য অর্জন করে। ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান সসৈন্যে অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরাজিত হন।

 

খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় সুলাইমান মুহাম্মাদ কুপ্রিলীর দ্বিতীয় পুত্র মুস্তাফা কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন যোগ্য ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি অযোগ্য কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন। সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত করেন।

 

মুস্তাফা কুপ্রিলী একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি উঁচু মানের সামরিক প্রতিভাও ছিলেন।

 

১৬৯০ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কুপ্রিলী অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশ কয়েকটি ছিনিয়ে নেয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেন। তিনি বেলগ্রেডও পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। ট্রানসিলভানিয়া আবার মুসলিম দখলে আসে। এইভাবে রণাংগনে পরাজয়ের গ্লানি কিছুটা মুছে ফেলা সম্ভব হয়।

 

৪. দ্বিতীয় সুলাইমানের ইন্তিকাল

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সুলাইমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২১. দ্বিতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় আহমাদ

 

স্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সদেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুন ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

২. দ্বিতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সন্দেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় আহমাদ

 

দ্বিতীয় আহমাদ কোন সামরিক প্রতিভা ছিলেন না। রণাংগনে কোন ভূমিকা রাখার মতো যোগ্যতা ছিলো না তাঁর।

 

১৬৯১ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে উযীরে আযম মুস্তাফা কুপ্রিলী শত্রুপক্ষের গুলির আঘাতে নিহত হন। এতে সৈন্যদল মনোবল হারিয়ে ফেলে। উসমানী সৈন্যগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

৪. দ্বিতীয় আহমাদের ইন্তিকাল

 

দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। ১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে পরাজয় ও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে দ্বিতীয় আহমাদ ভগ্ন হৃদয়ে ইন্তিকাল করেন।

 

২২. দ্বিতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মুস্তাফা তাঁর পূর্ববর্তী সলতানের তুলনায় যোগ্য ও সাহসী ছিলেন

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুস্তাফা

 

১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

 

১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে তিনি আবার অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে বের হন। কিন্তু জেন্টা প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।

 

জেন্টা যুদ্ধে পরাজয়ের পর অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী, ভেনিস এবং রাশিয়া দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর নিজেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করে। খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় মুস্তাফা হুসাইন কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। হুসাইন কুপ্রিলী একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি সুসংহত হয়ে ওঠে। হুসাইন কুপ্রিলী ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাথে যথাসম্ভব সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার নীতি অনুসরণ করেন।

 

১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত অষ্ট্রিয়া, রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং ভেনিসের সাথে কার্লোউইজ শহরে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

এই চুক্তি অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত ট্রানসিলভানিয়া এবং বার্নাত ছাড়া গোটা হাংগেরী অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দেয়। পোল্যান্ডও কয়েকটি অঞ্চল পায়। আজোভ অঞ্চল পেলো রাশিয়া। ভেনিস এথেন্স ছেড়ে দেয় এবং ডালমাটিয়া ও মোরিয়া নিয়ে নেয়। এই চুক্তির ফলে কিছুকালের জন্য পূর্ব ইউরোপে শান্তি স্থাপিত হয়। তবে উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার পরিচয় পেয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম শক্তির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

 

প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে হুসাইন কুপ্রিলী পদচ্যুত হন। এর কিছুকাল পরে তিনি মারা যান।

 

৪. দ্বিতীয় মুস্তাফার পদত্যাগ

 

হুসাইন কুপ্রিলীর মতো যোগ্য প্রশাসকের অবর্তমানে দেশ আবার বিশৃংখলার দিকে ধাবিট হয়। চারদিকে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হয়ে ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা পদত্যাগ করেন।

 

 

 

২৩. তৃতীয় আহমাদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় আহমাদ

 

১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফার ভাই তৃতীয় আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় আহমাদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তবে আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তাঁর শাসনকালের প্রথম ছয়টি বছর রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত ছিলো।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় আহমাদ

 

রাশিয়া কার্লোউইজ চুক্তি করে বিভিন্ন সামরিক তৎপরতা শুরু করে। ইতিমধ্যে সুইডেনের রাজা দ্বাদশ চার্লস রাশিয়ার জার পিটারের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে উসমানী খিলাফাতের আশ্রয় গ্রহন করেন। রাশিয়া সুইডেনের রাজাকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য তৃতীয় আহমাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। তৃতীয় আহমাদ সুইডেনের রাজ্যহারা আশ্রিত রাজাকে তাড়িয়ে দিতে রাজি হলেন না। এতে রাশিয়া মারমুখো হয়ে ওঠে।

 

১৭১০ খৃষ্টাব্দে সুলতানের নির্দেশে উযীরে আযম মুহাম্মাদ পাশার সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। এই অবস্থায় রাণী ক্যাথরিন মূল্যবান স্বর্নালংকার প্রদান করে মুহাম্মাদ পাশাকে বশীভূত করে ফেলেন। ফলে শত্রুকে বাগে পেয়েও শায়েস্তা না করে ১৭১১ খৃষ্টাব্দে প্রুথ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মুহাম্মাদ পাশা ফিরে আসেন।

 

এই ঘটনা জনগনের মাঝে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তৃতীয় আহমাদ উযীরে আযম পদ থেকে মুহাম্মাদ পাশাকে বরখাস্ত করেন।

 

১৭১৭ খৃষ্টাব্দে নতুন উযীরে আযম দামাদ আলী পেটারওয়ারদিন প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শত্রুর গুলিতে দামাদ আলী নিহত হন। উসমানী বাহিনী পরাজয় বরণ করে।

 

১৭১৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী বেলগ্রেড দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে নব নিযুক্ত উযীরে আযম ইবরাহীম পাশা পরিচালিত উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হয়।

 

১৭২৪ খৃষ্টাব্দে ইরানের সাভাবী শাসক শাহ তাহমাসপকে পরাজিত করে একদিকে রাশিয়া এবং অন্যদিকে উসমানী সৈন্যগন অগ্রসর হতে থাকে।

 

পরে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত লাভ করে জর্জিয়া, ইরিভান, শিরওয়ান এবং আজারবাইজান। রাশিয়া লাভ করে দারবান্দ, বাকু এবং জিলান।

 

১৭২৫ খৃষ্টাব্দে উসমানী সোইন্যগণ ইরানের তাব্রিজ দখল করে।

 

১৭২৯ খৃষ্টাব্দে নাদির শাহ ইরানের ক্ষমতা লাভ করেন।

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে নাদির শান উসমানী সৈন্যদেরকে হটিয়ে দিয়ে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেন। ইরানের নিকট পরাজিত হওয়ার খিলাফাতের সর্বত্র প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে জাননিসার সৈন্যদের সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীল সুলতানের প্রাসাদ অবরোধ করে উযীরে আযম ইবরাহীম পাশাসহ অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করে।

 

৪. তৃতীয় আহমাদের পদত্যাগ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে পরস্থিতি আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় আহমাদ তাঁর ভাতিজা প্রথম মাহমুদের অনুকূলে পদত্যাগ করেন।

 

২৪. প্রথম মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মাহমুদ

 

১৭৩০ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপ্লের মসনদে বসেন

 

২. প্রথম মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম মাহমুদ জাননিসার সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।

 

প্রথম মাহমুদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তিনি যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। সৌভাগ্যক্রমে তিনি আগা বাশীর নামক একজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ব্যক্তির সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করেন।

 

৩. রণাংগনে প্রথম মাহমুদ

 

১৭২১ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যবাহিনী ইরান আক্রমন করে হামাদান, কিরমান শাহ ও তাব্রিজ দখল করে নেয়। কিন্তু নাদির শাহের পাল্টা আক্রমনের মুখে এইসব স্থান বেশিদিন দখলে রাখা সম্ভব হয়নি।

 

এই দিকে রাশিয়ার জার পিটারের মৃত্যুর পর জারিনা এ্যানি রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি উসমানী খিলাফাত থেকে পূর্ব ইউরোপ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবার জন্য অষ্ট্রিয়ার সাথে এক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের মাঝে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখতে পায়। ফলে রাশিয়ার অগ্রাভিযান প্রতিহত করার জন্য এই দুইটি দেশ উসমানী খিলাফাতের পক্ষাবলম্বন করে।

 

এই প্রেক্ষাপটে ১৭৩৬ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া এক অঘোষিত যুদ্ধের মাধ্যমে উসমানী খিলাফাত থেকে আজোভ এবং ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়। ১৭৩৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার মিত্র অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে নাইস দখল করে নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনার ওপর আক্রমন চালায়। উসমানী সৈন্যগণ এই আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

 

১৭৩৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া আবার হামলা চালায়। উসমানী সৈন্যদের পালটা আক্রমনে অষ্ট্রিয়া সৈন্যবাহিনী পিছু হটে বেলগ্রেড গিয়ে আশ্রয় নেয়।

 

১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়া এবং অষ্ট্রিয়া একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটিকেই বলা হয় বেলগ্রেড চুক্তি। আর এটা ছিলো উসমানী খিলাফাতের জন্য সর্বশেষ সম্মানজনক চুক্তি

 

৪. প্রথম মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুস ইন্তিকাল করেন।

 

২৫. তৃতীয় উসমান

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় উসমান

 

১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান কন্সট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

তিনি মাত্র তিন বছর খালীফা ছিলেন। এই সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। তাঁর শাসনকালে রাষত্রে শান্তি-শৃংখলা বিরাজমান ছিলো।

 

২. তৃতীয় উসমানের ইন্তিকাল

 

১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান ইন্তিকাল করেন।

 

 

 

২৬. তৃতীয় মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৫৭ খৃষতাব্দে তৃতীয় উসমানের ভাই তৃতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় মুস্তাফা তাঁর শাসনকালের প্রথম দিকে বেশ যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর উযীরে আযম রাগিব পাশা খুবই যোগ্য ও দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. রনাংগনে তৃতীয় মুস্তাফা

 

১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে উযীরে আযম রাগিব পাশা ইন্তিকাল করেন। এতে সুলতান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এই লক্ষ্যে তিনি প্রুশিয়ার রাজার সাথে মৈত্রী গড়ে তোলেন। অষ্ট্রিয়ার রাণী মেরিয়া থেরেসাও তাঁদের সাথে মিলিত হন।

 

১৭৬৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতে সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতকে এবং ইংল্যান্ড রাশিয়াকে সমর্থন করে।

 

বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ হতে থাকে। উভয় পক্ষ কখনো জয় কখনো পরাজয়ের সম্মুখীন হয়।

 

৪. তৃতীয় মুস্তাফার ইন্তিকাল

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফা ইন্তিকাল করেন।

 

২৭. প্রথম আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল হামিদ

 

১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুস্তাফার পুত্র প্রথম আবদুল হামিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল হামিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল হামিদ ছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি যুদ্ধ বিগ্রহ পছন্দ করতেন না। কিন্তু রাশিয়া তাঁকে সুখে থাকতে দেয়নি।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল হামিদ

 

পূর্ব থেকেই উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলছিলো। ১৭৭৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ রাশিয়ার সাথে কুটচুককাইনারজি সন্ধি করেন। রাশিয়া কৃষ্ণসাগর এবং ভূ-মধ্য সাগরে অবাধ বাণীজ্যের অধিকার লাভ করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত খৃষ্টানদের অভিভাবকত্ব করার অধিকার লাভ করে। ফলে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। কুটচুককাইনারজি সন্ধি উসমানী খিলাফাতের পতনের প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করে।

 

১৭৮৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার সাথে উসমানী খিলাফাতের যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে উসমানী সৈন্যগণ বিজয়ী হয়।

 

৪. প্রথম আবদুল হামিদের ইন্তিকাল

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ইন্তিকাল করেন।

 

২৮. তৃতীয় সলিম

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল হামিদ ভাতিজা তৃতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. তৃতীয় সলিম যেমন ছিলেন

 

তৃতীয় সলিম চিলেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। তবে তিনি ইউরোপীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি বিভিন্নমুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। তিনি উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে উযীর পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।

 

তৃতীয় সলিম ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর অনুকরনে উসমানী সৈন্যদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ফ্রান্সের বহু সামরিক অফিসারকে কাজে লাগান। তিনি ফ্রান্স থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেন। সৈন্যদের জন্য সামরিক পোষাক পরিধান এবং নিয়মিত কুচকাওয়াজ বাধ্যতামূলক করেন। রাশিয়াতে ট্রেনিং প্রাপ্ত উমার পাশাকেও তিনি সেনাবাহিনীর সংস্কারের কাজে লাগান। তিনি সামন্ত প্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি ইউরোপের অনুকরণে বিভিন্ন বিষয় পড়াবার ব্যবস্থা করেন। ইউরোপীয় রাজনীতি, কুটনীতি, সমর নীতি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান হাছিলের জন্য তিনি বহু তরুণকে লন্ডন, প্যারিস, ভিয়েনা এবং বার্লিন পাঠান। তবে ইউরোপীয় ধাঁচে সংস্কার সাধন করতে গিয়ে তিনি ইসলামী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

 

৩. রণাংগনে তৃতীয় সলিম

 

১৭৮৯ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের পূর্ব ইউরোপীয় প্রদেশগুলো আক্রমণ করে। উসমানী সৈন্যগণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

 

১৭৯১ খৃষ্টাব্দে সিস্টোভা সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ক্রোশিয়াসহ কিছু এলাকা অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে খিলাফাত বাকি এলাকাগুলোর ওপর দখল বহাল রাখতে সক্ষম হয়।

 

রাশিয়ার জারিনা দ্বিতীয় ক্যাথারিন উসমানী খিলাফাতের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি খিলাফাতের অন্তর্গত গ্রীক প্রজাদেরকে বিদ্রোহের উসকানী দিতে থাকেন।

 

রাশিয়ার সেনাবাহিনী উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত অঞ্চল বুলগেরিয়া এবং বেসারভিয়ার দিকে সামরিক অভিযান চালায়। উসমানী সৈন্যগণও এগিয়ে আসে। বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হতে থাকে।

 

এই সময় ফ্রান্সে বিপ্লব সংঘটিত হয়। আর ইংল্যান্ডের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাত এবং রাশিয়ার মধ্যে জাসি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইতিমধ্যে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ফ্রান্সের শাসক হন। তিনি উসমানী খিলাফাতের প্রদেশ মিসর, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া দখলের জন্য ওঠে পড়ে লাগেন। যুদ্ধ বেধে যায়।

 

ফ্রান্সের প্রতিপত্তি বেড়ে যাচ্ছে দেখে ইংল্যান্ড এবার উসমানী খিলাফাতের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ফ্রান্স পিছু হটতে বাধ্য হয়।

 

১৮০২ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের সাথে আমিন্‌স চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে উসমানী খিলাফাতের সম্পর্ক উন্নতি হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

 

১৮০৪ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার উসকানিতে সার্বিয়ার খৃষতানগণ কারা জর্জ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে।

 

১৮০৬ খৃষতাব্দে উসমানী সোইন্যগণ যখন রাশিয়ার সোইন্যদের সাথে যুদ্ধ রত তখন সার্বিয়া স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়।

 

৩. তৃতীয় সলিমের হত্যা

 

তৃতীয় সলিমের শাসনকালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগ সৃষ্টি হয়। দিকে দিকে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করে আত্নগোপন করেন। ১৮০৮ খৃষতাব্দে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।

 

২৯. চতুর্থ মুস্তাফা

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে চতুর্থ মুস্তাফা

 

১৮০৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় সলিমের ভাতিজা চতুর্থ মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। কিন্তু এক বছর পরেই তাঁকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়।

 

৩০. দ্বিতীয় মাহমুদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

১৮০৮ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. দ্বিতীয় মাহমুদ যেমন ছিলেন

 

দ্বিতীয় মাহমুদ শাসনকার্যে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তবে তিনি তৃতীয় সলিমের সংস্কার ধারা নিয়ে সামনে অগ্রসর হন।

 

এই সময় ইউরোপীয় জীবন দর্শনে অনুপ্রাণিত মুস্তাফা সামী, সাদিক রিফাত প্রমুখ ব্যক্তি তাঁদের লেখার মাধ্যমে নতুন চিন্তার বীজ ছড়াতে থাকেন।

 

পূর্বে উযীরে আযম এবং শাইখুল ইসলামের ক্ষমতা ছিলো ব্যাপক।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ উযীরে আযমের ক্ষমতা হ্রাস করে বিভিন্ন দফতরে ভারপ্রাপ্ত উযীর নিয়োগ করেন। প্রতিটি মন্ত্রনালয়ের জন্য গঠিত হয় একটি উপদেষ্টা পরিষদ। পূর্বে শাইখুল ইসলাম ছিলেন ধর্মীয় বিষয় এবং বেসামরিক প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয় মাহমুদ তাঁর ক্ষমতাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় ব্যাপারে সীমাবদ্ধ করে দেন।

 

আইনের খসড়া তৈরীর জন্য তিনি একটি পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে এটি কিছুটা প্রতিনিধিত্বশীল রূপ নেয় এবং এর নাম হয় শূরা-ফী-দাওলাত।

 

দ্বিতীয় মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকতার ‘তাকভীম-ই-ভিখারী’ নামে তুর্কী ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র বের হয়।

 

দ্বিতীয় মাহমুদ পাগড়ির স্থলে ফেজটুপির প্রচলন করেন। সৈন্যদের জন্য তিনি পাজামার স্থলে পাতলুন এবং জবরজং জুতার পরিবর্তে বুট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেন।

 

৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মাহমুদ

 

রাশিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৮১৭ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ সার্বিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হন। মিলোস অবরেনোভিচ স্বাধীন সার্বিয়ার প্রথম রাজা হন।

 

১৮১৪ খৃষ্টাব্দে ওডেসোতে চারজন গ্রীক বণিক “হিটারিয়া ফিলকী” নামে এক গুপ্ত সমিতি গঠন করে। ১৮২০ খৃষ্টাব্দে এর সদস্য সংখ্যা হয় দুই লাখ। ইউরোপে উসমানী খিলাফাতের অবসান ঘটিয়ে প্রাচীন গ্রীক সাম্রাজ্যের মতো একটি নতুন গ্রীক সাম্রাজ্য গঠন ছিলো এই সমিতির লক্ষ্য। ইতিহাসবিদ লেনপুল বলেন, “স্বাধীনতার উচ্চাদর্শ এই সমস্ত বিদ্রোহকে যতখানি না উদ্দীপিত করেছিলো তার চাইতে বেশি করেছিলো রাশিয়ার উস্কানি”

 

দ্বিতীয় মাহমুদ মিসরের মুহাম্মাদ আলীর সৈন্যদের সাহায্যে গ্রীক বিদ্রোহীদেরকে প্রায় কোনঠাসা করে ফেলেছিলেন। এই সময় প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি গ্রীসের প্রতি ইউরোপীয়দের মনে সহানূভূতি জেগে ওঠে।

 

১৮২৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মিলিত বাহিনী নাভারিনোর নৌযুদ্ধে উসমানী নৌবাহিনীকে পরাজিত করে।

 

১৮২৮ খৃষ্টাব্দে গ্রীসের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান চালিয়ে উসমানী বাহিনী আবারো পরাজিত হয়।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় আড্রিয়ানোপল চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী মোলডাভিয়া এবং ওয়ালাচিয়া রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন হয়। এশিয়ার কিছু অংশ ও রাশিয়ার হাতে চলে যায়। রাশিয়া খিলাফাতের সর্বত্র অবাধ বাণীজ্যের অধিকার আদায় করে নেয়।

 

১৮২৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

 

ইতিমধ্যে মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর সাথে দ্বিতীয় মাহমুদের সম্পর্ক খারাপ হয়।

 

১৮৩১ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ আলীর পুত্র ইবরাহীম সিরিয়া দখলের জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হন। এই নাজুক অবস্থায় দ্বিতীয় মাহমুদ সাহায্য চাইলেন ইংল্যান্ড এবং রাশিয়ার কাছে। রাশিয়া এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বণ্যার পানির মতো রাশিয়ার সৈন্যরা উসমানী খিলাফাতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।

 

উসমানী খিলাফাতের ওপর রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স শংকিত হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স মিসরের শাসক মুহাম্মাদ আলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে কুতিরবার চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এই চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় মাহমুদ মুহাম্মাদ আলীকে সিরিয়া, ত্রিপোলী (লিবিয়া) এবং আদানা ছেড়ে দেন। খিলাফাতের সর্বত্র তখন রাশীয়ার সৈন্য।

 

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর আনকিয়ার স্কেলেসি চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দার্দানেলিস প্রণালীতে অবাধে যুদ্ধ জাহাজ চালনার অধিকার লাভ করে। রাশিয়া ছাড়া অন্যান্যদের যুদ্ধজাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাপিচুলেশান বা বিশেষ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা স্বত্বেও ইউরোপীয় বাণিকগণ সন্তুষ্ট ছিলোনা।

 

১৮৩৮ খৃষতাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ অংল্যান্ডের সাথে বাল্টা-লিমান কনভেনশান আনেম এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ফলে খিলাফাতে অবাধ বাণীজ্য নীতি গৃহীত হয়।

 

৪. দ্বিতীয় মাহমুদের ইন্তিকাল

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদ ইন্তিকাল করেন।

 

প্রাচ্য সমস্যা

 

খৃষ্টীয় ১৬ ও ১৭ শতাব্দীতে উসমানী খিলাফাত ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিশাল শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিলো। পূর্ব ইউরোপের ড্যানিউব নদী থেকে শুরু করে ঈজিয়ান সাগর পর্যন্ত গ্রীক, সার্ব, বুলগার, আলবেনিয়ান প্রভৃতি জাতির বসতিস্থল বলকান অঞ্চলও উসমানী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

 

১৮ শতকে এসে উসমানী খিলাফাত দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় উসমানী খিলাফাতের শাসনাধীন বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানোলিস প্রণালীর ওপর আধিপত্য বিস্তারে চেষ্টিত হয়। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধিতে শংকিত হয়ে ওঠে এবং রাশিয়াকে রুখবার জন্য চেষ্টিত হয়।

 

এই বহুমুখী সমস্যাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ বলে আখ্যায়িত হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘প্রাচ্য সমস্যা’ প্রকট আকার ধারন করে।

 

 

 

৩১. প্রথম আবদুল মজিদ

 


 

১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মাহমুদের পুত্র প্রথম আবদুল মজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. প্রথম আবদুল মজিদ যেমন ছিলেন

 

প্রথম আবদুল মজিদ ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত ছিলেন। রশীদ পাশা, আলী ফুয়াদ পাশা প্রমুখ রাজনীতিবিদগণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা লাভ করেন।

 

তাঁরা ইউরোপীয় ভাবধারায় অনুপ্রানিত ছিলেন। তাঁরা খালীফা প্রথম আবদুল মজিদকে তাঁদের ভাবধারায় দীক্ষিত করেন। তিনি ‘খাত্তি শরীফ’ ও ‘খাত্তি হুমায়ুন’ নামে রাজকীয় ফরমান জারি করে তানযিমাত বা সংস্কার প্র্যাস চালান। তাঁর লক্ষ্য ছিলো উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপীয় কায়দায় গরে তোলা।

 

তানযিমাতের কতগুলো দফা ছিলো প্রশংসনীয়। আবার কতগুলো দফা ছিলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এইগুলো সাধারণ স্বীকৃতি লাভ করেনি। আলেম সমাজ এইগুলোর চরম বিরোধিতা করে।

 

৩. রণাংগনে প্রথম আবদুল মজিদ

 

১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে সংঘটিত হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। ইংল্যান্ডের রাণী ভিকটোরিয়া এক সময় বলেছিলেন, “জার নিকোলাস এবং তাঁর অনুচরদের উচ্চাকাংখার জন্যই এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।”

 

উনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জার নিকোলাস উসমানী খিলাফাতকে ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি মনে করে তা গ্রাস করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ডের অমতে তা করা সম্ভব নয় বলে তিনি গোপনে ইংল্যান্ডের কাছে উসমানী খিলাফাত ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার প্রস্তাব পাঠান। ইংল্যান্ড দেখলো যে কৃষ্ণ সাগর, বসফোরাস এবং দার্দানেলিসের ওপর রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। তাই আপন স্বার্থের খাতিরেই ইংল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের নিরাপত্তা বিধানের নীতি গ্রহণ করে।

 

১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়া কেড়ে নেয়। কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয় খিলাফাতের পক্ষ থেকে। কোন ফলোদয় হয়নি।

 

তাই ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এইভাবে শুরু হয় ক্রিমিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স উসমানী খিলাফাতের পক্ষ সমর্থন করে। ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ক্রিমিয়া যুদ্ধ শেষ হয়।

 

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী স্থির হলো যে কৃষ্ণ সাগর সকল জাতির বাণিজ্য জাহাজের জন্য খোলা থাকবে এবং কোন জাতির যুদ্ধজাহাজ এই সাগরে চলাচল করতে পারতে পারবেনা। কৃষ্ণ সাগর এবং দার্দানেলিস উপকূলে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের কোন সামরিক ঘাঁটি থাকবে না। রাশিয়া মোলডানিয়া ও ওয়ালাচিয়ার কর্তৃত্ব ত্যাগ করবে। এই দুইটি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অধীনে স্বায়ত্ব শাসন লাভ করবে। ড্যানিউব আন্তর্জাতিক নদীর মর্যাদা পাবে। এতে সকল দেশের জাহাজ চলাচল করবে। রাশিয়া উসমানী খিলাফাতকে বেসারভিয়া ফেরত দেবে। উসমানী খিলাফাতের অধীন খৃষ্টান নাগরিকদের অভিভাবকত্ব রাশিয়ার ওপর থাকবে না। সার্বিয়া স্বায়ত্বশাসন পাবে।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিহত করা হয়। কিন্তু উসমানী খিলাফাতের ওপর ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

 

৪. প্রথম আবদুল মজিদের ইন্তিকাল

 

১৮৬১ খৃষ্টাব্দে প্রথম আবদুল মজিদ ইন্তিকাল করেন।

 

৩২. আবদুল আযীয

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে আবদুল আযীয

 

১৮৬১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. আবদুল আযীয যেমন ছিলেন

 

খলীফা আবদুল আযীয \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলনের লোকদের পছন্দ করতেন না।

 

তাদের প্রতি তিনি দমন নীতি অবলম্বন করেন।

 

৩. আবদুল আযীযের ইন্তিকাল

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে আবদুল আযীয ইন্তিকাল করেন।

 

৩৩. পঞ্চম মুরাদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুরাদ

 

১৮৭১ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ কন্সস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. পঞ্চম মুরাদ যেমন ছিলেন

 

সুলতান পঞ্চম মুরাদ \"ইয়াং তুর্কস\" আন্দোলন পছন্দ করতেন না। তিনিও তাদের ওপর দমন নীতি চালান।

 

৩. পঞ্চম মুরাদের ইন্তিকাল

 

১৮৭৬ খ্রষ্টাব্দে পঞ্চম মুরাদ ইন্তিকাল করেন।

 

৩৪. দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

ইয়াং তুর্কস

 

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মুহাম্মদ বে এবং নামিক কামালের নেতৃত্বে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ইয়াং তুর্কস নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং ইউরোপীয় চিন্তাধারায় উজ্জীবিত এইসব তরুণ উসমানী খিলাফাতের মূল ভূ-খন্ড তুর্কীতে ইউরোপীয় ধাচের একটি দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। খলীফা আবদুল আযীয শাসনকার্যে এদের হস্তক্ষেপ সহ্য করেন নি। তিনি তাদের প্রতি দমননীতি অবলম্বন করেন। তার কঠোর নীতির ফলে ইয়াং তুর্কস বিদেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আবদুল আযীযের পর পঞ্চম মুরাদ খালীফা হন। তিনিও ইয়াং তুর্কসকে ভালো চোখে দেখতেন না। তার সময়েও তারা বিদেশই অবস্থান করতে থাকে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সময় তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল ফিরে আসে। তারা রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তির সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়।

 

এই সময় ইয়াং তুর্কস মিদহাত পাশার নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মিদহাত পাশা একজন যোগ্য সংগঠক ছিলেন। তাকেই ইয়াং তুর্কস-এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। দ্বিতীয় আবদুল হামিদের সাথে ইয়াং তুর্কস-এর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। কিছুকাল পর মিদহাত পাশার সাথে খালীফার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। খালীফা মিদহাত পাশাকে উযীরে আযম পদ থেকে বরখাস্ত করেন। শাসনতন্ত্র মুলতবী হয়ে যায়। ইয়াং তুর্কস আত্মগোপন করে। তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাদের অনুকূলে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

 

২. রণাংগনে দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

 

১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাতের অন্যতম অঞ্চল বুলগেরিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কঠোর হস্তে এই বিদ্রোহ দমন করেন। এতে বহু বুলগার প্রান হারায়। ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া বুলগেরিয়ার ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্বে যুদ্ব ঘষণা করে। রাশিয়ায় সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে উসমানী সৈন্যগণ ময়দানে টিকতে পারলো না। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত রাশিয়ার সাথে স্যান স্টিফানো চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দবরুজা অঞ্চলসহ প্রচুর ক্ষতিপূরণ আদায় করে। ড্যানিউব অঞ্চলে উসমানী দুর্গগুলো ভেংগে ফেলতে হয়। রাশিয়া এশিয়া ভূ-খন্ডের বার্টুম, কারস, আরদাহান, বায়েজিদ প্রভৃতি অঞ্চল লাভ করে। বুলগেরিয়াকে স্বায়ত্বশাসিত করদ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হয়। আলবেনিয়া পর্যন্ত বুলগেরিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত করা হয়। সার্বিয়ার স্বাধীনতা আবারো স্বীকৃত হয়। মন্টিনেগ্রোর সীমান্ত পর্যন্ত সার্বিয়ার সীমানা সম্প্রসারিত হয়। রুমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। বোসনিয়া-হারজেগোভিনাকে একজন খৃষ্টান গভর্ণর জেনারেলের অধীনে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। স্যান স্টিফানো চুক্তি পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্বি করে। উসমানী খিলাফাতের হাতে থাকে কেবল স্যালোনিকা, থেসলী, এপিরাস, আলবেনিয়া এবং বোসনিয়া-হারজেগোভিনা। পূর্ব এউরোপে রাশিয়ার প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলো শংকিত হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডই উদ্বিগ্ন হয় সবচে বেশি। অত্র অঞ্চলে সম্প্রসারণের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অষ্ট্রিয়াও নাখোশ হয়। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া দাবি তুললো যে যেহেতু প্রাচ্য সমস্যা ইউরোপের আন্তঃরাষ্ট্র সমস্যা, সেহেতু রাশিয়া এককভাবে এই অঞ্চলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। তাই স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলোর একটি সম্মেলনে পেশ করতে হবে। ইংল্যান্ড এবং অষ্ট্রিয়া যুদ্বের হুমকিও দেয়। ফলে রাশিয়া স্যান স্টিফানো চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য রাজি হয়। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দের ১৬ই জুন জার্মেনীর রাজধানী বার্লিনে বিসমার্কের সভাপতিত্বে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সম্মেলন শুরু হয়। বহু আলোচনার পর স্যান স্টিফানো চুক্তি সংশোধন করে স্বাক্ষরিত হয় বার্লিন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী রুমানিয়া, সার্বিয়া এবং মন্টিনেগ্রো স্বাধীনতা লাভ করে। বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে তিন ভাগ করে মেসিডোনিয়া  দেয়া হলো উসমানী খিলাফতের প্রত্যক্ষ শাসনে। দক্ষিনাংশ পূর্ব রুমানিয়া নামে স্ব-শাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়। অবশিষ্ট অংশ বুলগেরিয়া নামে পরিচিত হয়।

 

প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অখন্ডতা সংরক্ষণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলো, কিন্তু সেই শক্তিগুলোই বার্লিন চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের অংগচ্ছেদ করলো। বার্লিন চুক্তি ইউরোপীয় শক্তিগুলোর স্বার্থপরতার উজ্বল প্রমান।

 

৩. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস

 

১৯০৬ খৃষ্টাব্দে স্যালোনিকায় আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস। তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন তালাত পাশা এবং জামাল পাশা। এই কমিটি ইয়াং তুর্কস-এর সাথে মিলিত হয়ে কাজ করতে থাকে। তুর্কীকে ইউরোপীয় ধাঁচে গঠন, শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ঘোষনা, প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলোর সাথে সহযোগিতা ইত্যাদি ছিলো কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর কর্মসূচী।

 

১৯০৮ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর পক্ষ থেকে আনোয়ার পাশা মেসিডোনিয়ায় একটি শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনীর বিরাট অংশ আনোয়ার পাশার সমর্থনে এগিয়ে আসে। খালীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সাথে সমঝোতায় পৌছান। তিনি শাসনতন্ত্র অনুমোদন করেন। তিনি হন রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক প্রধান। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস মনোনীত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারকে মেনে নিতে পারেননি। এই সরকারের কার্যক্রমের মাঝে তাঁর ইসলামের পতন দেখতে পান। তাঁরা সরকার বিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরও উসমানী খিলাফাতের দুরবস্থা অব্যাহত থাকে। রণাংগনে সৈন্যবাহিনী পরাজিত হতে থাকে। একের পর এক অঞ্চল খিলাফাতের হাতছাড়া হয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর সমর্থিত পত্রিকাগুলো খালীফাকে আক্রমন করে বিভিন্ন লেখা ছাপতে থাকে। খালীফার বিরুদ্বে এই ধরনের লেখালেখি বহু লোককে মানসিকভাবে আহত করে। খালীফার বিশ্বস্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই সময় আততায়ীর হাতে প্রান হারান।

 

কমিটি সরকার প্রশাসনের পুরোনো অফিসারদেরকে চাকুরিচ্যত করে শূন্যপদে নিজেদের লোক বসাতে শুরু করে। একই নীতি অনুসরণ করা হয় সেনাবাহিনীতে। ব্যাপকহারে পদচ্যুত অফিসারগণ বিক্ষুব্দ হয়। নব নিযুক্ত অফিসারদের অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে বিদ্রুপাত্বক মন্তব্য করতে থাকে এবং সাধারণ সৈনিকদেরকে ধর্মীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর নেতৃবৃন্দ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার প্রতি উদাসীন ছিলেন। এতে সাধারণ লোকদের মনেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

 

১৯০৯ খ্রষ্টাব্দের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে কনস্ট্যান্টিনোপলের সৈন্যরা অফিসারদেরকে তাদের কক্ষে তালাবদ্ধ করে ক্যান্টনমেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পালর্ামেন্টের নিয়ন্ত্রন হাতে তুলে নেয়। তারা আয়া সোফিয়া মাসজিদ এবং পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে তাদের সাথে যোগ দেয় অসংখ্য মানুষ। তারা শারীয়ার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সাধারণ সৈনিকদের হাতে তাদের অনেকে প্রাণ হারায়। কমিটির নেতৃবৃন্দ পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে।

 

স্যালোনিকাতে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর মজবুত ঘাঁটি ছিলো। সাখানকার সেনাবাহিনী কমিটির অনুগত ছিলো। কনস্ট্যান্টিনোপলে কমিটি সরকারের বিপর্যয়ের খবর পেয়ে মাহমুদ শাওকাত পাশার নেতৃত্বে একদল সৈন্য রাজধানী অভিমুখে রওয়ানা হয়। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল তারা কনষ্ট্যান্টিনোপল পৌছে তা দখল করে নেয়। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার আবার ক্ষমতাসীন হয়। মার্শাল ল জারি করা হয়। কমিটি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়। ইত্তিহাদ-ই-মুহাম্মদী জামিয়াতি নামক সংস্থাটিও বেআইনী ঘোষিত হয়। বহু বিদগ্ধ ব্যক্তিকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। উসমানী খিলাফাতের অন্যতম ইসলামী তারকা বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীকেও বন্দী করে সামরিক আদালতে পেশ করা হয়। এইভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার দেশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

 

৩. দ্বিতীয় আবদুল হামিদের পদচ্যুতি

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সুলতান ও খলীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে পদচ্যুত করে।

 

৩৫. পঞ্চম মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে পঞ্চম মুহাম্মদ

 

১৯০৯ খৃষ্টাব্দে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস দ্বিতীয় আবদুল হামিদের ভাই পঞ্চম মুহাম্মদকে কষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসায়।

 

২. কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর শাসনকাল

 

কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস নানা ধরনের ব্যক্তিদের সমন্বয় গঠিত ছিলো। এতে বাদীউজ্জামান সাঈদ নূরসীর মতো ইসলামী ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তবে অধীকাংশ সদস্যই ছিলো জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। কিছু সংখ্যক নাস্তিকও ছিলো এর সদস্য। তদুপরি এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য ছিলো খৃষ্টান এবং ইয়াহুদী। এই কমিটি ক্ষমতা লাভ করে শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। সুলতান ও খলীফা হন শাসনতান্ত্রিক প্রধান। সরকারী সকল ক্ষমতা ছিলো উযীর পরিষদের হাতে।

 

দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়। ক্যাপিচুলেশান প্রথা বাতিল হয়। সকল পর্যায়ে তুর্কী ভাষায় প্রচলন বাধ্যতামূলক করা হয়। বানিজ্যিক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বহু সংখ্য্ক স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। কারিগরি ট্রেনিংয়ের জন্য বহু সংখ্যক যুবককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরন করা হয়। ডেভিড বে নামক একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী চার্লস লরেন্টের সহায়তায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন।

 

আনোয়ার পাশা সেনাবাহিনীর সংস্কারে মনোযোগ দেন। তিনি একদল জার্মেন সামরিক বিশেষজ্ঞ এনে সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে সাজান। আনোয়ার পাশা জার্মেন পদ্ধতির নৌবহরের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি নিজে বার্লিনের শিক্ষালাভ করেন। উসমানী নৌবাহিনীকে পুনর্গঠিত করার জন্য কাউন্ট রুবিলান্ট, এডমিরাল গ্যাম্বল এবং পরবর্তীকালে এডমিরাল লিম্পসের সহযোগিতা নেয়া হয়।

 

উচ্চ শিক্ষার জন্য বহু তরুণকে পাঠানো হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দেশে বহু সংখ্যক সেকুলার স্কুল এবং কলেজ স্থাপন করা হয়। বিজ্ঞান, সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ক বহু গ্রন্থ তুর্কী ভাষায় অনুবাদ করা হয়। সহশিক্ষা চালু করা হয়। শরীয়া কোর্টগুলোর স্বাতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়।

 

৩. রণাংগনে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার

 

(ক) বলকান যুদ্ধ

 

রাশিয়ার প্ররোচনায় সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস এবং মন্টিনেগ্রো \'দ্যা বলকান লীগ\' নামে একটি সামরিক জোট গঠন করে উসমানী খিলাফাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ১৯১২ খৃষ্টাব্দে \'দ্যা বলকান লীগ\' খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় প্রথম বলকান যুদ্ধ। লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী খিলাফাত গ্রীসকে ক্রীট দ্বীপ ছেড়ে দিতে হয়। রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল ছাড়া ইউরোপের আর অংশই উসমানীদের হাতে রইলো না।

 

১৯১৩ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া এলাকাগুলোর ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে \'দ্যা বলকান লীগের\' অন্তর্ভক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধকে বলা হয় দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকার কিছু পাওয়ার আশায় এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বুখারেষ্ট চুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই যুদ্ধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বুলগেরিয়া। আড্রিয়ানোপল এবং থ্রেসের কিছু অংশ উসমানী খিলাফাতের অধীনে আসে।

 

বলকান যুদ্ধের ফলে বলকান উপদ্বীপে খৃষ্টান শক্তিগুলোর বিস্তৃতি ঘটে। উসমানী খিলাফাতের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব আরো সংকুচিত হয়।

 

(খ) প্রথম মহাযুদ্ধ

 

১৯১৪ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন অষ্ট্রেয়ার যুবরাজ ফ্রাঞ্জ ফার্ন্ডিনান্ড বোসনিয়া-হারজেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো সফরে এসে সার্বিয়ার নিযুক্ত আতাতায়ীদের হাতে সস্ত্রীক নিহত হন। ফলে অষ্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে রাশিয়া। পরে ফ্রান্স। আরো পরে ইংল্যান্ড। অনশেষে জাপান, ইতালী, চীন এবং ইউএসএ সার্বিয়ার পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যুদ্ধে নামে জার্মেনী। এই মহাযুদ্ধে গোড়ার দিকে উসমানী খিলাফাত নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস-এর চরমপন্থী গ্রুপের নেতা আনোয়ার পাশার চাপে কমিটি সরকার জার্মেনীর পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধে নামে।

 

এই মহাযুদ্ধে অষ্ট্রিয়া-জার্মেনী-উসমানী খিলাফাত পরাজিত হয়।

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মেনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জুন প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে জার্মেনীর ওপর একটি অপমানকর চুক্তি চাপিয়ে দয়া হয়। এটিকেই বলা হয় ভার্সাই চুক্তি।

 

প্রথম মহাযুদ্ধে উসমানী খিলাফাত দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খিলাফাতের সর্বত্র এমন কি রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপলেও মিত্র শক্তির সৈন্যগণ অবস্থান গ্রহন করে। খালীফা পঞ্চম মহাম্মদ দখলদার শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হণ। তিনি তখন জাতীয় পরিষদ ভেংগে দেন। কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। খালীফা নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিয়ে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। অপসারিত সরকারের বহু লোক বন্দী ও নির্বাসিত হয়।

 

৪. পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে পঞ্চম মুহাম্মদের ইন্তিকাল করেন।

 

৩৬. ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 


 

১. সুলতান ও খলীফা পদে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৮ খৃষ্টাব্দে ষষ্ঠ মুহাম্মদ কনষ্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।

 

২. রণাংগনে ষষ্ঠ মুহাম্মদ

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের মে মাসে গ্রীস উসমানী খিলাফাতের অন্তর্গত স্মার্ণা দখল করে ব্যাপক হত্যাকান্ড ও লুটতরাজ চালায়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে ১০ই আগষ্ট বিজয়ী মিত্রশক্তি সেভার্স চুক্তির মাধ্যমে উসমানী খিলাফাতের ওপর চরম আঘাত হানে।

 

সেভার্স চুক্তি অনুযায়ী ঈজিয়ান সাগরের কয়েকটি দ্বীপ এবং থ্রেস উসমানী খিলাফাতের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গ্রীসকে দেয়া হয়। মিসর, সুদান, সাইপ্রাস, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং আরব উপদ্বীপ ইংল্যান্ডের কর্তৃত্বাধীনে দেয়া হয়। লেবানন, সিরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া প্রভৃতি পেলো ফ্রান্স। কনষ্ট্যান্টিনোপল, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি উসমানী নৌ-বন্দরগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনে নেয়া হয়। উসমানী খিলাফাতের বিমান বহর মিত্র শক্তির হাতে চলে যায়।

 

খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদের হাতে অবশিষ্ট থাকলো রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল এবং পার্বত্য আনাতোলিয়া।

 

এক কালের এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপের বিশাল এলাকা জড়ে বিস্তৃত উসমানী খিলাফাত সব হারিয়ে কনষ্ট্যান্টিনোপল আর আনাতেলিয়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে আনাতোলিয়ায় \'ইয়াং তুর্কস\' ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং গ্রীসের আক্রমন থেকে স্মার্ণা রক্ষা করতে না পারাY ষষ্ঠ মুহাম্মাদের কড়া সমালোচনা করে। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রিফাত রউফ বে এবং আলী ফুয়াদ পাশা।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা তখন সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার। খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মদ তাঁকে সামরিক ইনস্পেক্টর জেনারেল হিসেবে আনাতোলিয়া পাঠান \'ইয়াং তুর্কস\'-এর বিদ্রোহ দমন করতে। সেখানে গিয়ে মস্তাফা কামাল পাশা বিদ্রোহীদের দলে ভিড়ে যান।

 

১৯১৯ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে \'ইয়াং তুর্কস\' আনাতোলিয়াতে একটি নির্বাহী পরিষদ গঠন করে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান হন মুস্তাফা কামাল পাশা এবং মেম্বার ছিলেন রিফাত রউফ বে, বেকীর সামী বে, রুস্তম বে, মাজাহার বে এবং হায়দার বে। এই নির্বাহী পরিষদ আনাতোলিয়ার শাসনভার গ্রহন করে এবং আংকারাতে রাজধানী স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করে।

 

অবস্থার নাজুকতা উপলব্ধি করে খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আলীরেজার নেতৃত্ব গঠিত হয় উযীর পরিষদ।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী উযীর পরিষদ মুস্তফা কামাল পাশার \'জাতীয় চুক্তি\' অনুমোদন করে। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিলো তুর্ক জাতীয় স্বাধীনতার ঘোষণা।

 

ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি। জেনারেল মিলানের নেতৃত্বে মিত্রশক্তিগুলোর সৈন্যগণ ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল দখল করে। কনষ্ট্যান্টিনোপলে মার্শাল L ঘোষণা করা হয়। চল্লিশ জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে বন্দী করে মাল্টায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে মুস্তাফা কামাল পাশা আংকারাতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। এই পরিষদের নাম দেয়া হয় গ্য্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলী। মস্তফা কামাল পাশা হন এই এসেম্বলীর সভাপতি। এইভাবে আংকারাতে কনষ্ট্যান্টিনোপলের সমান্তরাল সরকার কায়েম হয়। আংকারা সরকার ঘোষণা করে যে বিদেশী সৈন্যদের হাতে বন্দী খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তিগুলোও গ্রহনযোগ্য নয়। এতদসত্বেও ১৯২০ খৃষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট খালীফা ষষ্ঠ মুহাম্মাদ মিত্র শক্তির চাপের নিকট নতি স্বীকার করে সেভার্স চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

 

১৯২০ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকারের সৈন্যগণ মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে ইনইনুর যুদ্ধে গ্রীক বাহিনীকে পরাজিত করে তাদেরকে স্মার্ণা থেকে তাড়িয়ে দেয়। ১৯২১ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুর্ক বাহিনী সাকারিয়া প্রান্তরে গ্রীকদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিজয় অর্জন করে।

 

এই দুইটি সামরিক বিজয় আংকারা সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধি করে। কমিউনিষ্ট রাশিয়া আংকারা সরকারকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ফ্রান্স এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সিলিসিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়। ইতালীও আংকারা সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে আদালিয়া ছেড়ে দেয়।

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গ্রীস আংকারা সরকারের সাথে মুদানিয়া চুক্তি স্বাক্ষর করে স্মার্ণা এবং পূর্ব থ্রেসের ওপর তার দাবি পরিত্যাগ করে। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার এক ঘোষণার মাধ্যমে \'সুলতান\' পদ বিলুপ্ত করে।

 

৩. ষষ্ঠ মুহাম্মাদের পদত্যাগ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার কর্তৃক \'সুলতান\' পদ বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়ার পর ষষ্ঠ মুহাম্মাদ ক্ষমতা ছেড়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

 

৩৭. দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 


 

১. খালীফা পদে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ

 

১৯২২ খৃষ্টাব্দে আংকারা সরকার দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে খালীফা বলে ঘোষণা করে। রিফাত পাশা আংকারা সরকারের পক্ষে কনষ্ট্যান্টিনোপলের শাসনভার গ্রহন করেন।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দে জুলাই মাসে আংকারা সরকারের চাপে সেভার্স চুক্তি বাতিল করে লুজেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

ইংল্যান্ড মেনে নেয় যে কনষ্ট্যান্টিনোপল, আনাতোলিয়া এবং পূর্ব থ্রেস তুর্কীর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এইভাবে ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় শক্তিগুলো উসমানী খিলাফাতের অবশিষ্টাংশ অর্থাৎ তুর্কীর অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা মেনে নেয়।

 

১৯২৩ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তুর্কীকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে মুস্তফা কামাল পাশা হন এর প্রেসিডেন্ট এবং ইসমত ইনুনু হন এর প্রাইম মিনিষ্টার। খালীফা পদ তখনো প্রতীকী পদ হিসেবে অবশিষ্ট ছিলো।

 

২. দ্বিতীয় আবদুল মজিদের পদচ্যুত হন

 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ পদচ্যুত হন।

 

 

 

উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি

 


 

১৯২৪ খৃষ্টাব্দে মুস্তাফা কামাল পাশা একটি আইনের মাধ্যমে খিলাফাতের উচ্ছেদ সাধন করেন। তিনি তুর্কীকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তুর্কীর রাজধানী কনষ্ট্যান্টিনোপল থেকে আংকারা সরিয়ে আনেন।

 

মুস্তাফা কামাল পাশা চরম ইসলামী বিদ্বেষী ছিলেন। যা কিছু ইসলামী আইন তখনো প্রচলিত ছিলো সেইগুলো বাদ দিয়ে তিনি সুইস কোড (Swiss Code) প্রবর্তন করেন।

 

তিনি পর্দা প্রথার বিলোপ সাধন করেন। একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের সর্বত্র সেকুলার স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়। আরবীতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ হয়। আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করা হয়। পাগড়ি বা ফেজটুপি পরা নিষিদ্ধ হয়। হ্যাট পরিধান করা বাধ্যতামুলক করা হয়। সালাম পরিত্যক্ত হয়।

 

দেশে সেকুলার পত্রপত্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক বই-পুস্তক ব্যাপক হারে প্রকাশিত হয়। যুব সমাজ উচ্ছৃংখল হয়ে ওঠে। বেহায়াপনা উলংপনা বৃদ্ধি পায়। মদখোরের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ইসলামকে নিয়ে বিদ্রূপ হতে থাকে। আলেম সমাজ ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিদেরকে নানাভাবে নাজেহাল ও নির্যাতন করা হয়। মুস্তাফা কামাল পাশা রিপাবলিকান পিপলস পার্টি গঠন করেন। বহুকাল পর্যন্ত এটিই ছিলো তুর্কীর একমাত্র রাজনৈতিক দল।

 

ছয়শত ছত্রিশ বছর উসমানী খিলাফাত ছিলো মুসলিম উম্মার শক্তিকেন্দ্র। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে এই শক্তি কেন্দ্রর পতন ঘটে। এটা সত্য যে উসমানী খালীফাগণ খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো আল্লাহর রাসূলের (সা) হাতে গড়া লোক ছিলেন না। খুলাফায়ে রাশিদীনের মতো তাঁরা নির্বাচিত খালীফাও ছিলেন না। তবুও এই কথা অনস্বীকার্য যে প্রথম দিককার উসমানী খালীফাগণ নিষ্ঠাবান মুসলিম ছিলেন। তাঁরা ব্যক্তিগণ জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতেন। খিলাফাতের সর্বত্র যাতে ছালাত কায়েম থাকে সেই জন্য স্থানে স্থানে তাঁরা বহু সংখ্যক মসজিদ নির্মান করেন। ইসলাম সম্পর্কে ভতিষ্যত জেনারেশনকে জ্ঞান দেবার জন্য তাঁরা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কাযীগন ইসলামী শারীয়া অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করতেন। যাতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন তৈরী না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য শাইখুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। জনগনের স্বাস্থ্য-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সর্বত্র হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। স্থানে স্থানে গোসলখানা তৈরী করা হয়। বহু সংখ্যক রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি তৈরী করা হয়। যাকাত ও উশর আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হয়। মসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জান, মাল ও ইযযতের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করা হয়। বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধ করা হয়।

 

তাঁরা সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। বিলাসিতা পরিহার করে চলতেন। তাঁরা একদিকে ছিলেন সৎ, অন্য দিকে ছিলেন যোগ্যতাসম্পন্ন। প্রিশাসন চালাতে তাঁরা হিমসিম খেতেন না। শাসনকার্য পরিচালনায় তাঁরা ব্যর্থতার পরিচয় দিতেন না। তাঁরা প্রতিভার কদর করতেন। যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদেরকে সরকারী পদসমূহে নিয়োগ করতেন।

 

আল্লাহর পথে জিহাদকে তাঁরা অতিশয় গুরুত্ব দিতেন। তাঁরা নিজেরাই ছিলেন মুজাহিদ। যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা নিজেরাই সেনাপতিত্ব করতেন। প্রায় তিনশত বছর উসমানী খিলাফাত এই ধরনের সুলতান ও খালীফা লাভ করে ধন্য হয়েছিলো। তাঁদের আচরণ এবং অনুসৃত সুনীতিতে মুগ্ধ হয়ে বহু সংখ্যক অমুসলিম মুসলিম হয়েছিলো। পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান রাজাগণ খালীফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো কিন্তু তাদের প্রজাদের মাঝে খালীফাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব পরিলক্ষিত হতো।

 

পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান শক্তি উসমানী খিলাফাতের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে চেয়েছিলো, কিন্তু বারবারই উসমানী খিলাফাত এক অপরাজেয় শক্তি প্রমাণিত হয়েছে। পরর্রতী সোয়া তিনশত বছরে যাঁরা খালীফা হয়েছিলেন তাঁরা প্রথম দিককার খালীফাদের মতো ছিলেন না। ইসলামের অনুসরণের ক্ষেত্রে তাঁদের নিষ্ঠার অভাব ছিলো। তাঁরা ছিলেন বিলাসী। তাঁদের অনেকেই নারী আর মদের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েন। শাসক হিসেবে তাঁরা ছিলেন অযোগ্য। যোদ্ধা হিসেবে তাঁরা ছিলেন নিম্নমানের। আল্লাহর পথে জিহাদের গুরুত্ব তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন। গুণীব্যক্তিদের কদর করতে পারননি তাঁদের অনেকেই। ফলে প্রশাসনে অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

শেষ দিকে যাঁরা খালীফা হন তাঁদের কেউ কেউ তো ইসলামী জীবনদর্শন এবং বিধানকেই ভুলে বসেছিলেন। ইউরোপের ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ তাঁদের চিন্তাচেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো। এক দিকে চৈন্তিক ফ্রন্টে, অপরদিকে সামরিক ফ্রন্টে তাঁরা ইউরোপীয়দের নিকট নতি স্বীকার করেন।

 

ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, আল কুরআন ও আল হাদীসে যুগজিজ্ঞাসার জবাব অন্বেষণ এবং যুগোপযোগী সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি তাঁদের উদাসীনতা শেষাবধি তাঁদেরকে ইউরোপীয় শক্তির বশংবদে পরিণত করে। তাঁর ইউরোপীয়দের চিন্তাধারা প্রবেশের জন্য খিলাফাতের দ্বার খুলে দেন। ইউরোপের ভালোমন্দ সব কিছুই বন্যার পানির মতো খিলাফাতের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মুসলিমদের ঘরেই ইসলাম এবং মসলিমদের দুশমন তৈরি হতে থাকে। শেষ পর্যায়ে এরাই উসমানী খিলাফাতের বিলুপ্তি এবং ইসলামের উচ্ছেদ সাধন করে।

 

তথ্যসুত্র

 


 

১. আধুনিক ইউরোপের পরিচয়/কে. আলী

 

২. মুসলিম ও আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস/কে.আলী

 

৩. History of Modern Europe Since 1789/V.D. Mahajan

 

৪. Badiuzzaman Said Nursi/Sukran Bahide

 

৫. First World War/A.J.P. Taylor

 

৬. ইসলামের ইতিহাস/কাযী আকরাম হোসাইন

উসমানী খিলাফতের ইতিকথা

এ. কে. এম. নাজির আহমদ

book স্ক্যান কপি ডাউনলোড